আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
137 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (10 points)
আসসালামু আলাইকুম,
আমি দীর্ঘদিন যাবত পাখি পালন করি। পাখি পালনে আমার পিতামাতা কোন মানা করেনি। তবে কিছুদিন যাবত তারা আমার নিজ কক্ষে পাখি রাখতে নিষেধ করছেন। উল্লেখ্য যে আমি তাদের কথা অনুযায়ী বাহিরে পাখি রাখায় সেগুলোর দেখভাল করতে বেশ অসুবিধার সৃষ্টি হতো। পরবর্তীতে আমি আবার সেগুলো আমার কক্ষে নিয়ে আসি। পাখির সংখ্যা মাত্র দুইটি এবং খাঁচাটিও ছোট। আপাতদৃষ্টিতে এটা কক্ষে রাখলে তেমন কোন ক্ষতির সম্ভাবনাও নেই। এমতাবস্থায় আমি যদি পাখিদুটিকে আমার কক্ষে  রাখি তবে কি সেটা পিতামাতার অবাধ্যতার সামিল হবে? পিতামাতার অবাধ্যতার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক থাকায় এবং তার ফলস্বরূপ ইবাদত কবুল না হওয়ার ভীতিতে এই ব্যাপারে বেশ চিন্তাগ্রস্ত।

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

https://www.ifatwa.info/1707 নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা মূলত তিনটি মূলনীতির আলোকে হয়ে থাকে।

(১) তাদের আদেশ কোনো মুবাহ বিষয়ে হতে হবে।কোনো ওয়াজিব তরকের ব্যাপারে হতে পারবে না।এবং কোন হারাম কাজের জড়িত হওয়ার জন্যও হতে পারবে না।

(২)যে কাজের আদেশ তারা দিবেন,এতে তাদের ফায়দা থাকতে হবে,বা শরীয়তের পছন্দসই কাজ হতে হবে।

(৩)যে কাজের আদেশ দিচ্ছেন,তা তাদের সন্তানদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারবে না।

সুতরাং যদি সন্তানের কষ্ট লাগবের জন্য তারা আদেশ দিয়ে থাকেন,তাহলে এক্ষেত্রে মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।

ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ লিখেন,

ويلزم الإنسان طاعة والديه في غير المعصية وإن كانا فاسقين ، وهو ظاهر إطلاق أحمد ، وهذا فيما فيه منفعة لهما ولا ضرر ، فإن شق عليه ولم يضره : وجب ، وإلا فلا

গোনাহের কাজ ব্যতীত মুবাহ কাজে,মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।যদি তার ফাসিকও হয়।এটা তখন যখন তাতে মাতাপিতার ফায়দা থাকবে,এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক হবে না।যদি সন্তানের উপর কষ্টদায়ক হয় তবে ক্ষতিকারক না হয়, তাহলে তখন মাতাপিতার আদেশ মান্য করা ওয়াজিব। (আল-ফাতাওয়াল কুবরা-৫/৩৮১)

আল্লামা হাসক্বাফী রাহ লিখেন,

لَا يَحِلُّ سَفَرٌ فِيهِ خَطَرٌ إلَّا بِإِذْنِهِمَا. وَمَا لَا خَطَرَ فِيهِ يَحِلُّ بِلَا إذْنٍ وَمِنْهُ السَّفَرُ فِي طَلَبِ الْعِلْمِ

যে সফরে ক্ষতির আশংকা থাকবে সে সফর মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত বৈধ নয়।আর যে সফরে ক্ষতির সম্ভাবনা নাই,সে সফর মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত বৈধ।এর মধ্যে একটি হলো,ইলম অন্বেষণের জন্য সফর করা।অর্থাৎ ইলম অর্জনের জন্য সফর করা মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত ও বৈধ।

চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ

"আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় " বর্ণিত রয়েছে,

ومذهب الحنفية: يكره الخروج إلى الحج إذا كره أحد أبويه وكان الوالد محتاجا إلى خدمة الولد، وإن كان مستغنيا عن خدمته فلا بأس.

وذكر في السير الكبير إذا كان لا يخاف عليه الضيعة فلا بأس بالخروج. وحج الفرض أولى من طاعة الوالدين، وطاعتهما أولى من حج النفل

فتح القدير ٢ / ١١٨، والفتاوى الهندية ١ /٢٢٠   -بحوالة الموسوعة الفقهية،ج٢- ص،٢٠٤-

হানাফি মাযহাবের সিদ্ধান্তঃ যদি মাতপিতার কেউ একজন সন্তানকে হজ্বে যেতে নিষেধ করে এমতাবস্থায় যে, পিতা-মাতা উক্ত সন্তানের খেদমতের মুহতাজ।তাহলে এমন পরিস্থিতে সন্তানের জন্য হজ্বে যাওয়া মাকরুহ।আর যদি মাতাপিতা উক্ত সন্তানের খেদমতের মুহতাজ না হন,তাহলে এমতাবস্থায় সন্তান হজ্বে যেতে পারবে।এতে কোনো শরয়ী অসুবিধা নেই।

সিয়ারে কাবীর কিতাবে বর্ণিত আছে, যখন সন্তানের  ক্ষতির কোনো প্রকার সম্ভাবনা থাকবে না, (যেমন সাগরের সফর ইত্যাদি হবে না) তখন তার জন্য মাতাপিতার অনুমতি ব্যতীত সফর করা বৈধ রয়েছে। জেনে রাখা ভালো, ফরয হজ্ব মাতাপিতার খেদমতের চেয়ে উত্তম।তবে নফল হজ্বের চেয়ে মাতাপিতার খেদমতই উত্তম। (ফাতহুল ক্বাদির-২/১১৮,ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া,১/২০৬)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন/বোন!

আপাতদৃষ্টিতে আপনি যেহেতু পাখি দুটিকে কক্ষে রাখলে তেমন কোন ক্ষতির সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন না বিধায় তা মাতা পিতার অবধ্যতার অন্তর্ভূক্ত হবে না বলে আশা করা যায়। তবে উত্তম হবে পিতা মাতাকে বুঝানো যে, বাহিরে রাখলে পাখিগুলোর যত্ন নিতে ত্রুটি হওয়াতে ঘরে এনেছেন, বিধায় তারা যেন এক্ষেত্রে নিষেধ না করেন বা বিষটি সহজ ভাবে গ্রহণ করেন। মোটকথা তাদেরকে হেকমতের সাথে বুঝাতে হবে যেন, তারা নারাজ না হয়ে যায়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...