আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
209 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (5 points)
আসসালামু আলাইকুম
আমার বিয়ে হয়েছে ১ বছর হয়েছে এই এক বছরে আমি খুবই মানুষিক অশান্তি পরে আছি। নিচে আমার পশ্ন গুলো বলছি
১/আমার স্বামী যখন আমাকে দেখতে আসেন তখন তার সাতগে আমার আলাদা রুমে কথা হয় এবং কিছু চুক্তি হয় স্বামী বলেছেন বিয়ের পরে আমাকে পড়াশোনা করাবেন। তার সাথে ঢাকা তে রাখবেন আমার শাশুড়ি কে আমার সাথেই রাখবেন।
আমার বিয়ের দেন মোহর ছিল ৩ লক্ষ টাকা যদিও আমার বোনদের মহর আরো বেশি আমার মোহর সে নগদ দিবে বলে কম করা হয়েছিল। এক লক্ষ টাকা উসিল দেওয়া হয় ২ লক্ষ বাকি ছিল।
বিয়ের দিন উনি আমার উসিল টাকা পুরোটা পরিশোধ করেন্নি। এতে আমি কস্ট পাই বিয়ের রাতে উনি আমার কাছে মাফ না চেয়ে বলেছেম তার সামর্থ্য হলে মোহর দিয়ে দিবেন।  আমি খুবই কস্ট পাই লজ্জায় তাকে কিছু বলিনি।   এই এক বছরে এখনো আমকে সে কোন হাত খরচ দেয়না চাইলে বলে তোমার তো সব প্রয়োজন আমি মিটাচ্ছি।  আমার মহর এর প্রসঙ্গ তুল্লে সে ইগ্নোর করে।  সে আমাকে মোহর দিচ্ছেনা এই জন্য আমি কস্ট পাচ্ছি পরিবার আত্ত্বিয়দের কাছে লজ্জা পাচ্ছি।
সে আমাকে পড়াবেন বলে পড়াশোনা কিছুদিন করিয়ে এখন আর করাবেন না কারন হিসেবে বলেন এখন আমার পছন্দ না উল্লেখ্য আমি পর্দা করেই শুধু এক্সাম দিয়েই ভার্সিটি যাই।
সে আমকে ঢাকা তেও রাখতে চান না তার মায়ের কাছে আমাকে রাখতে চান  কিন্তু আমি সেখানে মানুষিক শান্তি পাইনা। আমার শাশুড়ি আমার সকল কাজের ই ভুল ধরে যার কারনে তার প্রতিও আমার  ভালো লাগা কমে যাচ্ছে। আমার শাশুড়ি অনেক নামাযি দ্বীন্দার কিন্তু বলে বিয়ের পর মেয়েদের শশুড় শাশুড়ীর সাথেই থাকতে হয়।  তিনি আমকে পড়াশুনা করতে দিতে চায়না তাই আমার স্বামী ও চুক্তি ভংগ করছে।
এইসকল কারনে আমার খুবই কস্ট হয়। আমার কোন ইচ্ছাই আমার স্বামী গুরুত্ব দেয়না।  সে বলে আমি তা অনুগত নই আমার প্রতি অসন্তুস্ট। আচ্ছা আসলে এখানে কে দোষি। আমিই কি গুনাহগার হচ্ছি?  আমি কি আমার স্বামীর সাথে শ্বাশুড়ি কে নিয়ে একসাথে থাকতে চাইতে পারিনা। আমার মোহর যে দিচ্ছে না সে কি এখন গোনাহ গার হচ্ছেনা? আমি পড়া শোনা করতে না পেরে কস্ট পেলে কি স্বামীর গুনাহ হবেনা? আমকে দূরে রেখে কস্ট দিচ্ছে এতে কি সে গুনাহ গার হবেনা?
আমার স্বামী দ্বীন্দার যেনে আমি তাকে বিয়ে করর রাজি হই। বিয়ের পর তাকে ফজর নামাযে অলসতা করতে দেখি অন্য নামায পরলেও ফজর দেরি করে পড়ে এতে কি সে প্রকিত দ্বীন দার?
আমি কি তাকে আলাদা থাকার জন্য চাপ দিতে পারবো?
পড়াশোনার চুক্তি ভাংগের কারনে তার সাথে তর্ক করতে পারবো?
আমার এই অন্তরের কস্ট আমি কভাবে দূর করতে পারি। আমার তার প্রিতি ইদানিং ভালোবাসা আসছেনা সম্মান ও করতে ইচ্ছা করেনা অভিনয় করি তাকে ভালোবাসি। যেন আমার গুনাহ না হয়।
উস্তাদ আমি গুছিয়ে লিখতে পারিনা প্লিজ আমাকে এর কিছু সমাধান দিন। কিছু পরামর্শ ও আশা করছি।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .
 
সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ
বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)
 
 ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে-
تجب السكني لها عليه في بيت خال
মর্থার্থ: স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৬০৪)

ইসলামের দিক-নিদের্শনা হচ্ছে বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম কতর্ব্য হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আর এই বিধান পালন করার জন্য স্বামীর কতর্ব্য স্ত্রীকে সাহায্য করা। সেই সাথে অন্যান্য সকল কষ্ট থেকে স্ত্রীর আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্ত্রীকে শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথেই থাকতে হবে এমন বাধ্যও করা যাবে না। কেননা এমন কোন অধিকার স্বামীর নেই। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কে সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করেও কিছু কাজ করতে হবে।

যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বামীর পরিবারের সাথে অথবা অন্য আত্মীয়ের সাথে থাকার কথা বলে কিন্তু স্ত্রী কারো সাথে থাকার কথা রাজি না হয় তাহলে স্ত্রীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা স্বামীর কতর্ব্য। কেননা স্ত্রীর সকল কিছু রক্ষা করা ও নিরাপদে বসবাস করার দায়িত্ব স্বামীর।


সুতরাং স্ত্রীর উপর স্বামীর খেদমত আবশ্যক,  
শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা স্ত্রীর জন্য একটি অতিরিক্ত কাজ। এটা তার দায়িত্ব নয়,আবশ্যক নয়, । কিন্তু বর্তমান সমাজে মনে করা হয়, এটা তার অপরিহার্য দায়িত্ব বরং এটিই যেন তার প্রধান দায়িত্ব। 
আমাদের সমাজের আবহমান কালের চলমান রীতি হলো, যৌথ পরিবারগুলোতে পুত্রবধূরা শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্ন করে থাকেন। এটাকে পারিবারিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে।
ছেলের জন্য বউ আনাই হয় শ্বশুর-শাশুড়ির সেবার জন্য। এ সবই পরিমিতিবোধের চরম লঙ্ঘন। মা-বাবার সেবা করা সন্তানের দায়িত্ব, পুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক ৪/১৯৩, কিফায়াতুল মুফতি ৫/২৩০)

যদি স্বামীর মা-বাবার খেদমতের প্রয়োজন হয়, তাহলে স্বামীর কর্তব্য হলো তাঁদের সেবা-যত্ন করা। তবে কোনো স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে স্বামীর মা-বাবার সেবা করেন, এটা তাঁর পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। এর বিনিময়ে তিনি অনেক সওয়াব পাবেন। তবে এসব করতে আইনত তিনি বাধ্য নন। যদিও কাম্য এটাই যে স্বামীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান ও সমীহের চোখে দেখবেন। তাঁদের মনেপ্রাণে ভালোবাসবেন এবং তাঁদের সেবা করতে পারাকে নিজের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করবেন। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়িও পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও খাতির করবেন। তার সুখ-সুবিধার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন।
,
আরো জানুনঃ 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার স্বামী যদি আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে সক্ষম হোন,সেক্ষেত্রে আপনারা আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে পারেন।
চাপ দিতে পারেন।

তবে আপনার স্বামী যদি আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে সক্ষম না হলে চাপ দেয়া যাবেনা।

চাওয়ার পরেও মোহরানা শোধ না করা এটি কোনো ভাবেই আপনার স্বামীর জন্য ঠিক হচ্ছেনা।

পড়াশোনার চুক্তি ভঙ্গের কারনে তার সাথে তর্ক করতে পারবেননা।

আপনার মনের যাবতীয় কষ্ট,চাওয়া পাওয়া ইত্যাদি সমাধানের জন্য পরামর্শ থাকবে আপনার পরিবারের মুরব্বিদের মাধ্যমে আপনার স্বামীকে বুঝানো।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...