بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
ফরজ ও ওয়াজিব রোজা ছাড়াও ইসলামে
নফল রোজা পালনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নফল রোজা পালন যদিও আবশ্যক বিষয় নয়,
তবে কেউ পালন করলে এতে বিশেষ সওয়াব অর্জন
হয়।
নফল রোজা সম্পর্কে আল্লাহর
রাসূল সা: বলেন, যে
ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য একটি নফল রোজা রাখল,
আল্লাহ তায়ালা তার মাঝে এবং জাহান্নামের
মাঝে একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার ৫০ বছর রাস্তার দূরত্ব রাখবেন। -(কানযুল উম্মাল,
হাদীস: ২৪১৪৯)
‘আল্লামা সিনদী
(রহ.) বলেন, আলোচ্য
হাদীস প্রমাণ করে, নফল
রোজা ভাঙা জায়েজ এবং এর উপরই মতামত দিয়েছেন হানাফী মাজহাবের অধিকাংশ আলেম। তবে নফল
ভাঙলে তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব বলেছেন তারা। তবে এর কারণে কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
-(আল জাওহারাতুন নিয়ারাহ : ১/১৪১, ফাতহুল কাদির : ২/৩৬৫, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া : ৫/১৯১)
https://ifatwa.info/27634/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্ত্রী সর্বদা স্বামীর হক পালনে সতর্ক থাকবে। তাই শরীয়তের বিধান অনুযায়ী স্বামীর অনুমতি ব্যতিত স্ত্রীর
জন্য নফল রোযা রাখাও নিষেধ।
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لَوْ كُنْتُ آمِرًا
أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لأَحَدٍ لأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا " .
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যদি কাউকে অন্য কোন লোকের
প্রতি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম তাহলে অবশ্যই স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি সিজদা করার
নির্দেশ দিতাম। (তিরমিযি ১১৫৯)
অন্য এক হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ
اللهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ لَمَّا قَدِمَ مُعَاذٌ مِنْ الشَّامِ سَجَدَ
لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا هَذَا يَا مُعَاذُ قَالَ أَتَيْتُ
الشَّامَ فَوَافَقْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِأَسَاقِفَتِهِمْ وَبَطَارِقَتِهِمْ
فَوَدِدْتُ فِي نَفْسِي أَنْ نَفْعَلَ ذَلِكَ بِكَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم فَلَا تَفْعَلُوا فَإِنِّي لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ
لِغَيْرِ اللهِ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَالَّذِي
نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا تُؤَدِّي الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى
تُؤَدِّيَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِيَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ
تَمْنَعْهُ
আবদুল্লাহ বিন আবূ আওফা (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, মুআয
(রাঃ) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সিজদা করেন।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে মুআয! এ কী? তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পাই যে,
তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে
সিজদা করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা
তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ
দিতাম, তাহলে
স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। সেই স্বত্তার শপথ,
যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার
স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার প্রভুর প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম
হবে না। স্ত্রী শিবিকার মধ্যে থাকা অবস্থায় স্বামী তার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে
চাইলে স্ত্রীর তা প্রত্যাখ্যান করা অনুচিত। [১৮৫৩] (ইবনে মাজাহ ১৮৫৩ নং হাদীস ১৩৩-১৩৪
নং পৃষ্ঠা)
সুতরাং স্বামী- স্ত্রী এক সাথে থাকলে যেহেতু স্ত্রী নফল রোজা
রাখলে স্বামীর হক পালনে ত্রুটি আসতে পারে। আবার স্বামীর সহবাসেও বাঁধা আসতে পারে। তাই শরীয়তের বিধান অনুযায়ী স্বামীর অনুমতি ব্যতিত স্ত্রীর
জন্য নফল রোযা রাখা নিষেধ। তবে যদি স্বামী
দূরে থাকে সে ক্ষেত্রে নফল রোজা রাখলে স্বামীর হক পালনে ত্রুটি আসার সম্ভবনাই নেই।
তাই স্বামী দূরে থাকলে স্ত্রীর জন্য নফল রোজা রাখার ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি নেওয়া
জরুরী নয়। তবে এ ক্ষেত্রেও অনুমতি নেওয়া উত্তম।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নল্লিখিত ছুরতে
আপনি যদি রাতেই নফল রোজার নিয়ত করে থাকেন এবং সুবহে সাদিকের পর স্বামীর সাথে সহবাসে
লিপ্ত হোন তাহলে আপনার রোজা ভেঙ্গে গেছে। এক্ষেত্রে ঐ নফল রোজার পরিবর্তে পরবর্তিতে যেকোন দিন একটি কাযা রোজা আদায় করা ওয়াজিব।
যতদ্রুত স্ম্ভব সেটি আদায় করা উচিত। নফল রোজা
ভেঙ্গে গেলে কাফ্ফারা আবশ্যক নয়। কারণ, কাফ্ফারার বিধান রমজানের ফরজ রোজা ইচ্ছাকৃত
ভঙ্গ করার ক্ষেত্রে।