আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
219 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (11 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।
হুজুর,

আমি ওয়াসওয়াসাগ্রস্ত এবং আমার ওসিডি (চিন্তার বাতিকগ্রস্ত) রোগ আছে। এবং শায়েখ আপনি ও শায়েখ ইমদাদুল হুজুর আমাকে ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত বলেছেন। ওয়াসওয়াসার মাএা খুবই বেশি।

(১) নামাজে দাড়ানোর পর আগে ঘটে যাওয়া তালাকের বিভিন্ন সন্দেহ মনে আসছে। যেগুলো আমি ইতিমধ্যেই আপনাদের প্রশ্ন করে উওর জেনেছি। প্রায় সময়ই নামাজের মধ্যে মনে হচ্ছে যে, যদি আমার যেনার গুনাহ হয়, তাহলে আল্লাহ যেনার গুনাহকে নেকিতে পরিবর্তন করে পারবে না। এমন কথা আমার নামাজের বাহিরেও মনে আসে। বার বার মনে আসে। হয়তো ভয়ে এমনটা হয়। তখন আমি নামাজে স্লো হয়ে যাচ্ছি। কিছুতেই মন থেকে একথা সরাতে পারছি না।
আমি পেরেশান হয়ে যাচ্ছি। নামাজ শেষে আমি আবার উচ্চারন করে বলছি যে, আল্লাহ তুমি সব পারো। গুনাহকে নেকিতে পরিবর্তন করতে পারো। সব কিছু তোমার হাতে।
এসব বলছি তবুও আমার বার বার এমন কথা মনে পড়ছে। এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??

(২) আল্লাহ সব কিছুু করতে পারে। এতে সন্দেহ নাই। কিন্তু আল্লাহ তুমি সওয়াবকে গুনাহে পরিবর্তন করতে পারো কয়েকবার বলে ফেলেছি। বলার পর মনে হয়েছে এটা বলা ঠিক হয়নি। তখন আবার বলছি যে, আল্লাহ তুমি তে কারোর উপরে জুলুম করো না। যে শিরিক করে তার আমল তুমি বাতিল করো।
উপরের "নেকিকে গুনাহে পরিবর্তন করতে পারো একথার জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??

(৩) ★ ঈমান ভংগের ১০ টি কারনের কথা শুনছিলাম। তখন আমার অফিসে লান্চের সময় ছিল । একবার ভাবলাম ভিডিও পজ করে লান্চ করে তারপর শুনবো। তাই ভিডিওটি পজ করলাম। তখনি আবার আমার মনে হতে থাকে যে, "আমি মনে হয় ঈমান ভংগের কারন জানার চেয়ে ভাত খাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলছি।" তাই ঈমান চলে যাবার ভয়ে আবার দেখা শুরু করলাম।

না দেখলে কি আমার ঈমানের আসলেই কোন ক্ষতি হতো?? নাকি এগুলা ওয়াসওয়াসা??

★★ভিডিওটি দেখা শেষে লান্চ করতে আসবো ঠিক তখনি একটা ইসলামিক প্রশ্ন উওরের ভিডিও চালু হয়ে গেল।আর তখনি আমার মনের ভিতর হলো যে, " প্রশ্নের উওর আমার জানার প্রয়োজন নেই "। এমন কথা আমার মনে চলে আসছিল। তারপর আমি লান্চ করলাম।
এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে??

★★★ নামাজ পড়ার ভিতর ওজু ভাংগা সন্দেহ আমার প্রায় সময়ই হয়। আজ দুপুর বেলা নামাজ পড়ার ভিতর মনে হলো ওজু ভেংগে গেছে। তখন মনে হচ্ছিল যে, "এখন নামাজ পড়তে আশা ঠিক হয়নি। ঠিকমত এস্তেন্জা করে তারপর আসা উচিত ছিল"। তারপর আবার নামাজের ভিতর মনে হতে থাকে যে, "আমি মনে হয় নামাজকে তিরস্কার করছি"। নামাজের ওজু ভাংগার সন্দেহ আসলে আমার এরকম মনে হয়। তারপর  নামাজ শেষ করে অফিসে আসার পর মনে হতে থাকে যে, "রাতে বাসায় যেয়ে ঠিকমত এস্তেন্জা সেরে ইশা থেকে নামাজ পড়বো"। এমন মনে হতে থাকে। এরপর আছরের আগে মনে হচ্ছিল যে, "এখন নামাজ না পড়লেও সমস্যা নেই। এমন কথা মনে হওয়াতে আমি ভয়ে তখনি ভালভাবে ইস্তেন্জা সেরে নামাজ পড়া শুরু করি আল্লাহর রহমতে"। সবসময় মাথায় খারাপ কিছু আসে। ওয়াজে কোন খারাপ কিছু শুনলে মাথায় আসে করলে সমস্যা কি?
এসবের জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??

(৪) নামাজ শেষ করে আস্তে আস্তে মুখে উচ্চারন করে বলছিলাম যে, " আল্লাহ তুমি আমার মাফ করো"। এটা বলতে বলতে মনে হলে যে, "দরুদ পড়ে দুয়া করতে হবে নাহলে তো আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন না"।
তখন আবার ১ বার দরুদ পড়লাম। তারপর দুয়া করলাম।
পরে মনে হচ্ছে আমি কি শিরিক করে ফেললাম?
তখন আবার একটা হাদিসের কথা মনে হলো যে, "দোয়ার সময় দরুদ পাঠ না করলে তা আসমান এবং জমিনের মাঝে থাকে"।
আমার কি শিরিক হয়ে গেল শায়েখ??

(৫) আমাদের এক হিন্দু স্যার আছে। স্যার একদিন সন্ধায় অফিসে আসার পর আমাদের নামাজে পড়তে যাবার কথা বলছিল। তাই আমি একজনকে আমাদের স্যারের ব্যাপারে বলছিলাম যে,  " আমাদের স্যার হিন্দু কিন্তু তিনি নামাজকে শ্রদ্ধা করে "। একথা বলার পর তখনি আমার মনের ভিতর আসলো যে, " আমাদেরও হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করা উচিত "।এমন কথা মনে আসলো।

তারপর থেকে কথাটি বারবার মাথায় আসছে, আর আমি বলছি যে, " একমাএ সত্য ধর্ম ইসলাম। হিন্দু ধর্ম মিথ্যা। মিথ্যা ধর্মের আবার শ্রদ্ধা কিসের? "।

এমন মনে মনে ভাবছি। কিন্তু আমার মন একবার কিছু মনে আনলে সেটা বার বার মনে করতেই থাকে। আর আমার মনে " হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করা উচিত" মনে বার বার আসছে। রাতে বার বার মনে মনে বলছি যে, " হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করি "।
এজন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ?

আমাদের ইসলাম ধর্ম অন্য ধর্মকে কি শ্রদ্ধা করার অনুমতি দেই?

এরুপ প্রশ্ন করার জন্য আমার কি ঈমানের ক্ষতি হবে?
(৬) আমার এক বন্ধু আছে তাকে নিয়ে আমার মনে অনেক আজে বাজে চিন্তা আসছে। যেমন : আমি অফিসে থাকা কালিন বন্ধু ফোন দিয়ে আমাকে আসতে বলায় আমার মনের মধ্যে আসছে যে,  "আল্লাহ আামাকে ডাকছে "।

এমন জঘন্য কথা মনে হওয়াতে আমার যেতে মন চাইলেও আমার তাড়াতাড়ি যেতে মনে সংসয় কাজ করছে। মনে হচ্ছে আমি মনে হয় আসলেই তাই মনে করি এজন্য তাড়াহুড়া করছি। এজন্য ইচ্ছা করে লেট করছি যেতে। মনের এসব চিন্তা কন্টোল করার তাওফিক আল্লাহ আমাকে দিন।

এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(৭) তারপর, বন্ধুর ওখানে আসার পর ও আমাকে একটা দোয়া নিয়ে কথা বলছিল। হে আল্লাহ আমাকে দুনিয়াতে ও আখেরাতে শান্তি দিন এই দোয়ার ব্যাপারে কিছু কথা ও একটি ঘটনা বলছিল। ওর কথা শেনার পর আমার মনে হলো যে, "দুনিয়াতে শান্তি দিন" এই কথার মানে ভিন্ন হতে পারে, তাই আমার মনে আসলো যে, " দুনিয়াতে শান্তি দিন কথাটাতে ভেজাল আছে "।

এমন কথা মনে আসাতে কি আমার ঈমান চলে যাবে?
এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ?

(৮) আমার বন্ধুর সাথে নামাজ পড়লে আমার মনে হয় আমি যেন আমার বন্ধুকে দেখানোর জন্য নামাজ পড়ছি। নামাজ শেষে সুন্নাত পড়ার সময় আমি ভাবছিলাম যে, "কোথায় গিয়ে সুন্নাত পড়লে বন্ধুর নজর থেকে দুরে থাকবো। তাই আমি মসজিদের সামনের দিকে যেয়ে দাড়ায়। তারপরেও মনে হচ্ছে আমি যেন তাকে দেখানোর জন্য নামাজ পড়ছি। রুকু সিজদায় ৫ বার তাছবিহ পড়লে মনে হচ্ছে আমি দেখানোর জন্য ৫ বার করে পড়ছি। তখন আবার ৩ বার করে পড়া শুরু করছি, লোক দেখানো হবে তার ভয়ে। এভাবে সুন্নাতের শেষের রাকাতে আমার মনে হচ্ছে আমি আমার বন্ধুকে সেজদাহ করছি। এরকম মনে হওয়াতে আমার খুবই খারাপ লাগছিল তখন। মনে হচ্ছিল বাসায় চলে যায়।
এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
এগুলা ওয়াসওয়াসা না রিয়া আমি বুঝতে পারছি না??

(৯) নামাজ শেষে বন্ধুর সাথে গল্প করার সময় বন্ধু বলছিল যে, "এক বক্তা বলে সে কেচ্ছা কাহিনি বলে না।
এসব নিয়ে কথা হচ্ছিল। তখন আমি বললাম যে, " কেচ্ছা কাহিনি বলে না মানে সে ভুল গাল গল্প বলে না "। তখন বন্ধু বললো যে, " কোরআনে কত সুন্দর সুন্দর গল্প আছে, সেগুলাও তো বলে না "।

 তখন আমি বললাম যে, " হ্যা, কেচ্ছা কাহিনি হিসাবে কোরআনের গল্প গুলাও তো বলা যায় "। (আমার কেচ্ছা কাহিনি হিসাবে বলা মানে কোরআনের গল্প ভুল বলা না )

এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে??

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


(০১)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَ الَّذِیۡنَ لَا یَدۡعُوۡنَ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ وَ لَا یَقۡتُلُوۡنَ النَّفۡسَ الَّتِیۡ حَرَّمَ اللّٰہُ اِلَّا بِالۡحَقِّ وَ لَا یَزۡنُوۡنَ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ یَلۡقَ اَثَامًا ﴿ۙ۶۸﴾ 
এবং তারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহকে ডাকে না। আর আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর তারা ব্যভিচার করে না; যে এগুলো করে, সে শাস্তি ভোগ করবে।
(সুরা ফুরকান ৬৮)

یُّضٰعَفۡ لَہُ الۡعَذَابُ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ یَخۡلُدۡ
 فِیۡہٖ مُہَانًا ﴿٭ۖ۶۹﴾ 

কিয়ামতের দিন তার শাস্তি বর্ধিতভাবে প্ৰদান করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়।
(সুরা ফুরকান ৬৯)


اِلَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِکَ یُبَدِّلُ اللّٰہُ سَیِّاٰتِہِمۡ حَسَنٰتٍ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿۷۰﴾ 

তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ্ তাদের গুণাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সুরা ফুরকান ৭০)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নের বিবরণ মতে এতে আপনার ঈমান চলে যাবেনা।

(০২)
একথার জন্য আপনার ঈমান চলে যাবেনা।
তবে আল্লাহ এমনটি করবেননা।

(০৩)
এসবের জন্য আপনার ঈমান চলে যাবেনা।
আপনি এসব ওয়াসওয়াসাকে পাত্তা দিবেননা।

(০৪)
না,এতে শিরক হয়নি।

(০৫)
ইসলাম আমাদের অন্য ধর্মের মানুষদের সম্মান, শ্রদ্ধা করার অনুমতি দিয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব দেবদেবীর পূজা-উপাসনা করে, তোমরা তাদের গালি দিও না। যাতে করে তারা শিরক থেকে আরো অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে’ (সূরা আনআ’ম, ৬:১০৮)। 

★এরুপ প্রশ্ন করার জন্য আপনার ঈমানের ক্ষতি হবেনা। 

(০৬)
এতে আপনার ঈমান চলে যাবেনা।

(০৭)
এমন কথা মনে আসাতে আপনার ঈমান চলে যাবেনা।
এতে আপনার ঈমান চলে যাবেনা।

(০৮)
এতে আপনার ঈমান চলে যাবেনা।
প্রশ্নের বিবরন মতে বুঝা যাচ্ছে যে এগুলো ওয়াসওয়াসা। 
এগুলো রিয়া নয়।

(০৯)
এতে আপনার ঈমান চলে যাবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...