জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনি আপনার সাধ্যানুযায়ী আপনার স্ত্রীকে বুঝান। তাকে হারাম ও শরীয়ত গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করুন। সে না মানলেও আপনি আপনার চেষ্টা বন্ধ করবেন না। আপনার কথা না মানলে যার কথা আপনার স্ত্রী মানে তার মাধ্যমে তাকে বুঝান। বড় কোন আলেম বা বুযুর্গ ব্যক্তিদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে বুঝাতে পারেন। কিংবা আখেরাতের বর্ণনা, কবরের আজাব, জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা সম্বলিত বাংলা বই তাকে পড়তে দিন।
আরো ভাল হয় হক্কানী শায়েখদের মৃত্যু ও কিয়ামত, হাশর-নশর সম্পর্কিত বয়ানগুলো তাকে শুনতে দিন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা চাইলে হক পথে তিনি ফিরে আসবেন।
আপনার না বুঝানোর কারণে, বা অবহেলার কারণে যদি আপনার স্ত্রী শরীয়তের বিধান না জানতে পারে, না মানতে পারে, তাহলে আপনি গোনাহগার হবেন।
কারণ হাদীসে এসেছে
أن عبد الله بن عمر يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول ( كلكم راع وكلكم مسؤول عن رعيته الإمام راع ومسؤول عن رعيته والرجل راع في أهله وهو مسؤول عن رعيته والمرأة راعية في بيت زوجها ومسؤولة عن رعيتها والخادم راع في مال سيده ومسؤول عن رعيته
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন-প্রতিটি ব্যক্তিই দায়িত্বশীল। প্রতিটি ব্যক্তিই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমামগণ দায়িত্বশীল, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষগণ তাদের পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। মহিলাগণ স্বীয় স্বামীর গৃহের দায়িত্বশীল, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। দাস-দাসীগণ দায়িত্বশীল তার মনিবের সম্পদের ব্যাপারে, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৮৫৩
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৮২৮
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৪৮৯
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৯৩০
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৪৪৯৫
মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৫৩৭৭
মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২৯৫১
মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-৭৪৫
মুজামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-১০৩)
আর যদি আপনার পূর্ণ প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা সত্বেও সে দ্বীন সম্পর্কে গাফেল থাকে, তাহলে এতে আপনার কোন গোনাহ হবে না।
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ وَإِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَىٰ حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰ ۗ إِنَّمَا تُنْذِرُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ ۚ وَمَنْ تَزَكَّىٰ فَإِنَّمَا يَتَزَكَّىٰ لِنَفْسِهِ ۚ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ [٣٥:١٨]
কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না-যদি সে নিকটবর্তী আত্নীয়ও হয়। আপনি কেবল তাদেরকে সতর্ক করেন, যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখেও ভয় করে এবং নামায কায়েম করে। যে কেউ নিজের সংশোধন করে,সে সংশোধন করে,স্বীয় কল্যাণের জন্যেই আল্লাহর নিকটই সকলের প্রত্যাবর্তন। {সূরা ফাতির-১৮}
,
★এক্ষেত্রে শেষপর্যন্ত তাকে তালাক দেওয়া আপনার উপর বাধ্যতামূলক নয়।
★হ্যাঁ যদি আপনার কাছে বেশি অবাধ্য মনে হয়,তাকে যদি আপনি কোনোভাবেই আর রাখতে না চান,যদি আপনি নিজ থেকেই অতিষ্ঠ হয়ে তাকে তালাক দিতে চান, তাহলে আমরা বলবো যে,
ইসলামের মূল থিউরী হল স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ না হোক। তারা মিলেমিশে থাকুক। সমস্যা হলে উভয়ে বসে তা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। তাতে সমস্যার সমাধান না হলে পারিবারিক মুরুব্বীদের পরামর্শের আলোকে সমাধান করা উচিত। তারপরও যদি সমাধান না আসে। তাহলে নিরূপায় অবস্থায় ইসলাম এক তালাক দেবার অধিকার দিয়েছে স্বামীকে।
হাদীস শরীফে এসেছে
عن ابن عمر رضي اللّٰہ عنہما أن رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم قال: أبغض الحلال إلی اللّٰہ عزوجل الطلاق۔ (سنن أبي داؤد ۱؍۳۰۳، المستدرک للحاکم ۲؍۲۱۸ رقم: ۲۸۰۹، السنن الکبریٰ ۷؍۳۱۶)
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন যে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম হালাল হলো তালাক প্রদান করা।
সুরা নিসার ৩৪,৩৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا (34)
যদি স্ত্রীদের অবাধ্যতার আশংকা কর তবে প্রথমে তাদের সৎ উপদেশ দাও। এরপর তাদের শয্যা থেকে পৃথক কর এবং তারপরও অনুগত না হলে তাদেরকে শাসন কর৷ এরপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের সাথে কর্কশ আচরণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমু্ন্নত-মহীয়ান।" (৪:৩৪)
,
وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِنْ أَهْلِهَا إِنْ يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا (35)
"যদি তোমরা উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদের আশঙ্কা কর, তবে তার বংশ থেকে একজন সালিশ নিয়োগ কর। যদি তারা মীমাংসা কামনা করে,তবে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং সবার মনের কথা জানেন ।" (৪:৩৫)