আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
327 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (10 points)
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
১, যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে জুমার সানী আযান ও
খুতবা দেওয়া জায়েয হবে কি?
২,সলাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে
আযান দিলে তা কি জায়েয হবে না পুনরায় দোহরাতে হবে?

৩, যোহরের ওয়াক্ত শুরুর পূর্বে  অর্থাত্ সূূর্য যখন
ঠিক মাথার উপর অর্থাত্ মধ্যাহ্নের সময় কেউ যদি দুখলুল মাসজিদের সলাত আদায় করে তা কি জায়েয হবে?

আর এসকল মাসআলাতে যদি ইখতিলাফ থেকে থাকে তা উল্লেখ করলে ভালো হয়

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
জোহরের ওয়াক্ত যখন আর জুমআর ওয়াক্ত একই।
অর্থাৎ যখন থেকে জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়,তখন  থেকেই জুমআর ওয়াক্ত শুরু হয়।
,
শরীয়তের বিধান হলো ওয়াক্ত আসার পূর্বে (সূর্য  ঢলে যাওয়ার পূর্বে)  জুমআর আযান দেওয়া গ্রহনযোগ্য নয়।
,
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন 
 ۚ اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا ﴿۱۰۳﴾
নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য
,
এখানে নির্ধারিত সময় বলতে, সালাতের জন্য আল্লাহ কর্তৃক প্রত্যেক সালাতের জন্য নির্ধারিত ওয়াক্তসমূহকে বোঝানো হয়েছে। এখানে সে ওয়াক্তসমূহ বলে দেয়া হয়নি। পক্ষান্তরে অন্য আয়াতে সেগুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করুন এবং ফজরের সালাত নিশ্চয়ই ফজরের সালাত উপস্থিতির সময়।” [সূরা আল-ইসরা: ৭৮] 

পাশাপাশি হাদীসে সালাতের ওয়াক্তের বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সালাতের প্রথম ও শেষ সময় রয়েছে। যোহরের সালাতের প্রথম সময় হচ্ছে যখন সূর্য হেলে যাবে। আর শেষ সময় হচ্ছে, আসরের ওয়াক্ত প্রবেশ করা পর্যন্ত। অনুরূপভাবে আসরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন এর ওয়াক্ত হবে। আর তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত। তদ্রুপ মাগরিবের প্রথম সময় হচ্ছে যখন সূর্য ডুবে যায়। তার শেষ সময় হচ্ছে, যখন দিগন্ত রেখা চলে যায়। আর এশার প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন দিগন্ত রেখা চলে যায়। আর শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে, মধ্য রাত পর্যন্ত। ফজরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন সুবহে সাদিক উদিত হয়। আর শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন সূর্য উদিত হয়। [তিরমিযী ১৫১]
,

"شرط في أدائها الخ دخول لوقت واعتقاد دخوله".(درمختار)
"لوقت أي وقت المکتوبة واعتقاد دخوله أو ما یقوم مقام الاعتقاد من غلبة الظن، فلو شرع شاکاً فیه لاتجزیه". (رد المحتار، باب شروط الصلاة، ج۱ ص ۴۲۱۔ط: س
সারমর্মঃ  আদায় ছহীহ হওয়ার শর্ত হলো ওয়াক্ত দাখিল হওয়া,,, 

والرابع: الخطبة فیہ فلو خطب قبلہ وصلی فیہ لم تصح (شامي: ۳/۱۹)
সারমর্মঃ যদি কেহ ওয়াক্ত আসার পূর্বেই খুতবা দেয়,নামাজ পড়ে,তাহলে তাহা ছহীহ হবেনা।   
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে জুমার সানী আযান ও খুতবা দেওয়া ছহীহ হবেনা।
,
কেহ যদি এমনটি করে,তাহলে ওয়াক্ত আসার পর পুনরায় আযান+খুতবা আদায় করতে হবে।
,
 
(০২)
সালাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে
আযান দিলে তা জায়েয হবে না,বরং  তাহা পুনরায় দোহরাতে হবে।

আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “নামাযের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে।” (বুখারী ৬২৮নং, মুসলিম, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান)

আযান যেন নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে না হয়। যেহেতু ওয়াক্তের পূর্বে আযান যথেষ্ট নয়। (মুগনী ১/৪৪৫) পূর্বে দিয়ে ফেললে ওয়াক্ত হলে পুনরায় আযান দেওয়া জরুরী। (আউনুল মা’বূদ ২/১৬৬) 

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ بِلَالًا أَذَّنَ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ، فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَرْجِعَ

হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় হযরত বেলাল রাঃ একদা ফজরের সময় হবার আগেই আজান দিলেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনরায় আজান দিতে আদেশ করলেন। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-৫৩২, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৮৬৪, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৯৫৪]
,

عَنْ بِلَالٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: «لَا تُؤَذِّنْ حَتَّى يَسْتَبِينَ لَكَ الْفَجْرُ هَكَذَا» وَمَدَّ يَدَيْهِ عَرْضًا، (سنن ابى داود، رقم الحديث-1171)
হযরত বিলাল রাঃ বলেন রাসুল তাকে আদেশ করেছেন যে ফজর স্পষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত আযান দিওনা। 


(وَإِنْ أَذَّنَ قَبْلَ دُخُولِ الْوَقْتِ لَمْ يُجْزِهِ وَيُعِيدُهُ فِي الْوَقْتِ) لِأَنَّ الْمَقْصُودَ مِنْ الْأَذَانِ إعْلَامُ النَّاسِ بِدُخُولِ الْوَقْتِ فَقَبْلَ الْوَقْتِ يَكُونُ تَجْهِيلًا لَا إعْلَامًا وَلِأَنَّ الْمُؤَذِّنَ مُؤْتَمَنٌ قَالَ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – «الْإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَنٌ اللَّهُمَّ أَرْشِدْ الْأَئِمَّةَ وَاغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَ» وَفِي الْأَذَانِ قَبْلَ الْوَقْتِ إظْهَارُ الْخِيَانَةِ فِيمَا ائْتُمِنَ فِيهِ وَلَوْ جَازَ الْأَذَانُ قَبْلَ الْوَقْتِ لَأَذَّنَ عِنْدَ الصُّبْحِ خَمْسَ مَرَّاتٍ لِخَمْسِ صَلَوَاتٍ وَذَلِكَ لَا يُجَوِّزُهُ أَحَدٌ (المبسوط للسرخسى-1/134)
সারমর্মঃ ওয়াক্ত আসার আগে আযান দেওয়া হলে তাহা যথেষ্ট নেই।  
,
★তবে ফজর নামাজের আযানের ক্ষেত্রে কিছু ইসলামী স্কলারদের মতবিরোধ রয়েছে।
তারা বলেন যে ফজরের নামাজের আযান ওয়াক্ত আসার পূর্বেই জায়েজ আছে।  
তাদের মতানুসারী গন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন। 
কোনো সমস্যা নেই।            
,
(০৩)
হাদীস সূত্রে জানা যায়, তিন সময়ে নামাজ পড়া নিষেধ।  

উকবা বিন আমের জুহানী রাযি. বলেন,

ثَلاثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَنْهَانَا أَنْ نُصَلِّيَ فِيهِنَّ أَوْ أَنْ نَقْبُرَ فِيهِنَّ مَوْتَانَا : حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتَّى تَرْتَفِعَ وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ حَتَّى تَمِيلَ الشَّمْسُ وَحِينَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ حَتَّى تَغْرُبَ

তিনটি সময়ে রাসুল ﷺ আমাদেরকে নামাজ পড়তে এবং মৃতের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়; যতোক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। যখন সূর্য অস্ত যায়। (সহীহ মুসলিম ১৩৭৩)

(الفصل الثالث فی بیان الأوقات التی لا تجوز فیہا الصلاة وتکرہ فیہا)ثلاث ساعات لا تجوز فیہا المکتوبة ولا صلاة الجنازة ولا سجدة التلاوة إذا طلعت الشمس حتی ترتفع وعند الانتصاف إلی أن تزول وعند احمرارہا إلی أن یغیب إلا عصر یومہ ذلک فإنہ یجوز أداوٴہ عند الغروب۔ ( الفتاوی الہندیة :۵۲/۱)قال الحصکفی : (وکرہ) تحریما، وکل ما لا یجوز مکروہ (صلاة) مطلقا (ولو) قضاء أو واجبة أو نفلا أو (علی جنازة وسجدة تلاوة)۔۔۔۔وسہو) لا شکر قنیة (مع شروق)۔۔۔(واستواء)۔۔۔ (وغروب، إلا عصر یومہ) فلا یکرہ فعلہ لأدائہ کما وجب۔۔۔(وینعقد نفل بشروع فیہا) بکراہة التحریم (لا) ینعقد (الفرض) وما ہو ملحق بہ کواجب۔۔لعینہ کوتر۔ ( الدر المختار مع رد المحتار : ۳۷۰/۱، کتاب الصلاة ، ط: دار الفکر، بیروت ) 
সারমর্মঃ নিষিদ্ধ ওয়াক্তের মধ্যে জানাযা,সেজদায়ে তিলাওয়াত, ফরজ নামাজ সহ  কোনো নামাজই জায়েজ নয়।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত "" সূূর্য যখন
ঠিক মাথার উপর থাকে,সেও সময় কেউ যদি দুখলুল মাসজিদের সলাত আদায় করে, তাহলে 
তাহা নাজায়েজ। 
,
তবে এক্ষেত্রে কিছু ইসলামী স্কলারদের মতবিরোধ রয়েছে। 
তাদের মতে এটি জায়েজ আছে। 
সুতরাং সেই মতানুসারী গন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন। 
কোনো সমস্যা নেই।                


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...