আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
420 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (28 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ

হুজুর,

আমি দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু যখন ই কোনো বিতর্কের বিষয় সামনে চলে আসে তখন আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। মা বাবা,  ভাই-বোন, প্রতিবেশি সকলের প্রতি খারাপ আচরণ হয়ে যায় কিন্তু আমি মন থেকে এমনটা চাই না  আবার আমল করতেও পারতেছি না। এককথায় বাইরের মানুষ আমাকে ঠিকই ভাল বলে শুনি, কিন্তু পরিবারে, আত্মীস্বজন, প্রতিবেশির কাছে আমি ভাল হতে  পারিনা।আর এর কিছু কারণ ও আছে, আমার পিতামাতা তেমন দ্বীন বুঝে না, পড়াশোনা ও একদম নেই, তবে নামাজ পরে। যেকোনো বিষয়ে গোরামি করে আর বিশেষ করে বাবা কোনো বিষয় নিয়ে অহেতুক বার বার একই কথা নিয়ে যে কাউকে তিরষ্কার করে, অপমান করে। আর এটা নিয়ে পরিবারের অন্যরাও অনেক বিরক্ত। বয়স প্রায় ৭০ হবে, চুলাফেরা সব ঠিক আছে স্বাভাবিক কিন্তু কথাবার্তার কোনো যৌক্তিকতা প্রায়ই থাকে না। অহেতুক এক কথা ধরতে গেলে সারাদিন বকবক করে,আর এই বিষয়টা আমি একদম ই নিতে পারিনা, পরিবারের অন্যদের ও অনেক কষ্ট হয় ও অপমানিত হতে হয় উনার কারণে।

এমতাবস্তায় আমি খুবি হতাশ।   তাই
★মা বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীর হক গুলো কী কী, এহেন পরিস্থিতিতে কোন কৌশল অবলম্বন করলে আমি দিন দিন তাদের সকলের পুরোপুরি হক আদায় করে চলতে পারব এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিলে অনেক ভাল হয়।


সত্যিই আপনাদের মাধ্যমে দ্বীনি বিষয়ে জানা সহজ হয়েছে।আল্লাহ আপনাদের এত খেদমত কে আন্তরিক ভাবে কবুল করুক, আখিরাতে জাজায়ে খায়ের দান করুক, আমিন।

1 Answer

0 votes
by (672,120 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


মা বাবার সর্বদায় আনুগত্য করতে হবে,তাদের কথার নাফরমানী করা যাবেনা।
তাদের সাথে সর্বদায় ভালো ব্যবহার করতে হবে।

তারা কষ্ট পায়,এমন কাজ কখনোও করা যাবেনা।
তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।

 পিতামাতার খরচ বহন করা; তাদের খোঁজ-খবর নেয়া; প্রয়োজনের সময় বিশেষ করে বার্ধক্যে তাদের পাশে থাকা আবশ্যক ।

মাতাপিতার দেখভাল করা ও তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা শরীয়ত কর্তৃক ফরয ঘোষনা করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا

“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস।” (সূরা আহকাফ-১৫)

আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।(সূরা বনী ইসরাঈল-২৩)

أن جاهمة جاء إلى النبي صلى الله عليه وسلم، فقال: يا رسول الله، أردت أن أغزو وقد جئت أستشيرك، فقال: «هل لك من أم؟» قال: نعم، قال: «فالزمها، فإن الجنة تحت رجليها»

“হযরত জাহিমাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণের ইচ্ছা করেছি, আপনার কাছে পরামর্শ নিতে এসেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, “তোমার কি মা আছেন?” সাহাবী জবাব দিলেন, “হ্যাঁ!”। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, “তাঁর সেবাকে নিজের উপর আবশ্যক করে নাও। নিশ্চয়ই তাঁর দুই পায়ের নিচে রয়েছে জান্নাত।” (সুনানে নাসাঈ: ৩১০৪)

হাদিস শরীফে আরও এসেছে,

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : "جاء رجلٌ إلى رسول الله -صلى الله عليه وسلم- فقال : يا رسول الله، من أحق الناس بحسن صحابتي؟، قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أبوك) متفق عليه .

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক সাহাবী এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে কে আমার সর্বাধিক মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার পিতা।”(বুখারী ও মুসলিম)

তবে তারা যদি শরীয়ত বহির্ভূত কাজের আদেশ করে,তাহলে তা মানা যাবেনা।   

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   

وَعَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سِمْعَانَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِىْ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ»


নাও্ওয়াস ইবনু সিম্‘আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিপালকের অবাধ্যতার মাঝে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য নেই।

(শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৪৫৫, সহীহ আল জামি‘ ৭৫২০।)

আত্মীয়দের হক সম্পদ জানুনঃ
,
প্রতিবেশির হক সম্পর্কে জানুনঃ 
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
আপনি আপনার পিতা মাতার হক পুরোপুরি আদায় করেই যাবেন,একান্ত দ্বীনের পথে চলা সমস্যাকর মনে হলে কিছু দিন তাদের কাছে কম যেতে পারেন,দূরত্ব অবলম্বন করতে পারেন।
তবে তাদের হক অবশ্যই আদায় করবেন।
,
সকলের সাথেই সতর্কতা অবলম্বন করে হেকমতের সহিত চলবেন।          


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...