জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
এক বছর ও তারও বেশি নামাজ ও রোযার ছওয়াব পাওয়া যায়,এ সংক্রান্ত যেসব আমল রয়েছে,সেগুলো নফল নামাজ ও রোযার ছওয়াব উদ্দেশ্য।
ফরজ বা সুন্নাত নামাজ এর ছওয়াব নয়।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ الْجَرْجَرَائِيُّ، حِبِّي حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنِ الأَوْزَاعِيِّ، حَدَّثَنِي حَسَّانُ بْنُ عَطِيَّةَ، حَدَّثَنِي أَبُو الأَشْعَثِ الصَّنْعَانِيُّ، حَدَّثَنِي أَوْسُ بْنُ أَوْسٍ الثَّقَفِيُّ، سَمِعْتُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : " مَنْ غَسَّلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاغْتَسَلَ ثُمَّ بَكَّرَ وَابْتَكَرَ وَمَشَى وَلَمْ يَرْكَبْ وَدَنَا مِنَ الإِمَامِ فَاسْتَمَعَ وَلَمْ يَلْغُ كَانَ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ عَمَلُ سَنَةٍ أَجْرُ صِيَامِهَا وَقِيَامِهَا "
আওস ইবনু আওস আস-সাক্বা্ফী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন উত্তম রুপে গোসল করবে , প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমুআর জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মাসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত সিয়াম পালন ও রাতভর সলাত আদায়ের (সমান) সাওয়াব পাবে।
{তিরমিযী (অধ্যায়ঃ গোসলের ফাযীলাত, অনুঃ জুমু‘আহর দিনে গোসল, হাঃ ৪৯৬), নাসায়ী (অধ্যায়ঃ জুমু‘আহ, অনুঃ জুমু‘আহর দিনে গোসল করার ফাযীলাত, হাঃ ১৩৮০), ইবনু মাজাহ (অধ্যায়ঃ সালাত অনুঃ জুমু‘আহর দিনে গোসল, হাঃ ১০৮৭), আহমাদ (৪/১০), ইবনু খুযাইমাহ (১৭৬৭) সকলেই আবূল আশ‘আস সূত্রে।}
অনেক আলেমদের মতে এর অধিকাংশ হাদীস গুলোই জয়ীফ।
কিছু মওযু হাদীসও রয়েছে।
(০২)
মসজিদের হকঃ
পৃথিবীতে জায়গার কোনো শেষ নেই এবং সবখানে আল্লাহ তাআলার যিকির করা যায়। কিন্তু এসবের মধ্যে মসজিদ এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
এতে শুধু তাঁর যিকিরই করা যায়। যিকির পরিপন্থী কোনো কিছু তাতে জায়েয নয়। এগুলো মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পরিপন্থী। হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি মসজিদে কাউকে হারানো বস্তু সন্ধান করতে শোনে সে যেন বলে, আল্লাহ তোমার কাছে তা না ফেরান। কেননা মসজিদ এ কাজের জন্য বানানো হয়নি।
সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৬৮
এজন্য মসজিদ আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা এবং দিনরাত তাঁর রহমত নাযিলের ক্ষেত্র। হাদীসের ভাষায় ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান বাজার।’ সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৭১
,
এক বেদুইন মসজিদে পেশাব করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মসজিদে পেশাব বা কোনো ধরনের ময়লার কোনো অবকাশ নেই। এ তো কেবল আল্লাহর যিকির, নামায ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য। সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৫
,
★সুতরাং মসজিদে শুধু নামাজ,কুরআন, যিকির ইত্যাদিই করতে হবে।
এটাই মসজদের হক।
,
প্রত্যেকবার বাহির হওয়া এবং প্রবেশের সময় দোয়া করা সুন্নাত।
না পড়ল কোনো গুনাহ নেই।
,
(০৩)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
صلى الله عليه و سلم قال : تعاد الصلاة من قدر الدرهم من الدم (سنن الدر قطنى، كتاب الصلاة، باب قدر النجاسة التي تبطل الصلاة، رقم الحديث-1)
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-এক দিরহাম পরিণাম রক্তের দরুন নামাযকে পুনরায় আদায় কর। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩৮৯৬, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-১০৭৮৩, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাকী, হাদীস নং-১৩২৩, আল জামেউল কাবীর, হাদীস নং-২৩৮}
এক দিরহাম নির্দিষ্ট করার সূরত হল, হাতের তালু সোজা করে রেখে তার উপর এক ফোটা পানি ফেলা, হাত নড়ানো বা কাত করা ছাড়া যতটুকু স্থান পরিব্যপ্ত হবে ততটুকুই হল এক দিরহামের আয়তন।
বর্তমান নতুন পাঁচ টাকার পয়সাকে এক দিরহামের পরিমাণ বলা যাবে।
,
এ সংক্রান্ত আরো জানুনঃ
,
(০৪)
ওযূ ভঙ্গের সাত কারণ ছাড়া কাপড় পড়ার সময় লজ্জাস্থানে হাত লাগলে ওযু ভেঙ্গে যায়না।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ قَيْسِ بْنِ طَلْقٍ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيَتَوَضَّأُ أَحَدُنَا إِذَا مَسَّ ذَكَرَهُ؟ قَالَ: ” إِنَّمَا هُوَ بَضْعَةٌ مِنْكَ أَوْ جَسَدِكَ
কায়েশ বিন তালক তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞাসা করে যে, যে ব্যক্তি তার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করেছে সে কি অজু করবে? রাসূল সাঃ বললেন, এটিতো তোমার একটি অঙ্গ বা বলেছেন তোমার শরীরের একটি অঙ্গ। [তাই এটি ধরলে অজু ভাঙ্গবে কেন?] {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬২৮৬}
,
عَنْ أَرْقَمَ بْنِ شُرَحْبِيلَ، قَالَ: ” قُلْتُ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ: إِنِّي أَحُكُّ جَسَدِي وَأَنَا فِي الصَّلاةِ فَأَمَسُّ ذَكَرِي، فَقَالَ: إِنَّمَا هُوَ بِضْعَةٌ مِنْكَ
হযরত আরকাম বিন শুরাহবিল থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদকে বললাম, আমি নামাযরত অবস্থায় আমার শরীর চুলকাচ্ছিলাম। এর মাঝে আমি আমার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করে ফেলি।[এ পরিস্থিতে হুকুম কী? অজু কি ভেঙ্গে গেছে?] আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ বললেন, এটিতো তোমার শরীরেরই একটি অংশ। [তাই অজু ভাঙ্গবে কেন? শরীরের অন্য অঙ্গে ধরলে যেমন ভাঙ্গবে না, তো এখানে ধরলে ভাঙ্গবে কেন?] {মুয়াত্তা মুহাম্মদ, হাদীস নং-২১}
,
عَنْ إِبْرَاهِيمَ، ” أَنَّ ابْنَ مَسْعُودٍ سُئِلَ عَنِ الْوُضُوءِ مِنْ مَسِّ الذَّكَرِ؟ فَقَالَ: إِنْ كَانَ نَجِسًا فَاقْطَعْهُ
হযরত ইবরহীম নাখয়ী থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ইবনে মাসঊদ রাঃ কে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অজু ভেঙ্গে যাবে কি না? মর্মে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যদি এটি নাপাকই হয়, তাহলে এটি কেটে ফেল। {মুয়াত্তা মুহাম্মদ, হাদীস নং-১৯}
,
(তবে কিছু ইসলামী স্কলারদের মতে এর দ্বারাও অযু ভেঙ্গে যাবে।
সুতরাং সেই মতানুসারী রা সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন।
কোনো সমস্যা নেই।)
,
(০৫)
শরীয়তের বিধান হলো সালাতরত অবস্থায় যদি কেহ ব্যাথা বা কষ্টের কারনে স্বেচ্ছায় কান্না করে,তাহলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
আর যদি আল্লাহর ভয়, কবরের আযাব, জাহান্নামের শাস্তি, মৃত্যু যন্ত্রণা, আখিরাতের ভয়াবহ দৃশ্য ইত্যাদি স্মরণ করে অথবা কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন শাস্তির হুমকি ও করুণ পরিণতির কথায় প্রভাবিত হয়ে অনিচ্ছায় যদি কেউ কান্না করে তাহলে তা জায়েজ আছে।
যদি ব্যাথা বা কষ্টের কারনে অনিচ্ছায় কান্না চলে আসে,তাহলেও তা জায়েজ আছে।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ৪/১০২)
,
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ مُطَرِّفِ بْنِ عَبْدِ اللّهِ بْنِ الشِّخِّيرِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ وَهُوَ يُصَلِّىْ وَلِجَوْفِه أَزِيْزٌ كَأَزِيزِ الْمِرْجَلِ يَعْنِىْ: يَبْكِىْ
মুত্বররিফ ইবনে ‘আবদুল্লাহ ইবনে শিখখীর (রহঃ) নিজের পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি সলাত আদায় করছিলেন এবং তাঁর ভিতর ডেগের ফুটন্ত পানির মত আওয়াজ হচ্ছিল। অর্থাৎ তিনি কান্নাকাটি করছিলেন।
বিস্তারিত জানুনঃ
,
★দুনিয়াবি দোয়া বা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় দুআ করা যাবে না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদায় অনেক দোয়া পাঠ করতেনঃ
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يَقُولُ فِى سُجُودِهِ « اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى ذَنْبِى كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ সেজদায় পড়তেন আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি’ কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু”। {তাহাবী শরীফ, হাদিস নং-১৩০৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৮৭৮, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-১১১২, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং-৬৭২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-১৯৩১}
আরো জানুনঃ
আরো জানুনঃ
,
(০৬)
মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন সাহেব দাঃবাঃ এর আহকামে জিন্দেগী,মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহঃ এর বেহেশতি যেওর পড়তে পারেন।
,
(০৭)
ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত ভাবে মুনাজাত সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ
,
(০৮)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : سمعْتُ رسولَ الله ﷺ يقول والله إنِّي لأَسْتَغْفِرُ الله وأَتُوبُ إِلَيْه في اليَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً رواه البخاري
وَعَنِ الْأَغَرِّ بْنِ يَسَارٍ الْمُزَنِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺيَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلٰى اللهِ واسْتَغْفِرُوهُ فَإِنِّي أتُوبُ في اليَومِ مِئَةَ مَرَّةٍ
আগার ইবনে য়্যাসার মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর সমীপে তওবা কর ও তাঁর নিকট ক্ষমা চাও! কেননা, আমি প্রতিদিন ১০০ বার করে তওবাহ ক’রে থাকি।
(মুসলিম ৭০৩৪, আবূ দাঊদ ১৫১৫)
তওবা কবুলের জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। ১। পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে। ২। পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। ৩। ঐ পাপ আগামীতে দ্বিতীয়বার না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে। সুতরাং যদি এর মধ্যে একটি শর্তও লুপ্ত হয়, তাহলে সেই তওবা বিশুদ্ধ হবে না।
,
এই ভাবেই তওবা করতে হবে।
দিন বলতে ২৪ ঘন্টা উদ্দেশ্য ।
,
(০৯)
কুরআন চুম্বন করা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ