আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
অনুগ্রহপূর্বক আমার সমস্যাটি বোঝার চেষ্টা করে সমাধান থাকলে তা জানিয়ে আমাকে সাহায্য করবেন ইং শা আল্লাহ।
আমি একটি ছেলেকে বিয়ে করতে চাই। ছেলেটি বর্তমানে কুয়েটে (ইঞ্জিনিয়ারিং) পড়ে আর আমি মেডিক্যাল কলেজে পড়ি। আমাদের পড়াশোনা শেষ হতে এখনো অনেক বছর দেরি। আমরা প্রায় ৫ বছর ধরে পরিচিত। কিন্তু তথাকথিত হারাম রিলেশন আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু আমরা একে অপরের খোঁজ খবর জানতাম। প্রায় ৩ বছর যোগাযোগ না থাকার পরেও গত বছর অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই আবার আমাদের যোগাযোগ হয়, কিন্তু আবারও আমরা গুনাহের ভয়ে দূরে সরে যাই, কথা বলা বন্ধ রাখি। কিন্তু আমরা কিছুতেই একে অপরকে ভুলতে পারি না, একটা টান থেকেই যায়। আমি প্রায় ২-৩ বছর ধরে এ বিষয়টি নিয়ে মানসিক পীড়ায় ভুগছি, আমার সহজাত উৎফুল্লতা হারিয়ে গেছে। চেষ্টা করে , দুআ করে , ডক্টর দেখিয়েও ঠিক হতে পারছি না। কিছুদিন আগে ডক্টর আমাকে বলেছেন আর কোনোভাবে ঠিক না হতে পারলে বিয়ে করতে(এসব কাহিনী না জেনে, এমনিতেই বিয়ে করতে বলেছেন।)
বিয়ে কবে করবো এধরণের ভাবনা আমরা কেউই আগে ভাবি নি। আমাদের বাবা মায়েরা আমাদের উপর অনেক আশা নিয়ে আছেন (দুজনেই বাবা মায়ের বড় সন্তান)। আমরা তাদের কোনোভাবে কষ্ট দিতে চাই না। আমাকে আমার বাবা মা অনেক বিশ্বাস করেন, তারা কষ্ট পাবেন ভেবে আমি কখনো তাদের সেই ছেলেটির কথা বলতে পারিনি। আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন তিনি একজন ডক্টরের সাথেই আমার বিয়ে দিবেন! আমি তখন তাকে বলি যে আমি ডক্টর বিয়ে করতে চাই না, তাকে এ নিয়ে বিভিন্ন অসুবিধার কথা জানাই যে কেন আমার ডক্টর জীবনসঙ্গী পছন্দ নয় কিন্তু তিনি কোনোটাই মানতে চান না( তিনি অতটা প্র্যাক্টিসিং নন, আল্লাহ তাকে হিদায়াত দিন)। সে সময় আমার আম্মু তাকে কিছুটা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে আল্লাহ যার সাথে রেখেছেন তার সাথেই বিয়ে হবে আমরা ঠিক করার কেউ না। এ ঘটনার পর আমি আরো ভয় পেয়ে যাই যে হয়তো আমার বাবা মা সেই ছেলেটিকে মানতে চাইবেন না। কিন্তু আমি সবসময়ই দুআ করতাম যে ছেলেটি যদি আমার জন্য কল্যাণকর হয় তবে যেন আমার জীবনে হালাল ভাবে আসে আর কল্যাণকর না হলে যেনো আমি তাকে ভুলে যাই, আমাদের টান কমে যায়। আমার বাবা মা এ মুহূর্তে আমার বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবেন না, এবং তাদের এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনাও আছে কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু আমি মানসিক পীড়া থেকে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন কিছু করে বসি, মনমরা ভাব, নিজের অযত্ন, অলসতা, কোনকিছুতে মনোযোগ না থাকা, কোনোকিছু ভালো না লাগা ইত্যাদি। সেরকমই হঠাৎ একদিন ছেলেটিকে বলে বসি যে আমাদের কোনো একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে, এভাবে আমি আর চলতে পারছি না। তখনই আমি আমার আম্মুকেও ছেলেটির কথা জানাই। আম্মু শুধু বলেন যে আল্লাহ যা করবেন তাই হবে, এসব ভুলে গিয়ে বর্তমান কাজে মন দিতে। ছেলেটি এরপর আমাকে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করবো কিনা জিজ্ঞেস করে! আমি কখনো ভাবতেই পারিনি যে সে এরকম একটা কথা বলতে পারে। আমি কিছু না ভেবেই বলি যে বাবা মা ছাড়া আমি বিয়ে করবো না। তাতে সে বলে, এরপর সে আর কোনোদিন আমার জীবনে আসবে না, আমিও তাকে সবজায়গা থেকে ব্লক করে দিই। তার সাথে এ বিষয়ে আমার কোনো কথা হয়নি যে সে বিয়ের বিষয়ে বা বাবা মাকে জানানোর বিষয়ে কি ভেবেছিলো। আমি মেনে নিতে চেষ্টা করি যে সে আমার জন্য কল্যাণকর নয়। কিন্তু এরপরই আমার আম্মু আমাকে জানায় যে সে আমার আব্বুর সাথে কথা বলেছে এবং তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সময় হলে, সবকিছু ঠিক থাকলে তারা ছেলেটিকে মেনে নিবেন! আমি আবারও ভেঙে পড়ি, ছেলেটিকে কথাটি জানাই কিন্তু সে অপারগতা প্রকাশ করে যে সঠিক সময় কখন আমরা কেউ জানিনা আর ততদিনে কে কোথায় থাকবো তাও জানি না। সবজায়গায় ব্লকড থাকার পরেও ইমেইল এ ব্লক অপশন না থাকায় সেখানেব যোগাযোগের অপশন ছিলো। আবারও আমাদের কিছু কথা হয়, আমাদের মনে হয় আমরা কেউই কাউকে ভুলতে পারবো না। আমি আবারও ভাবতে বসি যে আল্লাহ আসলে কি চান! কেন এত দুআ করার পরেও, দূরে সরার চেষ্টা করার পরেও আমরা দূরে সরতে পারছি না। আমাদের টান কমার বদলে আরো বাড়ছে, আমিও তাকে চাই সেও আমাকে নিজের জীবনে চায় । তাকে আমি বলি যে আমরা আরেকবার ভাবতে পারি কিনা নিজেদের নিয়ে। সে আমাকে সবসময় ই হারিয়ে ফেলার ভয় করতো, পাবে না এমন মনে করতো। সে আমাকে জানায় যে সে এমন কিছু খারাপ স্বপ্ন দেখেছে যাতে তার ভয় হয়েছে হয়তো আমি তার জন্য কল্যাণকর না। সে এর আগেও পরপর ৩ বার স্বপ্নে দেখেছিলো যে তার বুয়েটে চান্স হয়নি, এবং আসলেই হয়নি। আমাকে নিয়েও তাই তার একই ভয়। আবার সে নাকি এমনও ইঙ্গিত পেয়েছে যে তার জীবনসঙ্গী কুয়েটের ই কেউ হবে। অথচ আমার প্রতিও তার গভীর অনুভব, দুজনেরই দুজনকে খুব আপন মনে হয়। আবার আমি তাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারি না, আমাকে আরো দুয়েকজন বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, ডক্টর বা অন্য পেশার (যদিও অতটা জোরালো ভাবে কিছু আগায় নি)। আমি তাদের প্রতি কোনোই আগ্রহ অনুভব করতে পারিনি। আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে যেমন মানুষ চাই, দীনদার, সুন্নাহ অনুযায়ী চলে এমন.. এসবকিছুই আমি ছেলেটির মাঝে খুঁজে পাই। বারবার চিরতরে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আমার মধ্যে একটা বিশ্বাস খুঁজে পাই যে তাকেই আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবো।
এমতাবস্থায় আমাদের কি করা উচিৎ? আমরা এরপরে বাবা মাকেও আর কিছু জানাই নি, ছেলেটির বাবা মা মেনে নিবে কিনা সেটাও জানিনা। আর মেনে নিলেও সময়টা এখন হবেনা, এ মুহূর্তে কারো বাবা মা- ই হয়তো বিয়ে দিতে চাইবেন না। কিন্তু আমরা গুনাহ থেকে বাঁচতে চাই, দুজনে দূরে থেকে এত বছর ধরে যে কষ্ট পাচ্ছি তা থেকে মুক্তি পেতে চাই।