আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
137 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

আমার স্ত্রীর সাথে বিয়ের প্রথম মাস থেকে বনিবানা হচ্ছিলনা।তুচ্ছ কারণে তার আর আমার মনের মিল হতো না। স্ত্রীর অত্যধিক জেদ এবং উভয়েরই রাগে ঝগড়াঝাটি এমনকি দুইজনেরই দাম্পত্য সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যাচ্ছিল।আমার সাথে অত্যধিক বেয়াদবি করায় আমি চর দিলে সেও পাল্টা আঘাত করতো আমাকে।আবার, স্ত্রীর অত্যধিক রাগে সে নিজের ক্ষতিসাধন করতে যেতো, অবাধ্য হয়ে বাইরে চলে যেতো,রাস্তায় গাড়ির সামনে চলে যেতো ,সুসাইডাল ভয় দেখাতো।দুইজনই দ্বীন মেইনটেইন করে চলার চেষ্টা করতাম।সালাত পর্দা ঠিক ছিল। অতঃপর ছয়মাস সংসার করার পর পারিবারিকভাবে বসা হয় ঝামেলা মেটানোর জন্য।সেখানে আমি আমার বাবা মাকে নিয়ে মেয়ের বাবা মার বাসায় যায় কিন্তু মেয়ে অত্যধিক অভিযোগ দিতে থাকে আমার নামে এবং মেয়ের মাও সাথে তাল দিতে থাকে। যা আমি করিনি সেটাও বলতে থাকে। এই অবস্থায় আমি অপমানিতবোধ করে নিতে না পেরে ফয়সালা হবেনা ভেবে আমি মা বাবাকে নিয়ে ওদের বাসা থেকে উঠে চলে আসি। পরবর্তীতে, মেয়ের ওয়ালি(মামাকে)এবং মামিকে বিষয়টা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ মিমাংশা করে সংসার শুরু করানোর কথা বলা হলে মেয়ের বাবা মা অত্যধিক ক্ষিপ্ত হয়ে যায় যে মেয়ের মামাকে ও মামিকে কেন জানানো হলো।তীব্র ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়ের ফ্যামিলি অভ্যন্তরীণ মিটিং করে মেয়েকে আর পাঠাবেইনা এমন সিন্ধান্ত নেয় এবং আমার নামে মামলা করবে হুমকি দেয়। পরবর্তী মেয়ে সংসার করার জন্য জোরাজুরি করতে থাকে তার মা বাবার কাছে এবং আমিও আমার মা বাবাকে দিয়ে কল দেওয়ানা বা মিমাংশার চেষ্টা করি।মেয়ের মার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থনাও করি কিন্তু,মেয়ের বাবা মা কোন কল রিসিভ না করে উল্টো মেয়ের সাথে আমার যোগাযোগ সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন রাখতে বলে।অন্যদিকে,মেয়ের মা আমার ফ্যামিলির ফুফু খালা,কলিগ,ভাড়াটিয়া,বাড়িওয়ালা সবার কাছে আমার নামে আর আমার আম্মা আব্বার নামে অকথ্য নোংংরা কথা, যৌতুকলোভী নানান অপবাদ দিতে থাকে।
এসব ঘটনা মেয়ের মা ঘটালেন এতে আমার বাবা ও মা অত্যধিক মনক্ষুন্ন হোন।এরফলশ্রুতিতে, মেয়ের এহেন কর্মকান্ড (ঘর থেকে রাগে বেরিয়ে যাওয়া,রাগে নিজের গায়ে নিজে আগুন দেওয়া,গাড়ির সামনে মরতে যাওয়া,গ্লাস ভেংগে নিজেকে আঘাতের চেষ্টা, স্বামীর সাথে তুই করে অশোভন কথা বলা) ইত্যাদি কারনে সংসার না করানোর সিন্ধান্ত নিতে বলেন আমাকে।আমি সংসার শুরু করার কথা তাদের বুঝাতে থাকি কারণ আমি তাকে দুই তিনদিন চর দিয়েছি বেয়াদবির জন্য এবং আরও কিছু দোষ আমার ও ছিল এসব ভেবে।
পরবর্তীতে মেয়ের মা বাবা চুপ করে থাকে এবং মেয়ে আমার সাথে সম্পুর্ন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে।মেয়ের মামা(ওয়ালি)কে দায়িত্ব দেওয়া হয় যে ছেলের বাবা মা মেনে নিলে আমরা মেয়ে পাঠাবো।

একেতো মেয়ের নানান অপরাধ যা জীবন মৃত্যু হুমকির কাজ অন্যদিকে মেয়ের মা আমার মার নামে নানান অপবাদ পুরো ফ্যামিলিতে জানায়ছে এই অবস্থায় আমার বাবা মা অনড় হয়ে আছেন যে সেই মেয়ে ও তার পরিবারের সাথে সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়।উনারা,এইভাবে বলছেন মেয়েকে নিয়ে আসবো পরবর্তীতে সে নিজে সুইসাইডল এটেম্প নিলে সেখানে ছেলে হিসেবে তুমি যেমন দায়ী হবা তেমনি আমরা নিয়ে আসলাম আমরাও হয়ে যাব দায়ী। আর আমার আম্মা খুব ভালোবাসতেন কিন্তু মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে মেয়ের মা এতে তিনি অনেক কষ্ট পেয়ে আর তাদের সাথে কথা বলবেন না বলেছেন।সম্পর্ক কিভাবে রাখা যায় তাই প্রশ্ন করেছেন আমাকে।

এদিকে প্রাথমিক বিচারের দিন আমি বাবামাকে নিয়ে কেন চলে গেলাম এতে মেয়ের বাবা মাও ক্ষিপ্ত ছিল।উনারাও অপমানিতবোধ করেছেন। পরে ছয় সাত মাস ঝুলন্ত থাকার পর, আমাদের পরিবারের কিছু আত্মীয় মেয়ের পরিবারের সাথে বৈঠকে বসে জানিয়ে দেয় যে সেই মেয়েকে আমরা নিতে পারবনা তথা সংসার শুরু করালে ভবিষ্যতে ক্ষতি দেখা যাচ্ছে।অনেকদূর গড়িয়েছে এই ঝামেলা তাই শান্তিপূর্ণ বিচ্ছেদ আশা করছি। তারাও মেনে নিয়েছিল।কিন্তু আমার মৌন  ইচ্ছা ছিল মেয়ে আমার সাথে যোোগাযোগ করলে ও সংসার শুরু করার কথা জানালে আমি ব্যবস্থা করব। দ্বিতীয় মিটিং এ আমি ও আমার স্ত্রী কেউই উপস্থিত ছিলামনা।

এরপরেও আমি একমাস সময় নিলাম এবং মেয়েকে মেসেজ দিলাম সবকিছুর শেষে তালাক ঠেকাতে এবং উভয়ই সংসার শুরু করতে চাইলে উভয় পরিবার মেনে নিবে আশা করি।দুইজনকে নিয়েই যেহেতু প্রবলেমের সুত্রপাত এবং দুইজনই কমবেশি ত্রুটি করেছি। তাই দুইজন মিলে শুরু করতে চাও কিনা। এভাবে জানিয়ে মেসেজ দিয়েছি।সে মেসেজ দেখলেও কোন রিপ্লাই দেয়নি। বিগত চার পাচ মাস সে কোন যোগাযোগ রাখেনা। গত মাসে মিটিং হওয়ার পরে ফয়সালা হয়ে যাওয়ার পরেও আমি এই একমাসে তিনবার মেসেজ দিয়েছি কিন্তু তার রেস্পন্স নাই। অতঃপর দীর্ঘ দশমাসের এই ঝামেলা(ঝগড়াঝাটি) চলমান তা নিরসনের লক্ষ্যে গত পরশু তিনজন সাক্ষীর উপস্তিতিতে তালাক পত্র স্ত্রীর বাসায় প্রেরণ করি।

প্রশ্ন:-

১/উপরের ঘটনার প্রেক্ষিতে বাবা মার ও মুরব্বিদের মতামত নিয়ে তালাক দেওয়া আমার জন্য কি গুনাহের কোন কারণ হয়েছে? বাবা মার এই হুকুম পালন কি সঠিক হলো?

২/ এতো কিছু করার পরও সংসার বাচানোর চেষ্টা কিন্তু মেয়ে ও তার পরিবার আমার নামে অভিশাপ দিলে তা কি আমার জন্য ক্ষতি হবে? ব্যক্তিগতভাবে আমি সবাইকে মাফ করে দিব মন থেকে।

৩/ আমার ভুলত্রুটির জন্য মেয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম বিগত মাসগুলোতে। এরপরও নানান ঘটনার ফলশ্রুতিতে সংসার টিকলনা।এখন আমি স্মৃতি থেকে মুছে নতুনভাবে সবকিছু শুরু করতে চাই আল্লাহর উপর ভরসা করে।পাস্টের তিক্ত চিন্তায় মাঝেমধ্যে মা বাবার সাথে রাগ করছি। কিন্তু, এসব স্মৃতি থেকে বেরিয়ে কিভাবে সামনে আগাবো নসিহত চাই হুজুর।

বারাকাআল্লাহু ফিকুম।

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/77523 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া কোন মহিলা তার স্বামী থেকে তালাক চাওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلَاقًا فِيْ غَيْرِ مَا بَأْسٍ ؛ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْـجَنَّةِ.

‘‘যে কোন মহিলা কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া নিজ স্বামীর নিকট তালাক চাইলো তার উপর জান্নাতের সুগন্ধি হারাম হয়ে যাবে’’। (আবূ দাউদ ২২২৬; তিরমিযী ১১৮৭; ইব্নু মাজাহ্ ২০৫৫)

সাওবান (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمُخْتَلِعَاتُ ؛ هُنَّ الـمُنَافِقَاتُ.

‘‘(কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া) কোন কিছুর বিনিময়ে তালাক গ্রহণকারিণী মহিলারা মুনাফিক’’। (তিরমিযী ১১৮৬)

তবে কোন মারাত্মক সমস্যা দেখা দিলে কোন কিছুর বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক গ্রহণ করা যেতে পারে।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা হাবীবা বিন্তে সাহ্লকে তার স্বামী সাবিত বিন্ ক্বাইস বিন্ শাম্মাস মেরে তার একটি হাড় ভেঙ্গে ফেলে। ভোর বেলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ ব্যাপারে জানানো হলে তিনি সাবিতকে ডেকে পাঠালেন। অতঃপর বললেন: তুমি তার (তার স্ত্রী) কাছ থেকে কিছু সম্পদ নিয়ে তাকে ছেড়ে দাও। সাবিত বললেন: এমনকি চলে হে আল্লাহ্’র রাসূল! তিনি বললেন: হ্যাঁ, চলে। তখন সাবিত বললেন: আমি তাকে দু’টি খেজুরের বাগান দিয়েছি। এখনো তা তারই দখলে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: বাগান দু’টি নিয়ে তাকে ছেড়ে দাও। অতঃপর সাবিত তাই করলেন। (আবূ দাউদ ২২২৮)

স্বামী ও স্ত্রীর উপর শরয়ী যেসব বিধানাবলী মানা আবশ্যক। তা যদি উভয়ের পক্ষে একসাথে বসবাস করে মানা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাইতে পারে। যেমন-

১.স্বামীর অধীনে থেকে শরয়ী পর্দা, নামায ইত্যাদি আবশ্যকীয় ইবাদত আদায় করা অসম্ভব হয়ে পড়া।

২.স্বামী স্ত্রীর আবশ্যকীয় জরুরত তথা বাসস্থান, খানা, পোশাক ও শারিরীক প্রয়োজন পূরণে অক্ষম হয়ে যাওয়া।

৩.স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর উপর জুলুম করা। প্রহার করা, গালাগাল করা, অপমান করা ইত্যাদি।

৪.স্ত্রী থেকে স্বামীর ছয় মাসের অধিক সফরে চলে যাওয়া। এতে স্ত্রীর ফেতনা পতিত হবার আশংকা হলে স্ত্রী তালাক চাইতে পারে।

৫.স্বামী শরীয়ত গর্হিত অশ্লীল কাজে নিমগ্ন হয়ে পড়লে।

৬.স্ত্রীকে তার পিতামাতার সাথে দেখা সাক্ষাতে বাঁধা প্রদান করলে।

৭.বনিবনা না হয়। রুচির ভিন্নতার কারণে সংসারে অশান্তি অমিল হলে। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হলে।

ইত্যাদি কারণে স্ত্রী তার স্বামীর কাছে তালাক চাইতে পারে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
উপরের ঘটনার প্রেক্ষিতে বাবা মা ও মুরব্বিদের মতামত নিয়ে তালাক দেওয়া আপনার জন্য গুনাহের কোন কারণ হয়নি। বাবা মার এই হুকুম পালন সঠিক হয়েছে। 
এক্ষেত্রে তালাক দেয়া আপনার জন্য বৈধ হয়েছে।

(০২)
ক্ষতি হবেনা,ইনশাআল্লাহ। 
তদুপরি বালা-মুসিবত থেকে হেফাজতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।

(০৩)
এক্ষেত্রে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে অন্যত্রে বিবাহ করবেন।
পূর্বের ন্যায় আর কোনো ভুল গুলো যেনো না হয়,সেদিকে সজাগ থাকবেন।
স্ত্রীকে সময় দিবেন, সযত্নে রাখবেন।
পূর্ণ মুহাব্বত করবেন, সংসার যেনো আজীবন  টিকিয়ে থাকে,এই মর্মে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...