আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
196 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (24 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ। একজন থেকে শুনেছি, আবে হায়াত নামক একটি ঝরণা থেকে নাকি খিযির (আ) পানি খেয়েছিলেন, যার ফলে তিনি কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন।এখন আমার প্রশ্ন হলো-

১) পৃথিবীতে কি "আবে হায়াত" নামক এই ঝরণার অস্তিত্ব আছে?

২) খিযির (আ) কি নবী ছিলেন?
৩) খিযির (আ) কি যুলকারনাইন এবং মুসা (আ) উভয়ের সাথেই সাক্ষাৎ করেছিলেন? তাঁরা কি একই সময়ের মানুষ ছিলেন?
৪) "আবে হায়াত" এর পানি খেয়ে খিযির (আ) কি কেয়ামত পর্যন্ত অমরত্ব লাভ করেছেন?
৫) "আবে হায়াত" নিয়ে বিভিন্ন কাহিনী আছে, অনেকে এটি সত্য বলে বিশ্বাস করেন। কুরআন-হাদিসে না থাকা এইসব কাহিনী যদি আমাদেরকে কেউ বলতে আসে, তাহলে আমাদের মতো ত্বলিবে ইলমদের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত?

1 Answer

0 votes
by (572,970 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
আবে হায়াতের অস্তিত্ব কুরআন ও নির্ভরযোগ্য কোনো হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়।

যারা আবে হায়াত পান করার দরুন খিযির (আঃ) এর দীর্ঘজীবনের বিষয়ে বলেন, তাদের এই কথাটি সহীহ নয়।

 মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 
 
‘আপনার পূর্বে কোনো মানুষকেই আমি অনন্ত জীবন দান করি নি; সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে?’।
(সূরা (২১) আম্বিয়া: আয়াত ৩৪।)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عُفَيْرٍ، قَالَ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ، قَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمٍ، وَأَبِي، بَكْرِ بْنِ سُلَيْمَانَ بْنِ أَبِي حَثْمَةَ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ صَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم الْعِشَاءَ فِي آخِرِ حَيَاتِهِ، فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ فَقَالَ " أَرَأَيْتَكُمْ لَيْلَتَكُمْ هَذِهِ، فَإِنَّ رَأْسَ مِائَةِ سَنَةٍ مِنْهَا لاَ يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ أَحَدٌ ". 

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষের দিকে আমাদের নিয়ে ‘ইশার সালাত আদায় করলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ তোমরা কি এ রাতের সম্পর্কে জান? বর্তমানে যারা পৃথিবীতে রয়েছে, একশ বছরের মাথায় তাদের কেউ আর অবশিষ্ট থাকবে না। 
(বুখারী শরীফ ৫৬৪, ৬০১; মুসলিম ৪৪/৫৩, হাঃ ২৫৩৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৭)

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ سُلَيْمَانَ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ صَلَاةَ الْعِشَاءِ فِي آخِرِ حَيَاتِهِ، فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ، فَقَالَ: أَرَأَيْتُكُمْ لَيْلَتَكُمْ هَذِهِ، فَإِنَّ عَلَى رَأْسِ مِائَةِ سَنَةٍ مِنْهَا لَا يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ عَلَى ظَهْرِ الْأَرْضِ أَحَدٌ، قَالَ ابْنُ عُمَرَ: فَوَهِلَ النَّاسُ فِي مَقَالَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تِلْكَ فِيمَا يَتَحَدَّثُونَ عَنْ هَذِهِ الْأَحَادِيثِ عَنْ مِائَةِ سَنَةٍ، وَإِنَّمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ الْيَوْمَ عَلَى ظَهْرِ الْأَرْضِ، يُرِيدُ بِأَنْ يَنْخَرِمَ ذَلِكَ الْقَرْنُ صحيح

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষভাগে এক রাতে আমাদেরকে নিয়ে ‘ইশার সালাত আদায় করলেন। সালাম ফিরিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ তোমরা আজকের এ রাতটি দেখতে পাচ্ছো তো? নিশ্চয়ই আজ থেকে এক শতাব্দীর মাথায় বর্তমান পৃথিবীতে বসবাসরত কেউ জীবিত থাকবে না। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বক্তব্যে লোকদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হলো, ‘একশত বছর’ সংক্রান্ত যেসব হাদীস তারা বর্ণনা করেন তাকে কেন্দ্র করে। বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা এখন পৃথিবীতে বেঁচে আছে তাদের কেউ শত বছর পর জীবিত থাকবে না। তিনি এ কথা দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে, এ শতাব্দী শেষ হবে।
(বুখারী,আবু দাউদ ৪৩৪৮)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সূরা কাহাফে আল্লাহ মূসার (আঃ) সাথে আল্লাহর একজন বান্দার কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছেন। কুরআনে এ বান্দার নাম উল্লেখ করা হয় নি। তবে সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ বান্দার নাম ‘খাযির’ (প্রচলিত বাংলায়: খিযির)। এ একটি ঘটনা ছাড়া অন্য কোনো ঘটনায় খিযির (আঃ)-এর বিষয়ে কোনো সহীহ বর্ণনা জানা যায় না। তাঁর জন্ম, বাল্যকাল, কর্ম, নবুয়ত, কর্মক্ষেত্র, এ ঘটনার পরবর্তী কালে তার জীবন ও তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে কোনো প্রকারের কোনো বর্ণনা কোনো সহীহ হাদীসে জানতে পারা যায় না। তিনি আবে হায়াতের পানি পান করেছিলেন ইত্যাদি কথা সবই ইহূদী-খৃস্টানদের মধ্যে প্রচলিত কথা তথা ঈসরায়েলী রেওয়ায়াত মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে।

(০২)
https://www.ifatwa.info/51099/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 

খিযির আ. অলি না নবী; এব্যপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতপার্থক্য আছে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মত হল, তিনি নবী ছিলেন। 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
হযরত খিজির আঃ সম্পর্কে জানা কোন জরুরী বিষয় নয়। এসব বিষয় সম্পর্কে অতিরিক্ত খুঁজাখুঁজি করা নিষ্প্রয়োজন।

তার সম্পর্কে অনেক  কথাই প্রচলিত আছে। বাকি বিশুদ্ধতম কথা হল, তিনি একজন নবী ছিলেন। 

قال العلامة القرطبى : تحت قوله تعالى (وعلمناه من لدنا علما) والآية تشهد بنبوته لأن بواطن أفعاله لا تكون إلا بوحي.وأيضا فان الإنسان لا يتعلم ولا يتبع إلا من فوقه ، وليس يجوز أن يكون فوق النبي من ليس نبي.  الجامع لأحكام القرآن . 11 : 16
সারমর্মঃ
وعلمناه من لدنا علما এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা কুরতুবি রহঃ বলেন, আয়াতটি তার নবুয়ত প্রাপ্তির পক্ষে সাক্ষী দেয়।

(০৩)
উভয়ের সাথেই সাক্ষাৎ করেছিলেন, এ মর্মে কুরআন হাদীসে পাইনি। 
তবে মুসা আঃ এর সাথে যে সাক্ষাৎ করেছিলেন,এটি কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। 

জানামতে তাঁরা (খিযির আঃ ও যুলকরনাইন বাদশাহ) একই সময়ের মানুষ নন।

(০৪)
এটি সহীহ নয়।
বিস্তারিত এক নং প্রশ্নের জবাব দ্রষ্টব্য।

(০৫)
প্রতিক্রিয়া এমন হবে যে এটি যেহেতু কুরআন হাদীসের কোথাও নেই,আর এই বিষয়টি দ্বারা শরীয়তের কোনো বিধান/মাসয়ালা প্রমানিত হয়না,আর এই বিষয়ের সাথে আমাদের ঈমান আমলের কোনো সম্পর্ক নেই,এই বিষয় সম্পর্কে কিয়ামতের ময়দানে আমরা জিজ্ঞাসিতও হবোনা,আমরা জিজ্ঞাসিত হবো আমাদের ঈমান আমল নিয়ে,আবে হায়াত এ সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়,সুতরাং এই বিষয় নিয়ে কুরআন হাদীস থেকে আগ বাড়িয়ে জানার প্রয়োজনীয়তা নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...