بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
কোনো কোনো মা তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে চান না, খাওয়ালেও খুব
কম খাওয়ান। তারা তাদের শিশুকে কেবল বাজারের গুড়ো দুধ খাইয়ে লালন করে থাকেন। অথচ
মার বুকের দুধে সন্তানের হক রয়েছে। এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সন্তানের জন্য প্রদত্ত
খাবার। তাই মা’র শারীরিক অসুস্থতা কিংবা এধরনের বিশেষ ওযর না থাকলে সন্তানকে বুকের
দুধ থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে এসেছে—
وَ الْوَالِدٰتُ یُرْضِعْنَ اَوْلَادَهُنَّ حَوْلَیْنِ كَامِلَیْنِ لِمَنْ اَرَادَ اَنْ یُّتِمَّ الرَّضَاعَةَ.
অর্থ : ‘মাতাগণ নিজেদের বাচ্চাদেরকে পূর্ণ দু’বছর স্তন্যদান
করবে, যদি
দুধ খাওয়ার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়।’ —সূরা বাকারা, আয়াত ২৩৩
তাফসীরবিদগণ বলেন, এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, সন্তানকে দুধ
পান করানো ওয়াজিব এবং আরও বোঝা গেল যে, বিশেষ ওযর ছাড়া স্তন্যদান থেকে বিরত
থাকার অবকাশ নেই। —মাআরিফুল কুরআন; তাফসীরে মাযহারী; কুরতুবী; জামিউ আহকামিসসিগার
১/১২৩
তাছাড়া আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এ বিষয়টি স্বীকৃত যে, শিশুর জন্য
মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। শিশুকে স্তন্যদান শিশুর জন্য যেমন উপকারী তদ্রূপ মার
জন্যও উপকারী।
অন্যদিকে দেখা যায়, অনেক মা সন্তানকে ৩-৪ বছরও দুধ খাওয়ান।
আবার অনেকে আড়াই বছর খাওয়ানো যায় মনে করে এ মেয়াদ পূর্ণ করেন। এটা ভুল। সন্তান
অনুর্ধ্ব দুই বছর মার বুকের দুধ খেতে পারবে। দুই বছরের বেশি বয়সী সন্তানকে দুধ পান
করানো নাজায়েয। দুই বছর দুধ পান করানোর বিষয়টি সূরা বাকারার ২৩৩ আয়াতে রয়েছে। এছাড়া
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন,
لا رضاع إلا في الحولين
‘মায়ের
দুধ পানের সময় দুই বছরই।’ —সুনানে
দারাকুতনী ৪/১৭৪; তাফসীরে
মাযহারী ১/৩২৩; মাজমাউল
আনহুর ১/৫৫২; আত্তাসহীহ
ওয়াত্তারজীহ ৩৩৫; ফাতহুল
কাদীর ৩/৩০৭-৩০৯
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধু মায়ের দুধ পান করানোর
পরামর্শ দেন। কেননা তা একই সঙ্গে শিশুর জন্য সুষম খাবার ও তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা তৈরিকারী।
মায়ের দুধ সন্তানের অধিকার। শিশুর জন্য মায়ের দুধ সর্বোত্তম
খাবার। আধুনিক বিজ্ঞানের দাবি, সন্তানের জীবন রক্ষায় প্রথম প্রতিষেধক।
পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে মায়ের স্তন্যদানের বিধান আলোচিত
হয়েছে, যেখানে
স্তন্যদানের সময়কাল,
মা ও শিশুর অধিকার এবং বাবার করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় এসেছে। আল্লাহ তায়ালা
বলেন, ‘(তালাক
হওয়ার পর) বাবা যদি চায়,
সন্তান পূর্ণ সময়কাল দুধ পান করতে থাকুক, তবে মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই
বছর দুধ পান করাবে। এ অবস্থায় বাবাকে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে মায়ের খোরপোশ দিতে হবে।
তবে কারো ওপর তার সামর্থ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপানো ঠিক নয়, না মায়ের এ
জন্য কষ্টে নিক্ষেপ করা উচিত যে সন্তান তো তারই, আর না বাবাকে এ জন্য চাপ দেয়া উচিত যে
সন্তান তো তারই। স্তন্যদানকারিণীর এই অধিকার যেমন সন্তানের বাবার ওপর রয়েছে, তেমনি রয়েছে
তার উত্তরাধিকারীদের ওপরও। কিন্তু উভয় পক্ষই যদি পারস্পরিক সন্তোষ ও সমঝোতার ভিত্তিতে
দুধ ছাড়াতে চায়, তাহলে
এরূপ করাতে কোনো দোষ হবে না। আর যদি তোমরা তোমাদের সন্তানদের অন্য কোনো নারীর দুধ পান
করাতে চাও, তাহলে
তাতেও কোনো দোষ হবে না। তবে শর্ত হলো, এ জন্য যে পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট করা
হবে, তা
যথারীতি আদায় করতে হবে। আল্লাহকে ভয় করো। আর জেনে রেখো, তোমরা যা-ই
করো আল্লাহ তার সবই দেখেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৩৩)।
দীর্ঘ এই আয়াতে আল্লাহপ্রদত্ত বিধান পর্যালোচনা করলে সহজেই অনুমেয়
যে আল্লাহ তায়ালা কোনো অবস্থায়ই চান না মাতৃদুগ্ধ পান থেকে শিশু বিরত হোক। সুস্থ স্বাভাবিক
দাম্পত্য জীবনে শিশু যেমন মায়ের দুধ পান করে, তেমনি কোনো কারণে মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে
গেলেও যেন সন্তান মায়ের দুধ থেকে বিরত না হয় সে নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ। এমনকি
কোনো কারণে মা স্তন্যদানে অক্ষম হলে আর্থিক বিনিময়ের ভিত্তিতে শিশু অন্য নারীর দুধ
পান করবে। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি তারা গর্ভবতী হয়, তাহলে সন্তান
ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য অর্থ ব্যয় করবে, যদি তারা তোমাদের সন্তানদের স্তন্য দান
করে, তবে
তাদের পারিশ্রমিক দেবে এবং সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে তোমরা সংগতভাবে নিজেদের মধ্যে
পরামর্শ করবে। তোমরা যদি নিজ নিজ দাবিতে অনমনীয় হও, তাহলে অন্য নারী তার পক্ষে স্তন্য দান
করবে।’ (সূরা: তালাক,
আয়াত: ৬)।
উল্লিখিত দুই আয়াতের আলোকে ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, মা যদি সুস্থ
ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকেন এবং সন্তান তার দুধের ওপর নির্ভরশীল হয়, তবে তার জন্য
দুধ পান করানো ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে তার অবহেলা শরিয়তের দৃষ্টিতে অপরাধ বলে গণ্য হবে।
(তাফসিরে মারেফুল কোরআন (বাংলা), ১৩০)।
শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া কোনো নারী যদি সন্তানকে বুকের দুধের
অধিকার থেকে বিরত করে,
তবে পরকালেও তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(সা.) মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এরপর আমাকে আরো সামনে নিয়ে যাওয়া হলো।
কয়েকজন নারীকে দেখলাম,
যাদের বুকের ছাতি সাপ দংশন করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কোন মহিলা? বলা হলো, তারা সেসব মহিলা, যারা নিজের
শিশুকে নিজের দুধ পান করাত না।’ (আল-মুসতাদরাক আলাস-সহিহাইন: ২/২২৮)।
মায়ের দুধে সন্তানের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ইসলামী শরিয়ত
মাকে রোজার মতো ফরজ বিধানে স্তন্যদানকারী মাকে অবকাশ দিয়েছে। যদি রোজা রাখলে শিশু মায়ের
দুধ ঠিকমতো না পায় এবং সে বিকল্প খাবারেও অভ্যস্ত না হয়, তবে মা রোজা
ভাঙতে পারবে। তবে পরবর্তী সময় তাকে এই রোজার কাজা আদায় করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.)
বলেছেন, ‘আল্লাহ
মুসাফিরের ওপর থেকে চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের অর্ধেক রহিত করে দিয়েছেন এবং মুসাফির, স্তন্যদানকারিণী
ও গর্ভবতী মহিলা থেকে রমজানের রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতাও শিথিল করেছেন।’ (সুনানে
তিরমিজি)।
সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে ব্রেস্টমিল্ক পাম্প মেশিনের সাহায্যে দুধ সংরক্ষন করতে ও বাচ্চাকে তা
খাওয়ানোর কারণে মেডিকেল সাইন্সের দৃষ্টিতে মা ও বাচ্চা কারো যদি কোন ক্ষতির আশংকা না
থাকে তাহলে উক্ত পদ্ধতি জায়েয। এতে আপাতত দৃষ্টিতে নাজায়েয হওয়ার কোন কারণ পরিলক্ষিত
হচ্ছে না।