ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
কুরআনে কারীমের মুসহাফে অঙ্কন করা,দাগ দেয়া, মার্কার কালি দিয়ে চিহ্ন দেয়া জায়েয, না নাজায়েয? এসম্পর্কে স্পষ্ট কোনো দলীল-প্রমাণ কুরআন হাদীসে নেই।
হ্যা, সালাফে সালেহীন থেকে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত রয়েছে, কুরআনে কারীমের মুসহাফে কুরআন ব্যতিত অন্যকিছু লিখতে তারা নিষেধাজ্ঞা করে থাকেন। যেমন, সূরার নাম,পারা নং, রু'কু নং ইত্যাদিকে মুসহাফে লিখতে তারা বারণ করতেন। এর প্রধানতম কারণ হল, হয়তো কালের পরিক্রমায় লোকজন এগুলো কুরআনের মত অহীজ্ঞান ভাবতে শুরু করে দিবে। যেমন বর্ণিত রয়েছে,
আবু বকর আস-সিরাজ রাহ, বলেন,
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي بَكْرٍ السِّرَاجِ، قَالَ: "قُلْتُ لِأَبِي رَزِينٍ: اكْتُبْ فِي مُصْحَفِي سُورَةَ كَذَا وَكَذَا قَالَ: "لَا، إِنِّي أَخَافُ أَنْ يَنْشَأَ قَوْمٌ لَا يَعْرِفُونَهُ فَيَظُنُّوا أَنَّهُ مِنَ الْقُرْآنِ" (فضائل القرآن- ص:395)
আমি আবু রাযিন রাহ কে বললাম, আপনি আমার মুসহাফে সূরার নাম লিখে দেন, প্রতিউত্তরে তিনি বলেন,না, আমি লিখে দিতে পারবো না। আমার ভয় হয়, পরবর্তীতে অজ্ঞতাবশত লোকজন এগুলোকেও অর্থাৎ সূরার নাম সমূহকেও কুরআনের অংশ মনে করে নিবে।(ফাযাইলে কুরআন-৩৯৫)
যখন মুসলমান ভালোভাবে কুরআনকে আয়ত্ব করে নিলেন,এবং কুরআনের সাথে গায়রে কুরআন মিলিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেল, তখন সালাফগণ বিসমিল্লাহ্, সূরা সমূহের নাম,এবং সূরার আয়াত সংখ্যা, যেমনটা বর্তমান মুসহাফে লিখিত রয়েছে, সেটাতে সমস্যা মনে করেননি।
নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, কুরআনের আয়াতের নীচে দাগ দেয়া,অঙ্কন করা, মার্কার কলম দিয়ে চিহ্ন দেয়ার সেইসব কোনো বিষয় নাই যে সব বিষয়ে সালাফরা ভয় করতেন।যেহেতু এখন কুরআনের সাথে অন্যকিছু মিলিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই, তাই সিজদার আয়াত সমূহের চিহ্ন, রু'কু ও মঞ্জিল এবং পারা ইত্যাদি লিখতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা এগুলো যে কুরআনের অংশ নয়, তা আজকাল সবাই জানে।
মূলকথা হল, কুরআনে কারীমের মুসহাফে কুরআন ব্যতিত অন্যকিছু লিখা যাবে না। এবং কুরআনে কারীমকে সকল প্রকার বেহুদা ও তুচ্ছ কাজ থেকে হেফাজতে রাখতে হবে।বরং ওয়াজিব হল, কুরআনে কারীমের মুসহাফককে সর্বোচ্ছ সম্মান প্রদর্শন করা।এবং সামর্থ্যানুযায়ী কুরআনে কারীমের হেফাজত করা। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও যথোপযুক্ত স্থানে কুরআনকে সংরক্ষণ করা। এবং কুরআনের সম্মান বজায় রেখে মলাট তৈরী ও গিলাফ আবৃত করে কুরআনকে রাখা। কুরআনের মুসহাফে অযথা কোনো কিছু না লিখা। কুরআনে কারীমের কোনো পৃষ্টাকে না ভাঙ্গা এবং না মুড়ানো।কেননা অযথা কুরআনের পৃষ্টাকে ভাঙ্গা বা মুড়ানো কুরআনকে অপমান করার নামান্তর হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
যদি কুরআন হিফজকারী ছাত্র তার ভুলকে চিহ্নিত করতে বা মুশাবিহ তথা সাদৃশ্যপূর্ণ আয়াতকে স্বরণ রাখতে কুরআনের কোনো পৃষ্টায় চিহ্ন দিয়ে দেয়, তাহলে যেহেতু এখানে গ্রহণযোগ্য উপযোক্ত কারণ বিদ্যমান রয়েছে, তাই এটার অনুমোদন থাকবে।
যেই কলমের দাগকে পরবর্তীতে উঠানো যাবে, সেই কলম দ্বারা দাগানো,মার্ক করা উত্তম।হ্যা, বিশেষ প্রয়োজনে এমন কলম দ্বারা চিহ্নিত করাও জায়েয, যেগুলো স্থায়ী হয়ে থাকে।
কুরআনের মুসহাফে দাগানোর বৈধতা শুধুমাত্র নিজস্ব মালিকানাধীন কুরআনেই থাকবে। ওয়াকফকৃত কোনো মুসহাফে দাগানো জায়েয হবে না।ওয়াকফকৃত কুরআনে দাগানো,বা কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ কখনো বৈধ হবে না।
শায়েখ আবাদুল মুহসিন আয-যামিল রাহ কে শিক্ষার প্রয়োজনে কুরআনে দাগানো,অঙ্কন,লিখা জায়েয কি না? সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
ওয়াকফকৃত কোনো মুসহাফে মার্ক করা কখনো জায়েয হবে না।তবে ব্যক্তিগত মুসহাফ যদি কারো থাকে, এবং মার্ক করার প্রয়োজনিয়তা থাকে, তাহলে মুসহাফে না লিখে বরং অতিরিক্ত কোনো জিনিষ দ্বারা মার্ক করাই উত্তম। কিন্তু যদি কখনো কোনো মানুষ লেখার প্রতি মুখাপেক্ষী হয়, যেমন, কোনো মানুষ কুরআনি বিধি-বিধান জানতে চাচ্ছে, বা কুরআনকে মুখস্থ করতে চাচ্ছে, তখন সে এমন সুক্ষ্ম ভাবে মার্ক করতে পারবে যে, যা শুধুমাত্র একটা আ'লামত এবং নিদর্শন হিসেবে গণ্য হবে।যাকে কোনো লিখা বলা যাবে না।তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।এবং প্রয়োজন শেষে যথাসম্ভব মিটিয়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।
সুতরাং কুরআনকে হিফজকারী ছাত্র যখন হিফজকে সম্পন্ন করে ফেলবে, এবং হাফেয ছাত্রটি যখন মুসহাফের ঐ মার্ক থেকে অমুখাপেক্ষী হয়ে যাবে, তখন তাকে মার্কটি তুলে ফেলতে হবে।মার্ক তুলে নেয়ার পর যদি মুসহাফের পৃষ্টাটি ভালো ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে,তাহলে মুসহাফটি সাধারণভাবেই ব্যবহার করা যাবে। তবে মার্ক তুলে নেয়ার পর যদি মুসহাফের পৃষ্টাটি নষ্ট হয়ে যায়, অথবা অনুপযুক্ত মনে হয়, তাহলে সেটাকে সংরক্ষিত করে রেখে দিতে হবে।এবং তিলাওয়াত ইত্যাদির জন্য নতুন একটি সংগ্রহে নিয়ে নিতে হবে।যদি পৃষ্টা নষ্ট হয়ে গেছে এমন কোনো পূর্বের মুসহাফকে কোনো পবিত্রতম স্থানে জ্বালিয়ে ফেলা হয়, তাহলে সেটারও অনুমোদন থাকবে।
ইসলাম ওয়েব সাইটে এ সম্পর্কে বলা হয় যে,ফাতওয়া নং১১৩৭৭৫
فمما لا شك فيه أن الأولى صيانة المصحف عن التخطيط أو غيره مما قد يشوه صورته، والتخطيط بقلم الحبر أو القلم الفسفوري ونحوهما فيه تشويه ظاهر، فإن كانت ثمة حاجة للتخطيط فليكن بقلم الرصاص، إذ من السهل إزالته وإذا أزيل فينبغي أن تتخذ ممحاة نظيفة لا تترك أثراً لأوساخ ونحوها.
اسلام ويب ، رقم الفتوى: 113775
মোটকথা, মুসহাফকে মার্ক, অঙ্কন,দাগানো ইত্যাদি থেকে হেফাজতে রাখতে হবে।এবং কুরআনের আয়াতের রূপ ধারণ করে, এমন জিনিষ লিখা থেকে বিরত থাকতে হবে।হ্যা, বিশেষ প্রয়োজন থাকলে, মুসহাফে মার্ক করা জায়েয হবে।তবে মার্কটা এমনভাবেই হওয়া উচিৎ যা পরবর্তীতে তুলে ফেলা যায়।
দারুল উলূম দেওবন্দের একটি ফাতওয়ায় বলা হয়,
قرآن پاک میں سبق سناتے ہوئے بچوں کی غلطی کانشان لگانا ؟
سوال:
سوال : مسئلہ یہ ہے کہ استاذ قرآن پاک کے سبق میں قرآن پاک پر قلم سے جو تاریخ لکھتے ہیں تاکہ یاد رہے کہ سبق کہاں تک ہے او ر طالب علم فراڈ نہ کر سکے توکیااس مقصد کے لئے قرآن پاک پر تاریخ ڈالنا صحیح ہے ؟
2- اور دوران سبق طالب علم سے جو غلطیاں ہوتی ہیں ان کی نشاندہی کے لئے استادجو نشان لگاتے ہیں اس کا کیا حکم ہے ؟
جواب نمبر: 608089
بسم الله الرحمن الرحيم
Fatwa : 646-447/H=05/1443
(۱) حاشیہ میں جو خالی جگہ ہوتی ہے اُ س میں تاریخ لکھ دیں تو کچھ مضائقہ نہیں۔
(۲) حسب ضرورت پنسل یا قلم سے نشان لگادیں تو اِس کی بھی گنجائش ہے۔
কুরআনে কারীমের সবক শুনতে গিয়ে ছাত্রদের মুসহাফে মার্ক করে দেয়া সম্পর্কে
Fatwa : 646-447/H=05/1443
প্রশ্নঃ
(১)
ছাত্ররা যখন কুরআন হিফজের সবক শুনায়, তখন তাদের মুসহাফে তারিখ লিখে দেয়া কি বৈধ? যাতেকরে কোন জায়গা থেকে কতটুকু সবক ছাত্র শুনিয়েছে, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।
(২)
সবক শুনানোর সময় ছাত্ররা যে সমস্ত ভুল করে, সেই ভুলকে চিহ্নিত করে মুসহাফে মার্ক করে দেয়ার বিধান কি?
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাব
(১)
কুরআনের মুসহাফে দুই লাইনের মধ্যকার শূন্যস্থানে তারিখ ইত্যাদি লিখা যাবে।এতে কোনো সমস্যা হবে না।
(২)
প্রয়োজন অনুযায়ী পেন্সিল অথবা কলম দ্বারা মুসহাফে মার্ক করার রুখসত থাকবে।