بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
وَإِذَا
قُرِىءَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
যখন কোরআন তিলাওয়াত করা হয়,
তখন তোমরা তা শোন এবং চুপ থাক,
যেন তোমাদের উপর করুণা করা হয়। (সূরা আ’রাফ
২০৪)
হাদিস শরিফে এসেছে,
আবু হোরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ
اسْتَمَعَ إِلَى آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ تَعَالَى ، كُتِبَ لَهُ حَسَنَةٌ
مُضَاعَفَةٌ ، وَمَنْ تَلَاهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
যে ব্যক্তি কোরআনের একটি আয়াত
মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে, তার
জন্য বহুগুণ বর্ধিত সাওয়াব লিখা হবে। আর যে ব্যক্তি তা তেলাওয়াত করবে,
তার জন্য এই আয়াতটি কিয়ামতের দিন নূরে
পরিণত হবে। (মুসনাদে আহমদ ৮৪৯৪)
প্রখ্যাত তাবেয়ী খালিদ ইবনু
মা’দান (১০৩ হি) বলেন,
إِنَّ
الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ لَهُ أَجْرٌ ، وَإِنَّ الَّذِي يَسْتَمِعُ لَهُ
أَجْرَانِ
যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত
করেন, তার
জন্য রয়েছে একটি পুরস্কার। আর যিনি তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করেন,
তার জন্য রয়েছে দুটি পুরস্কার। (সুনানুদ
দারিমী ২/৫৩৬)
বিভিন্ন কাজের ফাঁকে কোরআন
তেলাওয়াত শোনা নিষেধ নয় তবে উচিত নয়। কেননা, কাজে ব্যস্ত থাকার সময় কোরআন তেলাওয়াত শোনার ক্ষেত্রে
তেলাওয়াতের প্রতি মনোযোগ থাকে না। অথচ যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন তা মনোযোগসহ শ্রবণ
করা আবশ্যক। (ফাতওয়ায়ে শামী-১/৫১০)
সুতরাং আপনি যদি কুরআনের রেকর্ড
ছেড়ে তা শুনতে শুনতে অন্য কাজ করেন, তবে তাতে গুনাহ হবেনা, কুরআনের
আদবের খেলাফ হবেনা। তবে এমনটি না করে মনোযোগ সহকারে কুরআন শোনাই উত্তম।
ইমাম বাইহাকী এই মর্মে অনুচ্ছেদ
রচনা করেছেন:
فصل في رفع
الصوت بالقرآن إذا لم يتأذ به أصحابه، أو كان وحده، أو كانوا يستمعون له
البيهقي في
الشعب)
“অনুচ্ছেদ: যখন সঙ্গী-সাথীদেরকে
কষ্ট না দেওয়া হবে অথবা যখন একাকী থাকবে এবং অন্যান্য লোকজন মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবে
তখন কুরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে আওয়াজ উঁচু করা।” (বাইহাকী,
শুআবুল ঈমান)
মাইকে কুরআন প্লে করার কারণে
আশেপাশে অবস্থানকারী লোকদের মধ্যে অসুস্থ, শিশু এবং বাড়িতে যে সব মানুষ তাসবিহ,
তাহলিল, জিকির, দুআ, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত করে ও ইসলামি বই পড়ে তারা ডিস্টার্ব অনুভব করে।
এতে বাড়িতে অসুস্থ ও ছোট বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
এভাবে বাধ্য করে কুরআন তিলাওয়াত
শুনানোর কারণে হয়ত কারো মনে কুরআন ও ইসলামের প্রতি বিরক্তি ও বিরূপ মনোভাবও সৃষ্টি
করতে পারে।
হাদিসে পার্শবতী ব্যক্তির
সালাত, কুরআন
তিলাওয়াত, দুআ-তাসবিহ
ইত্যাদি ইবাদতে যেন বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সে জন্য উচ্চ আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ
করা হয়েছে। যেমন:
عن أبي سعيدٍ
قالَ اعتَكفَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليْهِ وسلَّمَ في المسجدِ فسمِعَهم
يجْهَرونَ بالقراءةِ فَكشفَ السِّترَ وقالَ ألا إنَّ كلَّكم مُناجٍ ربَّهُ فلا
يؤذِيَنَّ بعضُكم بعضًا ولا يرفعْ بعضُكم على بعضٍ في القراءةِ أو قالَ في
الصَّلاةِ.
আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণনা
করেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে (মসজিদে নববী) ইতিকাফ করছিলেন। এমন সময় তিনি
শুনতে পেলেন, লোকেরা
উঁচু স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করছে। তখন তিনি পর্দার কাপড় সরিয়ে তাদের লক্ষ্য করে বললেন,
“মনে রাখবে,
তোমাদের সবাই তার পালনকর্তার সঙ্গে একান্ত
আলাপচারিতায় নিমগ্ন রয়েছ। অতএব তোমাদের একজন অপরজনকে কষ্ট দিবে না এবং তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে
(অথবা তিনি বলেছেন: সালাতের ক্ষেত্রে) একজন অপরজনের উপর আওয়াজ উঁচু করবে না।”
[সুনানে আবু দাউদ,
হাদিস: ১৩৩২;
সহীহ ইবনে খুযাইমা,
হাদিস: ১১৬৫;
মুসনাদে আহমদ,
হাদিস: ১১৮৯৬;
মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৩১০]
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী
ভাই/বোন!
উপরে উল্লেখিত বিবরণ থেকে
একথা স্পষ্ট যে, কুরআনের
আদবসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি আদব মনোযোগ সহকারে কুরআন শ্রবণ করা। যে তিলাওয়াত শুনেত
আগ্রহী তাকে শুনানো যেতে পারে এবং এটি শরিয়ত সম্মত। কিন্তু তেলাওয়াতের মাধ্যমে কাউকে বিরক্ত করা বা কষ্ট দেওয়া শরিয়ত
সম্মত নয়।
সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে
কাউকে জোরপূর্বক সিজদার আয়াত শুনানো আদবের খেলাফ। অন্যকে বিরক্ত করা বা কষ্ট দেওয়ার
উদ্দেশ্যে এভাবে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সওয়াবের স্থলে গুনাহ হবে। তবে কোন ছাত্র যদি এক
মজলিসে এক/একাধিক শিক্ষার্থী থেকে
তেলাওয়াতে সেজদার কোনো এক আয়াতকে বারংবার শ্রবণ করেন করেন,
তাহলে এক সেজদাই ওয়াজিব হবে। আর যদি কয়েক
মজলিসে একই আয়াতকে বারংবার শ্রবণ করেন, তাহলে কয়েক সেজদা ওয়াজিব হবে। তেলাওয়াতকারী ও শ্রবণকারী
উভয়ের ক্ষেত্রে একই হুকুম। সিজদা ওয়াজিব হওয়ার পর আদায় না করলে উভয়ে গুনাহগার হবে। যদিও শ্রবণকারীর বাহ্যিক কোন দোষ নেই। কিন্তু তেলাওয়াত শ্রবণের কারণে তার উপর সিজদা ওয়াজিব হবে।
বি:দ্র:রা শরিয়ত অসমর্থিত এমন কাজে লিপ্ত তাদেরকে বুঝানো উচিত, তারা যেন এজাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকে।