আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
523 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (63 points)
শুনেছি হাওয়া (আ.) কে আদম (আ.) এর পাজরের হাড় থেকে বানিয়েছে আল্লাহ।

সকল নারীদের ক্ষেত্রেও কি তাই? তাদের স্বামীর পাজর থেকে বানানো হয়েছে।

কার সাথে কার বিয়ে হবে এটা কি পূর্ব নির্ধারিত?

1 Answer

0 votes
by (566,160 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
শুরুতেই এ সংক্রান্ত হাদীসটি দেখে নেইঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَرِيقَةٍ، فَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَبِهَا عِوَجٌ، وَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا، كَسَرْتَهَا وَكَسْرُهَا طَلَاقُهَا

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নারীকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। সে তোমার জন্য কখনোই সোজা হবে না। তার দ্বারা কাজ আদায় করতে হলে এই  বাঁকা অবস্থায়ই আদায় করতে হবে। এটি সোজা করতে গেলে ভেঙ্গে যাবে। ভাঙ্গার অর্থ হল তালাক ঘটে যাওয়া। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৬৮]
,
হাদীসে নারীদের পাজরের হাড় দ্বারা তৈরীর কথা এসেছে। কিন্তু কার পাজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে? তা হাদীসে বর্ণিত হয়নি।
সুতরাং না বুঝার কারণে অনেকে মনে করেন, স্বামীর পাজরের হাড় দিয়ে স্ত্রীকে তৈরী করা হয়েছে।
একথাটি সম্পূর্ণ গলদ।
একথার কোন ভিত্তি নেই।
,
হ্যাঁ, হযরত হাওয়া আলাইহিস সালামকে হযরত আদম আঃ এর পাজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। একথা সত্য।
,
কিন্তু এর মানে সকল স্ত্রীলোককে তার স্বামীর পাজরের হাড় দিয়ে তৈরী করার দাবীটি অযৌক্তিক ও বানোয়াট।
একেতো এর পক্ষে কোন দলীল নেই। দ্বিতীয়ত এটি যুক্তিহীন কথা। কারণ, যে সকল মেয়ে বাচ্চা শিশুকালেই মারা গেছে, বা বিবাহ ছাড়াই মারা গেছে, তাদের কার হাড় দিয়ে তৈরী করা হল?
তাদেরতো স্বামীই ছিল না দুনিয়াতে। তাহলে?
সুতরাং স্বামীর পাজরের হাড় দিয়ে তৈরী করা হয়েছে স্ত্রীদের এ দাবীটিই যেহেতু ভুল। তাই আপনার উপরোক্ত প্রশ্নেরই আর কোন যৌক্তিকতা বাকি থাকে না।
(ফাতওয়া বিভাগ তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।)
,
হাদীসটির ব্যাখ্যা কী?
হাদীসে যে পাজরের হাড় দিয়ে তৈরীর যে কথা বলা হয়েছে। এর দ্বারা দু’টি উদ্দেশ্য হতে পারে। যথা-
এটি কেবলি একটি উপমা। সত্যিই পাজরের হাড় দ্বারা তৈরী হওয়া উদ্দেশ্য নয়। নারীদের একটি সৌন্দর্য হল, তারা সাধারণতঃ একটু কথায় আচরণে বাঁকা স্বভাবের হয়ে থাকে। এটি সর্বক্ষেত্রে তাদের দোষ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই সৌন্দর্য।
নারীরা বাবা আদম আঃ এর পাজরের হাড় দ্বারা তৈরী। স্বামীর পাজরের হাড় দ্বারা নয়। [তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম-১/১৩৭-১৩৮]

قوله: «خُلِقَت مِن ضِلع» هذا يحتمل أن يكون تشبيها، ويؤيده ما مر في الرواية السابقة من التصريح بحرف الكاف، ويحتمل أن يكون بيان أن المرأة قد خلقت من ضلع آدم عليه السلام. قال النووي: «وفيه دليل لما يقوله الفقهاء أو بعضهم إن حواء خلقت من ضلع آدم».
قال العبد الضعيف عفا الله عنه: كأن النووي رحمه الله يشير إلى قول الإمام الشافعي رحمه الله: “إن الله تعالى لما خلق آدم خلقت حواء من ضلعه القصير، فصار بول الغلام من الماء والطين، وصار بول الجارية من اللحم والدم” أخرجه ابن ماجه في باب بول الصبي الذي لم يطعم.
ولكنه ليس قولا للفقهاء فقط، وإنما هو مروي في عدة آثار، فقد أخرج ابن إسحاق في المبتدأ عن ابن عباس: “أن حواء خلقت من ضلع آدم الأقصر الأيسر وهو نائم”، وكذا أخرجه ابن أبي حازم وغيره من حديث مجاهد، ذكرهما الحافظ في الفتح (تكملة فتح الملهم، كتاب الرضاع، بَابُ الْوَصِيَّةِ بِالنِّسَاءِ-1/137-138، رقم الحديث-3631)

সারমর্মঃ নারীরা বাবা আদম আঃ এর পাজরের হাড় দ্বারা তৈরী। স্বামীর পাজরের হাড় দ্বারা নয়।

,
(০২)

আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا [٧٨:٨
আমি তোমাদেরকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছি, {সূরা নাবা-৮}

সুতরাং বুঝা গেল জীবনসঙ্গী কে হবে? তা আল্লাহ তাআলা জানেন। কিন্তু বান্দা জানে না। তাই বান্দা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে ভাল পাত্রি/পাত্র দেখে বিবাহ করতে। এটি তাকদীরের বিষয়। 
(ফাতওয়া বিভাগ তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।)

তাকদীর বিষয়ে আলোচনা করতে রাসূল সাঃ নিষেধ করেছেন।

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى عَائِشَةَ، فَذَكَرَ لَهَا شَيْئًا مِنَ الْقَدَرِ، فَقَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ تَكَلَّمَ فِي شَيْءٍ مِنَ الْقَدَرِ سُئِلَ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيهِ لَمْ يُسْأَلْ عَنْهُ»

হযরত ইয়াহইয়া বনি আব্দুল্লাহ বিন আবী মুলাইকা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি একদা হযরত আয়শা রাঃ এর নিকট গেলেন। তখন তিনি তাকদীর বিষয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেন, তখন হযরত আয়শা রাঃ বলেন, আমি রাসুল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি তাকদীর বিষয়ে কথা বলে, কিয়ামতের ময়দানে এ কারণে সে জিজ্ঞাসিত হবে। আর যে এ বিষয়ে আলোচনা না করবে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে না। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৪}

والقدر سر من أسرار الله تعالى، لم يطلع عليه ملكا مقربا ولا نبيا مرسلا، ولا يجوز الخوض فيه، والبحث عنه بطريق العقل، (مرقاة المفاتيح، كتاب الإيمان، باب الإيمان بالقدر-1/256
সারমর্মঃ তাকদীর আল্লাহ তায়ালার গোপন ভেদ হতে,যেটা সম্পর্কে কেউ জানেনা। 



(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...