জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَ مَا عَلَّمۡنٰہُ الشِّعۡرَ وَ مَا یَنۡۢبَغِیۡ لَہٗ ؕ اِنۡ ہُوَ اِلَّا ذِکۡرٌ وَّ قُرۡاٰنٌ مُّبِیۡنٌ ﴿ۙ۶۹﴾
আর আমরা রাসূলকে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং এটা তার পক্ষে শোভনীয়ও নয়। এটা তো শুধু এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন।
(সুরা ইয়াসিন ৬৯)
وَ الشُّعَرَآءُ یَتَّبِعُہُمُ الۡغَاوٗنَ ﴿۲۲۴﴾ؕ
আর কবিগণ, তাদের অনুসরণ তো বিভ্রান্তরাই করে।
(সুরা শু'আরা ২২৪)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
কাব্যচর্চা সম্পর্কে একদা রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন-
لأن يمتلا جوف احدكم قيحا خير له من أن يمتلا شعرا
কবিতা দ্বারা তোমাদের কারো পেট ভর্তি হওয়ার পরিবর্তে পুঁজ দ্বারা ভর্তি হওয়া উত্তম-মুসলিম:২২৫৭)।
عن عائشه رضي الله عنها سئلت هل كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يتمثل بشئ من الشعر قالت كان ابغض الحديث اليه غر انه كان يتمثل ببيت اخي بني قيس فيجعل اوله اخره واخره اوله فقال ابو بكر ليس هكذا يا رسول الله فقال رسول الله اني والله ما انا بشاعر وما ينبغي لي
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা কে জিজ্ঞাসা করা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কখনো কবিতা রচনা করতেন?
তিনি জবাব দিলেন কবিতা রচনা করা তার নিকট সর্বাপেক্ষা অপছন্দনীয় ছিল। কিন্তু কোনো কোনো সময় তিনি বনি কায়েস গোত্রের জনৈক ব্যক্তির কবিতা আবৃত্তি করতেন। তবে তাতে তিনি উলটপালট করে ফেলতেন এবং হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তা সংশোধন করে দিতেন- যে, এটা এমন নয় বরং এমন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন- اني والله ما انا بشاعر وما ينبغي لي আল্লাহর কসম আমি কবি নই এবং কবিতা রচনা আমার জন্য শোভনীয় নয়।
(বিস্তারিত দেখুন তাফসীরে ইবনেকাসীর:২৯৯/৩,তাওকীফিয়্যাহ,কায়রো,মিসর।
কুরআনের কাব্যানুবাদ উলামাদের মধ্যে বিতর্কিত বিষয়।কেউ বলেন শর্ত স্বাপেক্ষে জায়েয, আবার কেউ কেউ নাজায়েয বলে থাকেন।
এক্ষেত্রে দারুল উলুম দেওবন্দ এর ফতোয়া হলোঃ-
মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআনের অনুবাদ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ মহান কাজ বুদ্ধিদীপ্তভাবে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করতে হয়। এর জন্য আরবি ভাষায় যথেষ্ট পরিপক্কতা থাকা ছাড়াও শরিয়তের প্রয়োজনীয় জ্ঞান সম্পর্কে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য ধারণা এবং পবিত্র কুরআনুল কারিমের অনুবাদ ও ব্যাখ্যার সঙ্গে মুনাসাবাত তথা সম্পর্ক থাকাও জরুরি। আর এটা বলায় বাহুল্য যে, পবিত্র কুরআনুল কারিমের আয়াতের অর্থ ও উদ্দেশ্য কবিতায় বা ছন্দে ফুটিয়ে তোলা আরও সূক্ষ্ম ও স্পর্শকাতর কাজ।
প্রশ্নে আপনি আপনার কিছু অনুবাদের নমুনা উপস্থাপন করেছেন। আমরাও নিবিঢ়ভাবে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। তবে গুটিকয়েক আয়াতের করা কাব্যানুবাদ দেখে আপনার সামগ্রিক কাজের বিষয়ে সমাধান দেয়া অনেককটা দুষ্কর। তাই আপনার জন্য কল্যাণকর হবে আপনি স্থানীয় কোনো প্রাজ্ঞ ইসলামী ফিকহ বিশেষজ্ঞের (মুফতি সাহেব) কাছে আপনার সার্বিক কাজগুলো উপস্থাপন করুন এবং তার পরামর্শ গ্রহণ করুন।
তবে এক্ষেত্রে একটি মৌলিক বিষয় হলো, ভাব, মর্যাদা ও শর্ত-শারায়েত মেনে করা পবিত্র কুরআনুল কারিমের সাধারণ অনুবাদ (গদ্যানুবাদ) যেমন জায়েয, তেমনি কাব্যানুবাদও জায়েয। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই গদ্যানুবাদ ও কাব্যানুবাদ সম্পর্কে অনুবাদকের সঠিক ও বাস্তবসম্মত যোগ্যতা থাকা আবশ্যক।
একদল উলামায়ে কেরাম কুরআনে কারীমের কাব্যানুবাদকে জায়েয মনে করেন।তারা বলেন,
কুরআনে কারীমের তরজমা করা জায়েয।এবং কুরআনে কারীমের তরজমাকে কাব্যকারে উচ্ছারণ করা তথা কাব্যানুবাদ করা জায়েয।নাজায়েয হওয়ার কোনো কারণ নেই।তবে শর্ত হলো,কাব্যানুবাদ করতে যেয়ে অর্থের বিকৃতি ঘটানো যাবে না।তবে কুরআনের আরবী শব্দের কোনো আরবী কবিতা করা যাবে না।এটা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয।যেহেতু কাব্যতে শব্দ কম থাকে,যার কারণে মানুষের স্বরণে বেশী থাকে,সে হিসেবে অনেক উলামায়ে কেরাম মনে করেন,কুরআনের তরজমার কাব্যানুবাদ ভালো জিনিষ।কেননা এতে কুরআনের তরজমা মানুষের অন্তরে বেশী স্বরণে থাকবে।
সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
সুন্দর, শালীন, মার্জিত এবং ইসলামি চিন্তা-দর্শন ও জীবন-বিধান সমর্থিত কাব্যচর্চার সীমিত পরিসরে অনুমতি থাকলেও সামগ্রিক বিবেচনায় শরীয়তে কাব্যচর্চার প্রতি খুব উৎসাহিত করা হয়নি।
কুরআনের কাব্যানুবাদ উলামাদের মধ্যে বিতর্কিত বিষয়।কেউ বলেন জায়েয, আবার কেউ নাজায়েয। সুতরাং এখানে শীতিলতা চলে আসবে।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(১.২.৩)
কুরআনের ভাব, মর্যাদা ও শর্ত-শারায়েত মেনে পবিত্র কুরআনুল কারিমের কাব্যানুবাদ করা হলে তাহা জায়েজ হবে। সেক্ষেত্রে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তাহা প্রকাশ করা ও বিক্রি করা ও তাহা পড়া জায়েজ হবে।
কুরআনের ভাব, মর্যাদা ও শর্ত-শারায়েত মেনে পবিত্র কুরআনুল কারিমের কাব্যানুবাদ করা না হলে তাহা জায়েজ হবেনা। সেক্ষেত্রে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তাহা প্রকাশ করা ও বিক্রি করা ও তাহা পড়াও জায়েজ হবেনা।