আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
83 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (11 points)
closed by

(১.) ইসলামে রুকাইয়াহর সঠিক বিধান কি? এটা কখন করতে হয় এবং এর উপকারিতা কি? এটি সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন।

(২.) আফ্রিকার একটা মসজিদ থেকে বাথরুমের বদনা হারিয়ে যাওয়ায় ঐ মসজিদের ইমাম রুকাইয়াহ করে। এরপর উনি বলেন এটা নাকি বদ জ্বীনের কারণে হয়েছে এবং মসজিদের সামনের গাছটি কেটে ফেলতে বলেন। এখন তার উক্ত কাজটি কি যথার্থ হয়েছে? এবং এটি কি আসলেই সম্ভব? গাছ কেটে ফেলা কি উচিত এ সকল কারণে? লিংক- https://www.facebook.com/279397599353583/posts/pfbid0L4M1xGYDNZnXhCJxXQdMVRt7B2TzaQdwZGYUWAQyhtd7AvyaB9VgaNUuyqagzNJZl/?app=fbl

(৩.) ইসলামে পরিবেশ রক্ষা (গাছ না কাটা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করা ইত্যাদি) - এ সকল বিষয়ে কিছু বলা আছে কি? হাদিস এবং কোরআনের রেফারেন্স দিলে ভালো হয়।

(৪.) আল হিদায়া গ্রন্থে লিখা আছে যে, জিহাদের সময় গাছ চাইলে উপড়ে ফেলা যাবে. কেন এমন বিধান? যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করবেন দয়া করে।

closed

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
selected by
 
Best answer

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ-

১. রুকাইয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ ঝাড় ফুঁক করা। আর ইসলামী পরিভাষায় রুকাইয়া বলা হয় কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন আয়াতে কারিমা এবং আদয়ায়ে মা'সুরা তথা হাদিসে বর্ণিত দোয়া সমুহের মাধ্যমে যেকোনো রোগ- বালা মুসিবত এর সময় শেফা তথা আরোগ্য লাভের উদ্দেশ্যে আমল করা। এই চিকিৎসা পদ্ধতি বিভিন্ন ভাবে রোগীর উপর প্রয়োগ করা যেতে পারে সরাসরি ঝাড় ফুঁক বা অন্য কোন জিনিসের উপর দম করে তা সেবন করার মাধ্যমে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এভাবে আমল করতেন। সাহাবায়ে কেরাম কে এভাবে শিখিয়ে দিতেন সাহাবায়ে কেরাম এর যুগে এই চিকিৎসা পদ্ধতি চালু ছিল। হাদীস এর কিতাব সমূহে তিব্বুর রাসুল তথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চিকিৎসার ব্যাপারে মুহাদ্দিসিনে কেরাম অধ্যায় এনেছেন পৃথকভাবে। সুরা ফাতিহা কে সুরাতুশ শিফা অর্থাৎ আরোগ্য লাভের সুরা হিসেবে নাম করণ করা হয়। সুরা ফালাক আর নাস কে আল্লাহ তায়ালা অবতীর্ণ করেছিলেন যখন লবিদ নামক একজন ইয়াহুদি তার মেয়েদের দিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যাদু করেছিল। চুল আর চিরুনির দাঁতের উপর তারা যাদু করেছিল। এভাবে অসংখ্য আয়াত যেখানে যাদু বা হিংসা এবং আয়াতুশ শিফার মাধ্যমে রুকাইয়াহ করা হয়ে থাকে।

সুতরাং কুরআন হাদীসের বাণী দ্বারা রুকইয়াহ জায়েয।রুকইয়াহ জিবরীল আলাইহিস সালাম করেছেন, রাসূলুল্লাহ করেছেন, সাহাবায়ে কিরাম করেছেন, এবং অন্যান্য সালাফে সালহীনরাও করেছেন। সুতরাং শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন না হলে, এটা নিয়ে আপত্তির কিছু নাই, সংশয়েরও কিছু নাই।

ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন যে, 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সামনে সকল উম্মাতকে পেশ করা হয়েছিল। তখন আমি দেখেছি) দু’একজন নবী পথ চলতে লাগলেন এমতাবস্থায় যে, তাঁদের সঙ্গে রয়েছে লোকজনের ছোট ছোট দল। কোন কোন নবী এমনও আছেন যাঁর সঙ্গে একজনও নেই। অবশেষে আমার সামনে তুলে ধরা হল বিশাল দল। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এটা কী? এ কি আমার উম্মাত? উত্তর দেয়া হলঃ না, ইনি মূসা আঃ) এবং তাঁর কওম। আমাকে বলা হলঃ আপনি ঊর্ধ্বাকাশের দিকে তাকান। তখন দেখলামঃ বিশাল একটি দল যা দিগন্তকে ঢেকে রেখেছে।

তারপর আমাকে বলা হলঃ আকাশের দিগন্তসমূহ ঢেকে দিয়েছে এমন একটি বিশাল দলের প্রতি লক্ষ্য করুন। তখন বলা হলঃ এরা হল আপনার উম্মাত। আর তাদের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে চলে গেলেন। উপস্থিতদের কাছে কথাটির কোন ব্যাখ্যা প্রদান করলেন না। যে বিনা হিসাবের লোক কারা হবে?) ফলে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে তর্ক বিতর্ক শুরু হল। তারা বললঃ আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুসরণ করে থাকি। সুতরাং আমরাই তাদের অন্তর্ভুক্ত। কিংবা তারা হল আমাদের সে সকল সন্তান-সন্ততি যারা ইসলামের যুগে জন্মগ্রহণ করেছে। আর আমাদের জন্ম হয়েছে জাহিলী যুগে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ তারা হল সে সব লোক যারা মন্ত্র পাঠ করে না, পাখির মাধ্যমে কোন কাজের ভাল-মন্দ নির্ণয় করে না এবং আগুনের সাহায্যে দাগ লাগায় না। বরং তারা তো তাদের রবের উপরই ভরসা করে থাকে। তখন উক্কাশা ইবনু মিহসান বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! তাদের মধ্যে কি আমি আছি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন আরেকজন দাঁড়িয়ে বললঃ তাদের মধ্যে কি আমিও আছি? তিনি বললেনঃ ‘উক্কাশাহ এ সুযোগ তোমার আগেই নিয়ে নিয়েছে। [৩৪১০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৮৭)

আরো জানুন:১.  https://ifatwa.info/82289/  ২.  https://ifatwa.info/56932/

২. যারা রুকইয়াহ শরঈয়াহতে স্পেশালিস্ট আপনি তাদের সাথে এবিষয়ে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আপনি চাইলে  https://www.facebook.com/ruqyahbd.official পেইজ এডমিন থেকেও জেনে নিতে পারেন। তারা রুকইয়াহ সংক্রান্ত কাজে বেশ ভালো অভিঙ্গতা রাখেন।

৩. বৃক্ষরোপন করা নিশ্চয় সওয়াবের কাজ। কারণ নবী সা: নিজে বৃক্ষ রোপন করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এই কাজে উৎসাহিত করেছেন। এসম্পর্কে আরো বিস্তারিত রেফারেন্সসহ জানতে ভিজিট করুন : https://ifatwa.info/25127/

৪. এই গাছ কাটার ঘটনাটি ছিলো নিছক যুদ্ধকৌশল। বনু নাযীর-দের সাথে যুদ্ধের সময়কার ঘটনা এটি। আল্লাহপাকের অনুমতি ছিলো এই কৌশল নেওয়ার। আর আমরা জানি যে, প্রয়োজন সাপেক্ষে গাছ কাটা যাবে।

মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) .. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একটি গাছ মুসলিমদের (পথ গমন করার সময়) কষ্ট দিত। এক ব্যক্তি এসে সে গাছটি কেটে ফেললো, এরপর সে জান্নাতে প্রবেশ করলো। (সহিহ মুসলিম - ৬৫৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪৩৪)

রণক্ষেত্রে গাছ কাটার কারণ হিসেবে মুহাদ্দীসগন উল্লেখ করেন যে দুই কারণে নবীজি সা. গাছ কাটার কথা বলেছেন:

১) সামরিক কৌশল হিসেবে

২) এগুলো গোত্রটির জীবীকার উৎস ছিলো। তাই এগুলো কেটে ফেলায় তারা দ্রুতই যুদ্ধবিহীন আত্মসমর্পণ করে।

আসলে বানু নাযির গোত্রের অপরাধ ছিলো তারা আল্লাহর রসূলকে (স) হত্যা করতে চেয়েছিলো। যা একই সাথে আল্লাহদ্রোহিতা এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। তাই, তাদের মাদিনা ছেড়ে চলে যাবার আল্টিমেটাম দেয়া হয় কিন্তু তারা এর বদলে যুদ্ধের চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের খেজুর গাছ কেটে ফেললে তারা যুদ্ধের মনোবল হারিয়ে ফেলে। আসলে, যুদ্ধের ময়দানে কৌশল হিসেবে এসব জায়েয।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...