বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
তালাক আল্লাহর কাছে অত্যান্ত অপছন্দনীয় একটি জিনিষ।যেমন হাদিসের মধ্যে বর্ণিত আছে,
ابغض الحلال عند اللّٰه الطلاق
অর্থ- হালাল জিনিষ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম হালাল জিনিষ হল আল্লাহর কাছে তলাক।
যখন একজন স্বামী তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দিল,তখন সে চুরান্ত পর্যায়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল।অন্য দিকে শরীয়ত তাকে তালাক দেওয়ার জন্য অত্যান্ত নির্ভুল ও সতর্কতামূলক পদ্ধতি বলে দিয়েছে।যাতে ভবিষ্যতে শরমিন্দা না হয় এবং আফসোস না করতে হয়।
তালাক দেয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে.......
প্রতি এমন তুহুরে টান্ডা মাথায় এক তালাক দেয়া, যে তুহরে এখন পর্যস্ত সহবাস বা মিলন হয়নি।
প্রথম শর্ত তুহরে তালাক দেয়া। প্রশ্ন হচ্ছে কেন?উত্তরঃ- যাতে করে উক্ত সন্দেহ দূরবিত হয়ে যায় যে, স্বামী হায়েয(সিরিয়াল,যা প্রাকৃতিগতভাবে এই সময় মহিলার কাছে যাওয়ার আগ্রহ কমে যায়,বিকৃতমস্তিষ্ক হলে ভিন্ন কথা )এর কারণে স্ত্রীর প্রতি আগ্রহ হ্রাসের ধরুন তালাক দিচ্ছে, বরং এ কথা বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, স্বামী বাস্তবিক শরয়ী প্রয়োজনেই তালাক দিচ্ছে।
দ্বিতীয় শর্ত এমন তুহরে তালাক দেয়া যাতে সহবাস হয় নাই ।প্রশ্ন হচ্ছে তবে কেন?উত্তরঃ- সোজা,একারনে শর্ত করা হয়েছে, যাতে করে ঐ সন্দেহ ও দূর হয়ে যায়,যে একবার সহবাসের ধরুন আগ্রহ কমে যাওয়ায় স্বামী এখন তালাক দিচ্ছে।
তৃতীয় কথা হচ্ছে, শরীয়ত বলছে একসাথে এক তুহুরে তিন তালাক না দিয়ে বরং প্রতি তুহুরে এক তালাক দিতে,একারনে যে স্বামী স্ত্রীকে প্রতি তুহুরে তুহুরে এমন এক সময় তালাক দিবে যখন তারও স্ত্রী মিলনের চাহিদা থাকবে ,সতরাং এ চাহিদা বিবেচনায় হয়তো সে তালাক থেকে বিরত থাকবে,এবং তালাকের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে স্ত্রীর প্রয়োজন বুঝতে পারবে।
কিন্তু এতকিছুর পরও যখন সে উক্ত স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছে, তার মানে এটাই বুঝা যাচ্ছে যে, সে এখন আর ঐমহিলাকে জীবন সাথী হিসেবে চাচ্ছে না। হয়তো বাস্তবতায় মহিলাই নির্দোষ হতে পারে,এক্ষেত্রে সমস্ত গুনাহ স্বামীরই হবে,এবং শেষ বিচারে তাকেই জবাবদিহি করতে হবে।
এত কঠিন ধাপ পার হওয়ার পর যখন স্বামী ঐ স্ত্রীকে তালাক প্রদান করবে,তখন স্বামী-স্ত্রী একজন অন্যজনের জন্য চিরস্থায়ী হারাম হয়ে যাবে,তাদের আর একসাথে বসবাস কখনো হালাল হবেনা।তবে হ্যা ঘটনাক্রমে যদি ঐ মহিলার অন্য কোথাও বিয়ে হয়,এবং সেই স্বামী মারা যায়,অথবা সেই স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয়,আর প্রথম স্বামীর সাথে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজি হয়,এবং আল্লাহ তা'য়ালা কর্তৃত নির্ধিরিত সীমারেখা লঙ্গনের আসংকা না থাকে তাহলে এমতাবস্তায় আবার তারা দু-জন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
তবে টাকার বিনিময়ে দ্বিতীয় কোনো স্বামী খোজ করে তার কাছে বিয়ে বসা,কিছুক্ষণ পর তার কাছ থেকে তালাক নিয়ে আবার প্রথম স্বামীর কাছে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে না ,এ পদ্ধতি সম্পূর্ণ হারাম ও অবৈধ ।
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
মজাক করে তালাক দিলেও তালাক পতিত হবে।এখন আপনাদের জন্য করণীয় হল, আপনারা পৃথক হয়ে যাবেন।তালাকের ইদ্দত হল,তিন হায়েয বা তিন মাসিক আর গর্ভবর্তী হলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া।ইদ্দত শেষ হওয়ার পর উক্ত স্ত্রী অন্য কোথাও বিয়ে বসবে।যদি ঘটনাক্রমে ঐ দ্বিতীয় স্বামীর সাথে তালাক হয়ে যায়,তাহলে তিন হায়েয হায়েয অতিবাহিত হওয়ার পর অন্য যে কোনো জায়গায় বিয়ে বসতে পারবে।এমনকি প্রথম স্বামীর সাথেও বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হতে পারবে।
আপনি টাকার বিনিময়ে যে লুকানো বিয়ে কথা বলছেন,সে বিয়েকে শরীয়ত পছন্দ করেনা,তবে যদি কেউ এমনটা করে নেয়,তাহলে সেই বিবাহ মাকরুহ তাহরিমী বলে গণ্য হবে ঠিক কিন্তু এমন বিয়ের দ্বারা ঐ স্ত্রী প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যাবে।