বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
কুরআনে কারীমে কোথাও স্পষ্ট করে বলা হয়নি যে,পৃথিবী সমতল নাকি গোলাকার।তবে আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে,পৃথিবী গোলাকার।আধুনিক বিজ্ঞানের এ থিউরীকে কোরআন অস্বীকার করছে না।বরং চিন্তা করলে এ মতের পক্ষ্যে সমর্থন পাওয়া যায়,
যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ
তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।(সূরা যুমার-০৫)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা'আলা দিন রাত্রির পরিবর্তনের বিষয়কে يكور দ্বারা বর্ণনা করেছেন।
যার মূল অর্থ কোনো কিছু গোল বানানো। যেমন—মাথায় পাগড়ি পেঁচানো। এ শব্দটি পৃথিবীকে গোলাকারের দিকে ইঙ্গিত দেয়। কারণ রাতকে দিন দ্বারা ও দিনকে রাত দ্বারা এভাবে পেচানো তখনই সম্ভব হবে, যখন পৃথিবীর আকার গোল হবে।কেননা পৃথবী গোলাকার না হলে তাকে রাত দিন দ্বারা পেঁচানো সম্ভব হবে না।
আধুনিক বিজ্ঞানের বহু আগে কোরআনের এ আয়াত পাঠ করে ইমাম ইবনে হাজম আন্দালুসি(৩৮৪-৪৫৬হিজরী) (রহ.) পৃথিবী গোলাকার হওয়ার কথা বলেছেন। (ইবনে হাজম, আল-ফিছাল ফিল মিলাল : ১/৩৫২)
আল্লাহ তা'আলা অন্য এক আয়াতে বলেন,
وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا
পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন(সুরা নাজিআত-৩০)।
দেখুন এখানে পৃথিবীর বিস্তৃতি বোঝাতে ‘দাহা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। দোহা শব্দের অর্থ বিস্তৃত হলেও এর মূল অর্থ হল,ডিম্বাকৃতি।
আরবি ভাষার প্রাচীন ও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য অভিধান ‘লিসানুল আরব’-এ বর্ণিত রয়েছে, ‘দাহ্উন’ শব্দমূল থেকে এসেছে ‘আদহা’ ও ‘ইদহা’।
والأُدْحِيُّ والإدْحِيُّ والأُدْحِيَّة والإدْحِيَّة والأُدْحُوّة: مَبِيض النعام في الرمل، وزنه أُفْعُول من ذلك، لأَن النعامة تَدْحُوه برِجْلها ثم تَبِيض فيه وليس للنعام عُشٌّ.
ومَدْحَى النعام: موضع بيضها،وأُدْحِيُّها: موضعها الذي تُفَرِّخ فيه.
এর অর্থ উটপাখির ডিম সাদৃশ।সুতরাং এ আয়াত থেকেও পৃথিবী গোলাকার হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
এ পর্যন্ত যা আলোচনা হল,এগুলোকে কুরআনের তাফসীর বলা যাবে না।বরং এগুলো হলো,কুরআনের আজাইব।
যে সমস্ত মুফাসসিরীনে কেরাম পৃথীবিকে সমতল বলেছেন,এটা কুরআন হাদীসের কথা না।বরং এটা ছিলো তাদের নিজস্ব ইজতেহাদ।আর ইজতেহাদ অর্থ হলো,যা বাস্তব সম্মত হওয়া বা না হওয়া উভয়েরই সম্ভাবনাই রাখে।তারা তৎকালিন সময়ের সাধারণ জ্ঞান অনুযায়ী সেই সব উক্তি করেছিলেন।আপনি যে রেফারেন্স দিয়েছেন,তথায় খুজি উক্ত মনিষিদের কোনো বক্তব্য পাইনি।
এখন মানুষ বলছে,পৃথিবী গোলাকার।এটা অকাট্য নয়।কেননা কোরআন হাদীস সরাসরি আমাদেরকে বলছে না।আবার আমরা নিজ চক্ষু দ্বারা সেটাকে দেখছিও না।দেখলে অবশ্যই সেটাকে মেনে নিতাম।সুতরাং এ সম্ভাবনাও থেকে যায়, যে পৃথিবী সমতল।কেননা পৃথিবী ঘুরে না সূর্য ঘুরে এ নিয়ে আমরা বিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত ও পাল্টা সিদ্ধান্ত দেখেছি।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
পৃথিবী গোলাকার সম্পর্কীয় আয়াত মুতাশাবিহাত এর অন্তর্ভুক্ত।
যেহেতু পৃথিবী গোলাকার সম্পর্কিত আয়াতগুলো মুতাশাবিহাত এর অন্তর্ভুক্ত। তাই এগুলোর উপর ইয়াকি ও বিশ্বাস আনা বা না আনা ঈমানের উপর কোনো প্রকার প্রভাব ফেলবে না।বরং এগুলোতে ইজতেহাদগত মতপার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক।