আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
119 views
in ওয়াসওয়াসা by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম,

 আমি একটা বিষয়ে অনেক পেরেশান হয়ে আছি,যা আমাকে বেশ পীড়া দিচ্ছে ৷ শয়তান মাঝে মাঝে একদম নাজেহাল করে ছাড়ে। মাথার  ভিতরে আজে বাজে জিনিস নিয়ে আসে। এমন হালত যে জবান বন্ধ  থাকে তবুও ভিতরে ঐ কথা গুলো চলতে থাকে, এমন একটা ভাব হয় যেন আমি নিজেই জবান  দিয়ে বলতেছি,  মাঝে মাঝে এমন হয় যে, ভিতর থেকে বলা নাকি জবান থেকে বলা সেটা বুঝে উঠতে পারিনা, বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
কখনও আল্লাহ  নিয়ে, কখন ওজু নিয়ে, কখন সালাতে ওজু ভাঙ্গা নিয়ে, কখন শাতিমে নিয়ে, আবার বর্তমানে তালাক নিয়ে। মাথার মধ্যে মঝে মাঝে চলতে থাকে তালাক দিলাম, তালাক দিলাম.... এমন৷ আমি জবান বন্ধ রাখি, বাট ভিতরে চলতেই থাকে।
হঠাৎ  দেখা গেলো জিকির করতেছি তখন ভিতরে এমন চলতে থাকে(তালাক দিলাম, তালাক দিলাম শব্দ)। এর পরেও জিকির করে থাকি কিন্তু হঠাৎ এমন ভাব হয় যে বুঝতে পারিনা, তালাক দিলাম কথাটা জিকিরের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মুখ ফসকে বের হয়েছে নাকি ভিতরে ভিতরে ঐকথা গুলো বাজতেছিলো।
সালাতের বৈঠক দোয়া পড়তে থাকি, তখনও মাঝে মাঝে একি অবস্থা ভিতরে ঐ কথা গুলো চলতেই থাকে।
১) দেখা গেলো দাতেঁর কপাটিদুটি এক করে মিসওয়াক করতেছি তখন মাঝে মাঝে  ভিতরে চলতে থাকে ঐ কথা। হঠাৎ  মনে হলো মুখ ফসকে বলেই ফেললাম  নাকি, দাতের কপাটি জোড়া তো লাগানো, তবেকি ভিতরে তালাক শব্দ আর বাহিরে দিলাম শব্দ বের হলো , তাই দাতের কপাটি জোড়া লাগিয়ে মিসওয়াক করতে থেকে অন্য কথা বলে বুঝার ট্রাই করলাম বাট বুঝতে পারলাম না যে, আসলে কি হয়েছে৷ এই অবস্থায় কি তালাক হয়ে গেছে বা যাবে।
২) রোজা রাখব, সেজন্য সাহরি  খাওয়ার জন্য উঠেছি,  খাবার গুলো রান্নাঘর থেকে টেবিলে নিয়ে যাচ্ছি আর দোয়া করতে ছিলাম আল্লাহ জহান্নাম থেকে রক্ষা করেন, জহান্নাম থেকে রক্ষা করেন, এই সময়েও ঐ রকম কথা গুলো ভিতরে রিপিট করতেছিলো।  এমন যে, আমি মুখে দোয়া করে যাচ্ছি আর ভিতরে ঐটা বলে চলছে। এভাবে চলতে চলতে এক সময় ঐ ভিতরে চলতে থাকা তালাক দিলাম শব্দটা অনিচ্ছায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মুখফসকে উচ্চারিত হয়েছে   বলে মনে হলো,  আবার মনে হলো ভিতরেই ঐটা চলতেছে।
আমি আসলে এই লোড নিতে পারতেছিনা।আমি কি  অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মুখফসকে উচ্চারিত করেছি!, অনিচ্ছায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মুখফসকে এমনটা করে থাকলে কি তালাক হয়ে যাবে, আমার এই  পাগল করে দেয়ার মতোন ওয়াসওয়াসার হালতে?
৩) আবার এমনো হয় যে,  মনে হলো  অনিচ্ছায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মুখ ফসকে তালাক দিলাম কথাটি বেরিয়েছে ঐ হালতের জন্য, তৎক্ষনাত সাথে আরো কিছু কথা জুড়ে বলে যে, এসব বলা যাবেনা৷  যেমন, তালাক দিলাম এগুলো বাজে কথা, এসব বলা জাবেনা। তালাক দিলাম জাহান্নামের আগুন আজাব.. ইত্যাদি বলা যাবেনা । এই অবস্থাতে কি হুকুম।

আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা,আমি এই দম বন্ধ করা পেরেশানি নিতে পাচ্ছি না, আল্লাহ  আমাকে শয়তান থেকে হেফাজত করুক, জীবনের সকল পরীক্ষা  থেকে উৎরিয়ে দেক, আমিন।
তাই আমি দোয়া করতেছি এই ভাবে যে, আল্লাহ আপনি মা বানিয়েছেন তার কত মায়া, মমতা,  ভালোবাসা, সন্তান যদি তার মাকে হাজারও কষ্ট দেয়, গালমন্দ করে,  মারে,  এর পরেও ঐ মা তার সন্তানের খারাপ দেখতে পারে না, সন্তানকে পেলে দেয়না, অন্যের সামনে নিজ সন্তানকে ছোটও করে না, সব গোপন রাখে, মাফ করে দেয়। বরং সন্তানের কষ্ট দেখলে সব ভুলে গিয়ে ছুটে যায় সন্তানের কাছে।
আবার অনেক সময় সন্তান জেদ করে,  বা এমন কিছু আকড়ে ধরে থাকতে চায় তা তার জন্য ক্ষতিকর, তখন মা তার সন্তানের কল্যানের জন্য, সন্তানের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঐ জিনিস থেকে দূরে রাখে।
আল্লাহ আপনি তো এই মায়ের চেয়ে আরো বেশি দয়াবান, করুনাময়, আপনার দয়ার ১ভাগের প্রভাব সৃষ্টিকুলের উপর পরেছে, তাতেই মায়ের এই হালত, আর মালিক, আপনিতো আপনিই  । আল্লাহ  আমি তোমার  পাপি বান্দা তুমি আমার সকল পাপ গোপন  রাখো, আমাকে ফেলে দিয়ো না, মাফ করে দাও।
আর ঐ সন্তান যেমন ক্ষতির জিনিস আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় কিন্তু মা তার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সেখান থেকে তাকে দূরে রাখে, নিরাপদে রাখে। আল্লাহ তুমি, তার চেয়েও উত্তম ভাবে আমাকেও হেফাজত করো, যে সব হারাম জিনিস আমি আঁকড়ে ধরে থাকতে চাচ্ছি জেনে বা নাজেনে। আল্লাহ তুমি আমার উপর রহম করো। আল্লাহ আমাদের মাঝে সম্পর্ক যদি হালাল থেকে থাকে তাহলে সেটা স্পষ্ট করে দেন এবং আমাদেরকে জান্নাত পর্যন্ত একসাথে কবুল করুন,  আর যদি হালাল না থাকে তাহলে সেটাও স্পষ্ট করে দাও আর আমাদের জন্য উত্তম ব্যবস্হা করে দাও, আমীন।
আমি সত্যিই এই চাপ নিতে পারছিনা। আল্লাহ ভালো জানেন, প্রিয় উস্তায আমাকে এই বিষয়ে সাহায্য  করুন,  আর আমার জন্য দোয়া করবেন।

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


উকবাহ ইবনু আ’মির রাযি. বলেন,

لاَ يَجُوزُ طَلاَقُ الْمُوَسْوِسِ

‘ওয়াসওয়াসা সম্পন্ন (সন্দেহের বাতিকগ্রস্ত) ব্যক্তির তালাক কার্যকর হয় না।’ 
(সহিহ বুখারী, অধ্যায় ৬৮)

চার মাযহাব সম্ভলিত সর্ববৃহৎ ফেকহি গ্রন্থ "আল-মাওসুআতুল ফেকহিয়্যা"গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে,
نَقَل ابْنُ عَابِدِينَ عَنِ اللَّيْثِ: فِي مَسْأَلَةِ طَلاَقِ الْمُوَسْوَسِ  أَنَّهُ لاَ يَجُوزُ طَلاَقُ  الْمُوَسْوَسِ  ، قَال: يَعْنِي الْمَغْلُوبَ فِي عَقْلِهِ
وَنَقَل ابْنُ الْقَيِّمِ: إِنَّ الْمُطْلِّقَ إِنْ كَانَ زَائِل الْعَقْل بِجُنُونٍ أَوْ إِغْمَاءٍ أَوْ وَسْوَسَةٍ لاَ يَقَعُ طَلاَقُهُ،  قَال: وَهَذَا الْمَخْلَصُ مُجْمَعٌ عَلَيْهِ بَيْنَ عُلَمَ ـ اءِ الأُْمَّةِ

- رِدَّةُ الْمُوَسْوَسِ: 
٢١ - إِنْ تَكَلَّمَ الْمُوَسْوَسُ  بِكَلاَمٍ يَقْتَضِي الرِّدَّةَ لَمْ يَكُنْ فِي حَقِّهِ رِدَّةٌ. صَرَّحَ بِذَلِكَ الْحَنَفِيَّةُ، يَعْنُونَ الْمَغْلُوبَ فِي عَقْلِهِ
ইবনে আবেদিন শামী রাহ বর্ণনা করেন,ওয়াসওয়াসা গ্রস্থ ব্যক্তি -যার বিবেকবুদ্ধি লোপ পেতে বসেছে-তার তালাক গ্রহণযোগ্য নয়।
ইবনুল কাইয়িম রাহ বলেন, যদি তালাক প্রদানকারী ব্যক্তি ওয়াসওয়াসা,বেহুশি বা পাগলাটের দরুণ বিবেকবুদ্ধি লোপ পেতে থাকে, তাহলে তার তালাক গ্রহণযোগ্য হবে না। এর উপর সমস্ত উলামাদের ঐক্যমত রয়েছে।
(আল-মাওসু'আতুল ফেকহিয়্যাতুল কোয়েতিয়্যাহ-৪৩/১৫৬)
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/835

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনি ওয়াসওয়াসার রুগী। 

আপনি যেহেতু ওয়াসওয়াসার রুগী, তাই আপনার কোনো তালাকই গ্রহণযোগ্য নয়।

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত কোনো ছুরতেই তালাক পতিত হয়নি।
এই রোগ থাকা অবস্থায় আপনার কোনো তালাক পতিত হবেনা।আপনি নিশ্চিন্ত মনে থাকুন। 

আপনি এসব ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা দিবেননা,এ জাতীয় কোনো মাসয়ালা পড়বেননা,এ জাতীয় কোনো প্রশ্ন করবেননা। 

এহেন মাথায় আসলেই অন্য কাজে মগ্ন হয়ে যাবেন,বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবেন।

আরো করনীয় জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...