আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
116 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (14 points)

আসসালামু আলাইকুম।

মুহতারাম, সোস্যাল মিডিয়ায় বিচরন করতে গিয়ে আমাদের সমাজে থাকা একটি আকিদার ভাইদের একটি লেখা প্রায়ই সামনে আসে। সেটার সার সংক্ষেপ হলো, শেষ জামানায় মদিনা কেন্দ্রিক আলেমদের ফলো করা জরুরী। তাই তারা বিভিন্ন মাসলা মাসায়েলের ক্ষেত্রে দেশীয় হানাফি বা দেওবন্দী আলেমের ফতোয়ার চেয়ে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় ফারেগ হওয়া বিভিন্ন আলেমের মতামত কে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করেন। তারা এটার জন্য দুটি হাদিস পেশ করে থাকেনঃ

রাসুল (সাঃ)বলেনঃ " মানুষ হন্যে হয়ে ইলম অনুসন্ধান করবে, তবে মদিনার আলেমের চেয়ে অধিক বিজ্ঞ কোন আলেম তারা খুজে পাবেনা।

(সহীহ মুসলিম-372, নাসাঈ:৪২৭৭)

-

 রাসূল (সা) শেষ যামানার ইসলাম সম্পর্কে

ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে,

"নিশ্চয়ই দ্বীন মদিনাতে সেভাবেই ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তে ফিরে আসে"

আমি জানতে চাই আমরা এই দুইটি হাদিস কে কিভাবে গ্রহণ করব। আমরা কেনোইবা মদিনা কেন্দ্রীক আলেমদের থেকে দেওবন্দ কেন্দ্রীক আলেমদের অনুসরণ করবো। তাদের এই প্রচারনার জবাব আমরা কিভাবে দিতে পারি?

1 Answer

0 votes
by (676,160 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

عَن أبي هُرَيْرَة رِوَايَةً: «يُوشِكُ أَنْ يَضْرِبَ النَّاسُ أَكْبَادَ الْإِبِلِ يَطْلُبُونَ الْعِلْمَ فَلَا يَجِدُونَ أَحَدًا أَعْلَمَ مِنْ عَالم الْمَدِينَة»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। ইলমের সন্ধানে মানুষ হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াবে। তখন তারা মদীনার আলেমের তুলনায় বড় কোন আলেম তারা দেখতে পাবে না। {মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-২৪৬}
 
মোল্লা আলী কারী রহঃ মিশকাতুল মাসাবীহের প্রখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “মিরকাতুল মাফাতীহ” এ উপরোক্ত সময়কালটা কখন? এ সম্পর্কে লিখেন-
অনেকেই বলেছেন এটি সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণের জমানা। এরপর মদীনায় থাকা উলামায়ে কেরাম অধিকাংশ ইসলামী সম্রাজ্যের প্রতিটি শহরে শহরে ছড়িয়ে পড়েছেন।[তাই ইযাফতটি জিনসী]

কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল রাসূল সাঃ। [তাই ইযাফতটি আ’হদী]
{মিরকাতুল মাফাতীহ, হাদীস নং-২৪৬}

(০২)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِينَةِ، كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় ঈমান মদীনায় আশ্রয় নিবে যেমনিভাবে সাপ তার গর্তে আশ্রয় নেয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৭, ফাতহুল মুলহিম, হাদীস নং-৩৭২}

এ ধরনের আরেকটি হাদীস হলোঃ-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْإِسْلَامَ بَدَأَ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ غَرِيبًا كَمَا بَدَأَ، وَهُوَ يَأْرِزُ بَيْنَ الْمَسْجِدَيْنِ، كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ فِي جُحْرِهَا»

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় ইসলাম নিঃসঙ্গ অসহায় অবস্থায় আবির্ভূত হয়েছিল, আর অচিরেই সে নিঃসঙ্গ হবে আবির্ভূত অবস্থার মত। আর তা দুই মসজিদের মাঝে এসে আশ্রয় নিবে যেমনিভাবে সাপ তার গর্তে আশ্রয় নেয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৬, ফাতহুল মুলহিম, হাদীস নং-৩৭১}

আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহঃ তার সহীহ মুসলিমের সুবিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফাতহুল মুলহিমে লিখেছেন-

والظاهر عندى-والله أعلم-أن هذا وقت خروج الدجال، كما جاء فى الصحيح عن أنس بن مالك رضى الله عنه مرفوعا: ليس من بلد إلا سيطؤه الدجال إلا مكة والمدينة، ليس له من نقابها نقب إلا عليه الملائكة صافين يحرسونها… الحديث، فالمراد-والله أعلم- الإسلام يكون موقرا مأمونا من فتنة المسيح الدجال ورعبه فى هذين المسجدين المكرمين، نبه عليه الدميرى فى حياة الحيوان احتمالا، وقال شيخنا المحمود رحمه الله: أنه هو المراد، والله تعالى أعلم، (فتح الملهم، كتاب الإيمان، باب بيان أن الإسلام بدأ غريبا وسيعود غريبا وأنه يأزر بين المسجدين-2/176-177

আমার কাছে এটিই প্রতিভাত হয় যে [আল্লাহ তাআলাই আসল অবস্থা সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত]। এ সময়টি দাজ্জাল আবির্ভাবের সময়ে হবে। যেমন আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে সহীহ গ্রন্থে মারফূ সূত্রে এসেছে যে, “সকল শহরেই দাজ্জাল প্রবেশ করবে মক্কা ও মদীনা ছাড়া। কারণ এর প্রতিটি স্থানেই ফেরেস্তাগণ কাতার ধরে তা প্রহরায় রত রয়েছে। [আলহাদীস]

সুতরাং বুঝা গেল, [আল্লাহ তাআলাই আসল অবস্থা সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত] নিশ্চয় ইসলাম নিরাপদ থাকবে দাজ্জালের ফিতনা থেকে। আর দাজ্জালের জন্য ভীতিকর স্থান হল বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নববী। একথাই সম্ভাবনাস্বরূপ উদ্ধৃত করেছেন আল্লামা দিময়ারী রহঃ তার “হায়াতুল হাইওয়ান” গ্রন্থে। আর শায়েখ মাহমুদ রহঃ বলেছেন এটিই মূলত উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা সঠিক বিষয় অবগত। {ফাতহুল মুলহিম-২/১৭৬-১৭৭}

রাসূল সাঃ এর মোহাব্বতে স্বাভাবিকভাবেই দ্বীনদার মানুষেরা মদীনা অভিমূখী হবে।
রাসূল সাঃ এর জীবদ্দাশায় হয়েছিল তাতো পরিস্কার। তারপর সাহাবায়ে কেরামের জমানায় নবীর শিক্ষা পেতে লোকজন সেখানে ভীর করতো। সেই সাথে রাসূল সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগেও এর দাবি অক্ষুন্ন থাকে।

তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের জমানা শেষ হবার পর মানুষ কবর যিয়ারতের জন্য, মসজিদে নববী, নবীজী সাঃ ও সাহাবীদের ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যেও গমণ করবে মদীনায়।
এভাবে ঈমানদারের সর্বযুগেই মদীনায় ফিরে আসবেই। এটাই হল হাদীসের মর্মার্থ। {ফাতহুল মুলহিম দ্রষ্টব্য]
(সংগৃহীত)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা দু’টি বিষয় বুঝতে পারলাম। যথা-
১-এটি দাজ্জাল প্রকাশের সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হাদীস। তথা যখন দাজ্জাল প্রকাশিত হবে তখন মদীনাতে সকল ঈমানদারেরা চলে আসবে। এটাই হবে একমাত্র ইলম ও ঈমানের মারকায।

২-নবীজী সাঃ ও সাহাবী ও তাবেয়ী এবং তাবেয়ীগণের সময়ে হাকীকীভাবে মদীনা ছিল ঈমান ও আমলের মারকায, তার পরবর্তীতে যিয়ারত, ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, বরকত হাসীলের উদ্দেশ্যে ঈমানদের সফরের কারণেও মদীনা ঈমান ও আমলের মারকায হয়ে থাকে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...