ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ
বিসমিল্লাহির রহমানির
রহিম।
জবাব,
https://ifatwa.info/45499 নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,
আল্লাহ তা’আলা বলেন-
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء
وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي
الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً
مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির
জন্য, ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের
জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান।
আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। -সরা তাওবাহ, আয়াত-৬০
কুরআনুল কারীমে যাকাত প্রদানের আটটি প্রকার বর্ণনা করা হয়েছে।
কিন্তু হযরত উমর রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁর খেলাফতকালে চিত্তাকর্ষণের
জন্য যাদেরকে যাকাত প্রদান করা হতো, তাদেরকে যাকাত দিতে নিষেধ
করেছেন। কারণ, তখন ইসলাম অনেক শক্তিশালী হয়ে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে
সাহাবায়ে কেরামের কেউ তাঁর সাথে মতানৈক্য করিনি। সুতরাং সাহাবায়ে কেরামের ইজমার ভিত্তিতে
এই প্রকারটি যাকাতের হকদারের তালিকা থেকে বাদ হয়ে গিয়েছে। ফলে যাকাত আদায়ের জন্য
সাতটি শ্রেণী অবশিষ্ট রয়েছে। সাত শ্রেণীর বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে দেওয়া হল:-
১. দরিদ্র। অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক
নয়। যে ব্যক্তি নেসাবের চেয়ে কম সম্পদের মালিক তাকে যাকাত দেওয়া জায়েজ হবে; যদিও সে সুস্থ ও উপার্জনশীল হয়।
২. নিঃস্ব। অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যার অর্থ সম্পদ কোন কিছুই নেই।
৩. ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট
যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে
মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}
৪. ক্রীতদাসের মুক্তির জন্য। আর তা হলো চুক্তিবদ্ধ ক্রীতদাস।
অর্থাৎ যে ক্রীতদাসের মুনীবের সঙ্গে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের শর্তে আযাদ করে দেওয়ার
চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এই শ্রেণি বর্তমানে নেই। তবে যদি কখনো পাওয়া যায়, তাহলে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে।
৫. ঋণগ্রস্ত। অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যার কাছে মানুষ এই পরিমাণ ঋণ
পায়, যেই পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার পর সে পূর্ণ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক
থাকে না।
৬. ফী সাবিলিল্লাহ। তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য।
এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর রাস্তায় কারা আছে? ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন
এতে রয়েছেন-
জিহাদরত মুজাহিদরা। তাদের জিহাদের অস্ত্র ও পাথেয় ক্রয় করার
জন্য যাকাতের টাকা গ্রহণ করবে। হজ্বের সফরে থাকা দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। ইলমে দ্বীন
অর্জনকারী দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। {আদ দুররুল মুখতার-৩৪৩,
হিদায়া-১/১৮৫, রূহুল মাআনী-৬/৩১৩}
৭.মুসাফির অর্থাৎ এমন প্রবাসী, যার দেশে প্রচুর অর্থ সম্পদ রয়েছে কিন্তু প্রবাসে তার টাকা পয়সা শেষ হয়ে
গেছে।
উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই কেবল যাকাত আদায় হবে।
অন্য কাউকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। ফুক্বাহায়ে কেরাম যাকাত আদায়ের জন্য একটি শর্তারোপ
করেছেন এই যে, যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে দানকৃত
ব্যক্তিকে। যদি মালিক বানিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে যাকাত আদায় হবে
না।
যেমন কাউকে কোন বস্তু ভোগ দখলের অধিকার দিয়ে নিয়ত করল যাকাতের, তাহলে এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। সেই হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ নয়,
যদিও তাতে গরীব মানুষ থাকে, নামায পড়ে,
পড়াশোনা করে। তবে প্রতিষ্ঠানের গরীবদের, মাদরাসা
গরীব ছাত্রদের, মসজিদের গরীব মুসল্লিদের যাকাত দিলে তাতে মালিক
বানিয়ে দেয়ার বিষয়টি থাকায় তা জায়েজ হবে। {ইনায়া আলা ফাতহিল কাদীর-২/২৬৭-২৬৮,
আল হিদায়া-১/২০৫, তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/২৯৯}
عَنْ
عَائِشَةَ، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَقُولُ: «لَا زَكَاةَ فِي مَالٍ حَتَّى يَحُولَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ»
হযরত আয়েশা রা থেকে বর্ণিতঃনবী কারীম সাঃ বলেনঃ-সম্পত্তিতে কোনো
যাকাত নেই যতক্ষণ না এক বৎসর পূর্ণ হবে। (সুনানে ইবনে মাজা-১৭৯২) এ সম্পর্কে বিস্তারিত
জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/29371
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মহিলাকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হয়ে
যাবে। তবে তার ভরণ-পোষণ ও জরুরি ব্যয় যদি তার সন্তান যথাযথভাবে
দিয়ে থাকে তাহলে তাকে যাকাত না দিয়ে প্রয়োজন আছে এমন কোনো অসহায় বা দরিদ্রকে দেওয়াই শ্রেয়।