بسم
الله الرحمن الرحيم
জবাব,
ইসলামে দাওয়াতি কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ
এবং একইসঙ্গে প্রশংসনীয়। কারণ এতে বহু বিধর্মী ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসার সুযোগ পায়। কুরআনের ভালোবাসায় ও ইসলামকে
সত্য জেনে অনেকে খুঁজে পান চিরস্থায়ী মুক্তির পথ।
এই ফিরে আসার পথে তারা অনুপ্রাণিত ও উপকৃত হয় ইসলামি দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে।
দায়ী ইলাল্লাহর কথা পৃথিবীর
সবচেয়ে উত্তম আল্লাহর পথে দাওয়াত দানকারীর কথা কাজ এই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও
শ্রেষ্ঠ। কারণ দায়ীরা ইসলাম সম্পর্কে অশিক্ষিত ও মূর্খদেরকে দ্বীনের পথে আনার চেষ্টা
করে। আর যে মূর্খদেরকে শিক্ষাদান করে, গাফিলদেরকে নসিহত করে, মানুষকে সঠিক ইবাদতের দিকে ডাকে তার কথার চেয়ে উত্তম কথা
আর কারো হতে পারে না।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা
আল-কুরআনে বলেন,
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ
وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
“তার কথার চেয়ে
কার কথা উত্তম, যে
আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম
করে এবং বলে, অবশ্যই
আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত?” (সূরা হা-মীম সাজদা : ৩৩) আল কুরআনে আরো বর্ণিত হয়েছে,
وَيَا قَوْمِ مَا لِي أَدْعُوكُمْ إِلَى النَّجَاةِ
وَتَدْعُونَنِي إِلَى النَّارِ تَدْعُونَنِي لِأَكْفُرَ بِاللَّهِ وَأُشْرِكَ بِهِ
مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ وَأَنَا أَدْعُوكُمْ إِلَى الْعَزِيزِ الْغَفَّارِ
“আর হে আমার কাওম,
কী হলো যে,
আমি তোমাদেরকে মুক্তির দিকে ডাকছি আর তোমরা
আমাকে ডাকছ জাহান্নামের দিকে! তোমরা আমাকে দাওয়াত দিচ্ছ যে,
আমি যেন আল্লাহর সাথে কুফরি করি,
তাঁর সাথে শরিক করি যে ব্যাপারে আমার কোনো
জ্ঞান নেই; আর
আমি তোমাদেরকে ডাকছি মহাপরাক্রমশালী ও পরম ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে।” (সূরা মু’মিন :
৪১-৪২)
আয়াতের পরবর্তী অংশে ইসলামের দিকে ডাকার ক্ষেত্রে
একজন দায়ীর তিনটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তাহলো- দাওয়াতের ক্ষেত্রে
হিকমত অবলম্বন করা দায়ীকে দাওয়াত দানের ক্ষেত্রে দাওয়াত দানের আসালিব (পদ্ধতি) মেনে
চলতে হবে। বিশেজ্ঞগণ দাওয়াত দানের বহুবিধ পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে হিকমত (الْحِكْمَة) অন্যতম।
ইসলামী দাওয়াত প্রচারে হিকমাহ্ অবলম্বনের গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ। তবে ইসলামী দাওয়াতের কার্যক্ষেত্র বা পরিধি যেমন
ব্যাপক, তেমনি
হিকমতের পরিধিও ব্যাপক। পবিত্র কুরআনুল কারিমের এ আয়াতের মধ্যে সর্বপ্রথম সে হিকমতের
কথাই উল্লেখ করেছেন। হিকমত অবলম্বন করার মাধ্যমে দায়ীর আন্তরিকতা,
ভ্রাতৃত্ব,
সৌহার্দ্য ও ভালোবাসা উদ্বেলিত করে।
হিকমতের পরিচয় ‘হিকমাহ্’ একটি
ব্যাপক অর্থজ্ঞাপক শব্দ। এর অর্থ তত্ত্বজ্ঞান, বিজ্ঞান, জ্ঞান, দর্শন, পরিণামদর্শিতা, বিচক্ষণতা এ শব্দটির মূল ধাতু حكم
এর এর অর্থ আদেশ করা,
শাসন করা,
নিষেধ করা,
বিরত রাখা,
বিধিসমূহ পরিচালনা করা,
আদেশ প্রবর্তন করা,
মীমাংসা করা। (আরবি-বাংলা অভিধান,
ঢাকা : বাংলা একাডেমি,
২য় খ-, পৃ. ১২০৪-১২০৫) আরবি ভাষায় حكيم শব্দটি ফায়সালাকারী এবং চিকিৎসকের অর্থেও ব্যবহার হয়। ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী হিকমতের
পরিচয় দিয়েছেন এভাবে, هي
الإصابة في القول والفعل ووضع كل شيء موضعه “কথা ও কাজে সঠিক তথা যথাযথ এবং প্রত্যেকটি বিষয় বা বস্তুকে
যথাযথ স্থানে রাখাকে হিকমত বলে।” (আত-তাফসীরুল কাবীর,
৪র্থ খ-,
পৃ. ৭৪)
দাওয়াত দানে হিকমতের স্বরূপ
উপযুক্ত অবস্থা অনুধাবন করে সময়, স্থান ও পরিবেশ বুঝে দাওয়াত উপস্থাপন করতে হবে। মহানবী সা. মক্কায়
তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেন, এভাবে
প্রাথমিক শক্তি সঞ্চয়ের পর আল্লাহ তায়ালা কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ করে বলেন,
فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ
“সুতরাং তোমাকে
যে আদেশ দেয়া হয়েছে, তা
প্রকাশ্যে প্রচার কর এবং মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।” (সূরা হিজর : ৯৪) এর পরে
রাসূল সা. প্রকাশ্যে দাওয়াত দেয়া শুরু করেন। এখানে হিকমত হচ্ছে প্রথমেই যদি প্রকাশ্যে
দাওয়াত দেয়া শুরু করা হতো তাহলে ইসলামের আলো সূতিকাগারেই নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতো
কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সে সুযোগ কাফের-মুশরিকদের দেন নাই। এজন্য প্রথমে গোপনে দাওয়াতের
উপদেশ দেন। আমরা হযরত নূহ (আ)-এর দাওয়াতেও একই হিকমত দেখতে পাই। তিনি গোপনে ও প্রকাশ্যে
মানুষদেরকে আল্লাহর পথে ডাকতেন। আল্লাহ বলেন,
ثُمَّ إِنِّي دَعَوْتُهُمْ جِهَارًا ثُمَّ إِنِّي
أَعْلَنْتُ لَهُمْ وَأَسْرَرْتُ لَهُمْ إِسْرَارًا
“তারপর আমি তাদেরকে
প্রকাশ্যে আহ্বান করেছি। অতঃপর তাদেরকে আমি প্রকাশ্যে এবং অতি গোপনেও আহ্বান করেছি।”
(সূরা নূহ : ৮-৯)
উপরোক্ত আলোচান থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষা হচ্ছে,
১. দাওয়াতি কাজ করা ফরজ তাই এটাকে জীবনের
মিশন হিসেবে নিতে হবে। ২. দাওয়াতকে ফলপ্রসূ করার জন্য হিকমত অবলম্বন করতে হবে এবং মাওয়েজা
আল-হাসানার মাধ্যমে দাওয়াত উপস্থাপন করতে হবে। ৩. যদি ইসলামের স্বার্থে বিতর্কের প্রেক্ষাপট
সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যতদূর সম্ভব বিবাদ এড়িয়ে
চলার নীতি অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। আমিন।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে আপনি দাওয়াতী কাজ করার চেষ্টা করেছেন এজন্য আপনাকে শুকরিয়া
জানায়। কিন্তু মনে রাখা উচিত, কোন সংগীতানুষ্ঠানে বা কনসার্টে যদি কুরআনের কথা বললে,
মানুষ তা মানা তো দূরের কথা বরং বিরোধিতা করবে বলে মনে হয় তাহলে এমন জায়গায় দ্বীনি
কথা বলা মোটেও উচিত নয়। এটি দাওয়াতের হেকমত পরিপন্থী কাজ। একজন দাঈর জন্য পরিবেশ, পরিস্থিতি
ও হালত বুঝে কথা বলা উচিত।
তবে যারা লিংকে দেওয়া মন্তব্যগুলো করেছে নি:সন্দেহে তা ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব
থেকেই করেছে। তাদের উপর ইস্তেগফার করা ও কারো কারো ক্ষেত্রে ঈমান নবায়ন করাও জরুরী।