আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
356 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (3 points)

আসসালামু আলাইকুম। 
হাদিসে কুদসীতে আছে,আল্লাহ তাআলা বলেন, "আদম সন্তান  
আমাকে কষ্ট দেয়।তারা যুগকে গালি দেয়;অথচ আমিই যুগ।আমার হাতেই সকল ক্ষমতা;রাত ও দিন আমিই পরিবর্তন করি।"[সহীহ বুখারী]

উল্লেখিত হাদিসের আলোকে "আমাদের দ্বীনবিরোধী কাজকর্মে আল্লাহ তা'আলা কষ্ট পান,অর্থাৎ কষ্ট পাওয়া বিশেষণটিকে আল্লাহর দিকে সাব্যস্ত করা যায়" - এটি সঠিক আক্বীদাহ নাকি ভুল আক্বীদাহ?

1 Answer

0 votes
by (671,200 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم 

 হাদীছে কুদছিতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يؤذيني ابن آدم، يسب الدهر، وأنا الدهر، بيدي الأمر أقلب الليل والنهار
আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়। তারা যুগকে গালি দেয়; অথচ আমিই যুগ। আমার হাতেই সকল ক্ষমতা; রাত ও দিন আমিই পরিবর্তন করি।
(ছহীহ বুখারী হা/ ৪৮২৬, ৬১৮১,৭৪৯১  ছহীহ মুসলিম হা/ ২২৪৬।)
.
পূর্ণ হাদীসটি হলো

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ بْنِ سُفْيَانَ، وَابْنُ السَّرْحِ، قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يُؤْذِينِي ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ بِيَدِيَ الأَمْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ " . 

মুহাম্মদ ইবন সাব্বাহ (রহঃ) ......... আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মহান আল্লাহ বলেনঃ বনী আদম সময়কে গালি দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়। অথচ আমিই সময়, আমার নিয়ন্ত্রণে সব কিছুই; আমিই রাত-দিনকে (চক্রাকারে) আবর্তিত করি।

(বুখারী ৪৮২৬, মুসলিম ২২৪৬, আবূ দাঊদ ৫২৭৪, আহমাদ ৭২৪৫, সহীহাহ্ ৫৩১, সহীহ আল জামি‘ ৪৩৪৩,মিশকাতুল মাসাবিহ ২২)

উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় ফাতহুল বারী গ্রন্থে এসেছে 

قال الله تبارك وتعالى: يؤذيني ابن آدم ... " فذكره. قال القرطبي: معناه يخاطبني من القول بما يتأذى من يجوز في حقه التأذي، والله منزه عن أن يصل إليه الأذى، وإنما هذا من التوسع في الكلام. والمراد أن من وقع ذلك منه تعرض لسخط الله.
সারমর্মঃ ইমাম কুরতুবি রহঃ বলেছেন   "আল্লাহ তায়ালার নিকট কষ্ট পৌছা" থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র। 
এই বাক্য দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কেহ যামানাকে এমন গালি দিলে,আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে পড়বে।
যার দ্বারা এরূপ কাজ সংঘটিত হবে সে আল্লাহর বিরাগ ও অসন্তোষের শিকার হবে। 
এটা কালামের ভিতর শক্ততা বুঝানোর জন্য বলা হয়েছে,,,,। 
,
المنهاج شرح صحيح مسلم بن الحجاج
قوله عز وجل : ( يؤذيني ابن آدم ) فمعناه : يعاملني معاملة توجب الأذى في حقكم .
সারমর্মঃ এই গালি দেওয়ার দ্বারা তোমরা আমার সাথে এমন ব্যবহার করলে,যেটা তোমাদের মাঝে পরস্পরে কষ্ট দেওয়া বুঝায়।   
,
عون المعبود شرح سنن أبي داود
(نا سفيان) هو ابن عيينة. ذكره المزي. (عن سعيد) ابن المسيب. (عن النبي صلى الله عليه وسلم) فيما يرويه عن الله تبارك وتعالى. (يؤذيني) من الإيذاء معناه: يعاملني معاملة توجب الأذى في حقكم
সারমর্মঃ এই গালি দেওয়ার দ্বারা তোমরা আমার সাথে এমন ব্যবহার করলে,যেটা তোমাদের মাঝে পরস্পরে কষ্ট দেওয়া বুঝায়,,,,।   
,

যুগের তিরস্কার আল্লাহর উপর আরোপিত হয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলাই সকল বিষয়ের পরিবর্তনকারী আর সময়, বিপদাপদ এবং সবকিছু নির্ধারণকারী। যুগ মহান আল্লাহ তা‘আলারই সৃষ্টি। গালি ও তিরস্কার থেকে বিরত থাকা মুসলিমদের উপর আবশ্যক।

 মুসলিমরা কোন বিপদের সম্মুখ হলে তারা নিজেদের ব্যাপারে ভেবে দেখবে আর তাদের পাপকে তারা স্বীকার করে নেবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ) [الشورى: 30]
আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃত কর্মেরই ফল। আর তোমাদের অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন (সূরা শুরা ৪২:৩০)। 

সুতরাং মানুষের উচিত নিজেদেরকে তিরস্কার ও ভৎর্সনা করা, যুগকে নয়।
,
উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় আরো বলা হয়েছেঃ
‘আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়’ এর অর্থ হচ্ছে সে আমার সম্পর্কে এমন মন্তব্য করে যা আমি অপছন্দ করি। আর সে আমার দিকে এমন বস্তুর সম্পর্ক স্থাপন করে যা আমার মর্যাদার পরিপন্থী। এ থেকে উদ্দেশ্য হলো যার দ্বারা এরূপ কাজ সংঘটিত হবে সে আল্লাহর বিরাগ ও অসন্তোষের শিকার হবে। 

আর আল্লাহ ও তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা অপছন্দ করে এবং যার প্রতি তারা সন্তুষ্ট নন এমন কাজ করা।

‘‘যামানাকে গালি দেয়’’ এর মর্ম হলো, 
كان أهل الجاهلية يقولون: إنما يهلكنا الليل والنهار، هو الذي يميتنا ويحيينا.

যখন কারো মৃত্যু ঘটে অথবা কারো ধ্বংস হয় বা সম্পদ বিনষ্ট হয়, তখন যামানাকে বলে ‘‘যামানা ধ্বংস হোক’’ জাহিলী যুগের লোকেরা কোন বিপদ মুসীবাতে পতিত হলে এরূপ বলতো। তাদের মধ্যে কেউ তো এমন ছিল যে, তারা আল্লাহ-কে বিশ্বাস করত না, তারা দিবা-রাত্রির পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই বুঝতো না। তাদের বিশ্বাস ছিল প্রতি ৩৬ হাজার বছর পরে সকল কিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটে।

আবার কেউ এমন ছিল যে, তারা স্রষ্টাকে স্বীকার করতো, তবে তারা কোন অপছন্দনীয় বিষয়কে আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করাকে অপছন্দ করতো। ফলে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে তা যামানা ও যুগের সাথে সম্পৃক্ত করত। এভাবেই তারা যামানাকে গালি দিতো এবং দোষারোপ করত। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলাই হলেন যামানার সৃষ্টিকারী, এর পরিবর্তনকারী। যামানার মধ্যে কোন কল্যাণ ও অকল্যাণের সৃষ্টি করেন মহান আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্টি। অতএব কোন আদম সন্তান যখন সেই যামানাকে গালি দেয় তখন প্রকৃতপক্ষে সে গালি তার ওপরই বর্তায় যিনি এর সৃষ্টিকর্তা। 
,
★★সুতরাং  উল্লেখিত হাদিসের আলোকে "আমাদের দ্বীনবিরোধী কাজকর্মে আল্লাহ তা'আলা কষ্ট পান,অর্থাৎ কষ্ট পাওয়া বিশেষণটিকে আল্লাহর দিকে সাব্যস্ত করা যায়" 
এমনটি বলা ঠিক হবেনা।

আল্লাহ তায়ালা ইহা থেকে পবিত্র,সুতরাং এমনটি বলা নাজায়েজ।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...