আসসালামু আলাইকুম,
আমার পুরো পরিবার সিহরে আক্রান্ত।আমি আলহামদুলিল্লাহ সাধ্যমতো রুকইয়াহ করি।সবচেয়ে বেশি সমস্যা আমার আম্মুর কিন্তু তিনি রুকইয়াহ করতে চান না।আমি অনেক বুঝিয়েছি,রাক্বীর কাছে নিয়ে গিয়েছি,এখনও বোঝাই কিন্তু তিনি শুনেন না।রুকইয়াহ হিজামাকে উলটা ভয় পান! আম্মু তার পরিচিত এক হুজুর(সম্ভবত মাদ্রাসার শিক্ষক),আরেকজন মসজিদের ইমাম থেকে তাবিজ ও অন্যান্য উপায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন সিহরের সমস্যার জন্য।
উনাদের কিছু আমল আমার কাছে সন্দেহজনক লাগে।
যেমন: বিশেষ পদ্ধতিতে রুটি বানিয়ে কুকুরকে খাওয়ানো,ঘরের চার কোনায় তাবিজ রাখা,গোলাপ ফুলের মাঝে আল্লাহু আরও কি সব সংখ্যা আর আরবি লিখা কাগজ ঝুলিয়ে রাখা বাসার সুরক্ষার জন্য,চিনি পড়া খাওয়া,স্রোতযুক্ত পানিতে তাবিজ ফেলা,সোনা-রুপার পানি দিয়ে গোসল,পাগলা মসজিদে স্বর্ণ/পশুপাখি দানের মানত, জিনদের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে - কে বা কারা জাদু করেছে সেটা বের করার চেষ্টা করা ,কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে দান/নামাজের মানত করা ইত্যাদি।আমার আম্মু নিজে গলায় একাধিক তাবিজও ব্যবহার করেন।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে-
১/আম্মু যে শিফার জন্য এইসকল আমল করেন যেগুলোর সুন্নাহভিত্তিক কোনো দলিল আছে কিনা জানা নেই,হুজুরদের চিকিৎসায় সুস্থতা পাওয়া যায় এমনটা বিশ্বাস করেন এতে কি তার আকিদা শিরক মিশ্রিত হয়ে গিয়েছে কিনা।আমার অনেক চিন্তা হয় এটা নিয়ে।যদিও আম্মু মুখে সবসময় আল্লাহর রহমতের কথা বলেন আবার পাশাপাশি বিভিন্ন উসিলাহ ও মানেন,, এতে তিনি কি বড় শিরক করছেন ?
এই অবস্থায় মারা গেলে কি আল্লাহ মাফ করবেন না?যেহেতু শিরক এর গুনাহ আল্লাহ মাফ করেন না।আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু তিনি কোনো কথা শুনতে নারাজ।আমার অনেক টেনশন হয়,আমি কি করতে পারি?
২/সম্প্রতি সমস্যা বেড়ে যাওয়ায়,আম্মু একটা নতুন আমল নিজে করেন আমাকেও করতে বলেন।সেটা হচ্ছে সূর্যদয়ের মুহুর্তে পূর্বদিকে তাকিয়ে অনেকবার সুরা লাহাব তিলাওয়াত করা।আমি রুকইয়াহর বইতে এমন কোনো আমল পাই নি।তাছাড়া সূর্য শয়তানের শিং এর মধ্য দিয়ে উঠে তাই ওই সময় সিজদাহ দেওয়া নিষেধ এই সংক্রান্ত হাদিস পড়েছিলাম।সন্দেহ থাকায় আমি আমলটি করি নি,কিন্তু আম্মু বারবার জিজ্ঞাসা করায়, আমি না করা সত্ত্বেও মিথ্যা বলেছি,আম্মুর মন রক্ষার জন্য।এতে কি আমার গুনাহ হয়েছে? এই রকম কোনো আমল কি আসলেই আছে?
৩/দ্বীনের বুঝ আসার আগে,আমি নামাজের ব্যাপারে অনেক গাফেল ছিলাম।অনেক সময় নামাজ পড়েছি কিনা জিজ্ঞাসা করলে, না পড়লেও পড়েছি বলে ফেলতাম।অনেক সময় খোটাও দিত,তাই বিরক্ত লাগতো। আমি নামাজগুলো যতদূর মনে পড়ে পরবর্তীতে কাযা আদায় করে নিয়েছি।কিন্তু ফরজ নামাজ নিয়ে এত বড় মিথ্যা বলেছি,তাও একাধিকবার,আল্লাহ কি আমাকে মাফ করবেন ? এক্ষেত্রে কি তাওবা যথেষ্ট নাকি কোনো কাফফারাও আদায় করতে হবে?
৪/দুনিয়াবী কোনো কারণে অন্যের দ্বারা অপমানিত হবার আশংকা থেকে অনেক সময় মুখ ফসকে মিথ্যা কথা বলে ফেলি,যেটা দ্বারা অন্যের কোনো ক্ষতির আশংকা থাকে না।
পরে অনেক আফসোস হয় কিন্তু চক্ষু লজ্জা সত্য বললে মানুষ খারাপ ভাববে সেই চিন্তা থেকে আর নফসের ধোকায় পড়ে বারবার এই কাজটি হয়ে যাচ্ছে।এতে কি কবিরা গুনাহ হচ্ছে ? কিভাবে বেঁচে থাকবো ?
৫/যে সকল রক্ত সম্পর্কের আত্নীয়( দাদী,চাচা,ফুপু) সম্পত্তির জন্য আমার বাবা-মা আর পড়াশোনা নষ্ট করার জন্য আমি ও আমার ছোট বোনের উপর কুফুরি কালাম -যাদু টোনা করেন,তাদের সাথে কথা না বললে কি গুনাহ হবে?তাদের জন্য যতই ভালো কিছু করার চেষ্টা করা হয়,কোনো লাভ হয় না! যোগাযোগ রাখলে বরং সেই সুযোগে আরও বেশি ক্ষতি করার আশংকা আছে।
৬/বদনজর, কালো যাদু ও জিনে আক্রান্ত রোগী যদি এই সকল সমস্যার জন্য ফরজ ইবাদতসহ অন্যান্য ইবাদত ঠিকভাবে করতে না পারেন,তাহলে কি সেই জন্য তাকে কিয়ামতের সময় পাকড়াও করা হবে?অনেক ওয়াসওয়াসা আসে,তাও যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।তবুও অনেক সময় ফজর কাযা হয়ে যায়,আওয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়তে না পারা,সকাল সন্ধ্যার আমল মাঝে মাঝে মিস হয়ে যাওয়া,অতিরিক্ত ঘুমের কারণে নামাজ মিস হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।এক্ষেত্রে স্মরণ হবার সাথে সাথে আদায় করে নিলে আর ইস্তেগফার করলে কি আল্লাহ মাফ করবেন?
৭/বিবাহিত মেয়ে যদি আশিকজিন সংক্রান্ত সমস্যা (রাক্বি বলেছেন) থাকার কারণে পরপুরুষের দিকে নজরের হেফাজত করতে না পারে,তাহলে কি তার জন্য ইসলামী শারইয়াহ অনুযায়ী রজম নির্ধারিত হবে?
রজম কি শুধু হারাম সম্পর্কে সহবাস করলেই সাব্যস্ত হয়? নাকি চোখের জিনা,অন্তরের কুপ্রবৃত্তি,নজরের হেফাজত করতে না পারলেও রজম সাব্যস্ত হবে?
উল্লেখ্য যে,
তাদের স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকা হয় না,মাসে একবার কিংবা অনেকদিন পর পর একত্রিত হবার সুযোগ থাকে।মেয়ে সহশিক্ষায় (ইউনিভার্সিটিতে) পড়ে তাই নজরের হেফাজত অনেক কঠিন হয়ে যায়।এখন এমন অবস্থা যে পড়াশোনা ছাড়ারও উপায় নাই।নফল রোজা রাখার চেষ্টাও করা হয়েছে।কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এর প্রতি শয়তান আকর্ষণ সৃষ্টি করে,যাদের সাথে প্রতিদিনই দেখা হয়,যেটা এড়িয়ে চলাও সম্ভব না।আবার অতীতের হারাম সম্পর্কের গুনাহ স্মরণ করেও ওয়াসওয়াসা কাজ করে,যদিও তওবা করা হয়েছে একাধিকবার।শুধু বারবার মনে হয়, অনেক বেশি পাপী,আমার নামাজ রোজা কিছুই কবুল হবে না,বেঁচে থাকার অধিকার নেই,স্বামীর হক নষ্ট করছে।(যদিও রজম কায়েম করার মতো আঈন দেশে নেই,কিন্তু বিধানটা জানা জরুরি)
অনেকগুলো প্রশ্ন একসাথে করে ফেলেছি,আফওয়ান।একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ উত্তর দিবেন দয়া করে,রেফারেন্স জরুরি না।সময় বেশি লাগলেও সমস্যা নেই।আমার ও আমার পরিবারের জন্য দু'আ করবেন।