আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
হুজুর,আমার বিয়ে হয়েছে ৮ মাস আগে।আমার স্বামীর চাকরীসূত্রে আমরা ২জন একসাথে পরিবার থেকে দূরে আলাদা বাসায় থাকি। আলহামদু লিল্লাহ,আমি বিয়ের আগে থেকে দীন মানার চেষ্টা করি।আমার স্বামীর দীনের বুঝ খুব কম।সে সকাল ১০টা থেকে অফিস করে প্রায় দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত।আসতে আসতে কখনও বিকেল,কখনও সন্ধ্যা,কখনও রাত হয়। আমি সকালে পড়াশুনা করি,দুপুরে ঘরের কাজ,বিকেলে কুরআন পড়াই,রাতে আলেমা কোর্সের ক্লাস করি।এর ফাঁকেই স্বামীকে সময় দেই,ঘরের অন্যান্য কাজ করি। যখন ভালোভাবে অবসর হই,তখন ভালোভাবেই সময় দেয়ার চেষ্টা করি।
বিয়ের পর ৩/৪মাস সমস্যা ছিল না।আমি তাকে সময় দেয়ার জন্য মোবাইল ব্যবহার বন্ধই রেখেছিলাম।যেহেতু মাত্র বিয়ে হলো।তখন ১ম দিকে ভালো সময় গেলেও পরে দেখা গেছে আমি অবসর থাকা সত্ত্বেও আমাকে সময় খুব কম দিত।অফিস থেকে এসেই মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকতো।অথচ আমি ওর জন্য ফ্রি হয়ে বসে থাকতাম। সেজন্য আমি তাকে বুঝিয়েছি,কান্নাকাটি করেছি।কোনো দিন শুনেছে,বেশিরভাগ দিন ঐ একই অবস্থা।এ অবস্থায় ২ মাস যাওয়ার পর অর্থাৎ বিয়ের ৬ মাস পর অনলাইনে উক্ত রুটিনে পড়াশুনা শুরু করেছি।এ ব্যাপারে সে কোনো অভিযোগ করে নি।
১.এখনও আমি ফ্রি থাকলেও বেশিরভাগ সময় সে মোবাইল নিয়ে থাকে।অফিস থেকে আসলে আমি ফ্রি হয়ে তার পাশে বসে থাকি আর সে মোবাইল টিপছে।ফেসবুকে অত্যন্ত আসক্তি।এখন আমার কি করণীয় হুজুর?
২.এটা ১নং এর চেয়ে বড় সমস্যা-
দিনের বেলা+রাতে শোয়ার আগ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কথাবার্তা কম হলেও বলে।আমার খুব বেশি কষ্ট হয় না।অভ্যাস হয়ে গেছে।কিন্তু ফোনের প্রতি আসক্তি থেকে সে প্রায় ২ মাস যাবৎ রাতে শোয়ার সময় আমার সাথে ৯০%দিন কোনো কথা ছাড়াই চুপ করে অন্যপাশ হয়ে ফোন চালাতে থাকে।আমি ঘুমিয়ে যাবার পরও সে রাত ২টা/৩টা/এমনকি ফজরের আযান পর্যন্ত ফোন চালায়।ফেসবুক,ইউটিউব। আমি বেশ কয়েকদিন টের পেয়েছি,দেখেছি ফোন নিয়ে বাথরুমে যায়।প্রমাণিত হয়েছে এবং সে নিজেও স্বীকার করেছে যে,পর্ণ দেখে হস্তমৈথুন করে।আমি এত কষ্ট পেয়েছি,বুঝিয়েছি,রাগারাগিও করেছি এত রাতে ঘুম চোখে নিয়ে কান্নাকাটিও করেছি। কয়েকদিন পর বলে যে,এটা তার বিয়ের আগেরই অভ্যাস।এটা ছাড়ার চেষ্টা করবে।ফোনে ভালো কিছু দেখতে দেখতে রাত গভীর হয় আর একসময় মেয়েদের নগ্ন ছবি চলে আসে,তখন আগের অভ্যাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। অল্পদিন যেতে না যেতেই আবার। যেদিনই সে এ কাজ করে,সেদিনই আল্লাহর ইচ্ছায় এত রাতেও আমি টের পাই।হয় শেষে,না হয় শুরুতে।শুরুতে বুঝলে বাথরুমের দরজায় জোরে নক করি।সেদিন আর করতে পারে না।ছাড়ার চেষ্টা করবে বলেও সে বারবার এ কাজ করে যাচ্ছে।অথচ আমাদের শারীরিক সম্পর্কে কোনো সমস্যা নেই।চেহারা সুরতও খারাপ নয়।নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছে।(তবে আমার ব্রেস্ট তুলনামূলক অনেক ছোট হওয়ায় তার একটা অভিযোগ আছে মনে মনে,এর সাথে ইউটিউবের কী সম্পর্ক?সে বলেছে যে,এরকম আমার কোনো কমতির কারণে এসব করছে না,আগে অভ্যাস ছিল তাই হচ্ছে)।কাউকেই কিছু জানাই নি।আমি তো সংশোধনের সুযোগ দিয়েছি।আমার কান্না,আমার কষ্ট দেখে তার কোনোই গায়ে লাগছে না।রাগারাগিতেও কাজ হচ্ছে না।বারবার এমন করছে।এখন কী করণীয়?
৩.এটা ২ নং এর চেয়েও বড় সমস্যা-
যদিও কোনদিনও আশা করিনি আমার স্বামী এমন হবে,মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।তবুও ফোন চালিয়ে আমাকে সময় কম দেয়,কষ্ট করে মানিয়ে চললাম।রাতে এসব করে,বুঝাইলাম,সংশোধনের সুযোগ দিলাম।কিন্তু নিজের আমল,ইবাদাত ঠিক রাখার জন্য তো আমাকে অন্তত রাত ১১টায় ঘুমাতে হয়।ওর জন্য আমি ১০টায় ঘুমাতে চেয়েও পারি না,১২টাও বেজে যায়।কখনও আসে দেরিতে।কখনও এসে ফোন চালিয়ে+অন্য অফিসিয়াল কাজ করে সময় পার করে দেয়,তাড়াতাড়ি শুতে পারি না।তাও মানলাম।কিন্তু রাতে তো ৫/৬ঘন্টা ঘুমাতে দিবে।ওর ফোনের আলোতে আমি ১/২ঘন্টা পরপর সজাগ হই,এরপর ঘুম আসতে দেরি হয়,৪ ঘন্টাও একটানা ঘুমাতে পারি না।ফজরে উঠে শুরু হয় আমার সেই রুটিন।ঘুমের অভাবে ফজরে উঠাও কষ্টকর হয়।ফজর বাদও যায়।আবার সারাদিনের কাজ এলোমেলো হয়।মাথাব্যথা।এজন্য কয়েকদিন একা ফ্লোরে শুয়েছি।তবুও ঘুম ভাঙ্গে আলোতে,নড়াচড়ার শব্দে।ফ্লোরে সর্দির সমস্যা,পিঠে ব্যথা হয়।আর কতদিনই বা আলাদা ফ্লোরে থাকবো।এজন্য বেশিরভাগ দিন সজাগ হয়ে যখন ঘুম আসছিল না,বুঝিয়েছি।আবার বাধ্য হয়ে ২/৩দিন রাগারাগি করেছি মাথাব্যথা নিয়েই।হয়তো আশেপাশে কেউ শুনেছেও।কারণ আমার কথা শুনছেই না।ফোনটাও রাখছে না।এদিকে আমার ঘুমও আসছে না। এত কষ্ট হচ্ছিল মাথাব্যথায়।তারপর জোরাজুরি করেছি,তখন আমার নখের আঘাতে ক্ষত হয়েছে ওর শরীরে।এভাবে নিজের ঈমান আমালও নষ্ট হচ্ছে।সময়ে বারাকাহ পাচ্ছি না।শারিরীক ক্ষতিও হচ্ছে।গতরাতেও এমন হলো।কাউকে কিছু জানাইনি।এখন আমার কি করণীয়,হুজুর?