আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
928 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (18 points)
আসসালামু আলাইকুম। এক ছোট বোনের প্রশ্ন।
আমার বাবা একটা প্রাইভেট ব্যাংক এ চাকরি করেন। বাবা ঘুষ খান না, অবৈধ কোনো লেনদেন করেন না। স্বাভাবিকভাবে সৎ থেকে চাকরি করেন। কিন্তু যেহেতু ব্যাংক এর চাকরি আব্বুর বেতন তো পুরোপুরি হালাল হওয়ার কথা না। কতটুকু হালাল বা হারাম সেটাও বুঝতে পারি না। আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। পরিবারে আমি বড় মেয়ে। এই বয়সে আমার পক্ষেও কোনো উপার্জন করা তো সম্ভব না। বাসার বাইরে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু  আমি আব্বুর এই চাকরি নিয়ে খুব ভয়ে আছি। যেহেতু সুদি ব্যাংক এ চাকরি। আব্বুও মোটামুটি সুদ সম্পর্কে জানেন। কিন্তু চাকরি তো ছাড়বেন না। আমিও এই বিষয়ে বলার কোনো সাহসও পাচ্ছি না। আমার, আমার পরিবারের খাওয়া দাওয়া, ভরণপোষণ, লেখাপড়া সবই তো আব্বুর টাকা দিয়ে হয়। এখন আমার কি করা উচিত শায়েখ? এই বয়সে আমি কি করবো? আমার কি হারাম খাওয়ার গুনাহ হবে? হারাম দিয়ে তৈরি শরীর তো জাহান্নামের জ্বালানি হবে। হারামকে ভীষণ ভয় পাই আমি। আমি তো কোনো পথ দেখছি না। আমার কি করা উচিত শায়েখ?

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
ব্যাংকের চাকুরি হারাম হওয়ার মূল কারণ দু’টি।যথা-
১-হারাম কাজে সহায়তা করা।
২-হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকা।

হারাম কাজের সহায়তার বিভিন্ন স্তর আছে। শরীয়তে সব প্রকার সহায়তা হারাম নয়।বরং সে সব সহায়তাই হারাম যা সরাসরি হারাম কাজের সহিত জড়িত থাকে। যেমন, সুদী লেনদেন করা। সুদী লেনদেন লিখে রাখা। সুদী টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ থেকে উসুল করা, ইত্যাদি ইত্যাদি।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়,যে তার সাক্ষী হয়, এবং যে দলিল লিখে রাখে, তাদের সকলের উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন।(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং-৪৯৮১)

তবে যদি ব্যাংকের এমন কোনো সেক্টরের কাজ হয়,যাতে  সুদী কাজে জড়িত হতে হয় না।যেমনঃ ড্রাইভার, ঝাড়ুদার, দারোয়ান, জায়েজ কারবারে বিনিয়োগ ইত্যাদি সেক্টর হয়,তাহলে যেহেতু এসবে সরাসরি সুদের সহায়তা নেই তাই এমন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ অবশ্যই রয়েছে।

প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে বেতনের উৎস কি হবে?কর্মিবৃন্দকে কোথা থেকে দেওয়া হবে?
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/398

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার পিতা যদি সুদী সেক্টরে চাকুরী করে থাকেন,তাহলে উনার ইনকাম হারাম।হারাম জিনিষ ভক্ষণ করে দু'আ কবুল হয় না।যেমন হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,
আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।
عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " أيها الناس، إن الله طيب لا يقبل إلا طيبا، وإن الله أمر المؤمنين بما أمر به المرسلين، فقال: {يا أيها الرسل كلوا من الطيبات واعملوا صالحا، إني بما تعملون عليم} [المؤمنون: ٥١] وقال: {يا أيها الذين آمنوا كلوا من طيبات ما رزقناكم} [البقرة: ١٧٢] ثم ذكر الرجل يطيل السفر أشعث أغبر، يمد يديه إلى السماء، يا رب، يا رب، ومطعمه حرام، ومشربه حرام، وملبسه حرام، وغذي بالحرام، فأنى يستجاب لذلك؟ "
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা'আলা তার প্রেরিত রসূলদের যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভাল কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।" (সূরা আল মু'মিনূন ২৩ঃ ৫১)তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোনা আমি তোমাদের যে সব পবিত্র জিনিস রিযক হিসেবে দিয়েছি তা খাও”— (সূরা আল বাকারাহ ২ঃ ১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, “হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু'আ তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?” (সহীহ মুসলিম-১০১৫)


প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
আপনার পিতার যদি ব্যাংকের সুদী সেক্টরে চাকুরী করে থাকেন,তাহলে উনার ইনকাম হারাম।উনার জন্য ওয়াজিব হালাল কোনো চাকুরীর সন্ধান করা।যতদিন না হলাল কোনো চাকুরীর সন্ধান পাচ্ছেন,এর পূর্ব পর্যন্ত উক্ত চাকুরী করার রুখসত উনার রয়েছে।

আপনার পিতা হালাল চাকুরী করুক বা হারাম চাকুরী করে থাকুক।সর্বাবস্থায় আপনার ব্যক্তিগত হালাল টাকা না থাকাবস্থায় আপনার জন্য পিতার ইনকাম থেকে নিজ প্রয়োজনকে মিঠানো জায়েয রয়েছে।কেেননা পিতার উপর নিজ বালেগা মেয়েকেও লালন পালন ওয়াজিব। 
নাবালক ছেলে সন্তান এবং সকল বয়সের মেয়ে সন্তানের লালনপালনের দায়িত্ব নিকটাত্মীয় মাহরাম পুরুষের উপর।পিতা ভাই চাচা ইত্যাদি মাহরাম পুরুষরা ধারাবাহিক মেয়ে সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। এটা তাদের উপর ওয়াজিব।তারা এ দায়িত্ব পালন না করলে গোনাহগার হবে।
ونفقة البنت بالغة والابن بالغا زمنا أو أعمى على الأب خاصة به يفتى 
বালেগ মেয়ে এবং বালেগ পঙ্গু বা অন্ধ ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব পিতার উপর।এটার উপরই ফাতাওয়া।(আল-উকুদুদ-দুররিয়া-১/৮২)
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/2362


সুতরাং আপনার নিজের কোনো টাকা পয়সা না থাকলে আপনি আপার বাবার হারাম সম্মত্তি থেকে গ্রহণ করতে পারবেন।আপনার কোনো গোনাহ হবে না।গোনাহ হলে আপনার বাবারই গোনাহ হব।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...