আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
812 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (3 points)

"রসুলুল্লহ সল্লল্লহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষ্পাপ ছিলেন,কিন্তু তিনি ভুলের উর্ধ্বে ছিলেন না।কিছু ভুল তিনিও করেছেন।যেমন-

১।একবার ইন শা আল্লাহ বলেননি।এ ব্যাপারে আল্লাহ সূরা কাহাফে বলেছেন,

[২৩]আর কখনই আপনি কোনো বিষয়ে বলবেন না, 
“আমি তা আগামীকাল করব,
[২৪]‘আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে’ এ কথা না বলে ।” আর যদি ভুলে যান তবে আপনার রবকে স্মরণ করবেন এবং বলবেন, ‘সম্ভবত আমার রব আমাকে এটার চেয়ে সত্যের কাছাকাছি পথ নির্দেশ করবেন।’

২।এক অন্ধ সাহাবীর প্রতি উদাসীনতা দেখিয়েছিলেন।এ ব্যাপারে আল্লাহ সুরা আবাসায় বলেছেন,

[৮]    অপরদিকে যে আপনার কাছে ছুটে এলো,
[৯]    আর সে সশঙ্কচিত্ত,
[১০]আপনি তার থেকে উদাসীন হলেন;

তবে এসব ভুল খুবই ছোটখাটো হওয়ায় কোনভাবেই এগুলো রসুলুল্লহ সল্লল্লহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা কমিয়ে দেয়না।আর তিনি পুরোপুরি নিষ্পাপ।"

উপরে উল্লেখিত আক্বীদাহ কি সঠিক?

1 Answer

0 votes
by (590,550 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
মাওলান ইদরীস কান্ধলভী (রহ.) ইসমতে আম্বিয়া সম্পর্কে লিখেন,
ইসমতে আম্বিয়ার বা নবী-রাসূলদের নিম্পাপ হওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে মাওলানা ইদরীস কান্দলভী (রহ.) বলেন, যাহির বাতিন তথা ভিতর ও বাহির শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা এবং এগুলোর প্ররোচনা থেকে পাক-পবিত্র থাকার নামই হলো ইসমত বা নিষ্পাপতা। ‘মাসুম’ বা নিষ্পাপ বলা হয় এমন সত্তাকে যিনি আকীদা-বিশ্বাস, ইচ্ছা-আকাঙ্খা, স্বভাব-চরিত্র, ইবাদত-বন্দেগী, লেনদেন- কথাবার্তা, কাজ-কর্ম ইত্যাদি সবক্ষেত্রে পাপের উৎস তথা নফস ও শয়তানের প্রভাব থেকে সর্বদা মুক্ত ও নিরাপদ থাকেন। তিনি সর্বদা আল্লাহ্ তাআলার এমন হিফাজতে থাকেন যার ফলে নফস ও শয়তান কোনোভাবেই তাঁর নিষ্পাপতাকে কলুষিত করতে পারে না।

নবী-রাসূলগণ সকলেই যেহেতু ঈমান-আকীদা, আমল-আখলাক, ইবাদত-বন্দেগী, কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, ইত্যাদি বিষয়ে ভিতর ও বাহির সবদিক থেকে শয়তান ও নফসের কুমন্ত্রণা থেকে পবিত্র ছিলেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও তাঁরা যেহেতু আল্লাহর হিফাজত থেকে বাইরে থাকতেন না, বরং আল্লাহ্ যা হুকুম করেছেন তাই তাঁরা বলেন ও করেন, কাজেই নবী-রাসূলগণ সকলেই হলেন মাসুম বা নিষ্পাপ। তাঁরা সগীরা ও কবীরা উভয় প্রকারের গুনাহ থেকেও মাসুম। নবুওয়াত প্রাপ্তির পরে তো মাসুম বটেই নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বেও মাসুম। তাই তাঁরা হলেন উম্মাতের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তাঁদের প্রতিটি কথা ও কর্ম মানবতার জন্য কল্যাণকর আদর্শ। তাঁদের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের জন্য অকল্যাণকর।

ইমাম আবূ মনসূর মাতুরিদী (রহ.) বলেন, ইস্মত আল্লাহ তাআলার এমন একটি বিশেষ নিয়ামত ও অনুগ্রহের নাম, যা নবী-রাসূলগণকে সর্বদা আল্লাহর নির্দেশ পালনে অনুগত রাখেন এবং সর্বপ্রকার পাপ-পঙ্কিলতা হতে দূরে রাখেন। [তরজুমানুস সুন্নাহ, মাওলানা বদরে আলম মিরাঠী (রহ.), ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩২৯, উর্দূ]

মাওলানা বদরে আলম মিরাঠী (রহ.) বলেন, নবুওয়াত ও ইসমত একই হাকীকতের দুটি পৃথক পৃথক দিক অর্থাৎ যিনি নবী তিনি অবশ্যই মাসুম আর যিনি মাসুম তিনি অবশ্যই নবী হবেন। সারকথা হলো, ইসমত হলো নবী-রাসূলগণের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং ক্ষণিকের জন্যও ইসমত নবী-রাসূলগণের সত্তা হতে বিভিন্ন হয় না। [তরজুমানুস সুন্নাহ, মাওলানা বদরে আলম মিরাঠী (রহ.), ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৩১, উর্দূ]

ইমাম রাযী (রহ.) বলেন, ইসমতের সম্পর্ক মোট চারটি বিষয়ের সাথে যথা- ১. আকীদা ও বিশ্বাস, ২. আহকামের প্রচার, ৩. ফাতওয়া ও ইজতিহাদ, ৪. কাজকর্ম ও স্বভাব-চরিত্র।

আকীদা ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আম্বিয়ায়ে কিরাম (আ.) সকলেই মাসুম বা নিষ্পাপ। আকীদাগত বিষয়ে তাঁদের থেকে কোনরূপ বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তির হয়নি। আহকামের প্রচার ক্ষেত্রেও সমস্ত উম্মাতে মুহাম্মদী একমত যে, আল্লাহর আহ্কাম বান্দা পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যাপারে তাঁরা কোনো প্রকার মিথ্যা,পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার মতো অপরাধ হতে সম্পূর্ণভাবে পবিত্র ও মুক্ত। আর ইজতিহাদের ব্যাপারে আলিমদের অভিমত এই যে, কোনো ব্যাপারে ওহী অবতীর্ণ না হলে নবীগণ প্রথমে ওহীর জন্য অপেক্ষা করতেন, পরে ইজতিহাদ করে উক্ত বিষয়ের সমাধান দিতেন। ইজতিহাদের ক্ষেত্রে আল্লাহর মর্জির খেলাফ কোনো সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে সাথে সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তা শুধরে দেওয়া হতো। কাজেই দ্বিধাহীনভাবে বলা যায় যে, এ ক্ষেত্রেও তাঁরা মাসুম। নবী-রাসূলগণের কাজকর্ম ও স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদির ব্যাপারে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অভিমত হলো, এ ক্ষেত্রেও মহান আল্লাহ্ নিজ কুদ্রত দ্বারা তাঁদেরকে নফস ও শয়তানের প্রভাব থেকে হিফাজত করেছেন। তবে কখনো কখনো অনিচ্ছা বা ভুলবশত তাঁদের থেকে এমন কাজও সংঘটিত হয়েছে যা বাহ্যত তাঁদের শানের পরিপন্থী মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা পাপ ছিল না। বরং এক বিশেষ উদ্দেশ্যেই আল্লাহ্ তাঁদের থেকে এরূপ কিছু সংঘঠিত করিয়েছেন। যেমন, নামাজে চার রাকাআতের স্থলে দুই রাকাআত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে দেওয়া। এতে নামাজের প্রতি অমনোযোগী মনে হলেও প্রকৃত বিষয় তা নয়। বরং উম্মাতকে সাহু সিজদার বিধান শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ্ তাআলা তাঁর দ্বারা এমনটি করিয়েছেন। এমনটি না হলে উম্মাত ‘সাহু সিজদার’ নিধান সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারত না।

নবী-রাসূলগণের অন্তর গুনাহের উৎস-প্রবৃত্তি ও শয়তানের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। আল্লাহর বিশেষ হিফাজত এক মুহূর্তের জন্যও তাঁদের থেকে পৃথক হয় না। হজরত ইউসুফ (আ.) সম্পর্কে আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, আমি তার থেকে মন্দকর্ম ও অশ্লীলতা সরিয়ে রাখার জন্যই এইভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। (সূরা ইউসুফ, ১২ : ২৪)এই আয়াতে হজরত ইউসুফ (আ.) থেকে মন্দকর্মকে সরিয়ে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইউসুফকে (আ.) মন্দকর্ম থেকে সরিয়ে রাখার কথা বলা হয়নি। এতে এ কথা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, নবী-রাসূলগণ সকলেই মাসুম। পবিত্র কুরআনে আরো বহু আয়াতে নবী-রাসূলগণের ইসমত ও নিষ্পাপতার কথা বিবৃত হয়েছে। [মাওলান ইদরীস কান্ধলভী (রহ.) কর্তৃক লিখিত তাফসীরে মা’রিফুল কুরআন- ১/১০০-১১৩, উর্দূ ,সংগৃহিত]

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
"রাসুলুল্লহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষ্পাপ ছিলেন।কিন্তু তিনি ভুলের উর্ধ্বে ছিলেন না,কেননা তিনিও মানুষ ছিলেন।কবিরা গোনাহ কখনো রাসূলুল্লাহ থেকে সংগঠিত হয়নি।সগিরা গোনাহ কি সংগঠিত হয়েছিলো?
এ সম্পর্কে তাফতাযানী রাহ বলেন,সগিরা গোনাহ সংগঠিত হতে পারে,সম্ভাবনা রয়েছে।জুমহুর উলামায়ে কেরাম বলেন,রাসূলুল্লাহ থেকে যেভাবে কবিরা গোনাহ হয়নি ঠিক সেভাবে সগিরাও সংগঠিত হয়নি।

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনি কুরআনে কারীমের যে সব আয়াতের কথা উল্লেখ করেছেন,এ সমস্ত আয়াতে রাসূল্লাহ সাঃ এর মাধ্যমে উম্মতকে শিক্ষা দানের  কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কোনো ভূল হয়নি,তবে এগুলো রাসূলুল্লাহ কে উদ্দেশ্য করে এজন্য বলা হচ্ছে যে,যাতে উম্মত এত্থেকে শিক্ষা নিতে পারে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
'তবে কখনো কখনো অনিচ্ছা বা ভুলবশত তাঁদের থেকে এমন কাজও সংঘটিত হয়েছে যা বাহ্যত তাঁদের শানের পরিপন্থী মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা পাপ ছিল।'
পাপ ছিল না হবে

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...