‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ আসলে কী
যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ (শুকরিয়া দিবস) হিসেবে পালিত হয়। এর পরের দিন—অর্থাৎ প্রতি নভেম্বর মাসের শেষ শুক্রবার ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ হিসেবে পরিচিত। তবে সেটি একই তারিখে হওয়ার কোনো নিয়ম নেই। ২০১৫ সালে সেটি হয়েছে ২৭ নভেম্বর, ২০১৬ সালে ২৫ নভেম্বর, আর ২০১৭ সালে ২৪ নভেম্বর।
তারিখ নয়, বরং নভেম্বর মাসের শেষ শুক্রবার হওয়াই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
১৮৬৯ সালের দিকে আমেরিকায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল, সেই সময় মন্দা থেকে উত্তরণের উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ দিবসের কথা ভেবেছিলেন ব্যবসায়ীরা। ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁরা পণ্যে বিশেষ ছাড় দেন। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, ওই ছাড়ে তাঁদের অনেক লস হয়। পরে দিনটি ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
সাধারণত ব্যবসায়ীরা ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’তে পণ্য বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করেন। ওই দিন ৭০ থেকে ৯০ ভাগ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দেওয়ার নজিরও রয়েছে। ন্যূনতম এক ভাগ হলেও ছাড় দেওয়া হয়। মূলত ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টানদের বড়োদিন উপলক্ষে কেনাকাটা ওই দিন থেকে শুরু হয়। সে উপলক্ষেই এ ছাড়।
তাহলে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নামটি কোত্থেকে এসেছে? এ বিষয়ে কয়েকটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
এক. ১৯৫০ সালে ফিলাডেলফিয়া রাজ্য পুলিশ ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’র পরের দিনকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নামে অভিহিত করেছিল। কারণ এই দিনে আমেরিকায় বছরের সবচেয়ে বড় লেনদেন হতো ও বছরের সবচেয়ে উত্তেজনাকর ফুটবল গেম অনুষ্ঠিত হতো। ওই ফুটবল প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত আমেরিকার সেনাবাহিনী। এই খেলার ফলে শহরের রাস্তাজুড়ে থাকত প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যাম। এ ছাড়া ফুটপাতে লেগে থাকত মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। এসব সামলাতে বেশ বেগ পেতে হতো ফিলাডেলফিয়া পুলিশ ও বাস ড্রাইভারদের। তাই দিনটি পুলিশদের জন্য ছিল খুবই বাজে একটা দিন। এ জন্য তারাই এই দিবসের নাম দিয়েছিলেন ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’।
দুই. অনেকের মতে, ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ শুরু হয় মধ্যরাত থেকে। মধ্যরাতেই ক্রেতাদের লাইন ধরা শুরু হয়, অন্ধকার থাকতেই স্টোর ওপেন করে দেওয়া হয়। মানুষ হুড়মুড় করে দোকানের ভেতর ঢুকে যে যেটা আগে ধরতে পারে, সে সেটা কিনে নেয়। পণ্য বিক্রির এ ব্যাপারটা শেষ হয়ে যায় দিনের আলো ফোটার আগে। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে সেল’।
তিন. ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’র অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা হলো—যেসব বিক্রেতার বিক্রি-বাট্টা কমতে কমতে হিসাবের খাতায় লাল দাগ নেমে যায়, তাঁদের এই দিনের বিক্রির পর পুনরায় তা কালো কালির আঁচড়ে ফিরে আসে। তাই এ শুক্রবারকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ বলে অভিহিত করা হয়।
চার. বিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে শুক্রবার দিনটিতে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সেই দুঃসহ স্মৃতি থেকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ শব্দের প্রচলন হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। ৮ জুন, ১৬৮৮ সালে কিং জেমস দ্বিতীয় সাতজন ‘অ্যাংলিকান বিশপ’কে গ্রেপ্তার করেন। ১৮ অক্টোবর, ১৮৮১ সালে হারিকেনের আঘাতে স্কটল্যান্ডের আইমাইথে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়। ১৮ নভেম্বর, ১৯১০ সালে ইংল্যান্ডে নারীর ভোটাধিকারকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়। ২০ অক্টোবর, ১৯১৬ সালে লেইক এরিতে প্রচণ্ড ঝড়ে চারটি জাহাজ ডুবে যায়।
২২ নভেম্বর, ১৯৬৩ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে গুপ্তহত্যা করা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮ সালে ইরানের তেহরানে অবস্থিত ‘ময়দানে জালেহে’ বিক্ষোভকারীদের গণহত্যা করা হয়। ৩১ জুলাই, ১৯৮৭ সালে কানাডায় ভয়াবহ টর্নেডো আঘাত হানে। ১২ মার্চ, ১৯৯৩ ভারতের মুম্বাইয়ে সিরিজ বোমা হামলা হয়। ২৬ জুন, ২০১৫ ফ্রান্স, কুয়েত, সোমালিয়া, সিরিয়া ও তিউনিসিয়ায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়। কাকতালীয়ভাবে উল্লিখিত দিনগুলো ছিল শুক্রবার। তাই অনেকের কাছে শুক্রবার ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নামে পরিচিত।
উপরোক্ত বিবরণ মতে বুঝা যায় যে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ আসলে মুসলিমদের পালন করার মতো কোনো দিন নয়।
★ব্ল্যাক ফ্রাইডে সম্পর্কিত এই ডিজাইন এর কাজগুলো করার ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
মতবিরোধ থাকায় ব্ল্যাক ফ্রাইডে সম্পর্কিত ডিজাইন করে ইনকাম করলে সেই ইনকামকে হারাম বলা না গেলেও সতর্কতামূলক এমন ডিজাইন না করার পরামর্শ থাকবে।