আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
73 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
প্রশ্নটা দাসমুক্তি সংক্রান্ত,
আমরা জানি দাসমুক্তির ক্ষেত্রে যে মুক্ত করে সে দাসের ওয়ালা হয়ে যায়, অর্থাৎ দাসের উত্তরাধিকারী হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ধরুন কোন দাস ও তার সন্তানদের আমি একসাথে মুক্ত করলাম, এখন দাসটা মারা গেলে তার সব সহায় সম্পদের তার সন্তানেরা বা তার স্ত্রী না হয়ে যে মুক্ত করে তার হয়ে গেল। এতে কি দাসের স্ত্রী ও পরিবারের উপর যুলুম হইল না?  ইসলাম তো ইনসাফে বিশ্বাসী। আরেকটা যুক্তিও দেওয়া যায় আমরা জানি দাসমুক্তি অনেক পুন্যের একটা কাজ৷  কিন্তু আদৌ ইসলামে বিনামূল্যে নি:স্বার্থ ভাবে দাসমুক্তি বলতে কিছু থাকেনা, কারণ ওয়ালা হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে একটা বিনিময় প্রতিষ্ঠা অলরেডি হয়ে যায়। এটা কতখানিক ইনসাফ করা হয়? এভাবে তো দাসদের কখনই উন্নয়ন সাধিত হবেনা, দাসদের সন্তানরা আজীবন দরিদ্রই থেকে যাবে, তাদের পিতৃ সম্পদ হইতে তারা আজীবন বঞ্চিত থাকবে? আর ওয়ালা হবার পেছনের হেকমতটা কি থাকতে পারে? আর ইসলাম কি বলে দাস মুক্ত করার সাথে সাথেই তার সহায় সম্পদ কেড়ে নিয়ে তাকে মুক্ত করতে?

1 Answer

0 votes
by (677,160 points)
জবাবঃ- 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 


হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ، عَنْ زَائِدَةَ، عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، . أَنَّهَا اشْتَرَتْ بَرِيرَةَ مِنْ أُنَاسٍ مِنَ الأَنْصَارِ . وَاشْتَرَطُوا الْوَلاَءَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْوَلاَءُ لِمَنْ وَلِيَ النِّعْمَةَ " . وَخَيَّرَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ زَوْجُهَا عَبْدًا وَأَهْدَتْ لِعَائِشَةَ لَحْمًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَوْ صَنَعْتُمْ لَنَا مِنْ هَذَا اللَّحْمِ " . قَالَتْ عَائِشَةُ تُصُدِّقَ بِهِ عَلَى بَرِيرَةَ . فَقَالَ " هُوَ لَهَا صَدَقَةٌ وَلَنَا هَدِيَّةٌ " 

আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ..... আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি কিছু সংখ্যক আনসার মনিবদের কাছে থেকে বারীরাকে খরিদ করলেন। তবে তারা (সে সময়) ওয়ালা'র শর্ত দিয়েছিল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রকৃতপক্ষে ওয়ালা তারই প্রাপ্য যে নি’আমাতের অধিকারী (মুক্তিদাতা)। আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইখতিয়ার প্রদান করেছিলেন। তার স্বামী ছিল ক্রীতদাস। একবার সে (বারীরাহ) আয়িশাহ (রাযিঃ) এর কাছে কিছু পরিমাণ গোশত হাদিয়া পাঠাল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা যদি এ গোশত থেকে আমার জন্য কিছুটা রান্না করে আনতে.....। তখন আয়িশাহ (রাযিঃ) বললেনঃ এতো বারীরার জন্য সদাকাহ্ হিসেবে এসেছে (আর আপনার জন্য সদাকাহ হারাম)। তিনি বললেনঃ তা তার জন্য সদাকাহ এবং আমাদের জন্য হাদিয়া। (মুসলিম ৩৬৭৪.ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬৪০, ইসলামিক সেন্টার ৩৬৪০)

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا- قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ - صلى الله عليه وسلم: «الْوَلَاءُ لُحْمَةٌ كَلُحْمَةِ النَّسَبِ, لَا يُبَاعُ, وَلَا يُوهَبُ»

’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দাসমুক্ত করার দ্বারা ’ওয়ালা’ নামে যে সম্পর্ক মুক্তকারী মুনিব ও দাসের মধ্যে স্থাপিত হয় তা বংশীয় সম্পর্কের ন্যায় (স্থায়ী)। সেটি বিক্রয় হয় না ও দানও করা যায় না।
(বুলুগুল মারাম ৯৫৬)

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: جَاءَتْ بَرِيرَةُ فَقَالَتْ: إِنِّي كَاتَبْتُ عَلَى تِسْعِ أَوَاقٍ فِي كُلِّ عَامٍ وُقِيَّةٌ فَأَعِينِينِي فَقَالَتْ عَائِشَةُ: إِنْ أَحَبَّ أَهْلُكِ أَنْ أَعُدَّهَا لَهُمْ عُدَّةً وَاحِدَةً وَأُعْتِقَكِ فَعَلْتُ وَيَكُونُ وَلَاؤُكِ لِي فَذَهَبَتْ إِلَى أَهْلِهَا فَأَبَوْا إِلَّا أَنْ يَكُونَ الْوَلَاءُ لَهُمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُذِيهَا وَأَعْتِقِيهَا» ثُمَّ قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: «أَمَّا أبعد فَمَا بَالُ رِجَالٍ يَشْتَرِطُونَ شُرُوطًا لَيْسَتَ فِي كِتَابِ اللَّهِ مَا كَانَ مِنْ شَرْطٍ لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَهُوَ بَاطِلٌ وَإِنْ كَانَ مِائَةَ شَرْطٍ فَقَضَاءُ اللَّهِ أَحَقُّ وَشَرْطُ اللَّهِ أَوْثَقُ وَإِنَّمَا الْوَلَاءُ لِمَنْ أَعْتَقَ»
 ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন বারীরাহ্ (রাঃ) আমার নিকট এসে বলল, আমি আমার মালিকের সাথে প্রতি বছর এক উক্বিয়্যাহ্ [৪০ দিরহাম] হিসাবে নয় বছরে নয় উক্বিয়্যাহ্ [৩৩৬ দিরহাম] দেয়ার শর্তে লিখিত চুক্তিনামা সম্পাদনা করেছি, এজন্য আপনি আমাকে সাহায্য করুন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তোমার মালিক যদি ইচ্ছাপোষণ করে (আর তোমার যদি সম্মতি থাকে) যে, উল্লেখিত দিরহাম একসাথে আদায় করে আমি তোমাকে মুক্ত করে দিব এবং মুক্তিদান সূত্রে আমি তোমার উত্তরাধিকার তথা স্বত্বের অধিকারিণী বলে গণ্য হবো।

বারীরাহ্ (রাঃ) তার মালিকের কাছে গিয়ে এ কথা ব্যক্ত করলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করল এবং বলল, উক্ত উত্তরাধিকার-স্বত্ব আমাদের থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে] বললেন, তুমি তাকে কিনে নাও এবং মুক্ত করে দাও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদেরকে খুৎবা দিতে গিয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন। অতঃপর বললেন, একশ্রেণীর লোকের এই স্বভাব কেন যে, তারা এরূপ শর্তারোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই? আর আল্লাহর কিতাবে নেই, এমন সকল প্রকার শর্তই বাতিল বলে সাব্যস্ত হবে। এভাবে যদি একশ’ শর্তও করে, তবুও আল্লাহ তা’আলার শারী’আতই (বিধানই) অগ্রগণ্য এবং আল্লাহ তা’আলার দেয়া শর্তই সর্বাধিক সুদৃঢ়। তাই উত্তরাধিকার-স্বত্ব একমাত্র মুক্তকারীর বলে গণ্য হবে।
(বুখারী ২১৬৮, মুসলিম ১৫০৪, নাসায়ী ৩৪৫১.মিশকাত ২৮৭৭।)

ওয়ালা হচ্ছে সেই মুক্ত দাস, যাকে মুক্ত করে দেয়া হলেও শুধুমাত্র সুসম্পর্কের কারণে মুনিব কর্তৃক সম্পত্তি থেকে কিছু প্ৰদান করা হয়।

★প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই/বোন,
দাসমুক্তির ক্ষেত্রে যে মুক্ত করে সে দাসের ওয়ালা হয়ে যায়, অর্থাৎ দাসের উত্তরাধিকারী হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে মনিব যদি দাসকে টাকার বিনিময়ে আযাদ করতো,সেক্ষেত্রে মনিব দাসের ওয়ালা হয়ে যায়না, অর্থাৎ দাসের উত্তরাধিকারী হয়ে যায়না।
কিন্তু যেহেতু দাস টাকা দিতে পারছেনা,তাই তার ওয়ালা হওয়ার ভিত্তিতে মূলত আযাদ করে।

উল্লেখ্য এক্ষেত্রে অনেকেই শুধুমাত্র ছওয়াবের আশায় দাস মুক্ত করে,দাসের উত্তরাধিকারী হয়না।
সেক্ষেত্রে যে মুক্ত করে সে দাসের ওয়ালা হয়ে যায়না।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে এটি মূলত জুলুমের বিষয় নয়,ঐ ব্যাক্তি যেহেতু টাকা দিয়েই দাস ক্রয় করেছে,আর মুক্তির ক্ষেত্রে যেহেতু দাস কোনো টাকা দিতে পারছেনা,সেক্ষেত্রে তার ওয়ালা এর মালিক হওয়ার নিমিত্তে তথা ভবিষ্যতে সম্পদ লাভের আশায় অনেকে এই আযাদ করে।

এটা মূলত জুলুম নয়,এটি তার ক্রয় মূল্যের সম হিসেবে গন্য করা হয়,যাহা দাসের সন্তুষ্টি চিত্তেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
১.ভাই আমি আসলে জানতে চাচ্ছি আদৌ কি বিনামূল্যে দাস মুক্ত করা বলতে কিছু আছে না মুকাতাব বা ওয়ালা এই দুইটা শর্ত পূরণ করার বিনিময়েই মুক্ত হবে শুধু? 
২. দাস মুক্তির পর দাস যদি পরিশ্রম করে সম্পদ অর্জন করে তার উত্তরাধিকারী কি ওয়ালা হবে?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 53 views
...