বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আরাফার দিন যোহর-আসর কে এবং মুযদালিফার রাত(নহরের রাত)মাগরিব-এশাকে এক সাথে পড়া জায়েয।এ সম্পর্কে সমস্ত উলামায়ে কেরামদের ইজমা রয়েছে।বিস্তারিত জানতে দেখা যেতে পারে- (আল ইজমা-ইবনুল মুনযির-৩৮
মারাতিবুল ইজমা-৪৫
আল-আওসাত্ব-২/৪২১)
- এছাড়া সফর বা অন্য সময়ে দুই নামাযকে একসাথে পড়া কি শরীয়তে অনুমোদিত?
সম্পর্কে উলামাদের মতবিরোধ রয়েছে।
(১)
মালিকি, শাফেয়ী, হাম্বলী উলামাগণ একমত যে,সফরের হালতে যোহর-আসর, এবং মাগরিব-এশার একত্রিকরণ জায়েয আছে।
শরহুল কাবীর-১/৩৬৮
মুগনীল মুহতাজ-১/৫২৯
কাশ্শাফুল ক্বানা'-২/৫
- (২)
হানাফি উলামাগণ বলেন,
ﻻ ﺟﻤﻊ ﺑﻴﻦ ﻓﺮﺿﻴﻦ ﻓﻲ ﻭﻗﺖ . ﻭﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺇﻻ ﺍﻟﺠﻤﻊ ﺍﻟﺼﻮﺭﻱ ﺑﺘﺄﺧﻴﺮ ﺍﻟﻈﻬﺮ ﺇﻟﻰ ﺁﺧﺮ ﻭﻗﺘﻬﺎ , ﺛﻢ ﺃﺩﺍﺀ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻌﺼﺮ ﻓﻲ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ , ﻣﺎ ﻋﺪﺍ ﺍﻟﺠﻤﻊ ﺑﻌﺮﻓﺔ ﻭﻣﺰﺩﻟﻔﺔ
আরাফা এবং মুযদালিফা ব্যতীত আর কোথাও দুই নামাযকে একত্রিকরণের বিধান নেই।তবে বাহ্যত দু'টি নামাযকে এভাবে একত্র করে পড়া যেতে পারে যে,যোহরের নামাযকে একেবারে শেষ ওয়াক্তে এবং আছরের নামাযকে একেবারে প্রথম ওয়াক্তে এমনভাবে পড়া যে, দৃশ্যত দু'টি নামাযকে একতত্রিত বুঝা যাবে, যদিও বাস্তবতায় প্রত্যেক নামাযকে তার ওয়াক্তে পড়া হচ্ছে।(আদ্দুর্রুল মুখতার-১/৩৮১ )
সফর অবস্থায় দুই নামাযকে একত্রকরণ না করা উত্তম সম্পর্কে বিভিন্ন মাযহাবের মতামত।
ইবনুল কাইয়্যুম রাহ বলেন,
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻘﻴﻢ : " ﺍﻟﺠﻤﻊ ﻟﻴﺲ ﺳﻨﺔ ﺭﺍﺗﺒﺔ ﻛﻤﺎ ﻳﻌﺘﻘﺪ ﺃﻛﺜﺮ ﺍﻟﻤﺴﺎﻓﺮﻳﻦ ﺃﻥ ﺳﻨﺔ ﺍﻟﺴﻔﺮ ﺍﻟﺠﻤﻊ ﺳﻮﺍﺀ ﻭﺟﺪ ﻋﺬﺭ ﺃﻭ ﻟﻢ ﻳﻮﺟﺪ، ﺑﻞ ﺍﻟﺠﻤﻊ ﺭﺧﺼﺔ، ﻭﺍﻟﻘﺼﺮ ﺳﻨﺔ ﺭﺍﺗﺒﺔ، ﻓﺴﻨﺔ ﺍﻟﻤﺴﺎﻓﺮ ﻗﺼﺮ ﺍﻟﺮﺑﺎﻋﻴﺔ ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﻋﺬﺭ ﺃﻭ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ، ﻭﺃﻣﺎ ﺟﻤﻌﻪ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﻼﺗﻴﻦ ﻓﺤﺎﺟﺔ ﻭﺭﺧﺼﺔ، ﻓﻬﺬﺍ ﻟﻮﻥ ﻭﻫﺬﺍ ﻟﻮﻥ
সফর অবস্থায় দুই নামাযকে একত্র করে পড়া নিয়মিত কোনো সুন্নাত নয়।যেমন অধিকাংশ তাফসিরবিদগণ মনে করেন যে,সফরে উযর থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় সফরে দুই নামাযকে একত্র করে পড়া সুন্নাত।
বরং দুই নামাযকে একত্র করে পড়া রুখসত।পড়া যাবে আবার নাও পড়া যাবে।
অন্যদিকে সফর অবস্থায় নামাযে কসর করা সুন্নাতে মু'আক্বাদাহ।সুতরাং মুসাফিরের জন্য সুন্নাতে মু'আক্বাদাহ (অত্যাবশ্যকীয় পালনীয় সুন্নাত)হল চার রা'কাত বিশিষ্ট নামাযে দুই রা'কাত পড়া।চায় তার কোনো প্রকার উযর থাকুক বা নাই থাকুক।
আর দুই নামাযকে একত্র করে পড়া এটা জরুরত ও প্রয়োজন বশত অনুমোদিত।সুতরাং কসর এবং নামাযকে একত্রকরণ ঠিক নয়।বরং উভয়টা পৃথক পৃথক বিধানের অর্থবাহক। (আল-ওয়াবিলুল সাবিল-২৪)
মালিকী উলামাগণ বলেন,
ﻭﻟﻬﺬﺍ ﻓﻘﺪ ﺫﻫﺐ ﺍﻟﻤﺎﻟﻜﻴﺔ ﺇﻟﻰ ﺃﻧﻪ ﺧﻼﻑ ﺍﻷﻭﻟﻰ , ﺇﺫ ﺍﻷﻭﻟﻰ ﺇﻳﻘﺎﻉ ﻛﻞ ﺻﻼﺓ ﻓﻲ ﻭﻗﺘﻬﺎ , ﻭﺍﻷﻓﻀﻞ ﺗﺮﻛﻪ ﻭﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﻜﺮﻩ , ﻭﻳﻌﺒﺮ ﻋﻨﻪ ﺏ ( ﺍﻟﺠﻮﺍﺯ ﻏﻴﺮ ﻣﺴﺘﻮﻱ ﺍﻟﻄﺮﻓﻴﻦ )
সফর অবস্থায় দুই নামাযকে একত্র করে পড়া অনুত্তম। বরং উত্তম হল,প্রত্যেক নামাযকে তার সময়ে পড়া।এবং উত্তম হল একত্রকরণ কে পরিত্যাগ করা।তবে একত্র করে পড়লে আবার তা মাকরুহও হবে না।(মানহুল জালীল-১/৪১৬
শুরহুল খারশী-২/৬৭)
হাম্বলী উলামাগণ বলেন,
ﻭﺫﻫﺐ ﺍﻟﺤﻨﺎﺑﻠﺔ ﺇﻟﻰ ﺃﻧﻪ ﻟﻴﺲ ﺑﻤﺴﺘﺤﺐ , ﺑﻞ ﺗﺮﻛﻪ ﺃﻓﻀﻞ ( ﺍﻹﻧﺼﺎﻑ 2/334 )
দু নামাযকে একত্র করে পড়া মুস্তাহাব নয়।(আল-ইনসাফ-২/৩৩৪)
সুপ্রিয় পাঠকবর্গ!
কোরআন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে মাস'আলা উদ্ভাবনকারী চার মাযহাবের উপরুক্ত অালোচনা দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে,হজ্বের মৌসুমে আরাফা এবং মুযদালিফা ব্যতীত অন্য কোথাও দুই নামাযকে একত্রকরণ কখনো ঠিক হবে না।কিছু মাযহাবে অনুমোদিত থাকলেও অনুত্তম বলা হয়েছে।
তাই নামাযকে উত্তমভাবে পড়াই আমাদের জন্য উচিৎ।
যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন-
ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻗَﻀَﻴْﺘُﻢُ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻓَﺎﺫْﻛُﺮُﻭﺍْ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻗِﻴَﺎﻣًﺎ ﻭَﻗُﻌُﻮﺩًﺍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺟُﻨُﻮﺑِﻜُﻢْ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺍﻃْﻤَﺄْﻧَﻨﺘُﻢْ ﻓَﺄَﻗِﻴﻤُﻮﺍْ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻛِﺘَﺎﺑًﺎ ﻣَّﻮْﻗُﻮﺗًﺎ
অতঃপর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায ঠিক করে পড়। নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
(সূরা নিসা-১০৩)
হানাফি মাযহাবের পরবর্তী উলামাদের অনেকেই অপর তিন মাযহাবের মতই দুই নামাযকে সফরের সময় একত্রিকরণের বৈধতা প্রদান করে থাকেন।কেননা অনেক হাদীসে বিশেষ উযর ব্যতিতও দুই নামাযকে একত্রিত করার প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে মতবিরোধ থেকে বাঁচার জন্য প্রত্যেক নামাযকে তার সময়ে আদায় করে নেয়াই উত্তম হবে।