আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
390 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ
আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা কুরআন কারীমে যে ইরশাদ করেছেন আমি কুরআনকে নাযিল করেছি রোগের নিরাময় হিসেবে,সম্ভবত আয়াত টি এমন ই হবে,এই আয়াত টির তাফসীর কি হবে শায়েখ?


অনেকে আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালার  কুরআন কারীম তিলাওয়াত করে জ্বীন এ আছড় করা ব্যক্তির জন্য আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালার অনুগ্রহে  জ্বীন দূর করার জন্য কুরআন কারীম তিলাওয়াত করে,প্রশ্ন হচ্ছে এই রুকইয়াহ গুলো কি সুন্নাহসম্মত রুকইয়াহ??


অনেকে বিভিন্ন রোগের নিরাময় এর জন্য আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালার কুরআন কারীম তিলাওয়াত করে বা অডিও শুনার জন্য বলেন যেনো আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা তাকে সুস্থভাবে করে দেন,প্রশ্ন হচ্ছে এই রুকইয়াহ গুলো কি সুন্নাহসম্মত আমল?
বা কিভাবে ওরা বুঝে যে এই সুরা পড়লে আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা উক্ত রোগ থেকে মুক্তি দিবেন?


حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، وَسَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمَخْزُومِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ عَلَيْكُمْ بِهَذِهِ الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ فَإِنَّ فِيهَا شِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلاَّ السَّامَ ‏"‏ ‏.‏ وَالسَّامُ الْمَوْتُ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنْ بُرَيْدَةَ وَابْنِ عُمَرَ وَعَائِشَةَ ‏.‏ وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَالْحَبَّةُ السَّوْدَاءُ هِيَ الشُّونِيزُ ‏.‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা এই কালো বীজ (কালোজিরা) নিজেদের জন্য ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করে নাও। কেননা, মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের নিরাময় এর মধ্যে রয়েছে। ‘আস-সাম’ অর্থ ‘মৃত্যু’।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৪৪৭), বুখারী, মুসলিম।

ফুটনোটঃ
আবূ ঈসা বলেন, বুরাইদা, ইবনু উমার ও আইশা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ্।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২০৪১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

উপরিউক্ত হাদীসটির ব্যাখ্যা বললে উপকৃত হতাম শায়েখ


জাযাকাল্লাহু খইরন

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

সুরা বনি ইসরাইল এর ৮২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

 وَ نُنَزِّلُ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ وَ لَا یَزِیۡدُ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا خَسَارًا ﴿۸۲﴾

আর আমি কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা,আরোগ্য ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়।
,
সুরা ইউনুস এর ৫৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡکُمۡ مَّوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ شِفَآءٌ لِّمَا فِی الصُّدُوۡرِ ۬ۙ وَ هُدًی وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۵۷﴾

হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত। 

এই আয়াতের ব্যখ্যায় বলা হয়েছেঃ

কুরআনুল কারীমের দ্বিতীয় গুণ (وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ) বাক্যে বর্ণিত হয়েছে। شِفَاءٌ অর্থ রোগ নিরাময় হওয়া আর صُدُوْرٌ হলো صَدْرٌ এর বহুবচন, যার অর্থ বুক। আর এর মর্মার্থ অন্তর। সারার্থ হচ্ছে যে, কুরআনুল কারীম অন্তরের ব্যাধিসমূহ যেমন সন্দেহ, সংশয়, নিফাক, মতবিরোধ ও ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদির জন্য একান্ত সফল চিকিৎসা ও সুস্থতা এবং রোগ নিরাময়ের অব্যৰ্থ ব্যবস্থাপত্র। [কুরতুবী] অনুরূপভাবে অন্তরে যে সমস্ত পাপ পঙ্কিলতা রয়েছে সেগুলোর জন্যও মহৌষধ। [ইবন কাসীর] সঠিক আকীদা বিশ্বাস বিরোধী যাবতীয় সন্দেহ কুরআনের মাধ্যমে দূর হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন যে, কুরআনের এই বৈশিষ্ট্যের দ্বারা বোঝা যায় যে, এটি বিশেষতঃ অন্তরের রোগের শিফা; দৈহিক রোগের চিকিৎসা নয়। কিন্তু অন্যান্য মনীষীবৃন্দ বলেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে কুরআন সর্ব রোগের নিরাময়, তা অন্তরের রোগই হোক কিংবা দেহেরই হোক। [আদ-দুররুল মানসূর]। তবে আত্মিক রোগের ধ্বংসকারিতা মানুষের দৈহিক রোগ অপেক্ষা বেশী মারাত্মক এবং এর চিকিৎসাও যে কারো সাধ্যের ব্যাপার নয়। সে কারণেই এখানে শুধু আন্তরিক ও আধ্যাত্মিক রোগের উল্লেখ করা হয়েছে। এতে একথা প্রতীয়মান হয় না যে, দৈহিক রোগের জন্য এটি চিকিৎসা নয়। হাদীসের বর্ণনা ও উম্মতের আলেম সম্প্রদায়ের অসংখ্য অভিজ্ঞতাই এর প্রমাণ যে, কুরআনুল কারীম যেমন আন্তরিক ব্যাধির জন্য অব্যর্থ মহৌষধ, তেমনি দৈহিক রোগ-ব্যাধির জন্যও উত্তম চিকিৎসা।
তাফসীরে আহসানুল বয়ানে উল্লেখ রয়েছেঃ

অন্তরে তাওহীদ ও রিসালাত এবং সঠিক ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে যে সন্দেহ ও সংশয়ের রোগ সৃষ্টি হয়, তা দূরীভূত করে এবং কুফরী ও মুনাফিকীর পঙ্কিলতা ও আবর্জনা থেকে হৃদয়কে পরিষ্কার করে দেয়।
,
(০২)
আকীদা বিশুদ্ধ রেখে এসব রুকইয়াহ করা যাবে।
,
(০৩)
কিছু আমলের কথা স্পষ্ট হাদীসেই আছে।
আর কিছু বিষয় বুযুর্গানে দ্বীনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝা যায়।
,
(০৫)
প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীস সহ কালোজিরার গুনাগুন সম্পর্কে আরো অনেক হাদীস আছে।

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، أَنْبَأَنَا إِسْرَائِيلُ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ خَالِدِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ خَرَجْنَا وَمَعَنَا غَالِبُ بْنُ أَبْجَرَ فَمَرِضَ فِي الطَّرِيقِ فَقَدِمْنَا الْمَدِينَةَ وَهُوَ مَرِيضٌ فَعَادَهُ ابْنُ أَبِي عَتِيقٍ وَقَالَ لَنَا عَلَيْكُمْ بِهَذِهِ الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ فَخُذُوا مِنْهَا خَمْسًا أَوْ سَبْعًا فَاسْحَقُوهَا ثُمَّ اقْطُرُوهَا فِي أَنْفِهِ بِقَطَرَاتِ زَيْتٍ فِي هَذَا الْجَانِبِ وَفِي هَذَا الْجَانِبِ فَإِنَّ عَائِشَةَ حَدَّثَتْهُمْ أَنَّهَا سَمِعَتْ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ " إِنَّ هَذِهِ الْحَبَّةَ السَّوْدَاءَ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلاَّ أَنْ يَكُونَ السَّامُ " . قُلْتُ وَمَا السَّامُ قَالَ " الْمَوْتُ " .

খালিদ ইবনে সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রওয়ানা হলাম এবং গালিব ইবনে আবজারও আমাদের সাথে ছিলেন। পথিমধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি অসুস্থ থাকতেই আমরা মদীনায় পৌঁছে গেলাম। ইবনে আবূ আতীক (রাঃ) তাকে দেখতে এলেন। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা এই কালো দানাগুলো ব্যবহার করবে। তা থেকে পাঁচটি বা সাতটি দানা নিয়ে সেগুলো পিষে তেলের সাথে মিশিয়ে নাকের এপাশে ওপাশে অর্থাৎ উভয় ছিদ্রপথে ফোঁটা ফোঁটা করে দাও। কেননা আয়েশা (রাঃ) তাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ এই কালো দানা ‘সাম’ ব্যতীত সব রোগের ঔষধ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘সাম’ কী? তিনি বলেনঃ মৃত্যু।
সহীহুল বুখারী ৫৬৮৭, আহমাদ ২৪৫৪৬, ২৪৬০৯, সহীহাহ ৮৬৩।
,

উক্ত হাদীস গুলোর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ
 আলোচ্য হাদীসে কালোজিরার ব্যাপক ব্যবহার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশনা দিয়েছেন। কখনও তা এককভাবে এবং কখনও অন্য কোন খাবার বা পথ্যের সাথে মিশিয়ে তা ব্যবহার করা হয়। কালোজিরার বহুমুখী ব্যবহার আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় উষ্ণভাবে ব্যবহার ও উষ্ণতায় বিপরীতভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে তা বেশ উপকারী হিসেবে পরীক্ষিত। ইমাম কিরমানীর মতে, সাধারণভাবে তা সকল রোগের মহৌষধ।  (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৬৮৮)

চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বলেছেনঃ কালোজিরা হচ্ছে উষ্ণ ও শুষ্ক প্রকৃতির পথ্য। জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ পেটের আর্দ্রতার সমস্যায় এটি বেশ উপকারী। তা গুঁড়া করে গরম পানির সাথে সেবনে প্রস্রাবের সমস্যা দূরীভূত হয়। কালোজিরার গুঁড়া সুতি কাপড়ে নিয়ে শুকলে সর্দি ও ঠাণ্ডা কাশিতে বেশ উপকার হয়। পানির সাথে সামান্য পরিমাণ কালোজিরা খেলে হাঁপানি রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। ভিনেগার (সিরকা)-এর সাথে গরম করে কুলি করলে দাঁতের ব্যথায় বেশ কার্যকর। অন্যান্য হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালোজিরাকে সাধারণভাবে মৃত্যু বতীত সকল রোগের পথ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন।

আবূ বকর ইবনুল ‘আরাবীর মতে, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নিকট কালোজিরার মাঝে সকল রোগের আরোগ্যের উপাদান রয়েছে। তবে বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতিতে ভিন্ন মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। শায়খ আবূ মুহাম্মাদ ইবনু আবূ হামযাহ্ বলেছেনঃ আলোচ্য হাদীসের ব্যাপারে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন, তবে তা তাদের মস্তিষ্কপ্রসূত বিষয়। কিন্তু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথাই বাস্তব সত্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিষয়টি পরীক্ষিত। সমালোচকদের এ বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই। তারা শুধুমাত্র ধারণাপ্রসূত কথাই বলে। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২০৮-[৭৫])


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...