আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
86 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (30 points)

আসসালামু'আলাইকুম 

আমার বাবা একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছে যে, যারা বিধর্মী তাদের মধ্যে যারা দুনিয়াতে ভালো কাজ করেছে তারা নাকি পরকালে নয় জান্নাত নয় জাহান্নাম এমন জায়গায় থাকবে। যদিও তিনি এই কথা বেশি নিশ্চয়তার সাথে বলেনি, সম্ভবত শুধু অনুমান করে বলেছিলো। তবুও এ ধরনের বিশ্বাস তিনি পালন করেছেন। আমার এ ব্যাপারে কোনো জ্ঞান ছিলো না বলে আমি তখন আর কিছু বলিনি।

এখন আমার প্রশ্ন হলোঃ

১) এ ধরনের কথা কি ঠিক?

২) এখন আমার করণীয় কী? ওনাকে এই ব্যাপারে জানানো উচিত হবে?

مَعَ السَّلَامَة

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ-

কুরআনে বলা হয়েছে-

ومن یبتغ غیر الإسلام دینا فلن یقبل منه ۚ وهو في الآخرۃ من الخسرین

আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কখনোই তার সেই দ্বীন কবূল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান, ৮৫)

والذين كفروا وكذبوا بآياتنا أولئك أصحاب النار هم فيها خلدون

আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। (সূরা বাক্বারা, ৩৯)

إن الذين كفروا وظلموا لم يكن الله ليغفرلهم ولا ليهديهم طريقا إلا طريق جهنم خلدين فيها أبدا وكان ذلك على الله يسيرا

নিশ্চয়ই যারা কুফুরী করেছে এবং কুফুরীর উপর অটল থেকে নিজেদের উপর অত্যাচার করেছে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোনো (ভালো) পথ দেখাবেন না। হ্যাঁ পথ দেখাবেন তবে সেটা হচ্ছে জাহান্নামের পথ যেখানে তারা চিরকাল থাকবে, এবং আল্লাহর জন্য এটা সহজ। (সূরা নিসা, ১৬৯)

আমরা আমাদের চারপাশে এমন অনেক দেখেছি যে, কেউ মূল কর্তব্যে মনোনিবেশ না করে অন্যান্য কাজ ও কর্তব্য নিয়ে পড়ে থাকলে কখনোই এটা সমীচীন মনে করা হয় না যে তাকে বিনিময়টা পরিপূর্ণই দেওয়া হবে, অর্থাৎ মূল কাজসহ অন্যান্য কাজ করলে যতটুকু বিনিময় পাওয়া যেত ততটুকুই সে পাবে।

বরং মূল কাজ না করায় তার তিরষ্কার অথবা শাস্তি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। হ্যাঁ অন্যান্য কাজেরও মূল্যায়ন করা হবে আর সেগুলোর বিনিময়ও পাওয়া যাবে। তবে সেগুলোর মূল্যায়ন ও বিনিময় আর মূল কাজের মূল্যায়ন ও বিনিময়ের মাঝে অনেক তফাৎ আছে, এটা পৃথিবীর সকল চিন্তাশীলরাই সমর্থন করে।

তেমনিভাবে ইসলাম মতে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা প্রতিটি মানুষের জীবনের প্রধান কাজ। বাকী অন্যান্য ধর্মীয় বা জাগতিক কাজগুলো এর তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ। তবে হ্যাঁ, তুলনা না করলে অন্যান্য কাজগুলোও স্বতন্ত্রভাবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তবে ঈমানের মোকাবেলায় সেসব অনেক নিচে। এজন্য দুঃখজনক হলেও সত্য কথাটা হল, অমুসলিমরা আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থই হবে। তবে যেহেতু তারা ভালো কাজও করেছে, তাই সেগুলোর বিনিময় তারা ঠিকই এই জীবনে পেয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ অত্যাচারী নন, তিনি কারো কাজের প্রতিদানই আটকে রাখেন না চায় লোকটা মুসলিম হোক বা অমুসলিম।

এই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عن أنس بن مالك أنه حدث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم إن الكافر إذا عمل حسنة أطعم بها طعمة من الدنيا وأما المؤمن فإن الله يدخر له حسناته في الآخرة ويعقبه رزقا في الدنيا على طاعته

عن أنس بن مالك، قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن الله لا يظلم مؤمنا حسنة، يعطى بها في الدنيا ويجزى بها في الآخرة وأما الكافر فيطعم بحسنات ما عمل بها لله في الدنيا حتى إذا أفضى إلى الآخرة لم تكن له حسنة يجزى بها

আনাস বিন মালেক হতে বর্ণিত আছে যে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, যখন কোনো কাফের ব্যক্তি ভালো কাজ করে তখন দুনিয়াতেই তাকে এর বিনিময়ে প্রতিদান দিয়ে দেওয়া হয়। আর মুমিন ব্যক্তির ভালো কাজগুলোকে তার আখিরাতের জন্য সংরক্ষণ করে রাখেন (অর্থাৎ আখিরাতেই এসবের প্রতিদান দিবেন যা দুর্দান্ত হবে) আর তার আনুগত্যের বিনিময়ে তাকে রিযিক দিয়ে থাকেন।

অন্য বর্ণনায় আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো মুমিন ব্যক্তিকে তার ভালো কাজের ব্যাপারে জুলুম করবেন না। তাকে তার ভালো কাজের বিনিময় দুনিয়াতেও দিবেন, আবার আখিরাতেও দিবেন। আর কাফের ব্যক্তি {আল্লাহর জন্য} যেসকল ভালো কাজ করবে সেগুলোর বিনিময় সে দুনিয়াতেই পেয়ে যাবে। এমনকি সে আখিরাতে চলে যাবে কিন্তু নিজের আর কোনো ভালো কাজ পাবে না যার বিনিময় সে পেতে পারতো। (সহীহ মুসলিম, ২৮০৮ নং হাদীস)

ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো মুসলিম কিংবা কাফির ভালো কাজ করলে আল্লাহ তার প্রতিদান দেন।’’ আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ কাফেরকে কী জাতীয় প্রতিদান দেন?’ রাসূলুল্লাহ উত্তর দেন, ‘‘যদি সে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে বা দান করে কিংবা অন্য কোনো ভাল কাজ করে, তাহলে আল্লাহ এর প্রতিদান তার সহায়-সম্পদে, সন্তান-সন্ততিতে, স্বাস্থ-সুস্থতায় এবং অনুরূপ বিষয়ে দান করেন।’’ আমরা পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, ‘পরকালে সে কী জাতীয় প্রতিদান পাবে?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, ‘‘বড় আযাব হতে ছোট আযাব।’’ [আল মুসতাদরাক আ’লা সহিহাইন: ৩০০১, মুসনাদ বাযযার: ৯৪৫]

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

১. জ্বী না কথাটি মোটিও সঠিক নয়। নিশ্চয়ই যে ঈমানহীন অবস্থায় কবরে যাবে, সে জাহান্নামী হবে। কখনই সে জান্নাতে যেতে পারবে না। তবে, তার ভালো কাজের প্রতিদান অন্য উপায়ে সে পাবে। যেমন: অন্যের প্রতি সহানুভূতি, দুঃখ দূর করা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, মা-বাবার সেবা, সৃষ্টির সেবা, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা ইত্যাদি। কিন্তু, সেই প্রতিদান হয়তো দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তি লাভের মাধ্যমে হবে অথবা পরকালে শাস্তি হালকা হওয়ার মাধ্যমে।

তবে, কোনো অমুসলিম পরকালের চিরস্থায়ী নাজাতকুরআনের ভাষায় চূড়ান্ত সফলতাকখনও পাবে না। কেননা, পরকালে নাজাত তথা মুক্তির জন্য ‘ঈমান’ পূর্বশর্ত। [ফায়দ্বুল বারি: ১/১৩৬, নববি, শারহু মুসলিম: ৩/৮৭]

২. জ্বী আপনি আপনার বাবাকে উপরে উল্লেখিত আলোচনার ভিত্তিতে সঠিক বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করবেন ইনশাআল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...