আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
162 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (7 points)
closed by
আসসালামু আলাইকুম।
উস্তাদ।

১। যাকাত প্রতিনিধি( যাকাত বাস্তবায়নকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান)  যাকাতের অর্থ বাস্তবায়নে কি সংগ্রহীত অর্থ থেকে খরচ করবে? নাকি নিজেস্ব অর্থ বা ফান্ড থেকে যাকাত বাস্তবায়নের যাবতীয় খরচ বহন করবে?

২। যাকাত বাস্তবায়নে নগদ অর্থ প্রদান নাকি সেলাইমেশিন, গাড়ি,গরু-ছাগল ক্রয় করে দেয়া উত্তম। রাসূল (সা)থেকে তাবে-তাবিয়ীদের যুগের মধ্যে এমন কোনো প্রচলন কি ছিলো, স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে কাউকে আয়ের উপকরণ কিনে দিত?

৩। কুরআন সুন্নাহের আলোকে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের যাকাত বাস্তবায়নের রূপরেখা কেমন হওয়া উচিত।

জাযাকাল্লাহু খাইর।
closed

1 Answer

+1 vote
by (573,870 points)
selected by
 
Best answer
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
যাকাতের খাত সংক্রান্ত মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡهَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۶۰﴾

সাদাকাহ হচ্ছে শুধুমাত্র গরীবদের এবং অভাবগ্রস্তদের, আর এই সাদাকাহর (আদায়ের) জন্য নিযুক্ত কর্মচারীদের এবং (দীনের ব্যাপারে) যাদের মন রক্ষা করতে (অভিপ্রায়) হয় (তাদের), আর গোলামদের আযাদ করার কাজে এবং কর্জদারদের কর্জে (কর্জ পরিশোধে), আর জিহাদে (অর্থাৎ যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য) আর মুসাফিরদের সাহায্যার্থে। এই হুকুম আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়।
(সুরা তওবা ৬০)

এ আয়াতে নির্ধারিত খাতগুলো ফরয সদকারই খাত। 

যিয়াদ ইবন হারিস আস-সুদায়ী বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হয়ে জানতে পারলাম যে, তিনি তার গোত্রের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে সৈন্যের একটি দল অচিরেই প্রেরণ করবেন।
আমি আরয করলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনি বিরত হোন আমি দায়িত্ব নিচ্ছি যে, তারা সবাই আপনার বশ্যতা স্বীকার করে এখানে হাযির হবে। তারপর আমি স্বগোত্রের কাছে পত্র প্রেরণ করি। পত্র পেয়ে তারা সবাই ইসলাম গ্রহণ করে। এর প্রেক্ষিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন, ‘তুমি তোমার গোত্রের একান্ত প্রিয় নেতা। আমি আরয করলাম এতে আমার কৃতিত্বের কিছুই নেই। আল্লাহর অনুগ্রহে তারা হেদায়েত লাভ করে মুসলিম হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন আমি এই বৈঠকে থাকাবস্থায়ই এক ব্যক্তি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু সাহায্য চাইল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জবাব দিলেন, সদকার ভাগ বাটোয়ার দায়িত্ব আল্লাহ নবী বা অন্য কাউকে দেননি। বরং তিনি নিজেই সদকার আটটি খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এই আট শ্রেণীর কোন একটিতে তুমি শামিল থাকলে দিতে পারি। [আবু দাউদ ১৬৩০; দারাকুতনী: ২০৬৩]

সুতরাং ফরজ,ওয়াজিব সদকার খাতঃ
 (১)ফকির, (২)মিসকীন, (৩)যাকাত উসূলকারী ও (৪)যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক (৫)এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে  (৬)ঋণগ্রস্তদের জন্য, (৭)আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং(৮) মুসাফিরদের জন্যে।
এর মধ্যে চার নাম্বারটির বিধান রহিত হয়ে গেছে।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
যাকাত প্রতিনিধি( যাকাত বাস্তবায়নকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান)  যাকাতের অর্থ বাস্তবায়নে যাকাত হতে সংগ্রহীত অর্থ থেকে খরচ করবেনা।
নিজস্ব অর্থ বা ফান্ড থেকে বা সাধারণ সদকাহ এর ফান্ড হতে যাকাত বাস্তবায়নের যাবতীয় খরচ বহন করবে।

(০২)
হ্যাঁ, এমনটিই উত্তম।
একজনকে স্বাবলম্বি বানিয়ে দেয়ার মতো যাকাত দেয়া উত্তম।
তবে সে নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয়ে যাবে, এতো পরিমান টাকা একজনকে দেয়া মাকরুহ।

(০৩)
এক্ষেত্রে প্রচলিত রূপরেখা পরিবর্তন করতে হবে।

আমাদের সমাজে গরিবরা ধনীদের বাড়িতে/দোকানে লাইন ধরে যাকাত গ্রহন করে।
,
★ধনীদের উচিত ছিল - নিজেদের সম্পদকে স্বচ্ছ রাখতে এবং জাহান্নামের আযাব থেকে বেঁচে জান্নাত অর্জনের সৌভাগ্য লাভ করতে নিজেরাই গরীবদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের প্রাপ্য অধিকার তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া৷ আর এই পন্থাটিই ইসলামী শরীয়তে যাকাত আদায়ের স্বতঃসিদ্ধ পদ্ধতি বলে বিবেচিত৷

★যাকাত আদায়ে নিম্নমানের কাপড়
নিম্নমানের কাপড় দিয়ে যাকাত আদায় করা এখন সমাজের একটি মারাত্মক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ গার্মেন্টস গুলো যাকাতের কাপড় বলে যে কাপড়গুলো তৈরি করে, তা তারা অন্যান্য কাপড়ের তুলনায় স্বেচ্ছায় যথেষ্ট নিম্নমানে রেখে তৈরি করে৷ যার ফলে খবর নিলে দেখা যায়, এসকল কাপড়গুলো গরীবরা কয়েক মাসও পরিধান করতে পারে না, কিছু দিন না যেতেই ছিড়ে যায় বা ফেটে যায়৷ দোকানিরাও সারা বছরের অচল কাপড়গুলোকে রমযান আসলে যাকাতের কাপড় হিসেবে আলাদা করে রেখে দেয়৷

অথচ মহান আল্লাহ তা‘আলা নিজের ভালবাসার ও পছন্দের বস্তু দান করার নির্দেশ দিয়েছেন৷ ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কখনো প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তা ব্যয় করবে, যা তোমরা ভালোবাসো। আর তোমরা যেকোনো বস্তুই ব্যয় করো তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সে বিষয়ে অবগত।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং: ৯২)

হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আউফ ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদে আমাদের কাছে এলেন। তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল। মসজিদে আমাদের এক ব্যক্তি নিকৃষ্ট মানের একগুচ্ছ খেজুর ঝুলিয়ে রেখেছিল। তিনি ওই খেজুরগুচ্ছে লাঠি দিয়ে আঘাত করে বলেন, এর দানকারী ইচ্ছা করলে এর চাইতে উত্তম দান করতে পারত। তিনি আরো বলেন, এর দানকারীকে কিয়ামতের দিন নিকৃষ্ট ফল খেতে হবে।’ - (আবু দাউদ, হাদিস নং: ১৬০৮)

★যাকাত প্রদানের ফটোসেশন
রোযাদার গরীবদের কষ্ট দিয়ে দীর্ঘ লম্বা লাইনে দাঁড় করিয়ে যাকাত প্রদানের যে ফটোসেশন সমাজের বিত্তবানরা প্রচলন করে আসছে, তা শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত ও ভয়াবহ গোনাহের কাজ৷ লোক দেখানো এমন ফটোসেশনের যাকাত আল্লাহর দরবারে কবূল হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই৷
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)

★সুতরাং এখন উপরোক্ত কাজগুলো যেনো না হয়,লোক দেখানো যেনো না হয়,আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে অভাবিদের লিস্ট করে তাদের বাসায় গিয়ে যাকাত পৌছে দেয়া দরকার।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...