আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
246 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (37 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ

উস্তাদ,

মনে হয় দেড় মাস হবে, একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম।
একদিন যোহর নামাজের পরে খাওয়া শেষে খানিকটা পরে ঘুমাতে যাচ্ছিলাম, ভাবছিলাম ঘুমের কারণে আসর নামাজের জামাত মিস হয়ে যায় কিনা আবার, কেননা হয়ত ৪৫ মিনিট কিংবা ১ ঘন্টা পরেই আসরের আযান।পরে আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম যে, আল্লাহ ই জাগিয়ে দিবে, এটা বলে শুয়ে পড়লাম।
স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি অনেক দুরের এক জায়গায় ভ্রমনে

যাচ্ছি। গন্তব্যে পৌছার জন্য গাড়ি করে একটা জায়গায় এসে নামলাম। ওখান থেকে আরো একটু দুরেই গন্তব্য। তো এই দুরত্বের জন্য কাউকে টাকার বিনিময়ে হেল্পার হিসেবে নিতেই হবে, আর যারা এই হেল্পার এর কাজ করে তাদের চেনার উপায় হলো তাদের হাতে সুতা বাধা থাকবে। তো আমি কোনো হেল্পারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, হঠাৎ একজন হেল্পার এসে  আমাকে বললো যে, আমি আপনাকে পৌছে দিচ্ছি তবে কোনো টাকাই লাগবে না।

আমি উনার সঙ্গে গন্তব্যের কাছে গেলাম। পরে উনি চলে গেলেন। আমি দেখলাম যে, আমি যেই গন্তব্যে যাচ্ছি সেটা বিশাল এক নদীর পাড়ে। আঁকাবাকা পথে হাটতেই চোখে পড়ল অনেক দুরের দুজন কিশোর নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমি ওদের কাছে যাব আর দেখলাম গন্তব্য অনেক দুরে ও পথ হলো পুরোটা নদীতীর ঘেষে। পথের মধ্যে এক সময় একটা  কম উচু বরফের পাহাড় পড়ল আর এটা অতিক্রম ছাড়া যাওয়া যাবে না। পরে অনেক কষ্টে দুর্গম এই পথ কিছুটা পা দিয়ে আর কিছুটা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও অতিক্রম করলাম। পথ যতই চলছি ততই ঐ ছেলে দুটির  কাছে যাচ্ছি।

এরপর পথ শুধু নদীর তীরে তীরে, আর নদীতীর ঘেষে নিচে এলোমেলো ব্লক পড়ে আছে, নদীতে প্রচুর স্রোত আর ঢেউ। শক্তিশালী ঢেউ তীরে এসে আছড়ে পড়ছে ক্রমাগত। আর আমি ও আস্তে আস্তে পানি, ঢেউ, এলোমেলো ব্লক পাড়ি দিতে দিতে আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাকলাম, যাওয়ার পথে কখনো স্রোতের ধক্কায় পড়া যাওয়ার মত অবস্থা, আবার কখনো ধাক্কায় হেলে পড়ে যাচ্ছি এভাবে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম, আর অনেকটা কাছে যেতেই বড়শিওয়ালা ঐ কিশোর দুটি ও আমাকে দেখছে যে, আমি তাদের দিকে আসছি।

অবশেষে ওদের কাছে পৌছালাম। হয়ত ওরা জিজ্ঞেস করেছিল কেন এসেছিল, হয়ত আমি কিছুই বলিনি। তারপর ওদের পাস দিয়ে একটু এগিয়ে দেখি সেখানে গাছপালা লতাপাতায় ভরা জায়গায় একটা পুরনো একতলা বিল্ডিং। আমি কৌতুহল বশত বিল্ডিং দেখার জন্য উঠলাম উপরে। উপরে উঠে ভাবছিলাম, বাহ এত দুরে আর এমন নির্জন জায়গায় এত পুরনো বাড়ি। মনে মনে অনেক ভাল লাগছিল পুরনো বাড়িটির উপরে, আর ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম বাড়ির কোথায় কী আছে। পরে হঠাৎ মনে হলো যে, বাড়ির কোনো ঘরে কারা যেন নামাজ (হয়ত আসরের নামাজ)পড়া শুরু করে দিবে এখনি অথচ আমি জানিনা কোন রুমে, তবে পাশেই হবে নিশ্চিত ছিলাম। সাথে সাথেই ভাবলাম নিজেকে ধিক্কার দিয়ে, আরে কখন যে আযান দিয়ে দিলো আবার জামাত শুরু হয়ে যাচ্ছে অথচ আমি পুরনো এই বিল্ডিংং দেখছি অথচ আযান টাও শুনলাম না। আর একটু হলে তো হয়ত মনের অজানতে নামাজ ই মিসে হয়ে যেতে পারত।
★হঠাৎ শুনি আযানের শব্দ, আর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

ঘুম থেকে উঠে ভাবছিলাম আমি কি স্বপ্নেরই আযান শুনছিলাম নাকি ঘুম থেকে জাগার পর যেটা শুনলাম সেটা ই। তখন ও আযান হচ্ছে মাসজিদে।


জাজাক আল্লাহ

1 Answer

0 votes
by (712,880 points)
7791

কুরআনে কারীমে তাফসীরে রুইয়া শব্দটি 'তা'বিলুল আহাদিছ' নামে এসেছে।আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَكَذَلِكَ يَجْتَبِيكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِنْ تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ وَيُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَعَلَى آَلِ يَعْقُوبَ كَمَا أَتَمَّهَا عَلَى أَبَوَيْكَ مِنْ قَبْلُ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ إِنَّ رَبَّكَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
এমনিভাবে তোমার পালনকর্তা তোমাকে মনোনীত করবেন এবং তোমাকে বাণীসমূহের নিগুঢ় তত্ত্ব শিক্ষা দেবেন এবং পূর্ণ করবেন স্বীয় অনুগ্রহ তোমার প্রতি ও ইয়াকুব পরিবার-পরিজনের প্রতি; যেমন ইতিপূর্বে তোমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম ও ইসহাকের প্রতি পূর্ণ করেছেন। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা অত্যন্ত জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।(সূরা ইউসুফ-০৬)

স্বপ্নব্যখ্যা কুরআনে এভাবে এসেছে,ইউসুফ আঃ স্বপ্ন দেখেছিলেন,এবং হযরত ইয়াকুব আঃ উক্ত স্বপ্নের ব্যখ্যা করেছিলেন,
আল্লাহ তা'আলা এ সম্পর্কে বলেন,
إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَاجِدِينَ
যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি।(সূরা ইউসুফ-৪)

হাজতিদের স্বপ্ন যার ব্যখ্যা ইউসুফ আঃ করেছিলেন,
وَدَخَلَ مَعَهُ السِّجْنَ فَتَيَانِ قَالَ أَحَدُهُمَا إِنِّي أَرَانِي أَعْصِرُ خَمْرًا وَقَالَ الْآَخَرُ إِنِّي أَرَانِي أَحْمِلُ فَوْقَ رَأْسِي خُبْزًا تَأْكُلُ الطَّيْرُ مِنْهُ نَبِّئْنَا بِتَأْوِيلِهِ إِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْمُحْسِنِين
তাঁর সাথে কারাগারে দুজন যুবক প্রবেশ করল। তাদের একজন বললঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি মদ নিঙড়াচ্ছি। অপরজন বললঃ আমি দেখলাম যে, নিজ মাথায় রুটি বহন করছি। তা থেকে পাখী ঠুকরিয়ে খাচ্ছে। আমাদের কে এর ব্যাখ্যা বলুন। আমরা আপনাকে সৎকর্মশীল দেখতে পাচ্ছি।(সূরা ইউসুফ-৩৬)

উক্ত স্বপ্নের ব্যখ্যা ইউসুফ আঃ এভাবে করেছিলেন,
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَمَّا أَحَدُكُمَا فَيَسْقِي رَبَّهُ خَمْرًا وَأَمَّا الْآَخَرُ فَيُصْلَبُ فَتَأْكُلُ الطَّيْرُ مِنْ رَأْسِهِ قُضِيَ الْأَمْرُ الَّذِي فِيهِ تَسْتَفْتِيَانِ  
হে কারাগারের সঙ্গীরা! তোমাদের একজন আপন প্রভুকে মদ্যপান করাবে এবং দ্বিতীয়জন, তাকে শুলে চড়ানো হবে। অতঃপর তার মস্তক থেকে পাখী আহার করবে। তোমরা যে, বিষয়ে জানার আগ্রহী তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।(সূরা ইউসুফ-৪১)

মিশরের বাদশা কর্তৃক স্বপ্ন দেখা।আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يُوسُفُ أَيُّهَا الصِّدِّيقُ أَفْتِنَا فِي سَبْعِ بَقَرَاتٍ سِمَانٍ يَأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَسَبْعِ سُنبُلاَتٍ خُضْرٍ وَأُخَرَ يَابِسَاتٍ لَّعَلِّي أَرْجِعُ إِلَى النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَعْلَمُونَ
সে তথায় পৌঁছে বললঃ হে ইউসুফ! হে সত্যবাদী! সাতটি মোটাতাজা গাভী-তাদেরকে খাচ্ছে সাতটি শীর্ণ গাভী এবং সাতটি সবুজ শীর্ষ ও অন্যগুলো শুষ্ক; আপনি আমাদেরকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে পথনির্দেশ প্রদান করুনঃ যাতে আমি তাদের কাছে ফিরে গিয়ে তাদের অবগত করাতে পারি।(সূরা ইউসুফ-৪৬)

ইউসুফ আঃ উক্ত স্বপ্নের ব্যখ্যায় বলেন,
قَالَ تَزْرَعُونَ سَبْعَ سِنِينَ دَأَبًا فَمَا حَصَدتُّمْ فَذَرُوهُ فِي سُنبُلِهِ إِلاَّ قَلِيلاً مِّمَّا تَأْكُلُونَ
বললঃ তোমরা সাত বছর উত্তম রূপে চাষাবাদ করবে। অতঃপর যা কাটবে, তার মধ্যে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা খাবে তা ছাড়া অবশিষ্ট শস্য শীষ সমেত রেখে দেবে।
ثُمَّ يَأْتِي مِن بَعْدِ ذَلِكَ سَبْعٌ شِدَادٌ يَأْكُلْنَ مَا قَدَّمْتُمْ لَهُنَّ إِلاَّ قَلِيلاً مِّمَّا تُحْصِنُونَ
এবং এরপরে আসবে দূর্ভিক্ষের সাত বছর; তোমরা এ দিনের জন্যে যা রেখেছিলে, তা খেয়ে যাবে, কিন্তু অল্প পরিমাণ ব্যতীত, যা তোমরা তুলে রাখবে।
ثُمَّ يَأْتِي مِن بَعْدِ ذَلِكَ عَامٌ فِيهِ يُغَاثُ النَّاسُ وَفِيهِ يَعْصِرُونَ
এর পরেই আসবে একবছর-এতে মানুষের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং এতে তারা রস নিঙড়াবে।(সূরা ইউসুফ-৪৭-৪৮-৪৯)


ইলমে তাফসীর(স্বপ্নব্যখ্যার জ্ঞান)রাসূলুল্লাহ সাঃ এর যুগেও চর্চা হয়েছে।রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে অনেক স্বপ্নব্যাখা বর্ণিত রয়েছে।সাহাবায়ে কেরামকে স্বপ্নব্যখ্যার মূলনীতি শিক্ষা সম্পর্কিত বিবরণও রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণিত রয়েছে।অতঃপর সেই মূলনীতির আলোকে হাদীসের কিতাবাদিতে সাহাবা কর্তৃক স্বপ্নব্যখ্যাও বর্ণিত রয়েছে

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
)


(أذان) الأذان في المنام يدل على الحج في أشهر الحج وربما دل على النميمة والإعلام بما يثير الحركة والانتقال والتجهيز للحرب وربما دل الأذان على السرقة وقد يدل الأذان على علو الدرجة والمنصب والرفعة والكلمة المسموعة والزوجة للأعزب وربما دل الأذان على الأخبار الصحيحة
স্বপ্নে আজান দেখার সবচেয়ে উত্তম অর্থ হচ্ছে,হজ্ব নসিব হওয়া।তাছাড়া আরও অনেক অর্থ হতে পারে।
(তা'তিরুল আনা


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...