আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
149 views
in ওয়াসওয়াসা by (17 points)
edited by
আমি প্রায় ১৮ মাস যাবত ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত। এখন আলহামদুলিল্লাহ অনেক সুস্থ। তালাক, পাক নাপাকি, হুরমত, খারাপ চিন্তা আমাকে শেষ করে দিচ্ছিল। তবে, খারাপ চিন্তা আসে প্রচুর।
১. মুখে না উচ্চারণ করে ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তি কি কাফের হতে পারে? - এই প্রশ্নটি একটু বিশ্লেষণ করে লেখার অনুরোধ রইল। যেমন: কয়েকটি অবস্থা হতে পারে উচ্চারণ না করে:-

ক. অনিচ্ছায় খারাপ চিন্তা চলে আসে ( ইসলাম নিয়ে)
খ. ইচ্ছায় নাকি অনিচ্ছায় রোগী সঠিক জানে না

গ. ইচ্ছাকৃত কুফরি চিন্তা করলো কিন্তু উচ্চারণ করলো না

ঘ. ইচ্ছাকৃতভাবে কুফুরি চিন্তা করার পর সে কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুতপ্ত হল মনে মনে।
উপরের ৪ রকমের ক্ষেত্রে কোন কোন অবস্থায় ঈমান চলে যেতে পারে?

২. একজন লোক যদি কাফের হয়ে যায় তাহলে তওবা করা ছাড়া যদি কালিমা পাঠ করে তাহলে কি যথেষ্ট হবে? কিংবা আগে কালিমা পাঠ করলো পরে তওবা করলো? কিংবা লোকটি বলল "হে আল্লাহ, আমি হয়তো কোনো কুফুরি করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও।" এরপর সে কালিনা  পাঠ করার পর তার মনে পড়লো সে আগেও একটি কুফুরি কাজ করেছে, কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার সময় এটি খেয়াল ছিল না - এক্ষেত্রে কি আবার কালিমা পাঠ করতে হবে নাকি তওবা করলেই হবে?

৩. নাপাকির চিহ্ন, গন্ধ, রঙ না পাওয়া গেলে - সবকিছু পাক। - এভাবে কি চিন্তা করা যাবে? কারণ, আমার ঘরে ইদুর প্রশ্রাব করেছিল। সেটি পাক না করেই অন্যান্য সদস্যরা সেখানে হাত দিয়েছে। এরপর সেই হাত দিয়ে প্রায় প্রতিটি আসবাব ভেজা হাত কিংবা শুকনো হাতে স্পর্শ করেছে। আবার আমার বোন নাপাক কাপড় ডিটারজেন্ট দিয়ে একবারই ফ্লোরে কাপড় ধৌত করে। আবার সেই হাত দিয়ে ট্যাপ ধরে। রান্নার সময় সেই ট্যাপ এ হাত দেয় আবার চাল ধৌত করে। এক্ষেত্রে খাবার, আসবাব পত্র - সব তো নাপাক হয়ে যাওয়ার কথা।
উক্ত স্থানগুলোতে তো নাপাকির গন্ধ চিহ্ন রঙ নেই - সেক্ষেত্রে ভেজা হাতে সব স্পর্শ করতে পারবো?

৩.১: এক বালতি পানির মধ্যে ১ ফোটা নাপাকি পড়লেও তো গন্ধ, চিহ্ন, রঙ থাকবে না। এক্ষেত্রে, নাপাকি ছড়ানো কিভাবে নির্ণয় করবো?

1 Answer

0 votes
by (573,420 points)
জবাবঃ- 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

 يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ ، فَيَقُولَ : مَنْ خَلَقَ كَذَا وَكَذَا ؟ حَتَّى يَقُولَ لَهُ : مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ ؟ فَإِذَا بَلَغَ ذَلِكَ ، فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ 
শয়তান তোমাদের কারো নিকট আসে এবং বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে, ওটা কে সৃষ্টি করেছে? পরিশেষে এ প্রশ্নও করে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? এ পর্যায়ে পৌঁছলে তোমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর এবং এ ধরণের ভাবনা থেকে বিরত হও। ( বুখারী ৩২৭ )

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
আপনার মনে যে আল্লাহকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা চলে আসে,প্রশ্নে উল্লেখিত যাবতীয় সব বিষয় শয়তানের ওয়াসওয়াসা। 

হাদিস শরিফে  এসেছে, 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: جَاءَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلُوهُ: إِنَّا نَجِدُ فِي أَنْفُسِنَا مَا يَتَعَاظَمُ أَحَدُنَا أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ، قَالَ: وَقَدْ وَجَدْتُمُوهُ؟ قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: ذَاكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ.
সারমর্মঃ
একবার সাহাবায়ে কেরমের একদল রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা আমাদের অন্তরে কখনো কখনো এমন বিষয় অনুভব করি, যা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা আমাদের কাছে খুব কঠিন মনে হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সত্যিই কি তোমরা এরকম পেয়ে থাক? তাঁরা বললেন হ্যাঁ, আমরা এরকম অনুভব করে থাকি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ذَاكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ এটি তোমাদের ঈমানের স্পষ্ট প্রমাণ। (মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদ: অন্তরের ওয়াসওয়াসা)
,
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
আপনি নিজ কাজে মগ্ন হয়ে যান। এদিকে বেশি মনোযোগ দিবেন না। কেননা, এইসব অবাঞ্ছিত চিন্তাকে গুরুত্ব দিয়ে কীভাবে তা দূর করা যায় এ চিন্তায় পড়ে গেলে আপনি এখানেই আটকা পড়ে যাবেন। সামনে অগ্রসর হওয়া আর সম্ভব হবে না। এভাবে শয়তানের উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে।
,
যে কোনো ওয়াসওয়াসার প্রধান চিকিৎসা এটাই যে, একে গুরুত্ব না দেয়া। কী চিন্তা আসল, কী চিন্তা গেল-তা না ভেবে নিজের কাজে মশগুল থাকুন। কেননা, এটা মূলত শয়তানের কাজ। 

আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا النَّجْوَىٰ مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيْسَ بِضَارِّهِمْ شَيْئًا إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

এই ওয়াসওয়াসা তো শয়তানের কাজ; মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার দেয়ার জন্যে। তবে (এই ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে) সে মুমিনদেরকে চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে না, আল্লাহর হুকুম ছাড়া। মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা। (সূরা মুজাদালাহ ১০)

আপনি آمنت بالله ورسوله পড়ে নিবেন।
বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবেন। 

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
পরামর্শ থাকবে, এহেন চিন্তা মাথায় আসলেই অন্য মনস্ক হয়ে যাওয়া।
কোনো কাজ শুরু করে দেয়া।
মাথায় এগুলো আসতেই দিবেননা।
বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবেন। 

এ সংক্রান্ত কাহারো সাথে কোনো কিছু আলোচনা করবেননা।
এ সংক্রান্ত মাসয়ালা পড়া হতে বিরত থাকার পরামর্শ থাকবে।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত কোনো ছুরতেই ঈমান চলে যাবেনা। 
উক্ত ব্যাক্তি কাফের হয়ে যাবেনা।

(০২)
এক্ষেত্রে শুধুমাত্র কালেমায়ে শাহাদাত পাঠই যথেষ্ট। 

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে পুনরায় কালেমা পাঠ আবশ্যক নয়। তওবা না করে থাকলে শুধু তওবা করে নিবে।

(০৩)
কোনো স্থান/বস্তু নাপাক হওয়া সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত না হলে বা কোনো কিছুই না দেখলে বা কোনো কিছুর মাধ্যমে জানতে না পারলে,সেক্ষেত্রে আপনি উপরোক্ত নীতি অনুসরণ করতে পারেন।

৩.১: এক বালতি পানির মধ্যে ১ ফোটা নাপাকি পড়লে গন্ধ, চিহ্ন, রঙ থাকবে না ঠিক, তবে এক্ষেত্রে বিষয়টি আপনি জানতে পারলে বা কোনোভাবে নিশ্চিত হলে পুরো বালতির পানি নাপাক হিসেবে ধরে নিবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...