আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
290 views
in হজ ও উমরা (Hajj and Umrah) by (9 points)
মুহতারাম মুফতি সাহেব,

আসসালামু আলাইকুম,
১)  ১০ই জিলহজ্জে বড় জামারায় কংকর নিক্ষেপের পরে কুরবানি করা, মাথা মুন্ডন করা  ও তাওয়াফে ইফাদা করা - এ ক্রমধারা রক্ষা না করলে তার হজ্জ হবে কি না? আমার পরিচিত একজন গাইড বলেছেন যে, কংকর নিক্ষেপের পরে তাওয়াফে ইফাদা করে পরে কুরবানি আর মাথা মুন্ডন করলেও হবে । এ কথাটা কী ঠিক?

২) খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ার কারণে অথবা ভিড় এড়ানোর জন্য অথবা  'বিনা কারণে' ১০ই জিলহজ্জে তাওয়াফে ইফাদা না করে ১১ই জিলহজ্জে আদায় করলে কী তা সহীহ হবে?
৩) তাওয়াফে ইফাদা করতে এসে ইচ্ছে করে মিনাতে না গিয়ে পুরো এক রাত  মক্কাতে অতিবাহিত করলে তার বিধান কী?

৪) কোন দম কারোর উপরে ওয়াজিব হয়ে গেলে তিনি কী দেশে ফিরে আসার পরে কোন ওকিলের দ্বারা হারামের সীমানার মধ্যে দম আদায় করতে পারবেন?
যদি ওকিল দমের পশুর অর্থ আত্মসাৎ করে হাজ্জীকে জানায় যে সে তার পক্ষ থেকে দম দিয়ে দিয়েছে তাহলে হাজ্জীর উপরে হুকুম কী হবে?

৫) যদি কারোর উপরে আর্থিক কাফফারা আসে তবে তিনি কাকে সে অর্থ দিবেন? হারামের মধ্যে তো আমাদের দেশের মত ফকির/ গরীব মানুষ দেখাই যায় না । মাসজিদুল হারামের ক্লিনারদেরকে দেয়া যাবে কী?

৬) যাঁরা কসর করবেন না তাঁরা আরাফার দিনে যুহরের আউওয়াল ওয়াক্তে যুহর ও আসরের সালাত একসাথে চার রাকাত+ চার রাকাত এভাবে আদায় করতে পারবেন কী না? যদি পারেন তবে আজান কতবার এবং ইকামত কতবার দিতে হবে?  যদি সেরকমটি না পারেন তবে করণীয় কী?

৭)

ক,

 হজ্জে তামাত্তুর ক্ষেত্রে যদি মক্কায় ৭ দিন থাকার পরে মাদীনায় গিয়ে ৮-১০ দিন অবস্থান করে মক্কায় ফিরে আসা হয় তবে মক্কায় প্রবেশের পরে উমরাহ কী করতেই হবে? এক্ষেত্রে উমরাহ না করলে কী কোন সমস্যা হবে? উল্লেখ্য, ফিরে আসার পরে মক্কায় ১৫ দিন অবস্থান করা হবে ।

খ,
মক্কায় মোট অবস্থানকালের দিনগুলো মিলিয়ে কী মুসাফিরি হালত নির্ধারণ হবে? না কী মাদীনাহ থেকে ফিরে আসার পরের দিনগুলোর উপরে মুকীম - মুসাফিরি হালত নির্ধারন হবে?

জাযাকুমুল্লাহু খইরান ।

1 Answer

0 votes
by (565,920 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
শরীয়তের বিধান হলো পাথর নিক্ষেপ, কুরবানী,মাথা মুন্ডন এর ক্ষেত্রে ক্রমধারা রক্ষা করা ওয়াজিব।
নতুবা দম আবশ্যক হবে।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَ لَا تَحۡلِقُوۡا رُءُوۡسَکُمۡ حَتّٰی یَبۡلُغَ الۡہَدۡیُ مَحِلَّہٗ ؕ

আর তোমরা মাথা মুন্ডন করো না যে পর্যন্ত হাদঈ তার স্থানে না পৌছে।
(সুরা বাকারা ১৯৬)

غنیۃ الناسک:
"لو حلق المفرد أو غیره قبل الرمي أو القارن أو المتمتع قبل الذبح أو ذبحًا قبل الرمي فعلیه دم عند أبي حنیفة بترك الترتیب." 
(279، 280، باب الجنایات، ط: ادارۃ القرآن )
সারমর্মঃ-
যদি হজ্বে ইফরাদ আদায়কারী কেহ পাথর নিক্ষেপের আগে বা জবাইয়ের আগে মাথা মুন্ডন করে,সেক্ষেত্রে দম আবশ্যক হবে।

فتاوی شامی
"( و الترتيب الآتي) بيانه: (بين الرمي و الحلق و الذبح يوم النحر) و أما الترتيب بين الطواف و بين الرمي والحلق فسنة،  فلو طاف قبل الرمي والحلق لا شيء عليه و يكره. لباب".
(2/470، کتاب الحج ، ط: سعید)
সারমর্মঃ-
পাথর নিক্ষেপ, কুরবানী,মাথা মুন্ডন এর ক্ষেত্রে ক্রমধারা রক্ষা করা ওয়াজিব।
আর তওয়াফ,পাথর নিক্ষেপ,মাথা মুন্ডন এর ক্ষেত্রে ক্রমধারা রক্ষা করা সুন্নাত।
কেহ যদি পাথর নিক্ষেপ,মাথা মুন্ডন এর আগেই তওয়াফ করে,সেক্ষেত্রে তার উপর কোনো কিছু আবশ্যক হবেনা। তবে এটি মাকরুহ হবে।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
"কংকর নিক্ষেপের পরে তাওয়াফ করে পরে কুরবানি আর মাথা মুন্ডন করলেও হবে" 
এ কথাটা ঠিক আছে,তবে এটি সুন্নাতের খেলাফ।

তাই বিনা ওযরে এমনটি না করার পরামর্শ থাকবে। 

(০২)
১০ ই জিলহজ্জ সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে শুরু করে ১২ ই জিলহজ্জ সূর্য ডুবে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তওয়াফে যিয়ারাত করা যায়।

★সুতরাং খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ার কারণে অথবা ভিড় এড়ানোর জন্য অথবা  'বিনা কারণে' ১০ই জিলহজ্জে তাওয়াফে ইফাদা না করে ১১ই জিলহজ্জে আদায় করলে তা সহীহ হবে।

(০৩)
সুন্নাতের খেলাফ হওয়ার তার একাজটি মাকরুহ হবে।
তবে হজ্ব হয়ে যাবে।

(০৪)
কাহারো উপর দম ওয়াজিব হয়ে গেলে তিনি দেশে ফিরে আসার পরে কোন উকিলের দ্বারা হারামের সীমানার মধ্যে দম আদায় করতে পারবেন।

যদি ওকিল দমের পশুর অর্থ আত্মসাৎ করে হাজ্জীকে জানায় যে সে তার পক্ষ থেকে দম দিয়ে দিয়েছে,এক্ষেত্রে হাজ্বী সাহেব সত্য জানতে পারলে হাজ্বী সাহেবের উপরে পুনরায় দম আবশ্যক হবে।

(০৫)
উক্ত টাকা হারামের মধ্যেই কাউকে দিতে হবে,এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
নিজ দেশে ফিরে এসে এলাকার গরিব মিসকিনকে দিলেও তাহা আদায় হবে।

এটি গরিব কেই দিতে হবে,মাসজিদুল হারামের ক্লিনারদের কেউ যদি নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয়,সেক্ষেত্রে তাকে দেয়া যাবেনা।

۔ ویجوز لہ التصدق في غیر الحرم․ (غنیة الناسک، جدید، ص: ۲۶۶) 
সারমর্মঃ-
হারামের এলাকা ব্যাতিত অন্য এলাকাতেও সদকা দেয়া জায়েজ আছে।

(০৬)
যদি মিনায় রওয়ানা হওয়ার পূর্বে মক্কা মুকাররমায় ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি দিন থাকে,সেক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সে আরাফার ময়দানে পূর্ণ নামাজই আদায় করবে।

আর যদি মিনায় রওয়ানা হওয়ার পূর্বে মক্কা মুকাররমায় ১৫ দিনের কম থাকে,সেক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সে আরাফার ময়দানে কসরের নামাজই আদায় করবে।

হ্যাঁ যদি মুকিম ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করে,সেক্ষেত্রে তাকে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।

★আরাফার ময়দানে ইমামের পিছনে জোহর আছর একসাথে আদায় করা যাবে।

তবে ইমামের পিছনে আদায় না করে একাকী আদায় করলে সেক্ষেত্রে জোহর আছর একসাথে এক ওয়াক্তে আদায় করা যাবেনা।
আলাদা আযান ও আলাদা ইকামতে নিজ নিজ ওয়াক্তে জোহর আসর আদায় করতে হবে। 

(০৭)
ক,
হজ্জে তামাত্তুর ক্ষেত্রে যদি মক্কায় ৭ দিন থেকে উমরাহ করার পরে মাদীনায় গিয়ে ৮-১০ দিন অবস্থান করে মক্কায় ফিরে আসা হয়, তবে মক্কায় প্রবেশের পরে উমরাহ করতেই হবেনা।
এক্ষেত্রে উমরাহ না করলে কোন সমস্যা নেই।

তবে প্রথমে মক্কায় থাকার সময় ওমরাহ না করে মদিনায় গেলে এক্ষেত্রে মক্কায় এসে হজ্বের দিন গুলু আসার আগে উকরাহ করতেই হবে।
নতুবা এটি হজ্জে তামাত্তু' হবেনা।

খ,
এক্ষেত্রে মাদীনাহ থেকে ফিরে আসার পরের দিনগুলোর উপরে মুকীম - মুসাফিরি হালত নির্ধারন হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (565,920 points)
فتاویٰ شامی:

"(و) طواف الزيارة (أول وقته بعد طلوع الفجر يوم النحر وهو فيه) أي الطواف في يوم النحر الأول (أفضل ويمتد) وقته إلى آخر العمر (وحل له النساء) بالحلق السابق، حتى لو طاف قبل الحلق لم يحل له شيء، فلو قلم ظفره مثلا كان جناية لأنه لا يخرج من الإحرام إلا بالحلق (فإن أخره عنها) أي أيام النحر ولياليها منها

قوله بيان للأكمل) أي الطواف الكامل المشتمل على الركن والواجب، نبه على ذلك لئلا يتوهم أن السبعة ركن كما يقوله الأئمة الثلاثة وإن وافقهم المحقق ابن الهمام بحثا فإنه خلاف المذهب فلا يتابع عليه (قوله وإن كان سعى قبل) لم يقل إن كان رمل وسعى قبل إشارة إلى أنه لو كان سعى قبل ولم يرمل لا يرمل هنا لأن الرمل إنما يشرع في طواف بعده سعي كما مر ولا سعي هاهنا كما في العناية وكذا في اللباب وفيه وأما الاضطباع فساقط مطلقا في هذا الطواف اهـ سواء سعى قبله أو لا (قوله وإلا فعلهما) أي وإن لم يكن سعى قبل رمل وسعى وإن رمل قهستاني أي لأن رمله السابق بلا سعي غير مشروع كما علمته فلا يعتبر."

(الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار)،کتاب الحج،مطلب فی طواف الزیارۃ، (2/ 518)،دار الفکر بیروت)
by (9 points)
জাযাকুমুল্লাহু খইরান । মহান আল্লাহ আপনাদের মেহনতকে কবুল করুন । 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 233 views
...