আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
587 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (18 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
১. নবীজ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখার জন্য কোনো আমল আছে কি? কেউ যদি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখে তার কি সেটা সবাইকে জাানিয়ে দেয়া উচিত? নাাকি নিজের মধ্যে রেখে দিবে?
২. মুসলিমরা সাধারণত নামের আগে মুহাম্মাদ লাগায়। তবে তাকে এর পরবর্তী নাম ধরেই ডাকা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কারো আসল নামটাই মুহাম্মাদ রাখা যাবে কি? যেন তাকে মুহাম্মাদ নামেই ডাকা হয়? আর যদি রাখা যায়, তাহলে তাকে মুহাম্মাদ বলে ডাকলে কি আমাদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে হবে?
৩. আমরা জানি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করলে তা তাঁর কাছে পেশ করা হয়। এটা কি শুধু দরুদে ইবরাহীম এর ক্ষেত্রেই পেশ করা হয়? আমরা যদি "আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ ' পড়ি অথবা শুধু " সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম" পড়তে থাকি অর্থাৎ যে ছোট ছোট দরুদ রয়েছে সেগুলো পড়ি এসব দরুদও কি পেশ  করা হবে না?

৪. কেউ কোনো সূরা মুখস্থ করার পর ভুলে গেলে তার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান আছে। কিন্তু দূর্বল স্মৃতিশক্তির কারণে শুধু সালাতে যে সূরাগুলো পড়া হয় সেগুলো ছাড়া অন্য কোনো সূরা মুখস্থ করলে তা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এখন সে যদি বারবার ভুলে গেলেও আবার মুখস্থ করে ফেলে তাহলে তার জন্য কি এই শাস্তির বিধান থাকবে? গুনাহ হবে কি?
জাযাকাল্লাহু খাইরান।

1 Answer

+1 vote
by (597,330 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ- 
(১)
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কেননা বিতাড়িত শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না।
আর যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যাচার করল, সে তার দোজখের আসন গ্রহণ করল। ' –সহিহ বোখারি : ১১০

অন্য আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, 'যে আমাকে স্বপ্নে দেখল, শিগগিরই সে আমাকে জাগরণে দেখবে অথবা সে যেন আমাকে জাগরণেই দেখল।

আর শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না। ' –সহিহ মুসলিম : ২২৬৬

ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় যে, অনেক সাহাবি, তাবেঈ ও বুজুর্গরা নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখেছেন।

ইসলামের বিধান হলো, নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখা বাস্তবে দেখার মতো। কেননা, শয়তান কখনও নবীজির অাকৃতি ধারণ করতে পারে না।


এখন আমাদের জানা দরকার, নবী করিম (সা.) কেমন ছিলেন তিনি। কোন আকৃতিতে তাকে স্বপ্নে দেখা যাবে। শামায়েলে তিরমিজির বর্ণনায় নবী করিম (সা.)-এর আকার-আকৃতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে—

তিনি ছিলেন মানানসই দীর্ঘদেহি। তার গায়ের রঙ দুধে-আলতায় মিশ্রিত গোলাপের মতো। গোলগাল হালকা-পাতলা চেহারা। ঘন দাড়ি। মুখগহবর প্রশস্ত। ঘাড় যেন রৌপ্যপাত্রে রক্তঢালা। কেশরাশি সামান্য কোঁকড়ানো-বাবরি। মেদহীন সুঠাম দেহ। হাত-পায়ের আঙুলগুলো শক্তিশালী ও মজবুত। 

বাহু, কাঁধ ও বুকের ওপরে পশমবিশিষ্ট। অতিরিক্ত পশমমুক্ত শরীর। বুকে নাভি পর্যন্ত পশমের দীর্ঘ রেখা। দুই কাঁধের মাঝখানে মোহরে নবুওয়ত। মাথা ও অস্থিবন্ধনীগুলো কিছুটা বড়সড়। প্রশস্ত ললাট। চক্ষুগোলক ডাগর ডাগর। চোখের মণি কুচকুচে কালো। পাপড়ি লম্বাটে। ভ্রুযুগল অমিলিত প্রশস্ত ঘন। 

ভ্রুদ্বয়ের মাঝখানে প্রস্ফুটিত একটা রগ, যা রাগের সময় স্ফীত হতো। উন্নত চকচকে নাসিকা। দাঁতগুলো বিযুক্ত রুপার গাথুনি। এক কথায় তার অপূর্ব রূপমাধুর্য বর্ণনাতীত। যে কেউ তাকে প্রথম দর্শনে হতভম্ব হয়ে পড়ত। সে একথা বলতে বাধ্য- জীবনে এমন সুন্দর মানুষ দ্বিতীয়জন দেখিনি। ’ 

নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হবে ঈমান অবস্থায়। পূর্ণ ইসলাম পরিপালনকারী ও সুন্নতের অনুসারীরাই কেবল তাকে দেখতে পাবেন। এ ছাড়া কেউ নবী করিম (সা.) কে দেখার দাবী করলে সেটা মিথ্যা দাবী হবে। 

মনে রাখতে হবে, যে যাকে ভালোবাসে, তার সঙ্গ লাভে নিজেকে ধন্য মনে করে। তার চালচলন, ভাবভঙ্গি ও বচনাচার অনুকরণ করে। সে নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখে। সবসময় তার সাক্ষাতের প্রতীক্ষায় থাকে। এভাবেই যুগে যুগে হাজারো নবীপ্রেমিক নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখেছেন। 

তাকে স্বপ্নে দেখেছিলেন-  ইমাম আবু হানিফা, আবদুর রহমান জামি, জালালুদ্দীন রুমি, শেখ সাদি, সাদুদ্দীন তাফতাজানি। হজরত শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি, আবদুল আজিজ, শায়খ জাকারিয়াসহ অসংখ্য নবীপ্রেমিক (রহ.)। বর্ণিত আছে, ইমাম মালেক (রহ.) অধিকাংশ রাতেই নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতেন। 

নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হলে করণীয় হলো- সত্যিকারের নবী প্রেমে মাতোয়ারা হওয়া, তার সুন্নতসমূহ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে উদ্গ্রীব হওয়া। তাহলেই কেবল নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব। 

কোনো কোনো আলেম বলেছেন, নবী করিম (সা.) কে স্বপ্নে দেখতে হলে, বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। অজুসহকারে পবিত্র হয়ে বিছানায় শয়ন করা। শেষ রাতে উঠে তওবা করা। 

তবে সর্বাগ্রে যেটা মনে রাখা দরকার সেটা হলো- ফরজ ইবাদদ তার হকসহ পরিপূর্ণভাবে পালন করেই তবে নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করা।
।(সংগৃহিত)

(২)
মুসলমান তার নামের শুরুতে মুহাম্মদ লিখতে পারবে।তবে নামের শুরুতে মুহাম্মাদ লিখা সুন্নত বা জরুরী মনে করা যাবে না।সুন্নত বা জরুরী মনে করলে সেটা বিদআত হবে। হিন্দুস্থানের শ্রী মন্দিরের হিন্দুরা তাদের নামের পূর্বে মন্দিরের নাম শ্রী লাগিয়ে রাখত,সেই এলাকার আশপাশের মুসলমানরা তাদের নামের পূর্বে মুহাম্মদ লাগাত।সেই থেকে মুহাম্মদ নামের প্রচলন শুরু হয়।

যদি কেউ তার নামের পূর্বে মুহাম্মদ নাম লাগায়,তাহলে তাকে ডাকার মুহুর্তে সাঃ বলতে হবে না।সাঃ শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ সাঃ কে উদ্দেশ্য নিলেই বলতে হবে।

(৩)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করলে তা তাঁর কাছে পেশ করা হয়।চায় সেটা দরুদে ইবরাহীমী হোক বা অন্য কোনো দুরুদ হোক।সবগুলোকেই রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সামনে পেশ করা হয়ে থাকে।

(৪)
কোনো সূরা মুখস্থ করার পর অবহেলা করে ভুলে গেলে তার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান আছে। কিন্তু দূর্বল স্মৃতিশক্তির কারণে শুধু সালাতে যে সূরাগুলো পড়া হয় সেগুলো ছাড়া অন্যন্য সূরা মুখস্থ করার পর তা ভুলে এবং সাথে সাথেই মুখস্থ করে নিলে আর গোনাহ হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...