আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
119 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম,
আব্দুল্লাহ একজন ব্যবসায়ী। তার ব্যবসায় এক ভাই ১০ হাজার টাকা ইনভেস্টমেন্ট করেছে।  এবং ২জনের সম্মতিতে এইভাবে চুক্তি করেছে যে, এই টাকার উপরে লাভ বা লসের ৫০% সে পাবে,  আর বাকি ৫০% আব্দুল্লাহ পাবে, যেহেতু সে পরিশ্রম  করতেছে।
প্রশ্ন:
১. আব্দুল্লাহ কি এই টাকা দিয়ে তার ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সমগ্রী কিনতে পড়বে?যেমন-  যে পন্যটি বিক্রি করবে সেটি,  ঐ পন্যটি মাপার জন্য যন্ত্র,  ঐ পন্যটির ভেজাল পরীক্ষার যন্ত্র  ইত্যাদি।
২. আল্লাহ না করুক,  যদি ব্যবসায় লস হয়,  আর ইনভেস্টর টাকা ফেরত চায় বা তার সাথে ব্যবসা করতে আর না চায়,  সে ক্ষেত্রে  আব্দুল্লাহ, ইনভেস্টরকে কত টাকা ফেরত দিবে? দরকার হলে উদাহরণ  দিয়ে একটু বুঝিয়ে বলবেন৷
মূল ধনের সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিতে হবে কি? নাকি ৫০% দিতে হবে,  যেহেতু ৫০% লাভ, লসের কথা উল্লেখ ছিলো। নাকি যে পরিমানে টোটালের উপর লস হয়েছে সেটার উপর নির্ভর করে দিতে হবে?

উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেয়ার অনুরোধ রইলো।
জাযাকাল্লাহ খইরন।

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


প্রথমেই আমরা কিছু মাসয়ালা জেনে নেইঃ-

https://ifatwa.info/61392/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
ব্যবসার ক্ষেত্রে এক পক্ষের মাল,অপর পক্ষের শ্রম দেওয়াকে মুদারাবা বলা হয়।
এটি জায়েজ আছে। 
,
মুদারাবার ক্ষেত্রে শরীয়তের উসুল হলো যাহা লাভ হবে,তাহা শতকরা হারে উভয়ের মাঝে বন্টন করার চুক্তি করতে হবে।
কোনো নির্দিষ্ট টাকার চুক্তি করা যাবেনা,লোকসান হলে আগে লাভের টাকা থেকে সেটা পূরন করা হবে,অতঃপর মূলধন থেকে পূরন করা হবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ     
بَاب الشَّرِكَةِ وَالْمُضَارَبَةِ
حَدَّثَنَا أَبُو السَّائِبِ، سَلْمُ بْنُ جُنَادَةَ حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الْحَفَرِيُّ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ اشْتَرَكْتُ أَنَا وَسَعْدٌ، وَعَمَّارٌ، يَوْمَ بَدْرٍ فِيمَا نُصِيبُ فَلَمْ أَجِئْ أَنَا وَلاَ عَمَّارٌ بِشَىْءٍ وَجَاءَ سَعْدٌ بِرَجُلَيْنِ .
শারীকাত (অংশিদারী) ও মুদারাবা ব্যবসা
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন সাদ (রাঃ) , আম্মার (রাঃ) ও আমি গানীমাতের মালের ব্যাপারে অংশীদার হই (এই মর্মে যে, আমরা যা পাবো তা তিনজনে ভাগ করে নিবো)। আম্মার ও আমি কিছুই আনতে পারিনি। অবশ্য সাদ (রাঃ) দু’জন যুদ্ধবন্দী নিয়ে আসেন।
নাসায়ী ৪৬৯৭, আবূ দাউদ ৩৩৮৮, বায়হাকী ফিস সুনান ৪/১৯৪, ইরওয়া ১৪৭৪। 

 مَالِك وَجْهُ الْقِرَاضِ الْمَعْرُوفِ الْجَائِزِ أَنْ يَأْخُذَ الرَّجُلُ الْمَالَ مِنْ صَاحِبِهِ عَلَى أَنْ يَعْمَلَ فِيهِ وَلَا ضَمَانَ عَلَيْهِ وَنَفَقَةُ الْعَامِلِ فِي الْمَالِ فِي سَفَرِهِ مِنْ طَعَامِهِ وَكِسْوَتِهِ وَمَا يُصْلِحُهُ بِالْمَعْرُوفِ بِقَدْرِ الْمَالِ إِذَا شَخَصَ فِي الْمَالِ إِذَا كَانَ الْمَالُ يَحْمِلُ ذَلِكَ فَإِنْ كَانَ مُقِيمًا فِي أَهْلِهِ فَلَا نَفَقَةَ لَهُ مِنْ الْمَالِ وَلَا كِسْوَةَ قَالَ مَالِك وَلَا بَأْسَ بِأَنْ يُعِينَ الْمُتَقَارِضَانِ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا صَاحِبَهُ عَلَى وَجْهِ الْمَعْرُوفِ إِذَا صَحَّ ذَلِكَ مِنْهُمَا قَالَ مَالِك وَلَا بَأْسَ بِأَنْ يَشْتَرِيَ رَبُّ الْمَالِ مِمَّنْ قَارَضَهُ بَعْضَ مَا يَشْتَرِي مِنْ السِّلَعِ إِذَا كَانَ ذَلِكَ صَحِيحًا عَلَى غَيْرِ شَرْطٍ قَالَ مَالِك فِيمَنْ دَفَعَ إِلَى رَجُلٍ وَإِلَى غُلَامٍ لَهُ مَالًا قِرَاضًا يَعْمَلَانِ فِيهِ جَمِيعًا إِنَّ ذَلِكَ جَائِزٌ لَا بَأْسَ بِهِ لِأَنَّ الرِّبْحَ مَالٌ لِغُلَامِهِ لَا يَكُونُ الرِّبْحُ لِلسَّيِّدِ حَتَّى يَنْتَزِعَهُ مِنْهُ وَهُوَ بِمَنْزِلَةِ غَيْرِهِ مِنْ كَسْبِهِ 
মালিক (রহঃ) বলেনঃ মুযারাবাত বা শরীকী কারবার এইভাবে বৈধ যে, কেহ কাহারও নিকট হইতে এই শর্তে টাকা নেয় যে, সে শ্রম ও মেহনত করিবে। ক্ষতি হইলে সে দায়ী থাকিবে না। সফরে খাওয়া-দাওয়া এবং বহন খরচ ও অন্যান্য বৈধ খরচ ঐ মাল হইতে নিয়ম মাফিক ব্যয় করা হইবে মূলধন অনুযায়ী। অবশ্য অর্থ গ্রহণকারী আবাসে থাকিলে মূলধন হইতে ব্যয় করিতে পারবে না।

মালিক (রহঃ) বলেনঃ যদি অর্থ গ্রহণকারী অর্থদাতাকে, অর্থদাতা অর্থ গ্রহণকারীকে তাহার শ্রমের পরিমাণ মতো কোন শর্ত ব্যতীত সাহায্য করে তবে তাহাতে কোন ক্ষতি নাই। যদি অর্থদাতা অর্থ গ্রহণকারী হইতে শর্ত ব্যতীত কোন বস্তু খরিদ করে তবে ইহাতেও কোন ক্ষতি নাই।

মালিক (রহঃ) বলেনঃ যদি এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে এবং স্বীয় দাসকে শরীকী কারবারের জন্য অর্থ দেয় এবং এই শর্ত করে যে, উভয়ই ইহাতে কাজ করিবে, তবে তাহা জায়েয আছে। কারণ নির্ধারিত লভ্যাংশের মালিক ক্রীতদাস হইবে, তাহার প্রভু উহা ছিনাইয়া লইতে পরিবে না, এই মালের স্বত্বাধিকারী ক্রীতদাসই থাকিবে।
(মুয়াত্তা মালিক ১৩৮৯)

বিস্তারিত জানুনঃ  

যেই পরিমাণ লাভ নেয়ার চুক্তি করা হবে, লোকসানের ক্ষেত্রেও একই পরিমাণ নির্দিষ্ট হবেনা।
বরং এখানে যে যেই পরিমান টাকা ইনভেস্ট করেছে,সেই হারেই লোকসানে ভাগীদার হতে হবে।

উদাহরণঃ-
দুইজন ব্যাক্তি উভয়েই ৫০% টাকা দিয়ে শরিকানা ব্যবসা করছে।
এখানে উভয়ে টাকা দিলেও ব্যবসার দেখভাল একজন করে অপরজন করেনা,অর্থাৎ একজন শ্রম দেয়,অপরজন শ্রম দেয়না।
তাই তাদের মাঝে লভ্যাংশ এভাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে যে যে ব্যবসায় টাকা লাগানোর পাশাপাশি উক্ত ব্যবসায় দেখাশোনার কাজও করছে,তার লভ্যাংশ হলো ৬০%। 
আর যে ব্যাক্তি শুধু ৫০% টাকা দিয়েছে,উক্ত ব্যাবসায় কাজ করছেনা,তার লাভ ৪০%।

এখন উক্ত ব্যবসায় লোকসানের ক্ষেত্রে উভয়েই যেই টাকা ইনভেস্ট করেছিলো সেদিক লক্ষ্য করে লোকসানে ভাগীদার হতে হবে।

অর্থাৎ উল্লেখিত ছুরতে যেহেতু উভয়েই ৫০% টাকা দিয়ে শরিক হয়েছিলো,তাই এখন লোকসানে উভয়ে ৫০% হারেই শরীক হবে। 

بدائع الصنائع:
"إذا عرف هذا فنقول: إذا شرطا الربح على قدر المالين متساويًا أو متفاضلًا، فلا شكّ أنه يجوز و يكون الربح بينهما على الشرط سواء شرطا العمل عليهما أو على أحدهما و الوضيعة على قدر المالين متساويًا و متفاضلًا؛ لأنّ الوضيعة اسم لجزء هالك من المال فيتقدر بقدر المال."
(كتاب الشركة، فصل في بيان شرائط جواز أنواع الشركة، 6/62 ط:سعید)
সারমর্মঃ-
আর লোকসান হলে তাদের ইনভেস্ট কৃত সম্পদের হিসেবে তারা উভয়ে ভাগীদার হবে 

"লোকসানের ক্ষেত্রে আগে লভ্যাংশ থেকে ক্ষতিপূরণ করে তারপর মূলধন থেকে,,"
এর ব্যাখ্যা হলো,
মুদারাবা পদ্ধতিতে ব্যবসায় যদি লোকসান হয়,সেক্ষেত্রে এই ব্যবসা শুরুর পর প্রথমবারেই তাদের লোকসান হয়,সেক্ষেত্রে তো তাদের কোনো লাভই নেই।
তাই সরাসরি মূলধন থেকে ক্ষতিপূরণ হবে।
কিন্তু যদি আগে থেকেই ব্যবসা চলে, এখন লোকসান হয়েছে, সেক্ষেত্রে আগে তো লাভও হয়েছিলো,(যদিও তাহা বন্টনকৃত হোক) সেই আগের লাভের টাকা হতে লোকসানের ক্ষতিপূরণ করতে হবে।
অতঃপর মূলধন হতে। 

تبيين الحقائق شرح كنز الدقائق وحاشية الشلبي: 
"قال - رحمه الله - (وما هلك من مال المضاربة فمن الربح)؛ لأنه تابع ورأس المال أصل لتصور وجوده بدون الربح لا العكس فوجب صرف الهالك إلى التبع لاستحالة بقائه بدون الأصل كما يصرف الهالك العفو في الزكاة قال - رحمه الله - (فإن زاد الهالك على الربح لم يضمن المضارب)؛ لأنه أمين فلا يكون ضمينا للتنافي بينهما في شيء واحد".
(کتاب المضاربۃ،باب المضارب یضارب،ج:5،ص:67،ط:المطبعة الكبرى الأميرية - بولاق، القاهرة) 
সারমর্মঃ-
মুদারাবার সম্পদ হয়ে যাহা লোকসান হবে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে,তাহা লভ্যাংশ থেকে পূরন হবে।
কেননা সেটা অনুগত,আর মূলধন হলো আসল।
যদি লাভ থেকে ক্ষতি বেশি হয়,সেক্ষেত্রে বাকি টুকু মূলধন থেকে পূরন করা হবে।

এক্ষেত্রে যে ব্যবসায় শ্রম দিচ্ছে,সে যদি শুধু শ্রমই দিয়ে থাকে,ইনভেস্ট না করে থাকে,তাহলে তার তো মূলধন নেই,তাই সে উক্ত লোকসানে ভাগীদার হবেনা। 

تنویر الابصار مع الدر المختار:
"(وما هلك من مال المضاربة يصرف إلى الربح) ؛ لأنه تبع (فإن زاد الهالك على الربح لم يضمن) ولو فاسدة من عمله؛ لأنه أمين (وإن قسم الربح وبقيت المضاربة ثم هلك المال أو بعضه ترادا الربح ليأخذ المالك رأس المال وما فضل بينهما، وإن نقص لم يضمن) لما مر"۔
(کتاب المضاربۃ،باب المضارب یضارب،فصل فی المتفرقات فی المضاربۃ،ج:5،ص:656،ط:سعید)
সারমর্মঃ-
মুদারাবার সম্পদ হয়ে যাহা লোকসান হবে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে,তাহা লভ্যাংশের দিকে ফিরবে।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
আব্দুল্লাহ এই টাকা দিয়ে তার ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সমগ্রী কিনতে পারবেনা।
এক্ষেত্রে কোন কোন ধরনের সামগ্রী সে কিনবে,তাহা ঐ ভাই অর্থাৎ যে টাকা ইনভেস্টমেন্ট করেছে, তার থেকে জেনে নিবে।

(০২)
যদি ব্যবসায় লস হয়,সেক্ষেত্রে লভ্যাংশ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

লভ্যাংশ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার পরেও যদি আরো লোকসান থেকেই যায় সেক্ষেত্রে মূলধন থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এক্ষেত্রে আব্দুল্লাহ যেহেতু শুধু শ্রমই দিচ্ছে,ইনভেস্ট করেনি,সুতরাং তার তো মূলধন নেই,তাই সে উক্ত লোকসানে ভাগীদার হবেনা। 

তাই তার থেকে কোনো ক্ষতিপূরন আদায় করা হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...