আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
97 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (22 points)
আসসালামুয়ালাইকুম ভাই,

আমার স্বামী আমাকে আমার দেনমোহরের টাকা বিয়ের ৪ বছর পর পরিশোধ করেছে। এখন আমার কথা আজ থেকে ৪ বছর আগে যেই জিনিসের যে দাম ছিলো সেই জিনিসের সেই দাম এখন নাই । আমার যখন বিয়ে হয় তখন স্বর্ণের ভরি ছিলো ৪০ হাজার আর এখন ১ লক্ষ টাকা স্বর্ণের ভরি। আমাকে আমার বিয়ের দিনেই যদি আমার দেনমোহর পরিশোধ করে দিতো তাহলে আমি সেই টাকা দিয়ে স্বর্ণ অথবা কোন ব্যবসায় ব্যবহার করতাম । আল্লাহ চাইলে সেখানে আমার কিছু টাকা হলেও লাভ আসতো । তাইলে যেহেতু আমাকে দেনমোহর পরে পরিশোধ করেছে সেহেতু কিছু টাকা বাড়িয়ে দেয়া তার উচিত ছিলো বলে আমি মনে করি। এই বিষয় টা সম্পর্কে একটু জানতে চাচ্ছি?

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাব

https://ifatwa.info/30000/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,

  আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَدَايَنتُم بِدَيْنٍ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوهُ ۚ وَلْيَكْتُب بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌ بِالْعَدْلِ ۚ وَلَا يَأْبَ كَاتِبٌ أَن يَكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ اللَّهُ ۚ فَلْيَكْتُبْ وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ وَلَا يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْئًا ۚ

হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋনের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। এবং ঋন গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮২)


  বুহুস কিতাবে রয়েছে-

মর্মার্থ: আর ঋণকে দ্রব্য মূল্যের সাথে সম্পৃক্ত করা। সুতরাং এখানে উদ্দেশ্য হলো ঋণগ্রহীতা শুধু ঋণও পরিশোধ করবে না, বরং তার সাথে আরো কিছু টাকা দ্রব্য মূল্য হিসাবে অতিরিক্ত দিবে। উদাহরণসরূপ, কেউ এক হাজার টাকা ঋণ নিলো। কিছু দিন পর দ্রব্য মূল্যের দাম বেড়ে গেলো। তাহলে এখন ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধের সময় ১১ শত টাকা পরিশোধ করবে।...কিন্তু ইসলামী শরীয়াতে ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ হুবহু হওয়া আবশ্যক। (যেমন কেউ ১০০ টাকা ঋণ নিয়েছে। এই ১০০ টাকা এক দুই বছর পর পরিশোধ করলেও ১০০ টাকাই দিতে হবে। এর থেকে বেশী দিলে সুদ বলে গণ্য হবে। (বুহুস, ১/১৮৩)

 

১. যেমন কোনো ব্যক্তি এক কেজি গম ঋণ নিয়েছে। ঐ সময় তা মূল্য ছিলো ৩০ টাকা। এখন যদি এই এক কেজি গম দশ বছর পর পরিশোধ করে যখন তার মূল্য ২ টাকা তবু এক কেজি গমই আদায় করতে হবে, ১৫ কেজি নয়।

 

২. হাদীস শরীফে-

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كُنَّا نُرْزَقُ تَمْرَ الْجَمْعِ، وَهْوَ الْخِلْطُ مِنَ التَّمْرِ، وَكُنَّا نَبِيعُ صَاعَيْنِ بِصَاعٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " لاَ صَاعَيْنِ بِصَاعٍ، وَلاَ دِرْهَمَيْنِ بِدِرْهَمٍ ".

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের মিশ্রিত খেজুর দেওয়া হতো, আমরা তার দু’সা এক সা’-এর বিনিময়ে বিক্রি করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক সা’ এর পরিবর্তে দু’সা এবং এক দিরহামের পরিবর্তে দু’দিরহাম বিক্রি করবে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ১৯৫০)

উক্ত হাদীসের মধ্যে দুই সা খারাপ খেজুর এক সা ভালো খেজুরের বিনিময়ে বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে মূল্যটা ধরা হয়নি বরং ওজনটা হুবহু ধরা হয়েছে। সুতরাং সকলের কাছে জানা বিষয় যে, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও দ্রব্যের মূল্য ধরা হবে না বরং ওজন বা তা কত টাকা সেটা ধরা হবে। তাই কেউ যদি একশ টাকা ঋন নেয় এবং তা দশ বিশ বছর পরে পরিশোধ করলেও একশ টাকা দিতে হবে, এর থেকে বেশী দেওয়া যাবে না।

 

https://www.ifatwa.info/7485  নং ফাতাওয়ায় টাইম ভ্যালু অব মানি সম্পর্কে আলোচনা করতে যেয়ে আমরা বলেছিলাম যে,

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত

عن ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﻟِﺮَﺟُﻞٍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺳِﻦٌّ ﻣِﻦْ ﺍﻹِﺑِﻞِ ﻓَﺠَﺎﺀَﻩُ ﻳَﺘَﻘَﺎﺿَﺎﻩُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺃَﻋْﻄُﻮﻩُ ، ﻓَﻄَﻠَﺒُﻮﺍ ﺳِﻨَّﻪُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍ ﻟَﻪُ ﺇِﻻ ﺳِﻨًّﺎ ﻓَﻮْﻗَﻬَﺎ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ( ﺃَﻋْﻄُﻮﻩُ ، ﺇِﻥَّ ﺧِﻴَﺎﺭَﻛُﻢْ ﺃَﺣْﺴَﻨُﻜُﻢْ ﻗَﻀَﺎﺀً )

রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে জনৈক ব্যক্তির একটি বাচ্ছা বয়সী উট পাওনা ছিলো, অতঃপর যখন সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে এসে তা চাইলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ উনার পাওনা উনাকে বুঝিয়ে দাও। সাহাবায়ে কেরাম (সদকার মালের মধ্যে খুজে) উক্ত ব্যক্তির পাওনা কমবয়সী উট পেলেন না। বরং তার থেকে একটু বেশী বয়সী উট পেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেনঃ তোমরা তা তাকে দিয়ে দাও, কেননা তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে ঋণ পরিশোধের সময় উদারতা প্রদর্শন করে। তথা অতিরিক্ত দিয়ে দেয়। (সহীহ বুখারী-২৩৯৩,সহীহ মুসলিম-১৬০০)

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

 

আপনার স্বামী যদি স্বাভাবিকভাবে আপনার (দেনমোহর) ঋণ পরিশোধের পর, নিজ থেকে খুশি হয়ে কিছু টাকা হাদিয়া স্বরূপ প্রদান করেন, তা যত টাকাই হোক না কেন তাতে কোনো সমস্যা নেই। তাছাড়া নিজ পরিবারের জন্য ব্যয় করলে হাদিসে সদকা করার সওয়াব পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে ঋণ পরিশোধের সময় উদারতা প্রদর্শন করে। তথা অতিরিক্ত দিয়ে দেয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...