জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
মুন্তাখাব হাদিস চয়নকৃত হাদিসের সংকলন। হাদিসের বিশাল ভান্ডার থেকে তাবলিগ জামাতের ছয় উসুলের ভিত্তিতে হাদিস সংকলন করা হয়েছে বইটিতে। উদ্দেশ্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলার আদেশ ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনাদর্শ অনুযায়ী চলা এবং কর্মীদের মধ্যে এ সকল গুণাবলী সৃষ্টি করা।
,
তাবলিগ জামাতের ছয়টি মূলনীতি হলো- কালিমাহ, নামাজ, ইলম ও জিকির, ইকারামুল মুসলিমিন, সহি নিয়ত এবং দাওয়াত ও তাবলিগ। উল্লেখ্য, এ ছয়টি উসুল সম্পর্কিত কুর’আনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিস নিয়েই মুন্তাখাবে হাদিস গ্রন্থটি রচিত। এ সম্পর্কে বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতি প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থ থেকে হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে।
,
,
আপনি আরো যে সমস্ত কিতাব থেকে বাড়িতে তা'লিম করতে পারেনঃ
★ফাজায়েলে আমল’
এটি তাবলিগ জামাতের লোকেদের মধ্যে অধিক পরিচিত ও ব্যাপক পঠিত একটি বই। নামাজ, রোজা , হজ, জাকাত জিকির, কুরআন তেলাওয়াতের ফজিলত ও সাহাবিদের জীবনীর সমন্বয়ে রচিত বইটি।
তাবলিগী মেহনতে অংশগ্রহণকারীদের তালিম-তরবীয়তের জন্য তাবলিগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস রহ. উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর সমন্বয়ে একটি বই রচনার তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ফলে তিনি ভাতিজা শায়খুল হাদিস হযরত মাওলানা যাকারিয়াকে রহ. এরকম বই লেখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
★মহিলাদের তালীম বা আদর্শ নারী শিক্ষা
লেখকঃ হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহঃ
,
★হায়াতুস সাহাবা’
গ্রন্থটি সাহাবাদের জীবনীচরিত গ্রন্থ।সাহাবিগণ নবি সা. এর হাতে গড়া সোনার মানুষ। তাদের জীবনে রাসুলের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওটেছে। তাই প্রকৃতপক্ষে রাসুলকে অনুসরণ করতে হলে তার সাহাবিদের জীবনী জানা অতীব জরুরি একটি বিষয়। রাসুলের আদর্শ ও তার গড়া সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানবদের জীবনাচার নিয়েই রচিত হায়াতুস সাহাবা গ্রন্থটি।
‘হায়াতুস সাহাবা’ গ্রন্থটি শায়খ ইলিয়াস রহ. এর সুযোগ্য সন্তান মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ কন্ধালবী (রহ) এর রচিত।এ গ্রন্থটি বেশ উপকারী। তাবলিগের ভাইদের নিকট অধিক প্রিয়। গ্রন্থটিতে নবি করিম সা.এর দাওয়াতি জিন্দেগীসহ অনেক সাহাবা (রা)-এর জীবনী ও তাঁদের জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাকে উল্লেখ করা হয়েছে,
,
★ফাজায়েলে সাদাকাত
দান সদকা করার ফজিলত সম্পর্কে রচিত এ গ্রন্থটি। লিখেছেন শায়খ জাকারিয়া রহ.।
,
(০২)
মহিলাদের ফকীহ,মুফতী হওয়া,ফতোয়া প্রদান সংক্রান্ত জামিয়া বিন নুরি পাকিস্তানের 143908200633 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ
কোনো ফতোয়া দেওয়া এবং শরীয়াহ ইস্যুটির সমাধান ব্যাখ্যা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ শরীয়াহ ও ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা।
এ বাধ্যবাধকতা পালন করা সবার পক্ষে সহজ নয়।এছাড়াও এক বা দুই বছরের জন্য আইনশাস্ত্রের বই পড়া মুফতি হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়, তবে এটি কঠোর পরিশ্রম এবং অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
,
মহিলাদের ধর্মীয় শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য তাদের প্রাথমিক ধর্মীয় জ্ঞান এবং প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে সচেতন করা। তাদের প্রধান দায়িত্ব পারিবারিক বিষয়ে যত্ন নেওয়া।
তাই বেশিরভাগ উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষা এবং পরিবার প্রশিক্ষণের সমন্বয়ে একটি ছোট পাঠ্যক্রম তৈরি করা উচিত।
,
গভীর জ্ঞ্যান-অর্জন, গবেষণা ও অধ্যয়নের জন্য পুরুষদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।
,
এক্ষেত্রে অনেকেই কিছু মহিলা সাহাবা ইত্যাদির কথা বলে থাকেন,
হযরত আয়েশা (রা।) এবং অন্যান্য স্ত্রীরা হলেন উম্মতের মা এবং তাদের দ্বারা জ্ঞানের ব্যবহার খুবই জরুরি ছিলো।
,
কারন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পারিবারিক জীবন সম্পর্কিত বেশিরভাগ বিষয় উম্মাহর কাছে পৌঁছেছে।
যেটি মুমিনদের জানা খুবই জরুরী ছিলো।
অন্যথায় রাসুল সাঃ এর পারিবারিক জীবনের অনেকটাই উম্মত জানতে পারতোনা।
এই জ্ঞানী মহিলাদের জীবন অন্যান্যদের থেকে আলাদা।
,
আর এক্ষেত্রে অন্যান্য মহিলাদের জীবনি থেকে যেই দলিল গুলো দেওয়া হয়,তাহা অনেক কম শায।
যাহা দিয়ে দলিল দেওয়া যায়না।
,
,
ইসলামী স্কলারগন বলেছেনঃ
কুরআন-হাদীসের শিক্ষা অর্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরয। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
طلب العلم فريضة على كل مسلم
অর্থ: ইলমে দ্বীন অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। (ইবনে মাজাহ, ২০)
দ্বীনী ইলম এবং সাংসারিক বিদ্যা শিক্ষা করা মেয়েদের জন্য জরুরী, যা তার কাজে আসবে।
হাদীসে আরো ইরশাদ হয়েছে-
الدنيا كلها متاع وخير متاع الدنيا المرأة الصالحة
অর্থ: পৃথিবী পুরোটাই হল সম্পদ, আর পৃথিবীর সর্বোত্তম সম্পদ হল পুণ্যবতী মহিলা। (মুসলিম শরীফ, ১/ ৪৭৫)
এ হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, প্রত্যেক পিতার দায়িত্ব হলো, তার মেয়ের দ্বীনদারী সহ সকল ক্ষেত্রে এমনভাবে গড়ে তোলা যে, পরবর্তীকালে তাকে যেন তার স্বামী দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত বলতে বাধ্য হয়। কাজেই উক্ত হাদীসের ভাষ্যনুযায়ী মেয়েকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দিয়ে পুণ্যবতী বানানো জরুরী।
কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে- وقرن فى بيوتكن
অর্থ: মহিলারা নিজ গৃহে অবস্থান করবে।
উক্ত মূলনীতির আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, মহিলারা ঘরে চার দেয়ালের ভিতরে অবস্থান করে দ্বীনী ইলম অর্জন কবে। এটাই পর্দার সহায়ক এবং নিরাপদ।
(ক) কাজেই মহিলারা নিজ গৃহে স্বীয় মাহরাম পুরুষ তথা বাপ, দাদা, চাচা, নানা, ভাই, মামা প্রমুখের নিকট থেকে ইলমে দ্বীন অর্জন করবে।
(খ) মাহরামদের মধ্যে যোগ্য আলেম ব্যক্তি পাওয়া না গেলে মহিলারা মহল্লার কোন দ্বীনদার আলেমা মহিলার কাছে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কুরআন ও ইলমে দ্বীন শিখবে এবং পড়া বা পাঠ সমাপ্ত করেই বাড়ীতে ফিরে আসবে। উক্ত বাড়ীতে পাঠ্য কার্যক্রম ব্যতীত বেশি সময় অবস্থান করবে না। এভাবে দৈনন্দিন যাওয়া আসা করে ইলমে দ্বীন অর্জন করবে।
(গ) দ্বীনদার আলেমা মহিলাও পাওয়া না গেলে স্বীয় মাহরামের সাথে, পর্দার সাথে কোন হক্কানী আলেমের নিকট গিয়ে ইলম শিখবে। অতঃপর পড়া বা সবক শেষ করে চলে আসবে। অর্থাৎ অনাবাসিকভাবে ইলমে দ্বীন ও জরুরী মাসায়িল শিক্ষা করবে।
হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে পাওয়া যায় যে, সাহাবায়ে কিরামের রা. মহিলাগণ মাসআলা মাসায়িল জানার উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে উপস্থিত হন এবং তাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করার আবেদন জানান। তাঁদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁদের তা‘লীম তরবিয়তের লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সপ্তাহে একদিন এক বাড়ীতে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণও করে দিয়েছিলেন। (বুখারী শরীফ,১/২০,২১)
বর্ণিত পদ্ধতিগুলোর যে কোন একটির মাধ্যমে মহিলারা ইলমে দ্বীন শিক্ষা করবে এতে আলেমগণের মতানৈক্য নেই। হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রহ.ও থানা ভবনে দ্বিতীয় পদ্ধতি চালু করেছিলেন। (ইসলাহে খাওয়াতীন, ৪৩৮)
তবে প্রচলিত আবাসিক মহিলা মাদরাসা যেখানে বিভিন্ন ধরনের মেয়েরা একত্রে দীর্ঘদিন বসবাস করে, যেখানে পরহেযগার দ্বীনদার মহিলা এবং পূর্ণ দ্বীনদার নয় এমন মহিলাও পরস্পর একত্রে অবস্থান করে। অথচ পুরুষ শিক্ষকগণ পর্দার কারণে তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন না।
অপরদিকে মহিলা শিক্ষিকাগণ মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ করার তেমন যোগ্যতা রাখেন না। এই সুযোগে ভাল-মন্দ ঘরের মেয়েরা অবাধে আলাপ আলোচনা করে, এমনকি অশ্লীল আলোচনা করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। এতে মন্দের সুহবতে ভাল ঘরের মেয়েরাও দুশ্চরিত্রা হয়ে যাওয়ার প্রবল আশংকা থাকে।
কাজেই এ ধরনের আবাসিক মহিলা মাদরাসায় বহুবিধ ক্ষতির দিক রয়েছে বিধায় মুহাক্কিক উলামায়ে কিরাম প্রচলিত আবাসিক মহিলা মাদরাসাকে পছন্দ করেন না। (ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া, ৯/৪৫,আওরত কী ইসলামী যিন্দেগী, ৭০)