আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
873 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (-1 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম,

কোনো এক ব্যক্তি সম্প্রতি দ্বীনি বুঝ পেয়েছেন। সে এখন শরীয়তমত চলতে চায়। কিন্তু তার আত্মীয়-স্বজন অধিকাংশ বদদ্বীন। তাদের বাসায় গেলে অথবা তারা বাসায় আসলে পর্দা লঙ্গন হয় এবং বিভিন্ন পাপে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় লিপ্ত হয়ে পড়তে হয়। যেমন: টিভি দেখা, গীবত ইত্যাদি।

তাদের বাসায় না গিয়ে শুধু ফোনে যোগাযোগ রাখলেও নিজের অনিচ্ছায় নানা গুনাহে লিপ্ত হতে হয়। যেমন: মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি।

তাদেরকে দ্বীনি কথা বুঝাতে গেলেও তারা এমন কুফরি কথা বলে বসে এতে করে তাদের ইমান চলে যাওয়ার আশংকা থাকে।
এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তির করনীয় কী? সে কী আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবে?

1 Answer

0 votes
by (629,460 points)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার মূল কথা হলো-‘পরস্পরের সঙ্গে মেহেরবানী করা ও অনুগ্রহ করা।’
আত্মীয়তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেহেরবাণী ও অনুগ্রহ সম্পর্কে আল্লামা কুরতবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি যথার্থই বলেছেন, রাহেম বা আত্মীয়তার সর্ম্পক দুই ধরনের হয়-
>> সাধারণ সম্পর্কএ সম্পর্কটি ব্যাপক এবং বিস্তৃত। যাকে বলা হয় দ্বীনি সম্পর্ক। একজন মানুষের সঙ্গে ঈমানি বন্ধনের কারণে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। ঈমানদারদের সঙ্গে ভালবাসা রাখা। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা। সব সময় তাদের কল্যাণে কাজ করা।

তাদের ক্ষতি হয় এমন কাজকে তাদের থেকে প্রতিহত করা। তাদের জন্য ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। লেন-দেন ও যাবতীয় ব্যবহারিক কর্মকাণ্ডে বৈষম্য দূর করা এবং তাদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ তাদের হকগুলো আদায় করা।
যেমন- অসুস্থদের দেখতে যাওয়া; তাদের হকসমূহের ব্যাপারে সচেতন থাকা; তাদের গোসল দেয়া; জানাযার নামাজ আদায় করা; দাফন-কাফন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা।
,
>> বিশেষ সম্পর্কমাতা-পিতা উভয় দিক থেকে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়তা রক্ষা করা। তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।
যেমন- পিতামাতার খরচ বহন করা; তাদের খোঁজ-খবর নেয়া; প্রয়োজনের সময় বিশেষ করে বার্ধক্যে তাদের পাশে থাকা।
আর যখন অনেক আত্মীয়ের অধিকার একত্রিত হয়; তখন নিকটাত্মীয় হওয়ার ক্ষেত্রে অধিকার বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার পাবে। পর্যায়ক্রমে তারপর যেটি তুলনামূলক কাছের সেটি অগ্রাধিকার পাবে।
,
নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ধরন আল্লাম ইবনু আবি জামরাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
>> আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা অনেক সময় মালামাল ও ধন-সম্পদ দ্বারা হয়;
>> প্রয়োজনের সময় সাহায্য করার দ্বারা হয়;
>> ক্ষতিকে প্রতিহত করার মাধ্যমে হয়;
>> পরস্পরের সঙ্গে হাসি-খুশি ও ব্যবহারের মাধ্যমে হয়;
>> দোয়া করার দ্বারাও হয়;
>> সাধ্যানুযায়ী কারো কাছে কল্যাণকর কিছু পৌঁছানো দ্বারাও হয়;
>> সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী ক্ষতি থেকে বাঁচানোর দ্বারাও হয় এবং তাদের উপকার করার দ্বারাও হয়।
,
সুতরাং সময় সুযোগ তেমন না মিললে শুধু ফোনে কথা বলেও আত্মীয়তা সম্পর্ক ঠিক রাখা যাবে।
তবে সময় সুযোগ হলে মাঝে মাঝে অল্প সময়ের জন্য হলেও নিকটতম আত্মীয়দের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা দরকার।

★কেউ যদি মনে মনে কোনো আত্মীয়ের প্রতি বিদ্বেষ না রাখে, কিন্তু সে হয়ত মাসে একবারও তাদেরকে ফোন করেনা, তাদের সাথে ৬ মাসে একবার বা বছরে একবার বা ২-৩ বছর পর একবার দেখা করে তবে সে  সম্পর্ক ছিন্নকারীর দলভুক্ত হবেনা।
,
এখানে কথা বন্ধ রাখার মাসয়ালা স্পষ্ট করছিঃ 
  
শরীয়তের বিধান হলো কাহারো সাথে শরয়ী ওযর ব্যাতিত  তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা, সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই। 
(কিতাবুল ফাতওয়া ৬/২১৭)

এটা যদি তাদের সামনা সামনি না হওয়ার কারনে হয়,যে সামনা সামনি,দেখা সাক্ষাৎ  যেহেতু আমাদের  হচ্ছেনা,তাই কথা বলার সুযোগও হচ্ছেনা।
তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। 
তবে দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার পরেও বিনা কারনে কাহারো সাথে কথা বার্তা বলা বন্ধ করে দেওয়া,সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
  
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ مَيْسَرَةَ، وَأَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ السَّرْخَسِيُّ، أَنَّ أَبَا عَامِرٍ، أَخْبَرَهُم حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ هِلَالٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا يَحِلُّ لِمُؤْمِنٍ أَنْ يَهْجُرَ مُؤْمِنًا فَوْقَ ثَلَاثٍ، فَإِنْ مَرَّتْ بِهِ ثَلَاثٌ، فَلْيَلْقَهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَإِنْ رَدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ فَقَدِ اشْتَرَكَا فِي الْأَجْرِ، وَإِنْ لَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ فَقَدْ بَاءَ بِالْإِثْمِ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ঈমানদারের জন্য বৈধ নয়, সে কোনো ঈমানদারের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রাখবে। অতঃপর তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর উভয়ে দেখা হলে একজন সালাম দিলে এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি তার সালামের উত্তর দিলে উভয়ই সালামের সাওয়াব পাবে। আর দ্বিতীয়জন সালামের উত্তর না দিলে গুনাহগার হবে। ইমাম আহমাদ এর বর্ণনায় রয়েছেঃ সালামদাতা সম্পর্কচ্ছেদের গুনাহ থেকে মুক্ত হবে।
(আবু দাউদ ৪৯১২)
,
,
★বিদ্বেষ পোষন না করে এমনিতেই দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার কারনে কথা না হলে কোনো সমস্যা নেই। 
তবে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে খোজ খবর নেওয়া জরুরি। 
,
আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে,তা হলোঃ  

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ " . - صحيح

জুবাইর ইবনু মুত্বঈম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

.(বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ১৯-(২৫৫৫), আবূ দাঊদ ১৬৯৬, তিরমিযী ১৯০৯, সহীহুল জামি‘ ৭৬৭১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫৪০ সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০২৩৪, মুসনাদুল বাযযার ৩৪০৫, আহমাদ ১৬৭৩২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৩৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫৪, শু‘আবুল ঈমান ৭৯৫২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ১৪৯১, আর মু‘জামুল আওসাত্ব ৯২৮৭।)
.
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، وَنَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ، وَسَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمَخْزُومِيُّ، قَالُوا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ " . قَالَ ابْنُ أَبِي عُمَرَ قَالَ سُفْيَانُ يَعْنِي قَاطِعَ رَحِمٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

মুহাম্মাদ ইবনু জুবাইর (রাহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (জুবাইর) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ  কর্তনকারী (আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী) জান্নাতে যেতে পারবে না।
(সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪০৮), সহীহ আবূ দাউদ (১৪৮৮), বুখারী, মুসলিম।
ইবনু আবী উমার বলেন, সুফিয়ান বলেছেন, অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
(তিরমিজি ১৯০৯) 
,
এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে সম্পর্ক ছিন্ন করাই হলো মূল দোষ। 
সম্পর্ক ছিন্ন না করে এমনিতেই যদি দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার কারনে কথা না হয়,এটা কোনো সমস্যা নয়। 
.
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবেননা।
সাধ্যমত তাদের প্রয়োজন পুরো করার চেষ্টা করবেন।  
তাদের বাসায় গেলে যদি পর্দা রক্ষা করা সম্ভব না হয়,তাহলে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তাদের বাসায় যাবেননা।
গেলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন পর্দা মেনে চলার। 
চেষ্টা করে চলা যাবে ইনশাআল্লাহ 
,
তাদের সাথে ফোনেই যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবেন।
স্পষ্ট আকারে বুঝিয়ে বলবেন যে শরীয়ত গত সমস্যার কারনে আপনাদের বাসায় আমাদের তেমন যাওয়া হচ্ছেনা।
এক্ষেত্রে যদি তারা বেশি রাগারাগি করে,তাহলে  এই অবস্থায় সেখানে বেড়াতে যাবেন,হেকমতের সহিত বুঝাবেন,সম্পর্ক ছিন্ন করবেননা।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَعَنِ ابْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لَيْسَ الواصِلُ بالمكافىء وَلَكِنَّ الْوَاصِلَ الَّذِي إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ 

ইবনু ’আমর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সে নয়, যার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা হচ্ছে; বরং আত্মীয়তা রক্ষাকারী সে, যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে, আর সে সেই সম্পর্ককে যোজন করে আত্মীয়তার বন্ধন বহাল রেখেছে। 

(বুখারী ৫৯৯১, আবূ দাঊদ ১৬৯৭, তিরমিযী ১৯০৮, ইবনু হিব্বান ৪৪৫, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫৩৩, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৯, শু‘আবুল ঈমান ৩৪২৮, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/৩০২।)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...