আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
85 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ

সম্মানিত শায়খ,

কার সাথে কার বিয়ে হবে, কার কখন কিভাবে বিপদ হবে, কার কখন কোনো দুর্ঘটনা হবে সব তাকদিরের লিখন অনুযায়ীই ঘটে। তাহলে দু'আ করার প্রয়োজন কি? আসলে প্রায়ই মাঝেমধ্যে আমি হতাশ হয়ে যাই, মনে হয় দু'আ করে কি হবে? আল্লাহ মাফ করুন। আমি বুঝি এটা শয়তানের ওয়াসওয়াসা। কিন্তু তাও কেন যেন এরকম চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়।
ছোট থেকেই কথায় কথায় মা আমাকে অভিশাপ দেয়। ভুল করলে তো আছেই ভুল না করলেও। তোর সন্তান হবে না, কোনোদিন সুখি হবি না, স্বামীর সংসার করতে পারবি না ইত্যাদি ইত্যাদি।
১. তাকদিরে আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তাই যদি
হয়। তাহলে দু'আ করতে বলা হয়েছে কেন? আর অভিশাপের ব্যাপারে ও কিছু বলুন। তাকদিরে কি এরকমও লিখা থাকে যে অভিশপ্ত হবে এরপর এমন হবে?
২. বিয়ে হয়ে গেছে, কিন্ত পরে জানা গেল সেখানে বিয়ের বৈধতা ছিল না, যত দ্রুত সম্ভব আলাদা হয়ে যাওয়া আবশ্যক। এর কিছু সময় পরে আলাদা থাকা শুরু করেছে সাত আট মাসের মত হবে। খুব শীঘ্রই কাগজে-কলমে ডিভোর্স হবে। এমতাবস্থায় কি মেয়েকে ইদ্দত পালন করতে হবে? এক্ষেত্রে ইদ্দত পালনের নিয়ম কি?

৩.  পড়াশোনার তাগিদে মাহরাম ছাড়া নারীদের দূরে কোথাও যাতায়াত ও স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে থাকা যাবে কি??

৫. ফজরের বিশ মিনিট আগেই ফোনে এলার্ম দিয়ে রাখাছিল। বার বার এলার্ম বাজাতে ঘুমের ঘোরেই এলার্ম অফ করে আবার এপাশ ওপাশ করে শুয়ে পড়ছিলাম। চোখে অনেক ঘুম কিন্তু মনে মনে উঠার নিয়ত ছিল, এইতো এখনই উঠব এমন৷ এরকম হতে হতে চারপাশে ফজরের আযান শুরু হয়েছে, ডান কাতেই শুয়ে ছিলাম স্বপ্নে দেখি, আমি যে স্কুলে পড়েছি সেই স্কুলেই আমার বান্ধবীকে নিয়ে গিয়েছি, চারপাশে ভোররাতের মত আবছা আবছা আলো, তাই বান্ধবী আর আমি তিন চারটা সিড়ি পেরিয়ে গ্রাউন্ডফ্লোরের একটা ক্লাস রুমে গেলাম সুইচ দিয়ে লাইট অন করতে। এরইমধ্যে হঠাৎ সবার স্কুল টাইম শুরু হয়ে গেছে, একদম দশটা সাড়ে দশটার মত দিন। সবাই ঝাকেঁ ঝাকেঁ যে যার ক্লাসে গিয়ে বসছে। আমি ওদের ক্লাসে যেতে দেখে তাড়াহুড়ো করছি কারণ সিট পাবো না এমন চিন্তা। আমি কিন্তু গ্রাউন্ডফ্লোরের কোনো রুমে ছিলাম। অথচ দেখলাম আমি কোনো একতলা ছাদবিশিষ্ট বাইরে থাকা একটা স্টিলের সিড়ি বেয়ে নিচে নামছি৷ এরপর ক্লাসে বসার জন্য দৌড়ে যাচ্ছি কিন্তু এগুচ্ছি না। যদিও স্বপ্নে এমন স্লো-মোশনেরই দৌড় হয়। ততক্ষণে ক্লাসের সব সিট বুক হয়ে গেছে৷
আমি ঘুম থেকে উঠে গেলাম। ফোন হাতে নিয়ে দেখি পাচঁটা তেত্রিশ বাজে। ১৯ শাবান, রবিবার।
ক. এমন সময়ে যদি কোনো স্বপ্ন দেখা হয় সেটা কতটুকু সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?
খ. এমন ভাঙ্গা ভাঙ্গা ঘুমে ফজরের আযানের সময়ের স্বপ্ন কি কোনো সতর্কবার্তা বহন করে এই স্বপ্নের কি ব্যাখ্যা হতে পারে ??
গ. আল্লাহ না করুন, কোনো খারাপ সংকেত হলে কিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করব??
আমি এর আগেও দেখেছি, সিড়িঁর উপরে উঠেছি ঠিকই আবার নিচেও নামছি। আমি শুধু এগুলা দেখি কেন? আমার কি খুব দুভার্গ্য??  একটা খাবনামা বইয়ে পড়েছিলাম সিড়ি বেয়ে নিচে নামা ভালো না। তাই খুব ভয় হয়। আমার জীবনে কি আরও অনেক খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে?

1 Answer

0 votes
by (684,760 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

یَمۡحُوا اللّٰہُ مَا یَشَآءُ وَ یُثۡبِتُ ۚۖ وَ عِنۡدَہٗۤ اُمُّ الۡکِتٰبِ ﴿۳۹﴾ 

আল্লাহ যা ইচ্ছে তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছে তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তারই কাছে আছে উম্মুল কিতাব।
(সুরা রা'দ ৩৯)

এখানে (أُمُّ الْكِتَابِ) এর শাব্দিক অর্থ মূলগ্রন্থ। এর দ্বারা লওহে-মাহফুষ বুঝানো হয়েছে, যাতে কোনরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন হতে পারে না। চাই সেটা শরীআত সম্পর্কিত হোক অথবা তাকদীর সম্পর্কিত হোক। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তার শরীআতের মধ্য থেকে যা ইচ্ছা তা রহিত করেন। আর যা ইচ্ছে তা নাযিল করেন। কিন্তু মূলটি উম্মুল কিতাব তথা লাওহে মাহফুযে আছে। সেখানে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই। অনরূপভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির তাকদীর সম্পর্কে লাওহে মাহফুজে যা লিখা আছে তাতে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই। [ইবন কাসীর]

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি-থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- 
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ اﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺭَﺿِﻲَ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ: ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ اﻟﻠَّﻪِ - ﺻَﻠَّﻰ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ -( «ﻛَﺘَﺐَ اﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻘَﺎﺩِﻳﺮَ اﻟْﺨَﻼَﺋِﻖِ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﺨْﻠُﻖَ اﻟﺴَّﻤَﺎﻭَاﺕِ ﻭَاﻷَْﺭْﺽَ ﺑِﺨَﻤْﺴِﻴﻦَ ﺃَﻟْﻒَ ﺳَﻨَﺔٍ)ﺭَﻭَاﻩُ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ.
আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করেছেন আসমান-যমীন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে এবং তিনি যার ভাগ্যে যা লিপিবদ্ধ করেছেন তাই ঘটবে।(ছহীহ মুসলিম, মিশকাত হাদীস নং/৭৯)

★ তাকদীর দু’ভাগে বিভক্ত। 
১. তাকদীরে মুবরাম ২. তাকদীরে মাআল্লাক।
তাকদীরে মুবরাম হল, যা কখনোই পরিবর্তন হয় না। অনাদী থেকে আল্লাহর কাছে যা লিপিবদ্ধ আছে তাই সংঘটিত হবে।
আর তাকদীরে মুআল্লাক হল, যা ফেরেশেতাদের খাতায় লিখা থাকে। এই প্রকারের তাকদীর দোয়া বা বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে পরিবর্তন হতে পারে। কুরআন হাদিসে তাকদীর পরিবর্তনের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে, তা এই প্রকার তাকদীরের ব্যাপারেই।

হযরত সালমান ফারসি রাযি থেকে বর্ণিত,

سَلْمَانَ رضي الله عنه ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَرُدُّ القَضَاءَ إِلَّا الدُّعَاءُ، وَلَا يَزِيدُ فِي العُمْرِ إِلَّا البِرُّ

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,তাকদীরকে দু'আ ব্যতীত অন্যকিছু বদলাতে পারে না।আর নেকী ব্যতীত অন্যকিছু হায়াতকে বৃদ্ধি করবে না।(সুনানু তিরমিযি-২১৩৯)
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
তাকদীরে মুআল্লাক দোয়ার মাধ্যম পরিবর্তন হয়।
তাই দোয়ার কথা বলা হয়।

তাকদিরে এরকমও লেখা থাকে যে অভিশপ্ত হবে এরপর এমন হবে।

(০২)
হ্যাঁ, সেই মেয়েক ইদ্দত পালন করতে হবে। 
তালাকের পর তিন হায়েজ ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর সে অন্যত্রে বিবাহ বসতে পারবে।

(০৩)
এমনটি শরীয়তে অনুমতি নেই।
মাহরাম পুরুষ এর সাথেই দূরে যেতে হবে,একাকী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া অন্য কাহারো সাথে যাওয়া জায়েজ হবেনা।
এক্ষেত্রে গুনাহ হবে।

দূরে গিয়ে মাহরাম পুরুষ ছাড়া থাকার ক্ষেত্রে বিধান হলো যদি এলাকা পূর্ণ নিরাপদ হয়,ফিতনার কোনো আশংকা না থাকে,সেক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে পূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করে পড়াশোনার জন্য থাকতে পারবে।

(০৫)
ক,খ,
এটি সাহরীর সময়ের স্বপ্ন নয়,বরং ফজরের ওয়াক্তে দেখা স্বপ্ন।

প্রশ্নের বিবরণ মতে উক্ত স্বপ্নটি সত্যি হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।
তারপরেও অলসতা ত্যাগ করে ওয়াক্ত মতো নামাজের পাবন্দ ধরে রাখার পরামর্শ থাকবে। 

গ,
খারাপ সংকেত নেই,ইনশাআল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...