আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
345 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (12 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
হুজুর,আমার বিয়ে হয়েছে ৮ মাস আগে।আমার স্বামীর চাকরীসূত্রে আমরা ২জন একসাথে পরিবার থেকে দূরে আলাদা বাসায় থাকি। আলহামদু লিল্লাহ,আমি বিয়ের আগে থেকে দীন মানার চেষ্টা করি।আমার স্বামীর দীনের বুঝ খুব কম।সে সকাল ১০টা থেকে অফিস করে প্রায় দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত।আসতে আসতে কখনও বিকেল,কখনও সন্ধ্যা,কখনও রাত হয়। আমি সকালে পড়াশুনা করি,দুপুরে ঘরের কাজ,বিকেলে কুরআন পড়াই,রাতে আলেমা কোর্সের ক্লাস করি।এর ফাঁকেই স্বামীকে সময় দেই,ঘরের অন্যান্য কাজ করি। যখন ভালোভাবে অবসর হই,তখন ভালোভাবেই সময় দেয়ার চেষ্টা করি।

বিয়ের পর ৩/৪মাস সমস্যা ছিল না।আমি তাকে সময় দেয়ার জন্য মোবাইল ব্যবহার বন্ধই রেখেছিলাম।যেহেতু মাত্র বিয়ে হলো।তখন ১ম দিকে ভালো সময় গেলেও পরে দেখা গেছে আমি অবসর থাকা সত্ত্বেও আমাকে সময় খুব কম দিত।অফিস থেকে এসেই মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকতো।অথচ আমি ওর জন্য ফ্রি হয়ে বসে থাকতাম। সেজন্য আমি তাকে বুঝিয়েছি,কান্নাকাটি করেছি।কোনো দিন শুনেছে,বেশিরভাগ দিন ঐ একই অবস্থা।এ অবস্থায় ২ মাস যাওয়ার পর অর্থাৎ বিয়ের ৬ মাস পর অনলাইনে উক্ত রুটিনে পড়াশুনা শুরু করেছি।এ ব্যাপারে সে কোনো অভিযোগ করে নি।

১.এখনও আমি ফ্রি থাকলেও বেশিরভাগ সময় সে মোবাইল নিয়ে থাকে।অফিস থেকে আসলে আমি ফ্রি হয়ে তার পাশে বসে থাকি আর সে মোবাইল টিপছে।ফেসবুকে অত্যন্ত আসক্তি।এখন আমার কি করণীয় হুজুর?

২.এটা ১নং এর চেয়ে বড় সমস্যা-

দিনের বেলা+রাতে শোয়ার আগ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কথাবার্তা কম হলেও বলে।আমার খুব বেশি কষ্ট হয় না।অভ্যাস হয়ে গেছে।কিন্তু ফোনের প্রতি আসক্তি থেকে সে প্রায় ২ মাস যাবৎ রাতে শোয়ার সময় আমার সাথে ৯০%দিন কোনো কথা ছাড়াই চুপ করে অন্যপাশ হয়ে ফোন চালাতে থাকে।আমি ঘুমিয়ে যাবার পরও সে রাত ২টা/৩টা/এমনকি ফজরের আযান পর্যন্ত ফোন চালায়।ফেসবুক,ইউটিউব। আমি বেশ কয়েকদিন টের পেয়েছি,দেখেছি ফোন নিয়ে বাথরুমে যায়।প্রমাণিত হয়েছে এবং সে নিজেও স্বীকার করেছে যে,পর্ণ দেখে হস্তমৈথুন করে।আমি এত কষ্ট পেয়েছি,বুঝিয়েছি,রাগারাগিও করেছি এত রাতে ঘুম চোখে নিয়ে কান্নাকাটিও করেছি। কয়েকদিন পর বলে যে,এটা তার বিয়ের আগেরই অভ্যাস।এটা ছাড়ার চেষ্টা করবে।ফোনে ভালো কিছু দেখতে দেখতে রাত গভীর হয় আর একসময় মেয়েদের নগ্ন ছবি চলে আসে,তখন আগের অভ্যাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। অল্পদিন যেতে না যেতেই আবার। যেদিনই সে এ কাজ করে,সেদিনই আল্লাহর ইচ্ছায় এত রাতেও আমি টের পাই।হয় শেষে,না হয় শুরুতে।শুরুতে বুঝলে বাথরুমের দরজায় জোরে নক করি।সেদিন আর করতে পারে না।ছাড়ার চেষ্টা করবে বলেও সে বারবার এ কাজ করে যাচ্ছে।অথচ আমাদের শারীরিক সম্পর্কে কোনো সমস্যা নেই।চেহারা সুরতও খারাপ নয়।নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছে।(তবে আমার ব্রেস্ট তুলনামূলক অনেক ছোট হওয়ায় তার একটা অভিযোগ আছে মনে মনে,এর সাথে ইউটিউবের কী সম্পর্ক?সে বলেছে যে,এরকম আমার কোনো কমতির কারণে এসব করছে না,আগে অভ্যাস ছিল তাই হচ্ছে)।কাউকেই কিছু জানাই নি।আমি তো সংশোধনের সুযোগ দিয়েছি।আমার কান্না,আমার কষ্ট দেখে তার কোনোই গায়ে লাগছে না।রাগারাগিতেও কাজ হচ্ছে না।বারবার এমন করছে।এখন কী করণীয়?

৩.এটা ২ নং এর চেয়েও বড় সমস্যা-

যদিও কোনদিনও আশা করিনি আমার স্বামী এমন হবে,মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।তবুও ফোন চালিয়ে আমাকে সময় কম দেয়,কষ্ট করে মানিয়ে চললাম।রাতে এসব করে,বুঝাইলাম,সংশোধনের সুযোগ দিলাম।কিন্তু নিজের আমল,ইবাদাত ঠিক রাখার জন্য তো আমাকে অন্তত রাত ১১টায় ঘুমাতে হয়।ওর জন্য আমি ১০টায় ঘুমাতে চেয়েও পারি না,১২টাও বেজে যায়।কখনও আসে দেরিতে।কখনও এসে ফোন চালিয়ে+অন্য অফিসিয়াল কাজ করে সময় পার করে দেয়,তাড়াতাড়ি শুতে পারি না।তাও মানলাম।কিন্তু রাতে তো ৫/৬ঘন্টা ঘুমাতে দিবে।ওর ফোনের আলোতে আমি ১/২ঘন্টা পরপর সজাগ হই,এরপর ঘুম আসতে দেরি হয়,৪ ঘন্টাও একটানা ঘুমাতে পারি না।ফজরে উঠে শুরু হয় আমার সেই রুটিন।ঘুমের অভাবে ফজরে উঠাও কষ্টকর হয়।ফজর বাদও যায়।আবার সারাদিনের কাজ এলোমেলো হয়।মাথাব্যথা।এজন্য কয়েকদিন একা ফ্লোরে শুয়েছি।তবুও ঘুম ভাঙ্গে আলোতে,নড়াচড়ার শব্দে।ফ্লোরে সর্দির সমস্যা,পিঠে ব্যথা হয়।আর কতদিনই বা আলাদা ফ্লোরে থাকবো।এজন্য বেশিরভাগ দিন সজাগ হয়ে যখন ঘুম আসছিল না,বুঝিয়েছি।আবার বাধ্য হয়ে ২/৩দিন রাগারাগি করেছি মাথাব্যথা নিয়েই।হয়তো আশেপাশে কেউ শুনেছেও।কারণ আমার কথা শুনছেই না।ফোনটাও রাখছে না।এদিকে আমার ঘুমও আসছে না। এত কষ্ট হচ্ছিল মাথাব্যথায়।তারপর জোরাজুরি করেছি,তখন আমার নখের আঘাতে ক্ষত হয়েছে ওর শরীরে।এভাবে নিজের ঈমান আমালও নষ্ট হচ্ছে।সময়ে বারাকাহ পাচ্ছি না।শারিরীক ক্ষতিও হচ্ছে।গতরাতেও এমন হলো।কাউকে কিছু জানাইনি।এখন  আমার কি করণীয়,হুজুর?

1 Answer

0 votes
by (590,550 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
(১)
নেককার স্বামী/স্ত্রী পাওয়া এবং সুস্থ সবল সন্তানের পিতা-মাতা হওয়া, বান্দার উপর আল্লাহ তা'আলার এক বিশেষ নেয়ামত।এজন্য প্রত্যেক স্বামী/স্ত্রী এর জন্য মহান রবের শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ।এ বিশেষ নেয়ামতের অকৃতজ্ঞা প্রকাশ করার অর্থই হল নিজের জীবনকে বিপর্যয়ের দিকে ঢেলে দেয়া।

অাল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻭَﺇِﺫْ ﺗَﺄَﺫَّﻥَ ﺭَﺑُّﻜُﻢْ ﻟَﺌِﻦ ﺷَﻜَﺮْﺗُﻢْ ﻷَﺯِﻳﺪَﻧَّﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺌِﻦ ﻛَﻔَﺮْﺗُﻢْ ﺇِﻥَّ ﻋَﺬَﺍﺑِﻲ ﻟَﺸَﺪِﻳﺪٌ
যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।(সূরা ইবরাহিম-৭)

(২)
যেহেতু আপনার স্বামী এখনো আপনার সাথে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিচ্ছেদের আলোচনা করছেন না বা সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন না।এটা প্রমাণ করে সে আপনাকে ভালবাসে।হয়তো কোনো কারণে সে এই বদ অভ্যাসে লিপ্ত রয়েছে।তাই আমি মনে করি যে, আপনি তাকে পূর্ণ ভালবাসা প্রদাণ করুন।তার সাথে যথেষ্ট মায়াবী আচরন করুন।তার সামনে সু-সজ্জিত হয়ে আসুন।এবং প্রথম দিনের মত তাকে আগ্রহ ভরে দেখুন।এবং সাথে সাথে তাকে আখেরাতের ভয় প্রদর্শন করুন।বা ইসলামী বিধি-বিধান সম্পর্কে সম্মক অবগত করানোর চেষ্টা করুন।

আমি আপনাকে বিশেষ কয়েকটি নসিহত করবো-
(ক)
আপনার স্বামীর বদ অভ্যাস সম্পর্কে অন্য কাউকে জানাবেন না।কেননা গোনাহে গোপন রাখা ওয়াজিব।তাই গোপন রাখার চেষ্টা করুন।

(খ)
পূর্ণ আগ্রহের সাথে তাকে সময় দিন।তাকে কখনো একা ছেড়ে দিবেন না।বরং সর্বদা তার সাথে লেগে থাকুন।তার সকল প্রকার পছন্দের জিনিষকে নিজের পছন্দ বানিয়ে তার সাথে সর্বদা থাকার চেষ্টা করুন।

(গ)
তার হেদায়তের জন্য দু'আ করতে থাকুন।

এসবের পরেও যদি কোনো প্রকার ফায়দা না হয় তথা যদি স্বামী এই বদ অভ্যাস থেকে বিরত না থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় স্ত্রীর সামনে দু'টি পথ থাকবে-

(এক)
হয়তো আপনি স্বামীর বদ অভ্যাস দূর হওয়ার জন্য দু'আ করবেন। এটাই সর্বাবস্থায় উত্তম হিসেবে বিবেচিত হবে।

(দুই)
স্ত্রী তালাক চাইতে পারবে বা খূলা করতে পারবে।

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
আমাদের মনে রাখতে হবে,
পরকালে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ আ'মলের হিসাব নিকাশ দিতে হবে।কারো পাপের বোঝাকে অন্য কেহ বহন করবে না।

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺰِﺭُ ﻭَﺍﺯِﺭَﺓٌ ﻭِﺯْﺭَ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻭَﺇِﻥ ﺗَﺪْﻉُ ﻣُﺜْﻘَﻠَﺔٌ ﺇِﻟَﻰ ﺣِﻤْﻠِﻬَﺎ ﻟَﺎ ﻳُﺤْﻤَﻞْ ﻣِﻨْﻪُ ﺷَﻲْﺀٌ ﻭَﻟَﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﺫَﺍ ﻗُﺮْﺑَﻰ الخ
কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না-যদি সে নিকটবর্তী আত্নীয়ও হয়।
(সূরা ফাতির-১৮)

সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতে স্বামীকে বুঝিয়ে এই গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করুন।ধর্য্য সহকারে পরিস্থিতির মোকাবেলা করার চেষ্টা করুন।আল্লাহ অবশ্যই এর জন্য আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করবেন।এ সম্পর্কে আরো জানতে ভিজিট করুন-- https://www.ifatwa.info/295


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (590,550 points)
সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...