বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
প্রত্যেক মানুষের জন্য দ্বীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করা ও সেই অনুযায়ী আ'মল করা ফরয।
এবং শুধুমাত্র নিজে আ'মল করলে হবে না বরং নিজে আ'মল করার সাথে সাথে অন্যকেও উৎসাহিত করতে হবে তবেই আপনার নামায-রোযা সহ সমস্ত ইবাদাত পূর্ণ হবে।
অন্যকে দাওয়াত পৌঁছানো সম্পর্কে
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
{ ﻳَﺎﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺑَﻠِّﻎْ ﻣَﺂ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻣِﻦ ﺭَّﺑِّﻚَ ﻭَﺇِﻥ ﻟَّﻢْ ﺗَﻔْﻌَﻞْ ﻓَﻤَﺎ ﺑَﻠَّﻐْﺖَ ﺭِﺳَﺎﻟَﺘَﻪُ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ 67: ]
হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলেন না। (সূরা মায়েদা : ৬৭)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরোও বলেন:
ﺍﺩْﻉُ ﺇِﻟِﻰ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺑِﺎﻟْﺤِﻜْﻤَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻮْﻋِﻈَﺔِ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔِ ﻭَﺟَﺎﺩِﻟْﻬُﻢ ﺑِﺎﻟَّﺘِﻲ ﻫِﻲَ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ( ﺍﻟﻨﺤﻞ : ١٢٥ (
আপনি আপনার প্রতিপালকের দিকে আহবান করুন হিকমত বা প্রজ্ঞা দ্বারা এবং সুন্দর ওয়াজ-উপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে উৎকৃষ্টতর পদ্ধতিতে আলোচনা-বিতর্ক করুন। (সূরা নাহল: ১২৫)
অন্যত্র বলেন:
ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺧَﻴْﺮَ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺃُﺧْﺮِﺟَﺖْ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ ﺗَﺄْﻣُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﺗَﻨْﻬَﻮْﻥَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻨﻜَﺮِ ﻭَﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﻮْ ﺁﻣَﻦَ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻟَﻜَﺎﻥَ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻟَّﻬُﻢ ﻣِّﻨْﻬُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻭَﺃَﻛْﺜَﺮُﻫُﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ ) ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١١٠ (
তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির (কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা ন্যায়কার্যে আদেশ এবং অন্যায় কার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহতে বিশ্বাস কর। (সূরা আলে ইমরান: ১১০)
আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা আরও বলেন:
ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺎﺀ ﺑَﻌْﺾٍ ﻳَﺄْﻣُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﻳَﻨْﻬَﻮْﻥَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻨﻜَﺮِ ﻭَﻳُﻘِﻴﻤُﻮﻥَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻭَﻳُﺆْﺗُﻮﻥَ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﻭَﻳُﻄِﻴﻌُﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﺃُﻭْﻟَﺌِﻚَ ﺳَﻴَﺮْﺣَﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰِﻳﺰٌ ﺣَﻜِﻴﻢٌ ( ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ٧١ (
আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা: ৭১)
এবং সূরা তাওবার ১১২ আয়াতে, সূরা হজ্জের ৪১ আয়াতে, সূরা লুকমানের ১৭ আয়াতসহ অন্যান্য স্থানেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহর প্রকৃত মুমিন বান্দাদের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ।
এ দায়িত্বপালনকারী মুমিনকেই সর্বোত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে।
যেমনঃ মহান আল্লাহ বলেন:
ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ﻗَﻮْﻻً ﻣِّﻤَّﻦ ﺩَﻋَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻋَﻤِﻞَ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻨِﻲ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ) ﻓﺼﻠﺖ : ٣٣ (
ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি তো মুসলিমদের একজন।
( সূরা ফুসসিলাত: ৩৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
ﺍﻟﺪِّﻳْﻦُ ﺍﻟﻨَّﺼِﻴْﺤَﺔُ، ﻗُﻠْﻨَﺎ ﻟِﻤَﻦْ ﻗَﺎﻝَ ﻟﻠﻪِ ﻭَﻟِﻜِﺘَﺎﺑِﻪِ ﻭَﻟِﺮَﺳُﻮﻟِﻪِ ﻭَﻟِﺄﺋﻤَّﺔِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻭَﻋَﺎﻣَّﺘﻬِﻢْ . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ )
দীন হলো নসিহত। সাহাবিগণ বললেন, কার জন্য ? বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য, মুসলিমগণের নেতৃবর্গের জন্য এবং সাধারণ মুসলিমদের জন্য। (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নসিহতের জন্য সাহাবিগণের বাইআত তথা প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতেন। বিভিন্ন হাদিসে জারির ইবনু আব্দুল্লাহ রা. মুগিরা ইবনু শুবা রা. প্রমুখ সাহাবি বলেন:
ﺑَﺎﻳَﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮْﻝ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠَّﻢَ ﻋَﻠﻰ ﺇﻗَﺎﻣَﺔِ ﺍﻟﺼَّﻼﺓِ ﻭَﺇﻳْﺘَﺎﺀِ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ ﻭَﺍﻟﻨُّﺼْﺢِ ﻟِﻜُﻞِّ ﻣﺴْﻠِﻢٍ ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ )
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বাইয়াত বা প্রতিজ্ঞা করেছি, সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান ও প্রত্যেক মুসলিমের নসিহত (কল্যাণ কামনা) করার উপর। (বোখারি)।
এ অর্থে তিনি সৎকার্যে আদেশ ও অসৎকার্যে নিষেধের বাইয়াত গ্রহণ করতেন। উবাদাহ ইবনু সামিত ও অন্যান্য সাহাবি রা. বলেন:
ﺇﻧَّﺎ ﺑَﺎﻳَﻌْﻨَﺎﻩُ ﻋَﻠﻰ ﺍﻟﺴَّﻤْﻊِ ﻭَﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔِ .. ﻭَﻋَﻠﻰ ﺍﻷﻣْﺮِ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﺍﻟﻨَّﻬﻲِ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻤُﻨْﻜَﺮِ ﻭَ ﻋَﻠﻰ ﺃﻥْ ﻧَﻘُﻮﻝَ ﻓﻲ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟﻰ ﻭَﻻ ﻧَﺨَﺎﻑُ ﻟَﻮﻣَﺔَ ﻻﺋِﻢٍ ﻓﻴﻪِ ( ﺃﺣﻤﺪ ﺻﺤﻴﺢ )
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বাইয়াত করি আনুগত্যের… এবং সৎকর্মে আদেশ ও অসৎকর্মে নিষেধের এবং এ কথার উপর যে, আমরা মহিমাময় আল্লাহর জন্য কথা বলব এবং সে বিষয়ে কোন নিন্দুকের নিন্দা বা গালি গালাজের তোয়াক্কা করব না। (আহমাদ, বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য সনদে)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন
ﻭَﻟْﺘَﻜُﻦ ﻣِّﻨﻜُﻢْ ﺃُﻣَّﺔٌ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﻭَﻳَﺄْﻣُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﻳَﻨْﻬَﻮْﻥَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻨﻜَﺮِ ﻭَﺃُﻭْﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ ( ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ : ١٠٤ (
আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)
(সংগ্রহকৃত)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে,তাবলীগ করা শুধুমাত্র জায়েয নয় বরং সমস্ত মুসলমানের উপর ফরযে কেফায়া,যেমন জিহাদ ফরযে কেফায়া।
কার সাথে তাবলীগ করছি সেটা আপাতত দেখার বিষয় নয়।এবং আল্লাহ সে সম্পর্কে কখনো জিজ্ঞাসা করবেন না।বরং আল্লাহ প্রত্যেকের ফরয ওয়াজিব আ'মলের খবর নিবেন।