ওয়া আলাইকুম আসসালাম।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
মুদারাবা শব্দটি ‘দরব’ থেকে গঠিত। এর আভিধানিক অর্থ বিচরণ বা চলাফেরা করা। যেহেতু ব্যবসা পরিচালনাকারী পৃথিবীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিচরণ করে থাকে তাই ইসলামী আইনবিদরা এর নাম দিয়েছেন ‘মুদারাবা’। পবিত্র কোরআনে মুদারাবা শব্দটি বিচরণের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘কিছু কিছু লোক আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে পৃথিবীতে বিচরণ করে।’
ইসলামী ফিকাহর পরিভাষায় একপক্ষের মূলধন ও অপরপক্ষের শ্রম, মেধা ও বুদ্ধির সমন্বিত রূপে যে ব্যবসা অস্তিত্ব লাভ করে তাকে মুদারাবা ব্যবসা বলা হয়। যিনি মূলধনের মালিক তাকে ‘রব্বুল মাল’ বা ‘সাহিবুল মাল’ ও যিনি শ্রমদান করেন বা উদ্যোগ নিয়ে মূলধন ব্যবহার করেন তাকে ‘মুদারিব’ বলা হয়। নবী (সা.) নবুয়ত লাভ করার আগে হজরত খাদিজা (রা.) এর সঙ্গে এ ব্যবসা করতেন, যা তিনি নবুয়ত লাভ করার পরও কিছু দিন বহাল রেখেছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের অনেকে এ ব্যবসা করতেন। আল্লামা কুরতুবি (রহ.) উল্লেখ করেছেন, ‘কিরাজ অর্থাৎ মুদারাবার বৈধতার ব্যাপারে মুসলমানদের মাঝে কোনোরূপ দ্বিমত নেই।’ (বিদায়াতুল মুজতাহিদ ২/২১৬)।
মুদারাবা একটি অংশীদারি ব্যবসা। মুদারাবার দ্বারা পুঁজি ও শ্রমের সংযোজন ঘটিয়ে একদিকে যেমন পুঁজি অলস পড়ে থাকা থেকে রক্ষা করা যায়। অপরদিকে পুঁজিহীন দক্ষতা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে রক্ষা পেতে পারে।
মুদারাবা দুই ধরনের : ১. মুদারাবা মুতলাক অর্থাৎ চুক্তিপত্রে কিছুই উল্লেখ থাকবে না যে, কোথায় ব্যবসা করবে, কিসের ব্যবসা করবে, সময়সীমা কতটুকু হবে ইত্যাদি অনির্দিষ্ট থাকবে। এ ধরনের মুদারাবা চুক্তির আওতায় মুদারিব স্বাধীন থাকে। সে ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো পণ্যের যে কোনো জায়গায় ব্যবসা করতে পারে। তবে সাহিবুল মালের অনুমতি ছাড়া মূলধনকে নিজের সম্পদের সঙ্গে মেশাতে কিংবা অন্যকে মুদারাবার ভিত্তিতে প্রদান করতে পারবে না। ২. মুদারাবা মুকাইয়াদ অর্থাৎ ব্যবসার চুক্তিপত্রে যাবতীয় বিষয় কিংবা যে কোনো একটি বিষয় নির্দিষ্ট থাকবে।
এ পদ্ধতির আওতায় ব্যবসা করলে মুদারিব স্বাধীন থাকবে না। তাকে চুক্তিপত্রের শর্তানুযায়ী ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। (শিরকত ও মুজারাবাত আসরে হাজের মে, পৃষ্ঠা ২৩২)।
মুদারাবা শুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত : ১. মূলধন নির্দিষ্ট করে মুদারিব তথা উদ্যোক্তার পূর্ণ দখলে দিতে হবে। ২. মালিক ও উদ্যোক্তার মধ্যে মুনাফার অংশ আগেই নির্দিষ্ট হতে হবে। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখবে যে, শরিয়ত মুনাফা বণ্টনের কোনো অনুপাত নির্দিষ্ট করে দেয়নি। বরং তা উভয়পক্ষের স্বাধীন মতামতের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। তারা মুনাফা সমহারেও বণ্টন করতে পারে আবার সাহিবুল মাল তথা মালিক ও মুদারিব তথা উদ্যোক্তার জন্য পৃথক কোনো অনুপাতও নির্দিষ্ট করতে পারে। তবে মুনাফা বণ্টন করতে হবে মুনাফাকেন্দ্রিক; মূলধনকেন্দ্রিক নয়। অর্থাৎ মূলধনের আনুপাতিক হারের সঙ্গে মুনাফা নির্দিষ্ট করা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ মূলধনের ২০ শতাংশ রব্বুল মাল পাবে। অর্থাৎ ১০০ টাকা বিনিয়োগ করলে লাভ কত এলো না এলো সেটা দেখার বিষয় নয়; বরং ১০০ টাকায় ২০ টাকা মালিক পেয়ে যাবে। এরূপ শর্ত করলে তা সুদে পরিণত হবে। অনুরূপভাবে কোনো পক্ষের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ ধার্য করাও যাবে না। যেমন মূলধন যদি এক লাখ টাকা হয় তাহলে সমুদয় মুনাফার ১০ হাজার টাকা মালিক পাবে। বাকি যা থাকবে সেটা মুদারিব বা উদ্যোক্তা পাবে। এ ধরনের চুক্তি করা যাবে না। বরং এভাবে চুক্তি করতে পারবে যে, প্রকৃত মুনাফার ৪০ শতাংশ মুদারিব পাবে এবং ৬০ শতাংশ রব্বুল মাল পাবে, কিংবা ৬০ শতাংশ মুদারিব পাবে এবং ৪০ শতাংশ রব্বুল মাল পাবে। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ও ব্যবসা পণ্যের ধরন বুঝে মুনাফার হার পরিবর্তন হতে পারে।
মুদারাবার চুক্তি একজন পুঁজি বিনিয়োগকারী ও একজন কারবারির মাঝে যেমন হতে পারে তেমনি একদল পুঁজি বিনিয়োগকারী ও একদল কারবারির মাঝেও হতে পারে। আবার একদল পুঁজি বিনিয়োগকারী ও একজন কারবারির মাঝেও হতে পারে। এ চুক্তি নগদ টাকার ওপর যেমন হতে পারে তেমনি পণ্য বা পণ্য উৎপাদনকারী কলকব্জা ও মেশিনারির ওপরও হতে পারে। যেমন একজন পুঁজির মালিক একটি ট্রাক বা বাস কিনে ড্রাইভারের সঙ্গে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হতে পারে যে, এ ট্রাক কিংবা বাস তুমি তোমার হেফাজতে রেখে পরিবহনের কাজ করবে। তাতে ব্যয় বাদে যে লভ্যাংশ থাকবে তা আমার আর তোমার মাঝে হারাহারি ভিত্তিতে বণ্টন করা হবে। অথবা একটি মেশিন কিনে কারও সঙ্গে এ মর্মে চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া যেতে পারে যে, এর দ্বারা তুমি তোমার উৎপাদন কাজ আঞ্জাম দেবে। এতে ব্যয় বাদে যা লভ্যাংশ থকবে তা আমার ও তোমার মাঝে হারাহারি ভিত্তিতে বণ্টিত হবে।(আব্দুর রহমান এর লিখা থেকে সংগৃহিত)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনি ৫০% করে মুনাফার শর্তে যে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন,সেটার নাম ফিকহের পরিভাষায়,মুদারাবা বলা হয়।
মুদারাবা ব্যবসা জায়েয।সুতরাং এ ব্যবসা আপনি করতে পারবেন।