বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
প্রশ্নে বর্ণিত হাদীসের মূল পাঠ নিম্নরূপ..........
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: " «لَا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أَبْصَارَهُمْ حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَايَغُلُّ أَحَدُكُمْ حِينَ يَغُلُّ وَهُوَ مُؤْمِنٌ ; فَإِيَّاكُمْ إِيَّاكُمْ» ". مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
রাসূলুল্লাহ সা বলেন,কামিল ইমানদ্বার কখনো যিনা-ব্যভিচার করতে পারে না।এবং কামিল ঈমানদ্বার কখনো চুরি করতে পারে না,মদ খেতে পারে না ডাকাতি করতে পারেনা,খেয়ানত করতে পারেনা।সুতরাং হে ঈমানদ্বার গণ ঈমানকে মজবুত করো।এবং এই সমস্ত পাপাচার থেকে বেঁচে থাকো।(সহীহ বুখারী-২৪৭৫,সহীহ মুসলিম-৫৭,মিরকাত-৫৩)
মোল্লা আলী কারী রাহ, উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,
وَظَاهِرُهُ دَلِيلٌ عَلَى أَنَّ صَاحِبَ الْكَبِيرَةِ لَيْسَ بِمُؤْمِنٍ، وَأَصْحَابُنَا أَوَّلُوهُ بِأَنَّ الْمُرَادَ الْمُؤْمِنُ الْكَامِلُ فِي إِيمَانِهِ، أَوْ ذُو أَمْنٍ مِنْ عَذَابِ اللَّهِ تَعَالَى، أَوِ الْمُرَادُ الْمُؤْمِنُ الْمُطِيعُ لِلَّهِ،يُقَالُ: أَمِنَ لَهُ، إِذَا انْقَادَ وَأَطَاعَ، أَوْ مَعْنَاهُ الزَّجْرُ وَالْوَعِيدُ، أَوِ الْإِنْذَارُ لِمُرْتَكِبِ هَذِهِ الْكَبَائِرِ بِسُوءِ الْعَاقِبَةِ، إِذْ مُرْتَكِبُهَا لَا يُؤْمَنُ عَلَيْهِ أَنْ يَقَعَ فِي الْكُفْرِ الَّذِي هُوَ ضِدُّ الْإِيمَانِ، أَوْ أَنَّ الْإِيمَانَ إِذَا زَنَى الرَّجُلُ خَرَجَ مِنْهُ، وَكَانَ فَوْقَ رَأْسِهِ مِثْلَ الظُّلَّةِ، فَإِذَا انْقَلَعَ رَجَعَ إِلَيْهِ، وَسَيَأْتِي تَقْرِيرُهُ.
ভাবার্থঃ উক্ত হাদীসের বাহ্যিক ইবারত দ্বারা বুঝা যায় যে,করিবা গোনাহ সংগঠনকারী ব্যক্তির ঈমান থাকবে না। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী উলামায়ে কেরাম,নিম্নোক্ত ব্যখ্যা করেন-
(১) কামিল ঈমানদ্বারগণ কখনো এ সব পাপচার করবে না।
(২) এ সব পাপাচার কারী কখনো আল্লাহ আযাব থেকে নিরাপদ নয়।
(৩) আল্লাহ অনুসরণকারী ঈমানদ্বারগণ কখনো এ সব পাপাচার করতে পারে না।
(৪) এ সব পাপচারে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গকে ভয় দেখানো হচ্ছে।কেননা এসব পাপাচার শেষ পর্যন্ত কুফুরের দিকে নিয়ে যায়।
(৫) এ সব পাপাচারের সময় ঈমান বের হয়ে মাথার উপর ছায়া হিসেবে থাকে।যখন পাপাচার থেকে বিরত হয় তখন আবার ঈমান ফিরে আসে। (মিরকাত-৫৩ নং হাদীসের ব্যখ্যা দ্রষ্টব্য) আল্লাহ-ই ভালো জানেন
তিরমিযি শরীফের ব্যাখ্যাকার আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রাহ বলেন,
وَلَا يَلْزَمُ مِنْ ذَلِكَ كُفْرُهُ بِإِجْمَاعِ الْمُسْلِمِينَ
মুসলমানদের ইজমা রয়েছে যে,এ সমস্ত পাপাচার করলে কেউ কাফির হবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযি- ৩২০৯ নং হাদিসের ব্যখ্যা দ্রষ্টব্য)
ইমাম নববী রাহ বলেন,
هَذَا الْحَدِيثُ مِمَّا اخْتَلَفَ الْعُلَمَاءُ فِي مَعْنَاهُ فَالْقَوْلُ الصَّحِيحُ الَّذِي قَالَهُ الْمُحَقِّقُونَ أَنَّ مَعْنَاهُ لَايَفْعَلُ هَذِهِ الْمَعَاصِي وَهُوَ كَامِلُ الْإِيمَانِ وَهَذَا مِنَ الْأَلْفَاظِ الَّتِي تُطْلَقُ عَلَى نَفْيِ الشَّيْءِ وَيُرَادُ نَفْيُ كَمَالِهِ وَمُخْتَارِهِ
এই হাদীসের ব্যখ্যা সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের মতপার্থক্য রয়েছে।বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য ব্যখ্যা হলো,'মু'মিনি গণ তথা যারা পরিপূর্ণ ঈমানদ্বার,তারা এই সমস্ত পাপাচারে লিপ্ত হতে পারে না।এগুলো আরবী এমন বাগধারা যা উল্লেখ করে পরিপূর্ণতার অর্থকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়। (আল -মিনহায,হাদীস নং ৫৭ খন্ড-২/৪১ দ্রষ্টব্য।)
সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
এখানে যিনা-ব্যভিচার, চুরি ইত্যাদি দ্বারা সকল প্রকার যিনা-ব্যভিচার এবং চুরিই উদ্দেশ্য।সুতরাংঅর্থ হবে এমন যে,কোনো কামিল ঈমানদ্বার কখনো এমন পাপাচার করতে পারে না।যিনার অনেক প্রকার রয়েছে যেমন চোখের যিনা,মুখের যিনা ইত্যাদি।এগুলো সবই হারাম।তবে মূল যিনার যে গোনাহ বা শাস্তি হবে, এগুলোর তেমন হবে না।কিন্তু হবে যে নিশ্চিত।