আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
133 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (16 points)
আসসালামুআলাইকুম হুজুর,নেতিবাচক চিন্তা প্রায়ই আমাকে আছন্ন করে রাখে, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে পারি না। ব্যক্তিগত জীবনে এখনও সফল হতে না পারা, অতীত জীবনের ভুল প্রায়ই নিজেকে হতাশার মধ্যে ফেলে দেয়। উপস্থিত বুদ্ধি তুলনামূলক কম থাকায় , অনেক সময় অনাকাঙ্খিত ভুল করে বসি ,যা আমার নিয়ন্ত্রণে থাকে না, অনিচ্ছাকৃত ভুল। অনেক সময় আমার মনে হয় আমি পৃথিবীতে থাকা বা না থাকার মধ্যে আসলে কোনও পার্থক্য নেই, আল্লাহ চাইলে আমকে আরেকটু বুদ্ধিমান করে পৃথিবীতে পাঠাতে পারতেন। । আমাকে কষ্ট দেওয়া কোন মানুষকে জীবনে সুখি হতে দেখলে খারাপ লাগে, সব কিছু আল্লাহর হাতে যে আমাকে কষ্ট দিয়েছে, তাকে হয়তো আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন, তার সুখ দেখে তো আমার খারাপ লাগা অনুচিত। কিন্তু অতীতের ভুলের জন্য আজও আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারি নি।  প্রায়ই মনে হয় , আ মি অনেক খারাপ মানুষ আর আল্লাহ আমাকে ভালোবাসেন না। আরও অনেক নেতিবাচকচিন্তা আমার মাথায় আসে। এসব নেতিবাচক চিন্তা যখন অনেক বেশি হয়ে যায়, তখন আমার নামাজের প্রতি অনীহা আসে, দেখা যায় , ১/২ ওয়াক্ত নামাজ ছেড়ে দিই, তখন মনে হয় নামাজ পড়ে কিছুই হবে না। কিন্তু অন্য সময় আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করি। যখন নামাজ ছাড়ি তখনও কিন্তু মনে অনেক খারাপ লাগে, অশান্তি লাগতে থাকে, পরে আবার নামাজ পড়ি, আর মনে মনে ভাবি এমন আর করবো না, আল্লাহর কাছে মাফ চাই।  কিন্তু আবার যখন প্রচন্ড হতাশ  হই , একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।  আমি কিভাবে হতাশা থেকে মুক্ত হয়ে ,নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে পারবো? বার বার েএকই ঘটনার পুনরাবৃত্তি অনেক কষ্টদায়ক।

1 Answer

0 votes
by (574,080 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে বলেন,

 إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَوْقُوْتًا 

‘নিশ্চয় মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত ফরয করা হয়েছে’ (নিসা ১০৩)।

https://www.ifatwa.info/3936 নং ফাতাওয়ায় উল্লেখ রয়েছেঃ- 
وذهب الحنفية إلى أن تارك الصلاة تكاسلا عمدا فاسق لا يقتل بل يعزر ويحبس حتى يموت أو يتوب.
হানাফী মাযহাব মতে নামায তরক কারীকে হত্যা করা হবে না, বরং তাকে আমৃত্যু বন্দী করে রাখা হবে,যতক্ষণ না সে তাওবাহ করবে।

وذهب الحنابلة: إلى أن تارك الصلاة تكاسلا يدعى إلى فعلها ويقال له: إن صليت وإلا قتلناك، فإن صلى وإلا وجب قتله ولا يقتل حتى يحبس ثلاثا ويدعى في وقت كل صلاة، فإن صلى وإلا قتل حدا، وقيل كفرا، أي لا يغسل ولا يصلى عليه ولا يدفن في مقابر المسلمين. لكن لا يرق ولا يسبى له أهل ولا ولد كسائر المرتدين.
হাম্বলী মাযহাব মতে, নামায তরককারীকে সর্বপ্রথম নামাযের কথা বলা হবে যে,তুমি যদি নামায না পড়ো তবে তোমার উপর হত্যার আইন প্রয়োগ করা হবে।যদি নামাযের দাওয়াত দেয়ার পরও নে নামায না পড়ে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে।তথা তিনদিন জেলে রাখা হবে,এবং প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে তাকে ডাকা হবে।যদি পরে নেয় তাহলে ভালো,নতুবা তখনই তাকে হত্যা করা হবে।

হাম্বলী মাযহাবের কেউ কেউ মনে করেন,তখন তাকে কুফরীর শাস্তি বা হত্যা প্রয়োগ হবে।সুতরাং তাকে গোসল দেয়া হবে না,জানাযা পড়াও হবে না।এবং মুসলমানদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে না যেমন সাধারণ মুরতাদের বেলায় হুকুম প্রযোজ্য হয়ে থাকে। (আল-মাওসুআতুল ফেকহিয়্যাহ-২৭/৫৩)


★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
নামাজ কাজা করা কোনো ক্রমেই জায়েজ হবেনা। যেভাবেই হোক,ওয়াক্তমত নামাজ পড়তেই হবে।
,
আপনার প্রতি পরামর্শঃ-
,
নেককার মহিলাদের সাথে বেশি বেশি উঠাবসা করুন। গুনাহ মুক্ত পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন।
,
ইহ-পরকালীন সকল বিষয়ে ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার হুকুম প্রদান করা হয়েছে। 

সুতরাং আপনি ধৈর্য ধারন করবেন,ও ফরজ নামাজের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল নামাজ পড়বেন।

মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اسْتَعِينُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ، 
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন’ (বাক্বারাহ ২/১৫৩)। 

অনুরূপ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)-কে আদেশ করেন, ‘জেনে রেখো অবশ্যই সাহায্য ধৈর্যের সাথে রয়েছে’।

ইসতিক্বামাত তথা দ্বীনের উপর অটল থাকার ব্যাপারে ধৈর্য বিশেষ গুরুত্ব রাখে। ছাহাবায়ে কেরাম যে ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে দ্বীনের উপর অটল থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন, তার বড় কারণ ছিল ধৈর্য।

মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ، 

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর। পরস্পরে দৃঢ় থাক এবং সদা প্রস্ত্তত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (আলে ইমরান ৩/২০০)।

বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করবেন। 
বেশি বেশি যিকির করবেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ تَطۡمَئِنُّ قُلُوۡبُہُمۡ بِذِکۡرِ اللّٰہِ ؕ اَلَا بِذِکۡرِ اللّٰہِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ ﴿ؕ۲۸﴾ 

যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের মন প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকিরেই মন প্রশান্ত হয়।
(সুরা রা'দ ২৮)

তবে যিকির করার সময় কিছু নিয়ম মেইনটেইন করতে হবে।

যিকিরের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কয়েকটি শর্ত পূরণ করা অত্যাবশ্যক। যথা : ১. লোক দেখানোর উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হওয়া।

 ২. কোনো ব্যক্তির নামাযে বা অন্য কোনো ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটানো। 

৩. কোনো ব্যক্তির বিশ্রামে সমস্যা না হওয়া।

 ৪. আওয়াজ স্বাভাবিক হওয়া, চিৎকার করে বা অতিরিক্ত উঁচু আওয়াজে না হওয়া।

৫. সাধারণভাবে এবং সহীহ-শুদ্ধ করে যিকির করা। 
,
শায়েখ মাশায়েখ গন বলেছেনঃ
প্রথমে উযূ করে নিতে হবে। তারপর অতি উত্তম পোশাক পরিধান করে, শরীরে সুগন্ধি মেখে, দুই জানু হয়ে নামাযের সুরতে কিবলামুখী হয়ে বসতে হবে। 

 এখন দুই চোখ বন্ধ করে যিকিরের নিয়্যাত করে ক্বলবের দিকে মনোযোগের সাথে ধ্যান করতে হবে। 

হালকা আলো বা অন্ধকারে যিকির করা ভাল। তাতে মন (mind) ও একাগ্রতা (concentration) ভালভাবে চলে আসে। যথাসম্ভব কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি পরিবেশ যিকিরের জন্য উত্তম।
,
যিকির করার সময় অমনোযোগী হওয়া যাবে না। অন্তরে খেয়াল করতে হবে যে, আমি আল্লাহ তায়ালাকে দেখতে পাচ্ছি। যদি এ খেয়াল না আসে তাহলে অন্তত মনে করতে হবে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে দেখছেন। তিনি আমার যিকির শুনছেন।

হক্কানি শায়েখদের রেকর্ড কৃত জান্নাত,জাহান্নামের বয়ান শুনবেন। 

মাস্তুরাত জামাতে যেতে পারেন।

আপনার এলাকার আশেপাশে কোথাও দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে যুক্ত বোনদের কোথাও তা'লিম হলে সেখানে নিয়মিত যেতে পারেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...