আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
191 views
in পবিত্রতা (Purity) by (40 points)
আসসালামুয়ালাইকুম হুজুর

আমি একজন মেয়ে, হায়েজ শেষে যখন গোসল ফরজ হয় তখন অনেক সন্দেহের মধ্যে পরে যাই তাই কিছু প্রশ্ন ছিল,

১.ফরজ গোসল চলাকালীন কি প্রস্রাব বা বায়ু নির্গত হওয়ার সন্দেহ হলে বা আসলেই যদি এগুলো হয় তাহলে কি এই গোসল বার বার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে?

২.আমি যখন শাওয়ারের নিচে দাড়াই আমার সম্পূর্ন গোসলে এমন মনে হয় যে প্রস্রাব বের হচ্ছে বা বায়ু নির্গত হচ্ছে যার কারণে আমি ১০ বা তার অধিক বার ফরজ গোসল প্রথম থেকে বার বার করতেই থাকি যার ফলে সময় আর পানি উভয়ই অপচয় হয়, এমতাবস্থায় আমি কি করবো?

৩.গোসলে কুলির সময় মুখে পানি নিয়ে নরমাল কুলি করলেই হবে নাকি মুখ উপড় করে গড়গড়া করে গলায়ও পানি পৌঁছাতে হবে? নরমাল কুলি করা ফরজ নাকি গড়গড়াসহ কুলি করা ফরজ?

৪.ফরজ গোসলে একবারে সাবান স্যাম্পু ব্যবহার করে যদি শেষে তিন ফরজ আদায় করা হয় তাহলে কি ফরজ গোসল হবে? আমার তো আবার সন্দেহ আছে বায়ু নির্গত বা প্রস্রাব বের হওয়ার তার জন্য!

৫.ফরজ গোসলে ওযু করা কি ফরজ? ওযু না করে শুধু গোসলের তিন ফরজ আদায় করলে কি গোসল হবে?

1 Answer

0 votes
by (59,790 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাব

https://ifatwa.info/26170/?show=26170#q26170 নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,

গোসলের ফরয

(১) মুখ ধৌত করা।

(২) নাক ধৌত করা।

(৩) সমস্ত শরীর একবার ধৌত করা।

গোসলের ফরয সাধারনত এ তিনটিই। কেননা সমস্ত শরীরের মধ্যে পরবর্তী সবগুলাই ঢুকে গেছে। কিন্ত বিশেষ গুরুত্বের ধরুণ কোনো কোনো কিতাবে পৃথক পৃথক করে গননা করা হয়।

(৪) খতনাবিহীন ব্যক্তির পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া যদি খুলতে কষ্ট হয়, তবে তার ভেতরাংশ ধৌত করা।

(৫) নাভি ধৌত করা।

(৬) শরীরের এরূপ ছিদ্রে পানি পৌঁছানো, যা বুঁজে যায়নি।

(৭) পুরুষের চুলের বেণীর ভেতরে পানি পৌঁছানো, এতে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছা বা না পৌঁছার কোন শর্ত নেই। তবে মহিলার চুলের গোড়ায় যদি পানি পৌঁছে, তাহলে মহিলার চুলের বেণীর ভেতরে পানি পৌঁছানো ফরয নয়।

(৮) দাড়ির ভেতরস্থ চামড়া ধৌত করা।

(৯) গোঁফের ভেতরস্থ চামড়া ধৌত করা।

(১০) ভ্রুর ভেতরস্থ চামড়া ধৌত করা।

(১১) যোনি মুখবরনের বহিরাংশ ধৌত করা।

 

https://ifatwa.info/3604/  নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,

যে সব কারণে গোসল ফরজ হয়ঃ

এক. জাগ্রত বা ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত হওয়া। ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনা অনুভব না হলেও গোসল ফরজ। কেননা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে মানুষ অনেক সময় টের পায় না। তাই কোনো ব্যক্তি ঘুম থেকে ওঠার পর যদি তার কাপড়ে নাপাকির চিহ্ন দেখে, তাহলে তার স্বপ্নদোষ বা বীর্যপাতের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায় গোসল ফরজ হবে। (হেদায়া ১/৪৫, আন নুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ২৯)

عن علي رضي الله عنه قال : كنت رجلا مذاء فقال لي رسول صلي الله عليه وسلم الله إذا رأيت المذي فاغسل ذكرك وتوضأ وضوءك للصلاة و إذا فضخت الماء فاغتسل .رواه النسائي بسند صحيح (193)

যার সারমর্ম হলো যখন পানি উত্তেজনার সাথে (টপকিয়ে) পড়বে তখন গোসল ফরজ হবে।

 

দুই. স্ত্রী সহবাস করা। সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গের সর্বনিম্ন সুপারি পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই উভয়ের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক। (বুখারি, হা. ২৯১, মুসলিম, হা. ৩৪৩)

 

হাদীস শরীফে এসেছে

عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلي الله عليه وسلم قال : إذا جلس بين شعبها الأربع وأجهد نفسه فقد وجب الغسل أنزل أو لم ينزل. رواه أحمد بسند صحيح (8557)

রাসুল সাঃ বলেছেন যে  যখন পুরুষ মহিলার চারযানুর মাঝে বসে সহবাসের চেষ্টা করবে,তখনই গোসল ফরজ হয়ে যাবে, বির্যপাত হোক বা না হোক।    

তিন. নারীদের হায়েয (ঋতুস্রাব) এবং নেফাস (সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব) বন্ধ হওয়ার পরও গোসল ফরজ। (রদ্দুল মুহতার ১/১৬৫)

 

ফরজ গোসলের নিয়ম:

১. গোসলের জন্য মনে মনে নিয়্যাত করতে হবে।

২. প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধুতে হবে।

৩. এরপর ডানহাতে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান এবং তার আশপাশ ভালো করে ধুতে হবে। শরীরের অন্য কোন জায়গায় বীর্য বা নাপাকি লেগে থাকলে সেটাও ধুতে হবে।

৪. এবার বাম হাতকে ভালো করে ধুইয়ে ফেলতে হবে।

৫. এবার ওজুর নিয়মের মত করে ওজু করতে হবে।

৬. ওজু শেষে মাথায় তিনবার পানি ঢালতে হবে।

৭. এবার সমস্ত শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে ৩ বার ডানে তারপরে ৩ বার বামে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুতে হবে, যেন শরীরের কোন অংশই বা কোন লোমও শুকনো না থাকে। নাভি, বগল ও অন্যান্য কুঁচকানো জায়গায় পানি দিয়ে ধুতে হবে।

৮. সবার শেষে একটু অন্য জায়গায় সরে গিয়ে দুই পা ৩ বার ভালোভাবে ধুতে হবে।

 

মনে রাখতে হবে:

১. পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল ভালোভাবে ভিজতে হবে।

২. এই নিয়মে গোসলের পর নতুন করে আর ওজুর দরকার নাই, যদি ওজু না ভাঙ্গে।

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

 

১-২. না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বার বার আবার প্রথম থেকে গোসল করা লাগবে না। তবে প্রস্রাব বা বায়ু নির্গত হলে অযু ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং গোসলের পর পরই নামাজ পড়তে চাইলে আবার অযু করতে হবে।

৩. ফরজ গোসলের  ক্ষেত্রে গড়গড়াসহ কুলি করা ফরজ। তবে তাই বলে মুখ উপর করে খুব কষ্ট করে গলার মধ্যে পানি পৌছাতে বিষয়টা এমন নয়। বরং খুব ভালো করে গড়গড়াসহ কুলি করবে যাতে করে মুখের সমস্ত জায়গায় পানি পৌছে যায়। এই ক্ষেত্রে আগে মেসওয়াক করে নিতে পারেন।

৪. আগেই ফরজগুলো আদায় করে নেওয়া ভালো । তবে পরে করলেও হবে। আর বিস্তারিত উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

৫. গোসলের সময় অযু করা সুন্নাহ। সুতরাং অযু না করেও শুধু তিন ফরজ আদায় করে গোসল করলেও গোসল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 130 views
0 votes
1 answer 145 views
0 votes
1 answer 176 views
...