মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া আল্লাহর বান্দার অন্যতম গুণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِيْنَ لاَ يَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ وَإِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا،
‘যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয় তখন ভদ্রভাবে সে স্থান অতিক্রম করে’ (ফুরক্বান ২৫/৭২)।
সত্য গোপন করাও মিথ্যা সাক্ষীর মত।
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ وَمَنْ يَّكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ،
‘আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে ব্যক্তি তা গোপন করে, তার হৃদয় পাপিষ্ঠ। বস্ত্ততঃ তোমরা যা কিছু কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত’ (বাক্বারাহ ২/২৮৩)।
কবীরা গুনাহের অন্যতম হ’ল মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-কে কবীরাহ গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বললেন,
الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ،
আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া’।
(বুখারী হা/২৬৫৩; মুসলিম হা/৮৮।)
আবূ বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? আমরা বললাম, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন,
الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ. وَكَانَ مُتَّكِئًا فَجَلَسَ فَقَالَ أَلاَ وَقَوْلُ الزُّوْرِ وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ، أَلاَ وَقَوْلُ الزُّوْرِ وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ فَمَا زَالَ يَقُوْلُهَا حَتَّى قُلْتُ لاَ يَسْكُتُ-
‘আল্লাহর সঙ্গে শরীক স্থাপন করা ও পিতা-মাতার নাফরমানী করা। এ কথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। এরপর (সোজা হয়ে) বসে বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। সাবধান! মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। অতঃপর ক্রমাগত বলেই চললেন। এমনকি আমি বললাম, তিনি মনে হয় থামবেন না’।
(বুখারী হা/৫৯৭৬; মুসলিম হা/৮৭।)
মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে ব্যক্তির ভাল আমলও আল্লাহর নিকটে গ্রহণীয় হবে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) ছিয়াম সম্পর্কে বলেন
,مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّوْرِ وَالْعَمَلَ بِهِ وَالْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ،
‘যে লোক মিথ্যা কথা এবং সে অনুসারে কাজ করা আর মূর্খতা পরিহার করল না, আল্লাহর নিকট তার পানাহার বর্জনের কোন প্রয়োজন নেই’।
(বুখারী হা/৬০৫৭; আবূদাঊদ হা/২৩৬২; তিরমিযী হা/৭০৭; ইবনু মাজাহ হা/১৬৮৯।)
মিথ্যা সাক্ষী ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ تَسْلِيمَ الْخَاصَّةِ وَفُشُوَّ التِّجَارَةِ حَتَّى تُعِيْنَ الْمَرْأَةُ زَوْجَهَا عَلِى التِّجَارَةِ وَقَطْعَ الأَرْحَامِ وَشَهَادَةَ الزُّوْرِ وَكِتْمَانَ شَهَادَةِ الْحَقِّ وَظُهُوْرَ الْقَلَمِ-
‘ক্বিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ব্যক্তি বিশেষকে নির্দিষ্ট করে সালাম দেয়ার প্রচলন ঘটবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ফলে স্বামীর ব্যবসায়ে স্ত্রীও সহযোগিতা করবে। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা হবে। মিথ্যা সাক্ষ্যদানের প্রচলন হবে এবং সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হবে, লেখনীর প্রসার ঘটবে’।
(মুসনাদে আহমাদ হা/৩৮৭০; ছহীহাহ হা/৬৪৭; ছহীহ আদাবুল মুফরাদ হা/৮০১।)
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন,
شَهَادَةُ الزُّوْرِ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ، وَكِتْمَانُهَا كَذَلِكَ،
‘মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও সাক্ষ্য গোপন করা সবচেয়ে বড় গুনাহ’।
(তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা বাক্বারাহ ২/২৮৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র:।)
আলী (রাঃ)-এর কাছে দু’জন লোক কোন এক ব্যক্তির চুরির ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করার কারণে ঐ ব্যক্তির হাত কাটা হয়। পরে ঐ দু’ব্যক্তি এসে তাদের ভুল স্বীকার করে এবং বলে, সে চোর নয়। তখন তিনি বলেন, যদি আমি জানতাম যে তোমরা ইচ্ছা করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছ, তাহ’লে আমি তোমাদের দু’জনের হাত কেটে দিতাম।
(আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া, ২৬/২৫৮।)
অর্থাৎ মিথ্যা সাক্ষ্যের কারণে চুরির শাস্তি কার্যকর হয়ে থাকলে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীর উপর অনুরূপ শাস্তি বর্তাবে। আর হত্যা কার্যকর হয়ে থাকলে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীকেও বিচারক হত্যার নির্দেশ দিবেন।
(আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৬/৫৮।)
এই মাস‘আলার ক্ষেত্রে হানাফী ও মালেকী বিদ্বানের অভিমতই গ্রহণরযাগ্য। কারণ মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান হদ্দ কায়েমের কোন কারণ নয়।
কেউ মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে প্রমাণিত হ’লে করণীয় : ইমামদের মতে, যে ব্যক্তি আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা প্রমাণিত হবে তার নাম চারদিকে প্রচার করে দিতে হবে (কুরতুবী)। ওমর (রাঃ) বলেন, ‘তার পিঠে চাবুক মারতে হবে, মাথা ন্যাড়া করে দিতে হবে, মুখ কালো করে দিতে হবে এবং দীর্ঘদিন অন্তরীণ রাখতে হবে’। ওমর (রাঃ)-এর আদালতে এক ব্যক্তির সাক্ষ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তিনি তাকে একদিন প্রকাশ্যে জনসমক্ষে দাঁড় করিয়ে রাখেন এবং ঘোষণা করে দেন যে, এ ব্যক্তি হচ্ছে অমুকের ছেলে অমুক, এ মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে, একে নিচে রাখো। তারপর তাকে কারাগারে বন্দী করেন’।
(বায়হাকী, মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার, ১৪/২৪৩; কুরআনুল কারীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর), পৃঃ ১৭৬৭।)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে মামলাকারী,স্বাক্ষীদাতা সকলেই মারাত্মক অপরাধ করেছেন। দেশে ইসলামী শাসন না থাকায় দেশে তাদের শাস্তি কার্যকর না হলেও আখেরাতে তাদের জন্য মারাত্মক অপেক্ষা করছে।